Wednesday 25 January 2017

জিবরান খালিল জিবরানঃ ভালোবাসার জীবন

ভালোবাসার জীবন

                জিবরান খালীল জিবরান

বসন্ত...
ও আমার প্রেমিকা! চলো, আমরা টিলার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাই বরফ গলে গেছে, জীবনও তার শয্যা ত্যাগ করে জেগে উঠেছে উপত্যকা ও উচুভূমিতে জীবনের কলরব চলো আমার সঙ্গে, দূরবর্তী খেতখামারে বসন্তের পদচিহ্ন অনুসরণ করি এসো, আমরা উঁচু টিলার উপর থেকে তরঙ্গায়িত শ্যামলিমা উপভোগ করি
যেখানে বসন্তের ভোর, শীতের রাতে গুছিয়ে রাখা তার চাদরটি বিস্তৃত করে দিয়েছে বৃক্ষরাজির উপর; সেগুলিকে এখন উৎসবের রাতে সজ্জিত ললনার মতো লাগছে আঙ্গুর বাগান জেগে উঠেছে, তার লতাগুলো প্রণয়ী-যুগলের মতো একে অপরকে আলিঙ্গন করে আছে নৃত্যরত ও কল্লোলিনী নদীগুলি পাথরের খাঁজ দিয়ে বয়ে চলেছে সমুদ্রে ঢেউয়ের ফেনার ন্যায়, প্রকৃতির গভীর হতে পুষ্পরাজি প্রস্ফুটিত হয়েছে
এসো, আমরা জুঁই ফুলের পাপড়ি থেকে অবশিষ্ট নীরবিন্দু পান করি; আমাদের হৃদয়কে ভরে তুলি বুলবুলির খুশির সঙ্গীতে; প্রভাতী মলয়বায়ুর সুগন্ধি উপভোগ করি
চলো, যে পাথরগুলির আড়াল থেকে ঘাসফুল উঁকি দেয় তার পাশে গিয়ে বসি,আর ভালোবাসার চুম্বন আদানপ্রদান করি


গ্রীষ্ম
হে প্রিয়ে! আমাকে ক্ষেতে নিয়ে চলো, ফসল কাটার সময় হয়ে গেছে সেগুলি কাটার উপযুক্ত হয়েছে; প্রকৃতির প্রতি সূর্যের ভালোবাসার উষ্ণ পরশ তাকে পাকিয়ে তুলেছে চলো, পাখীরা আমাদের পরিশ্রমের ফসল ঘরে তোলার আগে এবং পিঁপড়েরা আমাদের জমির দখল নেওয়ার আগেই আমরা চলে যাই এসো, আমরা ফসল তুলে নিই যেভাবে হৃদয় বিশ্বাসের বীজ থেকে সৌভাগ্যের শস্য চয়ন করে নেয়; আর এটা সেই বিশ্বাস যেটা ভালোবাসা আমাদের অন্তরে বপন করে ছিল এই ফসল দিয়ে আমরা আমাদের শস্যভান্ডারগুলো ভরে তুলি যেভাবে জীবন আমাদের অনুভূতির খামারকে পূর্ণ করে
ওগো সহচরী! এসো, ঘাস দিয়ে আমরা বিছানা বানাবো; আকাশ হবে আমাদের লেপ; আর আমাদের বালিশ হবে নরম ঘাসের গোছা তারপর দিনের কর্মব্যস্ততা থেকে আরাম নেবো আর শুনবো উপত্যকার জলাশয়ের রাত্রি আলাপন


হেমন্ত
চলো প্রিয়ে, একটু আঙ্গুর বাগানের দিকে যাওয়া যাক আঙ্গুর-নির্যাস নিঃসৃত করে তা সংরক্ষণ করবো মৃৎপাত্রে, যেভাবে হৃদয় পূর্বপুরুষের জ্ঞানবিজ্ঞান সংরক্ষণ করে আমরা শুকনো ফল সঞ্চয় করবো আর ফুলগুলিকে বিন্দু বিন্দু জলসিঞ্চন করবো যদ্বারা আমাদের চোখ শীতল হবে
চলো, গৃহে ফেরা যাক গাছের পাতাগুলো বিবর্ণ হয়ে গেছে; বাতাস তা ঝরিয়ে দিচ্ছে যেন তা গ্রীষ্মের বিদায়ে শোকাহত ফুলগুলিকে কাফন পরিয়ে দিচ্ছে চলো এবার, পাখীরাও বাগানের ভালোবাসা নিয়ে তীরের দিকে যাত্রা শুরু করেছে আর পিছনে রেখে গেছে জুঁই-চামেলীর জন্য বন্য নীরবতা মাটির উপর ঝরে পড়ে তাদের অবশিষ্ট অশ্রুবিন্দু
চলো, ফেরা যাক নদীর প্রবাহ থেমে গেছে; ঝর্ণারও আনন্দাশ্রু শুকিয়ে গেছে টিলাগুলি তার ঝলমলে আবরন উন্মোচিত করেছে চলো না প্রিয়া! প্রকৃতিও তো তন্দ্রাচ্ছন্ন শান্ত-সমাহিত কণ্ঠে সে জাগরণকে বিদায় জানাচ্ছে


শীত
কাছে এসো, আমার জীবনসঙ্গিনী! একটু আমার কাছে এসো না! তুষারপাতকে সুযোগ দিও না আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করার এই উনুনটার সামনে তুমি আমার পাশটায় বসোআগুনই তো শীতের সুস্বাদু ফল আমাকে পূর্বপুরুষদের কাহিনী শোনাও বাতাসের দীর্ঘশ্বাস আর প্রকৃতির বিলাপ আমার কানে বাজছে তুমি দরজা-জানালা বন্ধ করে দাও বিক্ষুব্ধ আবহাওয়ার মুখদর্শনে আমি কষ্ট পাচ্ছি বরফের স্তরের নীচে, পুত্রহারা রমণীর ন্যায় অলস এই শহর আমাকে ব্যথিত করছে ওগো আমার জীবনসাথী, প্রদীপে একটু তেল দাও, সেটা নিভু নিভু হয়ে এসেছে সেটা তোমার কাছে রাখো যাতে আমি দেখতে পাই রাত তোমার মুখে কী লিখেছে নিয়ে এসো পানপাত্র; আমরা পান করবো আর অতীতের স্মৃতিচারণ করবো
কাছে এসো! কাছে এসো হে প্রাণেশ্বরী! আগুন তো নিভে গেছে ছাইয়ে ঢেকে গেছে প্রায় প্রদীপ নিভে গেছেচারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্নআমাকে একটু জড়িয়ে ধরো পুরানো পানীয় আমাদের চোখকে ভারী করে তুলেছে তন্দ্রাবিষ্ট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো ঘুম জড়ানোর আগেই তুমি আমার গলা জড়িয়ে ধরো আমাকে চুম্বন দাওএকমাত্র তোমার চুম্বনকেই বরফ গ্রাস করতে পারেনি আহপ্রিয়ে……ঘুমের সাগর কতই না গভীর আহএই পৃথিবীতে সকাল কত দূরে


حياة الحب

جبران خليل جبران 

الربيع

هلمي يا محبوبتي نمش بين الطلول، فقد ذابت الثلوج، وهبّت الحياة من مراقدها وتمايلت في الأدوية والمنحدرات. سيري معي لنتتبّع آثار أقدام الربيع في الحقل البعيد. تعالي لنصعد إلى أعالي الربى ونتأمل تموجات اخضرار السهول حولها.

 

ها قد نشر فجر الربيع ثوبا طواه ليل الشتاء فاكتست به أشجار الخوخ والتفاح فظهرت كالعرائس في ليلة القدر، واستيقظت الكروم وتعانقت قضبانها كمعاشر العشاق، وجرت الجداول راقصة بين الصخور مرددة أغنية الفرح، وانبثقت الأزهار من قلب الطبيعة انبثاق الزبد من البحر.  

 

تعالي لنشرب بقايا دموع المطر من كؤوس النرجس ونملأ نفسينا بأغاني العصافير المسرورة ونغتنم استنشاق عطر النسيمات.

 

لنجلس بقرب تلك الصخرة حيث يختبئ البنفسج ونتبادل قبلات المحبة.

 

الصيف

هيا بنا إلى الحقل يا حبيبتي فقد جاءت أيام الحصاد وبلغ الزرع مبلغه وأنضجته حرارة محبة الشمس للطبيعة. تعالي قبل أن تسبقنا الطيور فتستغل أتعابنا، وجماعة النمل فتأخذ أرضنا .هلمي نجن ثمار الأرض مثلما جنت النفس حبوب السعادة من بذور الوفاء التي زرعتها المحبة في أعماق قلبينا، ونملأ المخازن من نتاج العناصر كما ملأت الحياة أهراء عواطفنا .

   

هلمي يا رفيقتي نفترش الأعشاب ونلتحف السماء ونوسد رأسينا بضغث من القش الناعم فنرتاح من عمل النهار ونسمع مسامرة غدير الوادي.

 

الخريف

لنذهب إلى الكرمة يا محبوبتي ونعصر العنب ونوعه في الأجران مثلما توعي النفس حكمة الأجيال ونجمع الأثمار اليابسة ونستقطر الأزهار ونستعض عن العين بالأثر.

 

لنرجع نحو المساكن فقد اصفرّت أوراق الأشجار ونثرها الهواء كأنه يريد أن يكفّن بها أزهارا قضت لوعة عندما ودعها الصيف. تعالي فقد رحلت الطيور نحو الساحل وحملت معها أنس الرياض وخلّفت الوحشة للياسمين والسيسبان فبكى باقي الدموع على أديم التراب.

   

لنرجع! فالجداول قد وقفت عن مسيرها، والعيون نشّفت دموع فرحها، والطلول خلعت باهي أثوابها. تعالي يا محبوبتي، فالطبيعة قد راودها النعاس فأمست تودّع اليقظة بأغنية نهاوندية مؤثرة.

 

الشتاء

اقتربي يا شريكة حياتي، اقتربي مني ولا تدعي أنفاس الثلوج تفصل جسمينا. اجلسي بجانبي أمام هذا الموقد، فالنار فاكهة الشتاء الشهية. حدثيني بمآتي الأجيال، فأذناي قد تعبتا من تأوه الرياح وندب العناصر. أوصدي الأبواب والنوافذ، فمرأى وجه الجو الغضوب يحزن نفسي، والنظر إلى المدينة الجالسة كالثكلى تحت أطباق الثلوج يدمي قلبي... اسقي السراج زيتا، يا رفيقة عمري، فقد أوشك أن ينطفئ، وضعيه بالقرب منك لأرى ما كتبته الليالي على وجهك ... تي بجرّة الخمر لنشرب ونذكر أيام العصر. 


اقتربي! اقتربي مني يا حبيبة نفسي، فقد خمدت النار وكاد الرماد يخفيه. ..ضميني، فقد انطفأ السراج و تغلّبت عليه الظلمة... ها قد أثقلت أعيننا خمرة السنين... أرمقيني بعين كحلها النعاس... عانقيني قبل أن يعانقني الكرى... قبليني فالثلج قد تغلب على كل شيء إلا قبلتك... آه يا حبيبتي ما أعمق بحر النوم! آه ما أبعد الصباح... في هذا العالم!

Wednesday 18 January 2017

আদুনিস আলি আহমাদ সায়িদঃ অগ্নিবৃক্ষ


অগ্নিবৃক্ষ
আদুনিস আলি আহমাদ সায়িদ  
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
একটি লতাপাতার পরিবার,
ঝর্ণার কাছে বসে
আঘাত হানছে অশ্রুর বুকে;
আর পাঠ করছে
জলের নিকট আগুনের পুস্তক।

চলে গেছে আমার পরিবার
নিঃশব্দে, অপেক্ষা করেনি
আমার ফেরার;
রেখে যায়নি তাঁরা আমার জন্য,
না আগুণ, না কোন চিহ্ন। 



شجرة النار

 

عائلة من ورق الأشجار

تجلس قرب النبع

تجرح أرض الدمع

تقرأ للماء كتاب النار،

  

عائلتي لم تنتظر مجيئي

راحت

فلا نار و لا آثار.

Wednesday 4 January 2017

জিবরান খালিল জিবরানঃপরিত্রাতা


পরিত্রাতা
জিবরান খালিল জিবরান

সালমার বিয়ের পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল এখনো সে সন্তানের মুখ দেখেনিযে তার এবং তার স্বামীর মধ্যে একটা আত্মিক বন্ধন তৈরী করবে; যার মৃদু হাসি, দুটি পরস্পর ঘৃণারত হৃদয়কে কাছাকাছি নিয়ে আসবেঠিক যেমনভাবে ভোর, রাতের শেষ আর দিনের প্রথমকে মিলিত করে বন্ধ্যা নারী সর্বত্রই উপেক্ষিত; কারণ প্রত্যেক পুরুষের মধ্যেই সন্তানের মাঝে চিরস্থায়ী বেঁচে থাকার একটা উদগ্র কামনা থাকে; আর তাই সে বংশবিস্তার করতে চায় পৃথিবীর বুকে অমর থাকতে

ভোগবাদী স্বামীটি তার স্ত্রীর দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকায়, যার মধ্যে ধীর আত্মহননের ছায়া দেখা যায়; তার প্রতি সে ক্ষুব্ধ হয়, তাকে ত্যাগ করতে চায়, এমনকি তার মৃত্যুও কামনা করেযেন সে(স্ত্রী) তার একজন বিশ্বাসঘাতক শত্রু যে তার ধ্বংস চায় মানসুর বেক গালিব ছিল মাটির মতো বস্তুসর্বস্ব, ইস্পাতের মতো কঠিন, কবরের মতো লোভী একটি পুত্রের আকাঙ্ক্ষাযে কিনা তার নামযশ বহন করবেসালমাকে তার কাছে ঘৃণার পাত্রী করে তুলেছিল; তার গুণাবলীকে নিকৃষ্ট দোষে পরিণত করেছিল

গুহার অন্ধকারে বেড়ে ওঠা গাছ কখনো ফল দেয়না সালমা কারামাও তেমন জীবনের ছায়াতে ঢাকা ছিল,তাই সন্তানের জন্ম দেয়নি বুলবুলি পাখি খাঁচার মধ্যে কখনো বাসা বোনে না, যাতে তার শাবককে দাসত্বের লাঞ্ছনা বহন করতে না হয় সালমা কারামাও তেমনই দুর্ভাগ্যের খাঁচায় আবদ্ধ ছিল, তাই হয়তো প্রভু তার জীবনকে দুটি বন্দীরূপে ভাগ করেননি উপত্যকার ফুল হলো সূর্যের কোমল স্পর্শে আর প্রকৃতির পরম মমতায় জন্ম নেওয়া সন্তানসম; আর মানবসন্তান হল স্নেহ ও প্রেমের ছোঁয়ায় ফোটা ফুল উত্তর বেইরুতের নদীতীরে অবস্থিত সেই বাড়ীটিতে সালমা কখনো স্নেহ-ভালোবাসার ছোঁয়াই পায়নি তবুও সে গভীর রাতে প্রভুর সামনে নতজানু হয়ে সন্তানকামনায় প্রার্থনায় বসতোযে সন্তান তার গোলাপী আঙ্গুলগুলো দিয়ে তার অশ্রু মুছিয়ে দেবে; যে তার চোখের জ্যোতি দিয়ে মায়ের মন থেকে মৃত্যুর চিন্তাকে সরিয়ে দেবে

সালমা এত ব্যাথাতুরচিত্তে প্রার্থনা করত যে তার আকুতি, তার ক্রন্দন মহাশূন্য ভরিয়ে তুলতো; তার করুণ মিনতি মেঘমালাকেও বিদূরিত করতো। অবশেষে প্রভু তার প্রার্থনা শুনলেন; তার গভীরে গেঁথে দিলেন সুমিষ্ট এক সুর; বিয়ের পাঁচটি বছর পর তাকে প্রস্তুত করলেন অনাস্বাদিত মাতৃত্বের জন্যযা তার অপমান, লাঞ্ছনা মুছে দেবে। ফল দেবার জন্য, গুহার অন্ধকারে বেড়ে ওঠা গাছটিতে আজ ফুল ধরেছে। খাঁচায় আবদ্ধ বুলবুলিটি তার ডানার পালক দিয়েই আজ বাসা বুনতে চায়। পায়ের নীচে পড়ে থাকা অবহেলিত সেতারটিই আজ পূবালি বায়ুর প্রবাহপথে রাখা হয়েছে,  যাতে তার স্পর্শে অবশিষ্ট তারগুলিতে সুর বেজে ওঠে।

প্রভুর দেওয়া উপহার নিতে, সালমা কারামা তার শিকলে আবদ্ধ হাতদুটো বাড়িয়ে দিয়েছে। ঐশ্বরিক দূতেরা মাতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করে দেওয়ার পর, একজন বন্ধ্যা নারীর যে খুশী, তার সঙ্গে জীবনের আর কোনো খুশী সমান হতে পারে না বসন্তের আগমনে যে সৌন্দর্য, প্রভাতের আগমনে যে খুশী সবকিছু যেন এক হয়ে গেছে নারীটির হৃদয়ে, যাকে প্রভু প্রথমে বঞ্চিত রেখে পরে দান করলেন

গর্ভের অন্ধকারে আবদ্ধ ভ্রুণ যে আলো ছড়ায়, তার মতো আর কোনো তীক্ষ্ণ ও উজ্জ্বল রশ্মি নেই। এপ্রিল মাস পড়তে সালমার গর্ভের সময়সীমা পূর্ণ হলো প্রকৃতিও যেন তাকে সঙ্গ দিতে আর প্রতিশ্রুতি রাখতে ফুলের জন্ম দিল, তারপর ঘাস এবং ফুলের কুঁড়িগুলোকে উষ্ণতার চাদরে মুড়ে দিল

প্রতীক্ষার সময় কেটে যায় সালমাও প্রসবের অপেক্ষা করে, যেভাবে একজন পথিক ভোরের আগমনের অপেক্ষায় থাকে অশ্রুর আড়াল থেকে সে তাকিয়ে থাকে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে, তাকে সে স্পষ্ট দেখতে পায় অনেক সময় ঝাপসা বস্তুও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে অশ্রুর মধ্য দিয়ে

এক রাতেযখন উত্তর বেইরুতের বাড়ীগুলোর মাঝে কিছু ছায়ামূর্তি ঘোরাঘুরি করছিলতখন সালমা নিদারুণ প্রসবকষ্ট নিয়ে প্রসবকক্ষে শয্যাশায়ী ছিল এদিকে মৃত্যু ও জীবন তার বিছানার পাশে লড়াই করছে ডাক্তার আর ধাত্রীমা দাঁড়িয়েছিল এক নতুন অতিথিকে এই পৃথিবীতে স্বাগত জানাতে পথচারীদের চলাচল থেমে গিয়েছিল; স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল নদীর কলতানকেবল শোনা যাচ্ছিল মানসুর বেক গালিবের জানালা দিয়ে ভেসে আসা একটি যন্ত্রণাদায়ক চিৎকারএকটি জীবন থেকে আর একটি জীবনের পৃথক হওয়ার আর্তনাদনশ্বর পৃথিবীতে অমরত্বের প্রতি ভালোবাসার চিৎকারঅসীমের ক্ষমতার নৈঃশব্দের সামনে মানুষের সীমিত ক্ষমতার আস্ফালন; দুই পরাক্রমশালীজীবন ও মৃত্যুর সামনে পড়ে থাকা অসহায় সালমার চিৎকার

যখন ভোরের আলো ফুটলো, সালমা একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিল নবজাতকের চিৎকারে, যন্ত্রণায় বন্ধ চোখদুটি খুলে চারিদিকে দৃষ্টি ফেরালো দেখতে পেল কক্ষের আশেপাশে উৎফুল্ল মুখের সারি দ্বিতীয়বার তাকাতে দেখতে পেল তার বিছানার পাশে তখনও বিবদমান জীবন ও মৃত্যুকে সে আবার চোখ বন্ধ করলো এবং প্রথমবারের মতো চিৎকার দিলঃআমার ছেলে!” ধাত্রী নবজাতককে গরম কাপড়ে জড়িয়ে তার মায়ের পাশে রাখলো এদিকে ডাক্তার চিন্তিত মুখে সালমার দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে মাথা নাড়ছিল, নীরবে

খুশীর সুর কিছু প্রতিবেশীকে জাগিয়ে তুললো। তারা রাত্রিবাস পরেই শিশুর পিতাকে শুভেচ্ছা জানাতে এলো। কেবল ডাক্তার কষ্টদীর্ণ চোখে মা আর তার শিশুর দিকে তাকিয়ে থাকলো।

চাকরবাকরেরা উপহারের আশা নিয়ে, মানসুর বেক গালিবকে শিশুর আগমনের সুসংবাদ দিতে এলো কিন্তু ডাক্তার তখনো নিরাশ চোখে সালমা এবং তার পুত্রের দিকে তাকিয়ে থাকে

সূর্যোদয় হলো সালমা শিশুপুত্রকে স্তনের কাছে নিল; এই সময় শিশুটি প্রথমবার চোখ খুলে তার মায়ের দিকে তাকালো তারপর কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিলশেষবারের মতো ডাক্তার তার কছে গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে নিল যখন,তার গাল বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো সে নীরবে স্বগতোক্তি করলোঃ এ কি চলে যাওয়ার জন্যই এসেছিল?

শিশুটি মারা গেলঅথচ তখনো প্রতিবেশীরা তার পিতার সঙ্গে বড় হলটিতে উল্লাসে মাতোয়ারা, শিশুর দীর্ঘায়ু কামনায় তারা পান করে চলেছে হতভাগ্য সালমা বিস্ফারিতনেত্রে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকে, চিৎকার করে বলেঃআমার ছেলেকে আমার কাছে দাও,আমি একটু জড়িয়ে ধরবোতারপর আবার সে বিহ্বল চোখে দেখল জীবন-মৃত্যু তখনো বিবাদে রত

শিশুটি আর নেইঅথচ তার আগমনে উৎফুল্ল ব্যক্তিদের হাতে পানপাত্রের ঝঙ্কার বেড়ে চলে

সে এসেছিল ভোরের বেলায়; আর চলে গেল সূর্যের উদয়ের সাথে

এমন কোনো মানুষ আছে কি যে আমাদেরকে বলবে সেই ভোর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ঠিক কতক্ষণ অতিবাহিত হয়েছে? একটা জাতির উত্থান থেকে পতনে যে সময় বয়ে যায় তার অতি তুচ্ছ একটা অংশ

সে চিন্তার ন্যায় জন্ম নিয়েছিল, আর হারিয়ে গিয়েছিল দীর্ঘশ্বাসের ন্যায়লুকিয়ে গিয়েছিল ছায়ার ন্যায়সালমা কারামা মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছিল বটে, কিন্তু তার সৌভাগ্য স্থায়ী হয়নিমৃত্যু এসে তা ছিনিয়ে নেয়

তার জীবন শুরু হয়েছিল রাতের শেষলগ্নে, আর শেষ হয়েছিল দিনের সূচনায়সে ছিল শিশিরবিন্দুর ন্যায় যা অন্ধকারের পলক থেকে ঝরে পড়ে আর আলোর ছোঁয়ায় মুছে যায়
সে যেন ঐশ্বরিক দূতেদের বলা এমন শব্দ, যেটা বলে তারা অনুতপ্ত; তাই তারা সেটা ফিরিয়ে নিয়েছে চিরশান্তির দিকে

সে ছিল এমন মুক্তোদানা, জোয়ার যাকে তীরে এনে ফেলেছিল; ভাঁটা যাকে আবার তার গভীরে নিয়ে চলে যায়। সে ছিল জীবনের কুঁড়ি থেকে সদ্যফোটা পদ্ম, যা তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর পদতলে পিষ্ট হয়। সে ছিল এক সম্মানিত অতিথি, সালমা যার আগমনের প্রতীক্ষায় ছিলকিন্তু সে আসতে না আসতেই চলে যায়দরজাও বন্ধ হয়ে যায়, খুলতে না খুলতেইএমন ভ্রূণ, যা শিশুতে পরিণত হওয়ার সাথে সাথেই মাটি হয়ে যায়আর এটাই হলো মানুষের জীবন; শুধু মানুষ নয়, বরং একটা জাতির এমনকি সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রেরও

সালমা ডাক্তারের দিকে চোখ ফেরালো, চিৎকার করে বললোঃ আমার ছেলেকে আমার কাছে দাও; আমি তাকে জড়িয়ে ধরবো, দুধপান করাবো

ডাক্তার মাথা নীচু করে, দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললোঃ আপনার সন্তান মারা গেছেআপনি ধৈর্য ধরুন, শক্ত হোন

সালমা বুকফাটা আর্তনাদ করে হঠাৎ নীরব হয়ে গেল কোনো এক অজানাকে জানার আনন্দে মৃদু হাসি ফুটলো তার মুখে সে শান্ত কণ্ঠে বললোঃ মৃত ছেলেকেই আমার কাছে দাও

ডাক্তার মৃত শিশুটিকে তার মায়ের কোলে দিল। সালমা তাকে বুকে জড়িয়ে দেওয়ালের দিকে চেয়ে বলতে লাগলোঃ তুমি এসেছিলে তীরের পথ দেখাতে; হে আমার পুত্র, তুমি আমার সামনে চলো যাতে আমরা এই অন্ধকার গুহা থেকে যেতে পারি।

মূহুর্তকাল পর সূর্যের আলো প্রবেশ করলো জানালার পর্দা ভেদ করেএকাধারে মাতৃত্বের সমীহঘেরা এবং মৃত্যুর ছায়াঘেরা শয্যায় পড়ে থাকা নিথর দুটি দেহে সকালের রোদ এসে পড়লো।

ডাক্তারটি সেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে কাঁদতে কাঁদতে যখন বড় হলঘরটিতে ঢুকলেন, অভিনন্দন জানাতে আসা লোকেদের উচ্ছ্বাস আর্তনাদে পরিণত হলো কেবল মানসুরের আওয়াজ বেরলো না, তার দীর্ঘশ্বাসও পড়লো না, একফোঁটা অশ্রু নির্গত হলো না, এমনকি একটা শব্দও বেরলো না হাতের গ্লাস হাতেই থেকে গেল, মানসুর পাথরের মূর্তির মতো নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো

পরের দিন, সালমাকে বিয়ের সাদা গাউনে আবৃত করে কফিনে রাখা হলোতার উপর চড়ানো ছিল ধবধবে সাদা মখমলের আবরণ আর শিশুটির কাফন ছিল সেই উষ্ণ বস্ত্রখণ্ডটি, কফিন ছিল মায়ের বাহুদ্বয় ও কবর ছিল মায়ের প্রশান্ত বুকএকই কফিনে দুটি মরদেহ নিয়ে এক অস্বস্তিকর নীরবতার মধ্যে মানুষ দলবদ্ধভাবে এগিয়ে চললো আমিও পা মেলালাম তাদের সঙ্গে, যদিও তারা আমাকে চেনে না জানেও না

কবরস্থানে পৌঁছনোর পর, বিশপ মিত্বরান গালিব দৃঢ়কণ্ঠে কিছু পড়তে লাগলো; পাদ্রীরা কফিনের পাশে দাঁড়িয়ে সুর করে ভাবলেশহীন মুখে প্রার্থনা করতে লাগলো কেউ একজন ফিসফিসিয়ে বলে উঠলোঃ একই কফিনে দুটি দেহ এই প্রথম দেখলাম! অপর একজন বললোঃ তাকে স্বামীর অত্যাচার আর কঠোরতা থেকে নিষ্কৃতি দিতেই যেন শিশুটি এসেছিল আর একজন বললোঃ মানসুরের দিকে দেখো! কেমন শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, যেন সে তার স্ত্রী-সন্তান কিছুই হারায়নি শেষের জন বললোঃ ওকে তো কালই ওর পিতৃব্য একটা বিত্তশালিনী, শক্তসমর্থ মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবে

পাদ্রীদের প্রার্থনার সঙ্গে সঙ্গে কবরে মাটি দেওয়া সম্পন্ন হলো লোকেরা মিত্বরান ও মানসুরকে মিষ্টি কথায় সান্ত্বনা দিয়ে একে একে বিদায় নিচ্ছিলো। কেবল আমি একাকী দাঁড়িয়ে রইলাম আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ারও কেউ নেই, যেন সালমা ও তার শিশু আমার কোনো নিকটাত্মীয়ই নয়

বিদায় জানাতে আসা লোকগুলো ফিরে গেলো কবর খননকারীরা কোদাল, বেলচা নিয়ে নতুন কবরটির পাশে দাঁড়িয়ে ছিল আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলামঃ আচ্ছা, ফারিস কারামার কবরটা কোথায়?

সে আমার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে সালমার কবরটিই দেখিয়ে দিলো,বললোঃ এই কবরেই তার বুকে তার কন্যাকে রাখলাম; আর কন্যাটির বুকে রাখলাম তার শিশুসন্তানকেতারপর সকলের উপর এই বেলচা দিয়ে মাটি চাপা দিয়েছি

আমি উত্তর দিলামঃ এই কবরেই আমি আমার হৃদয়কেও সমাহিত করেছি

কবর খননকারীরা গাছপালার আড়ালে চলে যাওয়ার পর, আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। আমি সালমার কবরের উপর আছড়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম
                                                                                                                      


المنقذ

جبران خليل جبران

 

ومرت خمسة أعوام على زواج سلمى ولم ترزق ولداً ليوجد بكيانه العلاقة الروحية بينها وبين بعلها ويقرب بابتسامته نفسيهما المتنافرتين مثلما يجمع الفجر بين أواخر الليل وأوائل النهار.

 

والمرأة العاقر مكروهة في كل مكان لأن الأنانية تصور لأكثر الرجال دوام الحياة في أجساد الأبناء فيطلبون النسل ليظلوا خالدين على الأرض.

 

إن الرجل المادي ينظر إلى زوجته العاقر بالعين التي يرى بها الانتحار البطيء فيمقتها ويهجرها ويطلب حتفها كأنها عدو غدار يريد الفتك به، ومنصور بك غالب كان مادياً كالتراب وقاسياً كالفولاذ وطامعاً كالمقبرة وكانت رغبته بابن يرث اسمه وسؤدده تكرهه بسلمى المسكينة وتحوّل محاسنها في عينيه إلى عيوب جهنمية..

 

إن الشجرة التي تنبت في الكهف لا تعطي ثمراً، وسلمى كرامة كانت في ظل الحياة فلم تثمر أطفالاً؛ إن البلبل لا يحوك عشاً في القفص كيلا يورث العبودية لفراخه. وسلمى كرامة كانت سجينة الشقاء فلم تقسم السماء حياتها إلى أسيرين؛ إن أزاهر الأودية هي أطفال يلدها انعطاف الشمس وشغف الطبيعة و أطفال البشر أزاهر يلدها الحب والحنو، فسلمى كرامة لم تشعر قط بأنفاس الحنو وملامس الانعطاف في ذلك المنزل الفخم القائم على شاطئ البحر في رأس بيروت، ولكنها كانت تصلي في سكينة الليالي ضارعة أمام السماء لتبعث إليها بطفل يجفف بأصابعه الوردية دموعها ويزيل بنور عينيه خيال الموت من قلبها.

 

وقد صلت سلمى متوجعة حتى ملأت الفضاء صلاة وابتهالاً وتضرعت مستغيثة حتى بدّد صراخها الغيوم، فسمعت السماء ندائها وبثت في أحشائها نغمة مختمرة بالحلاوة والعذوبة وأعدتها بعد خمسة أعوام من زواجها لتصيّرها أما وتمحو ذلها وعارها.

 

الشجرة النابتة في الكهف قد أزهرت لتثمر.

البلبل المسجون في القفص قد هم ليحوك عشاً من ريش جناحيه.

القيثارة التي طرحت تحت الأقدام قد وضعت في مهب نسيم المشرق ليحرك بأمواجه ما بقي من أوتارها.

سلمى كرامة المسكينة قد مدت ذراعيها المكبلتين بالسلاسل لتقبل موهبة السماء.

 

وليس بين أفراح الحياة ما يضارع فرح المرأة العاقر عندما تهيئها النواميس الأزلية لتصيرها أما، كل ما في يقظة الربيع من الجمال، وكل ما في مجيء الفجر من المسرة يجتمع بين أضلع المرأة التي أحرمها الله ثم أعطاها.

لا يوجد نور أشد سطوعاً وأكثر لمعاناً من الأشعة التي يبعثها الجنين السجين في ظلمة الأحشاء.

 

وكان نيسان (أبريل) قد جاء متنقلاً بين الروابي والمنحدرات عندما تمت أيام سلمى لتلد بكرها، وكأن الطبيعة قد وافقتها وعاهدتها فأخذت تضع حمل أزاهرها وتلف بأقمطة الحرارة أطفال الأعشاب والرياحين.

 

مضت شهور الانتظار وسلمى تترقب الخلاص مثلما يترقب المسافر طلوع كوكب الصباح، وتنظر إلى المستقبل من وراء دموعها فتراه مشعشعاً وقد طالما ظهرت الأشياء القاتمة متلمعة من خلال الدموع.

 

ففي ليلة وقد طافت أشباح الظلام بين تلك المنازل في رأس بيروت، انطرحت سلمى على مضجع المخاض والأوجاع فانتصب الموت والحياة يتصارعان بجانب فراشها، ووقف الطبيب والقابلة ليقدما إلى هذا العالم ضيفاً جديداً، وسكنت حركة عابري الطريق وانخفضت نغمة أمواج البحر ولم يعد يسمع في ذلك الحي سوى صراخ هائل يتصاعد من نوافذ منزل منصور بك غالب.. صراخ انفصال الحياة من الحياة.. صراخ محبة البقاء في فضاء اللاشيء والعدم.. صراخ قوة الإنسان المحدودة أمام سكينة القوى غير المتناهية. صراخ سلمى الضعيفة المنطرحة تحت أقدام جبارين: الموت والحياة.

 

عندما لاح الفجر ولدت سلمى ابناً، ولما سمعت إهلاله فتحت عينيها المغلقتين بالألم ونظرت حواليها فرأت الأوجه متهللة في جوانب تلك الغرفة.. ولما نظرت ثانية رأت الحياة والموت ما زالا يتصارعان بقرب مضجعها فعادت وأغمضت عينيها وصرخت لأول مرة “يا ولدي”. ولفت القابلة الطفل بالأقمطة ووضعته حذاء أمه، أما الطبيب فظل ينظر بعينين حزينتين نحو سلمى ويهز رأسه صامتاً بين الدقيقة والأخرى.

 

وأيقظت نغمة الفرح بعض الجيران فجاؤوا بملابس النوم ليهنئوا الوالد بولده، أما الطبيب فبقي ينظر بعينين كئيبتين نحو الوالدة وطفلها.

 

وأسرع الخدم نحو منصور بك ليبشروه بقدوم وريثه ويملؤوا أيديهم من عطاياه أما الطبيب فلبث واقفاً ينظر بعينين يائستين إلى سلمى وابنها.

 

ولما طلعت الشمس قربت سلمى ولدها من ثديها ففتح عينيه لأول مرة ونظر في عينها ثم اختلج وأغمضها لآخر مرة. فدنا الطبيب وأخذه من بين ذراعيها وانسكبت على وجنتيه دمعتان كبيرتان ثم همس في سره قائلاً “هو زائر راحل؟

 

مات الطفل وسكان الحي يفرحون مع الوالد في القاعة الكبرى ويشربون نخبه ليعيش طويلاً، وسلمى المسكينة تحدق بالطبيب وتصرخ قائلة “أعطني ولدي لأضمه” ثم تحدق ثانية فترى الموت والحياة يتصارعان بجانب سريرها.

 

مات الطفل ورنة الكؤوس تنمو بين أيدي الفرحين بمجيئه.

 

ولد مع الفجر ومات عند طلوع الشمس

 

ولد مع الفجر ومات عند طلوع الشمس، فأي بشري يستطيع أن يقيس الزمن ليخبرنا ماذا كانت الساعة التي تمر بين مجيء الفجر وطلوع الشمس. هي أقصر من الدهر الذي يمر بين ظهور الأمم وتواريها.

 

ولد كالفكر ومات كالتنهدة واختفى كالظل فأذاق سلمى كرامة طعم الأمومة ولكنه لم يبق ليسعدها ويزيل يد الموت عن قلبها..

 

حياة قصيرة ابتدأت بنهاية الليل وانقضت بابتداء النهار فكانت مثل قطرة الندى التي تسكبها أجفان الظلام ثم تجفهها ملامس النور.

 

كلمة لفظتها النواميس الأزلية ثم ندمت عليها وأعادتها إلى سكينة الأبدية.

 

لؤلؤة قذفها المد إلى الشاطئ ثم جرفها الجزر إلى الأعماق.

 

زنبقة ما انبثقت من كمام الحياة حتى انسحقت تحت أقدام الموت.

 

ضيف عزيز ترقبت سلمى قدومه ولكنه ما حل حتى ارتحل وما فتح مصراعي الباب حتى اختفى.

 

جنين ما صار طفلاً حتى صار تراباً: وهذه حياة الإنسان بل حياة الشعوب، بل حياة الشموس والأقمار والكواكب..

وحولت سلمى عينيها نحو الطبيب وتنهدت بشوق جارح ثم صرخت قائلة “أعطني ابني لأضمه بذراعي… أعطني ولدي لأرضعه..”

 

فنكس الطبيب رأسه وقال والغصات تخرسه “قد مات طفلك يا سيدتي فتجلدي وتصبري لكي تعيشي بعده.

 

فصرخت سلمى بصوت هائل ثم سكتت هنيهة، ثم ابتسمت ابتسامة فرح ومسرة، ثم تهلل وجهها وكأنها عرفت شيئاً لم تكن تعرفه وقالت بهدوء “أعطني جثة ولدي، قربه مني ميتاً”.

 

فحمل الطبيب الطفل الميت ووضعه بين ذراعيها فضمته إلى صدرها وحولت وجهها نحو الحائط وقالت تخاطبه “قد جئت لتأخذني يا ولدي، قد جئت لتدلني على الطريق المؤدية إلى الساحل، ها أنذا يا ولدي فسر أمامي لنذهب من هذا الكهف المظلم”.

 

وبعد دقيقة دخلت أشعة الشمس من بين ستائر النافذة وانسكبت على جسدين هامدين منطرحين على مضجع تخفره هيبة الأمومة وتظلله أجنحة الموت.

 

فخرج الطبيب باكياً من تلك الغرفة، ولما بلغ القاعة الكبرى تبدلت تهاليل المهنئين بالصراخ والعويل، أما منصور بك غالب فلم يصرخ ولم يتنهد ولم يذرف دمعة ولم يفه بكلمة بل لبث جامداً منتصباً كالصنم قابضاً بيمينه على كأس الشراب.

 

وفي اليوم التالي كفنت سلمى بأثواب عرسها البيضاء ووضعت في تابوت موشى بالمخمل الناصع، أما طفلها فكانت أقمطة أكفانه وتابوته ذراعي أمه وقبره صدرها الهادئ.

 

حملوا الجثتين في نعش واحد مشوا ببطء متلف يشابه طرقات القلوب في صدور المنازعين فسار المشيعون وسرت بينهم وهم لا يعرفونني ولا يدرون ما بي.

 

بلغوا المقبرة فانتصب المطران بولس غالب يرتل ويعزم ووقف الكهان حوله ينغمون ويسبحون.

 

ولما أنزلوا التابوت إلى أعماق الحفرة همس أحد الواقفين: قائلاً: هذه أول مرة رأيت فيها جسدين يضمهما تابوت واحد."

 

وقال آخر: "تأملوا بوجه منصور بك فهو ينظر إلى الفضاء بعينين زجاجيتين كأنه لم يفقد زوجته وطفله في يوم واحد."

 

وظل الكهان يرتلون ويسبحون حتى فرغ حفار القبور من ردم الحفرة فأخذ المشيعون إذ ذاك يقتربون واحداً واحداً من المطران وابن أخيه يصبرونهما ويواسونهما بمستعذبات الكلام.

 

أما أنا فبقيت واقفاً منفرداً وحدي وليس من يعزيني على مصيبتي كأن سلمى وطفلها لم يكونا أقرب الناس إليّ.

عاد المشيعون وبقي حفار القبور منتصباً بجانب القبر الجديد وفي يده رفشه ومحفره، فدنوت منه وسألته قائلاً:

"أتذكر أين قبر فارس كرامة؟

 

فنظر إلي طويلاً ثم أشار نحو قبر “سلمى” وقال: "في هذه الحفرة قد مددت ابنته على صدره، وعلى صدر ابنته مددت طفلها وفوق الجميع قد وضعت التراب بهذا الرفش."

 

فأجبته: "وفي هذه الحفرة أيضاً قد دفنت قلبي أيها الرجل… فما أقوى ساعديك."

ولما توارى حفار القبور وراء أشجار السرو خانني الصبر والتجلد فارتميت على قبر “سلمى" أبكيها… وأرثيها. 

(الأجنحة المتكسرة)