Tuesday 20 June 2017

ঈদের শপিং ও খলীফা উমার (রাঃ)



ঈদের শপিং ও খলীফা উমার (রাঃ) 

উমার (রাঃ)। ইসলামি ইতিহাসের দ্বিতীয় খলিফা। পৃথিবীর ইতিহাসে এক দক্ষ প্রশাসক। তাঁর প্রশাসন-নীতি অনুপ্রাণিত করেছে বহু রাষ্ট্রনায়ককে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। ইতিহাসও যুগ যুগ ধরে সাক্ষ্য বহন করে চলেছে তাঁর প্রজা-প্রেমের। তিনি ছিলেন প্রায় অর্ধ পৃথিবীর শাসকসে-সময়ে বায়তুল-মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) দেখাশুনা করতেন আবু উবাইদা (রাঃ)। সহজ করে বললে, তিনি উমার-সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

কাল বা পরশু ঈদ। চারিদিকে বাতাবরণ উৎসব-মুখর। ঈদের শোপিংয়ে মেতেছে পাড়া। বাচ্চারা সব আনন্দে আত্মহারা। নতুন জামার রং মনে লেগেছে তাদের। নতুন সাজে ছেলেমেয়েদের দেখে নয়ন জুড়াতে সব মায়েরাই চায় তাই বিনয়-জড়ানো কন্ঠে স্ত্রী স্বামী উমার (রাঃ)-কে বললেন- ‘শোনো, এই ঈদে আমাদের জন্য নতুন জামাকাপড় না হলেও চলবে। কিন্তু ছোট ছেলেটা নতুন কাপড়ের জন্য বায়না ধরেছে। রীতিমত কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিয়েছে একটু দেখো না, যদি কোনোভাবে সম্ভব হয়।’ 

অর্ধ পৃথিবীর শাসক উমার (রাঃ) অকপট উত্তর দিলেন- ‘আমার যে নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই!' তবে পরক্ষণেই পিতৃসুলভ দুর্বলতা ও আবেগের কাছে তাঁর প্রতাপ পরাজিত হল। তিনি আবু উবাইদা (রাঃ)-কে চিঠি লিখলেন, এক মাসের অগ্রিম বেতন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে

খলিফার এই চিঠি দেখে আবু উবাইদা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। আমীনুল্‌ উম্মাহ্‌ বা ‘জাতির বিশ্বস্থ ব্যক্তি’ রূপে পরিচিত তিনি। সজল চোখে উত্তর লিখলেন- ‘হে আমীরুল্‌ মুমেনীন, হে বিশ্বাসীদের নেতা, অগ্রিম বেতন বরাদ্দের বিষয়ে আমার দু’টি জিজ্ঞাস্য আছে। আর আপনাকেই তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। বিষয় দু’টি হল- 
(ক) আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি না? 
(খ) বেঁচে থাকলেও, জনগণ আপনাকে খেলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কিনা?’ 

উত্তর দেখে উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। অশ্রুজলে দাড়ি সিক্ত হয়ে গেল তাঁর। দু’ হাত তুলে মহান প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আবু উবাইদা (রাঃ)-এর প্রতি করুণা করো, তাঁকে দীর্ঘায়ু দান করো!   

[তথ্যসুত্রে- আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ইবনে কাসীর (রহঃ)]

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

4 comments: