আয়েশার মৃত্যুঃ আত্মহনন না সমাজহনন
আয়েশার ভিডিওটা বেশ ক’বার দেখলাম। একটা মানুষ কতটা ডিপ্রেস্ড হলে অমন ভাবে হেসেখেলে জীবন দিতে পারে! তার জীবন কতটা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল যে মৃত্যুর আগে সে কামনা করছে তাকে আর কোনো মানুষের মুখোমুখি হতে হবে না। হয়তো সমাজ আত্মহনন বলে তার পরিস্থিতিকে লঘু করে দেখবে; আরও হালকা করে দেবে তাদের পাপের বোঝা যারা আয়েশার ওই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এক্ষেত্রে শুধু তার স্বামী-শ্বশুর বাড়ির লোকই শুধু দায়ী নয়। কোথাও না কোথাও পুরো সমাজ, আমরা সবাই দায়ী। আমাদের অত্যাধিক লোভ, লালসা দায়ী।
অনেকে ভাবতে পারেন, আয়েশা চাইলে তালাকের পথ বেছে নিতে পারতো। তা অবশ্যই পারতো, কিন্তু আমাদের সমাজে তালাকের পথ কি অতই সহজ! বিশেষ করে একটি মেয়ে যদি তালাক চায় তখন সমাজ ওই মেয়েকেই মনে মনে দোষী সাব্যস্ত করে তার কপালে নানা ধরণের কালি লেপন করে দেয়। কেউ একবারও ভেবে দেখে না, একটা মেয়ে তার সংসার কেন ছাড়তে চাইছে!
এর পাশাপাশি মা-বাবারাও অনেক ক্ষেত্রে বড্ড বেশি দায়ী। সে ছেলের হোক বা মেয়ের। ছেলের মা-বাবা ছেলের খুশী, পছন্দ-অপছন্দের চেয়ে সমাজে নিজের পজিশন, মানসম্মান ইত্যাদি দেখনদারির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়। ঠিক তেমনই মেয়ের বাবামায়েরাও। মেয়ের পছন্দ, রুচি কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করেই নিজের মনমর্জি করে। সোনায় মেপে জামাই নেবে, নিজের সব কিছু বিক্রি করে হলেও। আর সোনার ওই পাহাড়ের মাঝে মেয়েটা কতটা খুশী থাকবে তার একটা ছবি নিজের মতো করে অগ্রিম কল্পনা করে বসে থাকে।
সব কিছুতেই একটা বস্তুবাদী মনোভাবকে উভয় পক্ষই এত বেশি প্রাধান্য দেয় যে, ছেলে হোক বা মেয়ে তার যে কোথাও একটা নিজস্বতা আছে, কিছু ইমোশনস আছে, তার নিজেরও যে ভালোমন্দের একটা মানদণ্ড আছে, সে-সবকিছুই উপেক্ষিত থেকে যায়। আর সেখান থেকেই শুরু হয় হতাশা। জন্ম নেউ ডিপ্রেশন। কেউ সেই ডিপ্রেশনকে সামলে কোনোরকমে ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটায় তো কেউ বেশামাল হয়ে আত্মহনন নিষিদ্ধ ও মহাপাপ জেনেও আয়েশাদের পথ বেছে নেয়। কারণ সমাজের জটিল ব্যাকরণের অজুহাত তার সামনে যে আর কোনো পথ খোলা রাখে না!আব্দুল মাতিন ওয়াসিম