Tuesday 30 April 2019

আল-কুরআনের ভাবানুবাদঃ (৪৭) সূরাতু মুহাম্মাদ (নবী মুহাম্মদ সাঃ)



৪৭) সূরাতু মুহ়াম্মাদ (নবী মুহাম্মদ সাঃ)
মদীনায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩৮, রুকু
 
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে (আরম্ভ করছি)

الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ

যারা কুফ্‌রি করে (অর্থাৎ এক আল্লাহ্‌ ও তাঁর নবী (সাঃ) ও দ্বীনকে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করে) এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে, আল্লাহ তাদের সকল কর্ম নষ্ট করে দেন।

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَآمَنُوا بِمَا نُزِّلَ عَلَى مُحَمَّدٍ وَهُوَ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ كَفَّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَأَصْلَحَ بَالَهُمْ

তবে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি যে সত্য অবতীর্ণ করা হয়েছে সেই সত্যকে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের অবস্থা ভাল করে দেন।

ذَلِكَ بِأَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا اتَّبَعُوا الْبَاطِلَ وَأَنَّ الَّذِينَ آمَنُوا اتَّبَعُوا الْحَقَّ مِن رَّبِّهِمْ كَذَلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ لِلنَّاسِ أَمْثَالَهُمْ

আর তা এ কারণে যে, কাফেরেরা বাতিল (অর্থাৎ মিথ্যা) পথ অনুসরণ করে এবং ঈমানদার লোকেরা নিজ পালনকর্তার নিকট থেকে আগত সত্যকে অনুসরণ করে। এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য তাদের দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।

فَإِذا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا فَضَرْبَ الرِّقَابِ حَتَّى إِذَا أَثْخَنتُمُوهُمْ فَشُدُّوا الْوَثَاقَ فَإِمَّا مَنًّا بَعْدُ وَإِمَّا فِدَاء حَتَّى تَضَعَ الْحَرْبُ أَوْزَارَهَا ذَلِكَ وَلَوْ يَشَاء اللَّهُ لَانتَصَرَ مِنْهُمْ وَلَكِن لِّيَبْلُوَ بَعْضَكُم بِبَعْضٍ وَالَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعْمَالَهُمْ

অতঃপর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে, তখন তাদের গর্দানে আঘাত হানবে, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত করে ফেলবে তখন তাদেরকে শক্ত করে বেড়িতে বাঁধবেঅতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ ও অনুকম্পা করবে (অর্থাৎ কোনো রকম মুক্তিপণ ছাড়াই তাদেরকে মুক্ত করে দেবে), না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ আদায় করবে(এবং তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে) যতক্ষণ না শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে! এটাই (আল্লাহ্‌র) বিধানআল্লাহ ইচ্ছা করলে নিজেই তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিতে পারতেন; কিন্তু তিনি তোমাদের এক শ্রেণীকে আরেক শ্রেণীর মাধ্যমে পরীক্ষা করতে চান। আর যারা আল্লাহর পথে শহীদ হ, আল্লাহ কখনই তাঁদের কর্মসমূহ নষ্ট করবেন না।

سَيَهْدِيهِمْ وَيُصْلِحُ بَالَهُمْ

বরং তিনি তাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন এবং তাদের অবস্থা ভালো করে দেবেন

وَيُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمْ

অতঃপর তাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার কথা তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন (ফলে তাঁরা জান্নাতে নিজেদের স্থান খুব ভালোভাবেই চিনতে পারবেন)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ

হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে (অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে) সাহায্য করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা (অর্থাৎ অবস্থান) দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন।

وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَّهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ

আর যারা (আল্লাহ্‌র একত্ববাদকে) অবিশ্বাস ও অস্বীকার করে, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্মসমূহ নষ্ট করে দেবেন

ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

আর তা এজন্য যে, আল্লাহ যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন (অর্থাৎ আল্‌-কুরআন ও ইসলামী বিধান) তারা সে-সবগুলোকে অপছন্দ করেআর তারই ফলস্বরূপ আল্লাহ তাদের যাবতীয় কর্মসমূহ ব্যর্থ ও নষ্ট করে দেবেন

أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ دَمَّرَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلِلْكَافِرِينَ أَمْثَالُهَا

তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না, দেখে না যে, তাদের পূর্ববর্তী লোকেদের পরিণাম কী হয়েছে? আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। এবং কাফেরদের জন্য এ ধরণের পরিণামেরই ব্যবস্থা রয়েছে।

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَأَنَّ الْكَافِرِينَ لَا مَوْلَى لَهُمْ

আর সব এজন্য যে, আল্লাহ মুমিনদের মাওলা (অর্থাৎ তাদের অভিভাবক, অধিপতি, সাহায্যকারী, ত্রাতা ও হিতৈষী বন্ধু)। আর কাফেরদের কোনো হিতৈষী বন্ধু ও অভিভাবক নেই

إِنَّ اللَّهَ يُدْخِلُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ

যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। কিন্তু যারা অবিশ্বাস ও অস্বীকার করে তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম।

وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ هِيَ أَشَدُّ قُوَّةً مِّن قَرْيَتِكَ الَّتِي أَخْرَجَتْكَ أَهْلَكْنَاهُمْ فَلَا نَاصِرَ لَهُمْ

যে জনপদ তোমাকে বহিস্কার করেছে, তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী বহু জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। (কেউই তাদেরকে বাঁচাতে পারেনি, এমনকি) তাদেরকে সাহায্য করার কেউ ছিল না।

أَفَمَن كَانَ عَلَى بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ كَمَن زُيِّنَ لَهُ سُوءُ عَمَلِهِ وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءهُمْ

যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে, সে কি ওই ব্যক্তির মতো যার কাছে তার মন্দ কর্মগুলোকে শোভনীয় করা হয়েছে এবং যারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে (অর্থাৎ নিজেদের খেয়াল-খুশী মতো চলে)?

مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاء غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوا مَاء حَمِيمًا فَقَطَّعَ أَمْعَاءهُمْ

সংযমশীল ও আল্লাহ্‌ভীরু লোকেদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার অবস্থা ও দৃষ্টান্ত হচ্ছে যে, তাতে রয়েছে স্বচ্ছ ও সুপেয় জলে নহর, এমন দুধের নহর যারা স্বাদ কোনোদিনও পরিবর্তন হবে না, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তাছাড়া তাদের জন্য সেখানে রয়েছে রকমারি ফল-মূল এবং তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। এই আল্লাহ্‌ভীরু লোকেরা কি তাদের মতো, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করানো হবে ফুটন্ত জল। অতঃপর সেই ফুটন্ত জল তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে?

وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ حَتَّى إِذَا خَرَجُوا مِنْ عِندِكَ قَالُوا لِلَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ مَاذَا قَالَ آنِفًا أُوْلَئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ وَاتَّبَعُوا أَهْوَاءهُمْ

তাদের মধ্যে কিছুজন তোমার কথা শোনে। অতঃপর যখন তোমার কাছ থেকে বেরিয়ে যায়, তখন যারা শিক্ষিত তাদেরকে বলে এইমাত্র তিনি কী বললেন? এদের অন্তরে আল্লাহ মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এরাই নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে খেয়াল-খুশী মতো কাজ করে।

وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْواهُمْ

আর যারা সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে, আল্লাহ্‌ তাদের সুপথপ্রাপ্তিকে বাড়িয়ে দেন এবং তাদেরকে তাকওয়া ও সংযমশীলতা দান করেন।

فَهَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً فَقَدْ جَاء أَشْرَاطُهَا فَأَنَّى لَهُمْ إِذَا جَاءتْهُمْ ذِكْرَاهُمْ

তারা শুধু কেয়ামতেরই অপেক্ষা করছে যে, কেয়ামত অকস্মাৎ তাদের কাছে এসে পড়ুক। তবে কেয়ামতের লক্ষণসমূহ তো এসেই পড়েছে। সুতরাং কেয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে ?

فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ

সুতরাং তুমি জেনে রাখো যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো (সত্য) উপাস্য নেই। এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো তোমার নিজের ক্রটির জন্য এবং মুমিন নর-নারীদের জন্য(এও জেনে রাখো যে,) মহান আল্লাহ তোমাদের (সকল) গতিবিধি এবং অবস্থান সম্পর্কে অবগত আছেন

وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُوا لَوْلَا نُزِّلَتْ سُورَةٌ فَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ مُّحْكَمَةٌ وَذُكِرَ فِيهَا الْقِتَالُ رَأَيْتَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ نَظَرَ الْمَغْشِيِّ عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ فَأَوْلَى لَهُمْ

ঈমানদার লোকেরা বলে, একটি সূরা অবতীর্ণ করা হয়নি কেন? অতঃপর যখন কোনো দ্ব্যর্থহীন ও স্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট সূরা অবতীর্ণ করা হয় এবং তাতে জেহাদের উল্লেখ করা হয়, তখন তুমি দেখবে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তারা মৃত্যু ভয়ে বিহ্বল ও মূর্ছা যাওয়া মানুষের মত তোমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেঅথচ তাদের জন্য এ মর্মে উপযুক্ত নীতি হল

طَاعَةٌ وَقَوْلٌ مَّعْرُوفٌ فَإِذَا عَزَمَ الْأَمْرُ فَلَوْ صَدَقُوا اللَّهَ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ

আনুগত্য করা ন্যায়সঙ্গত কথা বলাঅতঃপর যখন জেহাদের সিন্ধান্ত চূড়ান্ত হবে তখন তারা যদি আল্লাহর প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করে তবে তা তাদের জন্যে অতি অবশ্যই মঙ্গলজনক হবে।

فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِن تَوَلَّيْتُمْ أَن تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ

তোমরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে যে তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়স্বজনদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে।

أُوْلَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ

(তোমাদের মতো) এমন (বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ও সম্পর্ক ছিন্নকারী) লোকেদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন। অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করে দিয়েছেন

أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

আচ্ছা, তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? না কি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ রয়েছে?

إِنَّ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْهُدَى الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ

নিশ্চয় যারা তাদের নিকট সুপথ স্পষ্ট হওয়ার পরেও তার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে মুখ ফিরিয়ে নেয়, শয়তান তাদের নিকট তাদের এই কাজকে সুন্দর করে তোলে এবং তাদেরকে মিথ্যা আশা ডুবিয়ে রাখে

ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لِلَّذِينَ كَرِهُوا مَا نَزَّلَ اللَّهُ سَنُطِيعُكُمْ فِي بَعْضِ الْأَمْرِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ إِسْرَارَهُمْ

আর এসব এজন্য যে, যারা আল্লাহর অবতীর্ণ গ্রন্থ ও নির্দেশিত পথকে অপছন্দ করে তাদের কাছে গিয়ে এরা বলে, আমরা বেশ কিছু বিষয়ে তোমাদের কথা মেনে চলবো অথচ মহান আল্লাহ তাদের সকল গোপন বিষয় ও পরামর্শ সম্পর্কে অবগত

فَكَيْفَ إِذَا تَوَفَّتْهُمْ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ

ফেরেশতা যখন তাদের মুখমণ্ডল ও পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে তাদের প্রাণ হরণ করবে, তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে?

ذَلِكَ بِأَنَّهُمُ اتَّبَعُوا مَا أَسْخَطَ اللَّهَ وَكَرِهُوا رِضْوَانَهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ

(তাদের অমন অবস্থা হবে) কেননা, তারা সে-সব বিষয়ের অনুসরণ করে যে বিষয়গুলি আল্লাহ্‌র ক্রোধ অ অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনকেও অপছন্দ করে। তারই ফলস্বরূপ মহান আল্লাহ্‌ তাদের কর্মসমূহ নষ্ট করে দেন

أَمْ حَسِبَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ أَن لَّن يُخْرِجَ اللَّهُ أَضْغَانَهُمْ

তাছাড়া, যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ তাদের অন্তরের বিদ্বেষ কখনই প্রকাশ করবেন না?

وَلَوْ نَشَاء لَأَرَيْنَاكَهُمْ فَلَعَرَفْتَهُم بِسِيمَاهُمْ وَلَتَعْرِفَنَّهُمْ فِي لَحْنِ الْقَوْلِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ أَعْمَالَكُمْ

আমি ইচ্ছা করলে তোমাকে তাদের পরিচয় দিয়ে দিতাম। আর তখন তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারতে তবে তুমি তাদেরকে অবশ্যই চিনতে পারবে তাদের কথার ভঙ্গী দেখে(সর্বাবস্থায় মনে রেখো যে,) মহান আল্লাহ তোমাদের সকল কাজকর্মের খবর রাখেন।

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ

আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো যতক্ষণ না তোমাদের মধ্যে কারা সংগ্রামী এবং ধৈর্যশীল যাচাই করে নিই; এবং যতক্ষণ না তোমাদের কর্ম ও অবস্থান যাচাই করে নিই

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَشَاقُّوا الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الهُدَى لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَالَهُمْ

নিশ্চয় যারা (আল্লাহ্‌ ও তাঁর নবী সাঃ-কে) অস্বীকার করে, আল্লাহ্‌র পথে বাধা সৃষ্টি করে (অর্থাৎ মানুষজনকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে) এবং তাদের নিকট সুপথ স্পষ্ট হওয়ার পরেও রাসূল (সাঃ)-এর বিরোধিতা করে, তারা কখনই আল্লাহর কোনও ক্ষতি করতে পারবে নাতবে আল্লাহ্‌ তাদের সকল কাজকর্ম নষ্ট করে দেবেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসূল (সাঃ)-এর আনুগত্য করো এবং (আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)-এর আদেশ অমান্য করে) নিজেদের কর্ম বিনষ্ট করো না।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ مَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ

নিশ্চয় যারা (ইসলামকে) অস্বীকার করে এবং আল্লাহর পথ হতে মানুষজনকে বিরত রাখে, অতঃপর কাফের অবস্থাতেই মৃত্যু বরণ করে, (সর্বশক্তিমান) আল্লাহ কখনই তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।

فَلَا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَن يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ

অতএব তোমরা হীনবল হয়ে সন্ধির আহ্বান করো না। কেননা তোমরাই বিজয়ী হবে কারণ মহান আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন (অর্থাৎ তাঁর সাহায্য তোমাদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে) এবং তিনি কখন তোমাদের কর্মফল নষ্ট করবেন না (আর না তোমাদের কর্ম হ্রাস করবেন)

إِنَّمَا الحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا يُؤْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ

(মনে রেখো,) পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা; আর (এই জীবনে) তোমরা যদি বিশ্বাসী হও (অর্থাৎ ঈমান নিয়ে আসো) এবং সংযমের পথ অবলম্বন করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে (উত্তম) বিনিময় প্রদান করবেন। তিনি তো কখনই তোমাদের থেকে তোমাদের ধন-সম্পদ চান না।

إِن يَسْأَلْكُمُوهَا فَيُحْفِكُمْ تَبْخَلُوا وَيُخْرِجْ أَضْغَانَكُمْ

তিনি তোমাদের কাছে ধন-সম্পদ চাইলে, অতঃপর তার জন্য তোমাদেরকে অতিষ্ঠ করলে তোমরা তো কার্পণ্য করবে। আর তিনি তোমাদের মনের সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষ প্রকাশ করে দেবেন।

هَاأَنتُمْ هَؤُلَاء تُدْعَوْنَ لِتُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبْخَلُ وَمَن يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاء وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ

শোনো, তোমাদেরকেই তো আল্লাহর পথে ব্যয় করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। তবে তোমাদের অনেকেই কৃপণতা করছে। আর যারা কৃপণতা করছে, বস্তুত তারা নিজেদের প্রতিই কৃপণতা করছে। আল্লাহ তো অভাবমুক্ত; বরং তোমরা অভাবগ্রস্থ। অতএব তোমরা যদি (তাঁর পথ হতে) মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তিনি অন্য এক জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন আর তারা তোমাদের মত (সত্য হতে বিমুখ ও অবাধ্য) হবে না।

ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম