Tuesday 29 September 2020

আমার প্রভু— লাম্‌ ইয়ালিদ ওয়ালাম্‌ ইউলাদ


আমার প্রভু— লাম্‌ ইয়ালিদ ওয়ালাম্‌ ইউলাদ
 
রাতের অন্ধকারে আকাশের কোলে হাসছে অসংখ্য তারকারাজি। তিনি ভাবলেন এদের আলো আছে, দীপ্তি ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে। এই বড় নক্ষত্রটি আমার প্রভু। কিছুক্ষণ পর যখন অস্তমিত হল, বলে উঠলেন, না না, এ আমার রব হতে পারে না। আমার প্রভু অস্তমিত হতে পারে না। একটু পরে দেখা দিল চাঁদ। জ্যোৎস্নায় প্লাবিত হল সব কিছু। মনকে বললেন, এই আমার রব, আমার প্রতিপালক। কিন্তু চাঁদ তাঁর নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে ডুব দিল। হারিয়ে গেল দৃষ্টির সীমানা থেকে। সূর্য উঠলো এবার। প্রখর তেজ নিয়ে। আকারেও বড়। না না, এই হল আসল প্রভু। আমার ঈশ্বর। কিন্তু দিনের শেষে যখন অন্ধকারের কাছে হেরে গেল সূর্যের কিরণগুলো। চিৎকার করে উঠলেন, এও আমার প্রভু হতে পারে না। আমার প্রভু চিরঞ্জীবী। কখনো অস্তমিত হতে পারে না। আমার প্রভু যে সব কিছুই সৃষ্টি করেছে। আকাশ, পৃথিবী, নিখিল বিশ্বের সব কিছুই। জীবন ও মরণ যার হাতে। তাঁর এই কথা শুনে বাদশাহ বলল, আমিও তো মানুষকে মৃত্যু দিই এবং জীবন দিই। তারপর বাদশাহ দু’জনকে ডেকে পাঠালএকজনকে ছেড়ে দিল আর অপর জনকে হত্যা করল। ইব্‌রাহিম (আ) বললেন— আচ্ছা, আমার প্রভু তো পূর্ব দিক থেকে সূর্যকে উদিত করেন, আপনি না হয় সূর্যকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করুন। নিরুত্তর হয়ে গেল সেই বাদশাহ।
 
ক’ শতাব্দী বাদে, তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র ইস্‌মাইলের বংশে, যমযম কূপের শহরে একজন তাঁর মতো করেই ঈশ্বরের ধারণা লালন করলেন মনে ও মননে। সমাজের কাছে তুলে ধরলেন তাঁর চেতনা, তাঁর বিশ্বাসের কথা। একত্ববাদ ও নবিত্বের কথা। সততা ও নিষ্ঠার কথা। সাম্য ও সৌহার্দের কথা। দাস ও মনিব, নারী ও পুরুষ, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ সবার অধিকারের কথা। গাছপালা, পশুপাখি সবার কথা। তাঁর কাছে একদিন ইহুদী জনগোষ্ঠীর একটি দল এসে প্রশ্ন করলো, আপনি বলেন, আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আচ্ছা, আল্লাহ্‌কে কে সৃষ্টি করেছে? তাঁর পিতৃপরিচয় কী? কোথায় তাঁর জন্ম? কিছুক্ষণ নীরব হয়ে বসে থাকলেন নবীজি (সা)তারপর একটি সূরা (আল্‌-কুরানের অধ্যায় ১১২) আল্‌-ইখ্‌লাসের মাধ্যমে তাদের উত্তর দিলেন—
“(হে মুহাম্মদ সা) তুমি (তাদের) বলে দাও, আল্লাহ্‌ এক, অদ্বিতীয়। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি (লাম্‌ ইয়ালিদ) এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি (ওয়ালাম্‌ ইউলাদ) (অর্থাৎ, না তাঁর পিতামাতা আছে, আর না কোনো সন্তান)আর না কেউ তাঁর সমকক্ষ ও সমতুল্য।
 
আর তাই, আমার ঈশ্বরের না কোনো জন্মতিথি আছে না কোনো জন্মস্থান। আমার মাবূদের না কোনো প্রতিমা আছে, না কোনো ছবি। আর কা’বা ঘর পবিত্রতম স্থান, আমার কিব্‌লা বা ডিরেকশন, আমার ইলাহ্‌ বা উপাস্য নয়। এবং এই কথা সেদিনই স্পষ্ট হয়ে গেছিল, যেদিন এক আফ্রিকান-আবিসিনিয়ান কৃষ্ণকায় দাস কা’বা ঘরের ছাদে চেপে আমার ঈশ্বরের মহিমা গেয়েছিলেন

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম  

Sunday 27 September 2020

উই উইল মিট এগেইন, তবে এখন বাড়িতে জামাআত



উই উইল মিট এগেইন, তবে এখন বাড়িতে জামা'আত  
 
এই অতিমারি শেষ হলে আবার দেখা হবে আমাদের, নিশ্চিত দেখা হবে ইন্‌ শা আল্লাহ্‌! তবে বর্তমানে আমরা যে সংকটময় সময় অতিবাহিত করছি, তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে হয়তো সবচেয়ে ভয়ানক ও কঠিন। আর এই কঠিন সময়ের মাঝেই আমাদের দ্বারে এসে উপস্থিত হয়েছে রমযান মাস। অত্যন্ত পবিত্র এবং আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসেই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়। এ মাসেই রয়েছে লায়লাতুল্‌ কাদ্‌র নামক পবিত্র রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
 
বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এই মাসের। ইবাদতের (উপাসনার) এই মাসে মানুষ আত্মসমালোচনা, আত্মসমীক্ষা এবং বছর জুড়ে নিজ কর্মকাণ্ডের হিসেবনিকেশ করে। নিজের ভুলভ্রান্তি শুধরে নিয়ে আগামীতে আরও ভালো মানুষ হওয়ার ব্রত গ্রহণ করে। ফাজ্‌র (ঊষাকাল) হতে মাগ্‌রিব (সূর্যাস্ত) পর্যন্ত পানাহার হতে বিরত থেকে সহজেই অনুমান করতে পারে অভাবী ও গরীবদুঃখীদের জ্বালা। তাই এ মাসে বেশী বেশী দান-খয়রাত করে, সাদ্‌কা দেয়, যাকাত আদায় করে, প্রতিবেশীর প্রতি সদয় হয়। সহজ করে বললে, উদাসীনতার খোলস ছেড়ে একটু একটু করে সচেতন হয় এবং এক পা-দু’ পা করে শান্তির পথে, সমৃদ্ধির পথে এগোতে থাকে।
 
তবে এবারের রমযান আর পাঁচটা রমযান থেকে অনেকটাই ভিন্ন রকমের। এই অতিমারির কারণে গত চারটে জুম’আ আমরা মসজিদে সালাত আদায় করতে পারিনি। এই রমযানে জুম’আ এবং তারাবিহ্‌র জামা’আতও হয়তো সম্ভব হবে না। তাই যেভাবে এতদিন ধরে পাঁচ-ওয়াক্ত নামায এবং জুম’আর বদলে যোহর বাড়িতে আদায় করে আসছি; একই ভাবে এই রমযানে আমাদেরকে তারাবিহ্‌র নামাযও হয়তো বাড়িতেই পড়তে হবে। সেক্ষেত্রে আমরা যে যার বাড়িতে নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামা’আত করে তারাবিহ্‌ ও অন্যান্য সালাত আদায় করতে পারি।
 
এই ছবিতে বাড়িতে জামা’আত করার পদ্ধতি অতিসংক্ষেপে দেখানো হয়েছে। তাই এবার হয়তো বাড়িতে জামা’আত করে নিজেরদের দুর্বলতা ও খামতিগুলো শোধরানর চেষ্টা করতে হবে; যতটা পারা যায়। সেই সাথে আমাদের এটাও ভেবে দেখতে হবে যে, এতদিন মসজিদ আমাদের ডাকতো, হাইইয়া ‘আলাস্‌ সালাহ্‌ (এসো সালাতের জন্য), হাইইয়া ‘আলাল্‌ ফালাহ্‌ (এসো সফল হওয়ার জন্য); কিন্তু আমরা অবহেলা করেছি। সাড়া দেয়নি সেই ডাকে। পাত্তা দিইনি দু’হাজার টাকা মাইনে পাওয়া মুয়াজ্জিনের। আর এখন মন কাঁদছে আমাদের মসজিদে যাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব; বিশেষ করে রমযানে। কিন্তু মুয়াজ্জিন সাহেব এখন আর আমাদেরকে ডাকেন না এখন পাঁচ-ওয়াক্ত আযানে তিনি বলছেন, আস্‌-সালাতু ফি বুইউয়ুতেকুম (নামায বাড়িতেই পড়ুন)তাই যতদিন না এই অতিমারি শেষ হয় বাড়িতেই নামায পড়ুন এবং ধৈর্য ধরুন। সাথে সোশাল ডিস্টেন্সিং ও মেডিকেল নির্দেশিকা মেনে চলুন। বেঁচে থাকলে ‘উই উইল মিট এগেইন’!

 আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
১৭ এপ্রিল ২০২০
বাঁশকুড়ি, দঃ দিনাজপুর 

Thursday 17 September 2020

মাতৃত্বের জার্নিঃ কোনো সমাপ্তি ও সীমারেখা নেই

 

মাতৃত্বের জার্নিঃ কোনো সমাপ্তি ও সীমারেখা নেই 

মা ব্যাট করছে আর ছেলে বল, ছেলে মা'কে বোল্ড করে দিয়ে উল্লসিত। মা'ও ছেলের সাফল্যে বাঁধন হারা। কোচ আসেনি দেখে ব্যাট হাতে ছেলেকে বোলিং প্র‍্যাক্টিস করানো, আউট হয়ে আনন্দ করা সবটাতেই উপচে পড়ছে মাতৃত্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এই দৃশ্যও কারো কারো চোখে ইসলামোফবিক। কারো চোখে, এত কিছুর মাঝে শুধু মায়ের পোষাকই ধরা পড়ল। ছবিটা ওপার বাংলার। তাই, ওপারের এক ক্রিকেটারের মায়ের কথা শুনুন! 

ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসের মা বলছি--  
"গত পরশু ফেসবুকে মা ও ছেলের ক্রিকেট অনুশীলনের একটা ছবি দেখলাম। কেউ একজন ছবিগুলো পোস্ট করেছেন।গত দু'দিন যাবৎ সেই ছবি নিয়ে ফেসবুকে তুমুল আলোচনা, সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পল্টন ময়দানে মা ঝর্ণা আকতার তার এগার বছরের ছেলে ইয়ামিন সিনান কে নিয়ে এসেছিলেন। তখন সময় সকাল আটটা কী নয়টা।মাঠে জন সমাগম ছিলনা বললেই চলে ।কোচ আসতে দেরি হচ্ছিল।তাই মা ব্যাট হাতে নিয়ে ছেলেকে বোলিং প্রাকটিস করাচ্ছিলেন। আমি বলবো ছেলের আবদার রক্ষা করছিলেন।কিংবা ছেলেকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। সেই মায়ের পোষাক নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। আমি মায়ের পোষাক নিয়ে কিছু বলতে  আসিনি।

এই ছবি দেখে আমার চোখে পানি এসে গেছে। এই ছবি আমাকে বারবার একটি কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে , সেটা হলো 'মাতৃত্ব '।মাতৃত্ব এমন একটা জার্নি যার শুরু আছে শেষ নেই।

এই মা সকাল বেলা সংসারের কাজ ফেলে, নানা ব্যস্ততার মধ্যেও ছেলেকে নিয়ে মাঠে হাযির হয়েছেন। হয়তো তার আরো একটি ছোট সন্তান আছে। সেই সন্তানটিকে কারো কাছে রেখে এসেছেন। এই মাকে দেখে আমার নিজের অতীতের কথা মনে পড়ে গেছে। আমিও আমার বড় সন্তান শাহরিয়ার নাফীসের বয়স যখন দশ বছর তখন তাকে নিয়ে মাঠে যাওয়া শুরু করেছিলাম। রোদ, বৃষ্টি,  ঝড় কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করিনি। আমি মনে করেছি নাফীস ওর পছন্দের পথে চলতে চায়। আর সেই পথের কাঁটা গুলো সরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার।   

ফেসবুকে ঝর্ণা আকতার-এর পোষাক নিয়ে নানা রকমের কথা উঠেছে। আমি মনে করি তার পোষাক নিয়ে আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আমাদের নবীদের স্ত্রীরা পর্দার ভিতরে থেকে ময়দানে যুদ্ধও করেছেন। ইয়ামিন এর মায়ের পোষাক নিয়ে তাহলে কেন এত কথা ? উনি কী এমন অন্যায় করেছেন ? বরং সন্তানের প্রতি কাতর একজন মা, বিভোর একজন মা তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন। পৃথিবী তে এমন কোন বান্ধব কেউ নেই যে মা'কে হার মানায়। এমন কোন আলো নেই যে মা'কে নিভিয়ে দেয়। এমন কোন ভালবাসা নেই যে তাকে পরাজিত করে।"

আসুন আমরা এই ছবিতে তার পোষাক নিয়ে সমালোচনা না করে একজন মা'কেই দেখি। প্রিয় সন্তানের জন্য মায়ের আত্মত্যাগটাকেই দেখি। আর মায়েদের এই ত্যাগ, এই কুরবানির কারণেই নবী (সাঃ) এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, তোমার উত্তম সাহচর্য, ভালোবাসা ও নম্র ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখেন তোমার মা। লোকটি আবারও একই প্রশ্ন করে। উত্তরে নবীজি বলেন, তোমার মা। তৃতীয় বার লোকটি ওই একই প্রশ্ন করে, আমার উত্তম আচরণের সবেচেয় বেশি অধিকারী কে? এবারও নবীজি বলেন, তোমার মা। চতুর্থ বার একই প্রশ্ন করলে, নবীজি বলেন, এবার তোমার বাবা। তারপরে অন্যান্য নিকটবর্তী লোকেরা।   

আর যুগ যুগ ধরে সন্তানের জন্য মায়েদের এমন আত্মত্যাগ ও কুরবানির ধারা চলে আসছে বলেই ইসলাম স্পষ্ট কণ্ঠে জানিয়েছে--
   "মায়ের পায়ের নীচে বেহেশত।"    

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 

Friday 4 September 2020

নিযার কাব্বানিঃ জেরুজালেম


জেরুজ়ালেম
নিযার ক়াব্বানি, সিরিয়া
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম  
 
জেরুজ়ালেম, তুমি নবীদের সৌরভে ভরা নগরী
স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝে সংক্ষিপ্ত সেতুবন্ধন  
তোমার জন্য আমি কেঁদে চলেছি অবিরাম  
যতক্ষণ না শুকিয়ে যায় আমার চোখের জল  
যতক্ষণ না প্রদীপ নেভে প্রার্থনা করেছি 
রুকু’ করেছি যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে পড়ি;   
আর জানতে চেয়েছি, তোমার বুকে
মুহাম্মদ (সা) ও যীশুর (আ) অবস্থান।
 
জেরুজ়ালেম, তুমি নানা ধর্মের মধ্যমণি
তুমি অগণন মিনারের নগরী
তুমি আঙুল-পোড়া এক অপরূপ কিশোরী
তুমি কুমারীর শহর, তোমার চোখ দু’টো আজ বিমর্ষ
তুমি শীতল-সুনিবিড় ছায়ায় ভরা এক মরুদ্যান
তোমার যে পথ ধ’রে হেঁটে ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী
আজ সে-পথের পাথরগুলোও কেমন বিষাদময়
তোমার মসজিদের মিনারগুলোও আজ অবসাদে ডুবে
জেরুজ়ালেম, তুমি আজ আঁধারে ঘেরা
তোমার পবিত্র কানীসাতুল্‌ ক়িয়ামাহ্‌ গির্জায়
এবার কে বাজাবে ঘন্টা, রোববারের সকালে?  
বড়দিনের রাতে শিশুদের হাতে
কে তুলে দেবে খেলনা?
 
জেরুজ়ালেম, তুমি বিষাদের নগরী
তোমার চোখের কোণে ইদানীং
ডগমগ করছে এক বিশাল অশ্রুবিন্দু   
কে প্রতিহত করবে শত্রুদের?
তোমাকেই করতে হবে, হে ধর্মসমূহের মধ্যমণি
পাথরের গায়ে লেগে থাকা এই ছাপ ছাপ রক্ত
তুমি ছাড়া আর কে ধোবে বলো? 
কে রক্ষা করবে বাইবেল?
কে রক্ষা করবে কোরআন?
কে বাঁচাবে যীশুকে, যীশুর হত্যাকারীদের থেকে?  
কে রক্ষা করবে মানুষকে, মানবসভ্যতাকে?
 
জেরুজ়ালেম, আমার প্রাণের শহর
আমার ভালোবাসার নগর, আগামীকাল
হ্যাঁ আগামীকাল তোমার লেবু গাছগুলোতে ফুল ফুটবে
আনন্দে নেচে উঠবে তোমার ক্ষেতে সবুজ শিষগুলো
এবং নেচে উঠবে বাগানে জ়ায়তুনের ডালপালা
হেসে উঠবে তোমার বিমর্ষ চোখ দু’টো
আর ফিরে আসবে অভিবাসী পায়রাগুলো
তোমার পবিত্র গৃহ-চূড়ায়
শিশুরা ফিরে যাবে খেলার মাঠে
মা-বাবা ও সন্তানেরা মিলিত হবে একসাথে
তোমার মুক্ত রাজপথে
জেরুজ়ালেম, আমার প্রাণের শহর
জ়ায়তুন ও শান্তির শহর, ভালোবাসার শহর!

 

[নিযার ক়াব্বানি সিরিয়ার জাতীয় কবি ও কূটনীতিক। জন্ম দামেস্কের এক বণিক পরিবারে ১৯২৩-এর ২১শে মার্চ। তবে বিখ্যাত নাট্যকার পিতামহ আবু খ়ালীল আল্‌-ক়াব্বানির প্রভাবে ছোট বেলাতেই কাব্যচর্চার শুরুবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ১৯৪৪ সালে প্রকাশ করেন প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ক়ালাত্‌ লি সাম্‌রাউ” (শ্যামা আমায় বলেছিল)নারী দেহের বর্ণনায় পরিপূর্ণ এই গ্রন্থটি সে সময় রক্ষণশীল সিরিয়ায় প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তরুণ প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি নারী-স্বাধীনতা, প্রেম, যৌনতা এবং রাজনীতি ছিল তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাঁধা ডিঙিয়ে নারী মুক্তির পক্ষে সোচ্চার হন তিনি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত “ত়ুফ়ূলাতু নাহ্‌দ” (স্তনের শৈশব) কাব্যগ্রন্থটি তাঁর খ্যাতি আরো বাড়িয়ে দেয়। তাঁর বহু কবিতা সঙ্গীত হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে সিরিয়া, লেবানন সহ অন্যান্য আরব দেশগুলোতে। আরবদের অসচেতন ও হেয়ালীপূর্ণ জীবনধারার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিল সুস্পষ্টআর তাই নিজের কিছু রচনায় নিজ জাতি ও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সরকারের রোষানলে পড়তে হয়ে তাঁকে। ১৯৬৬ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেন কাব্যচর্চার পাশাপাশি প্রকাশনা ব্যবসায়। ১৯৮১ সালে এক বোমা হামলায় দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস নিহত হবার পরে চলে যান প্যারিস, জেনেভা ও পরে লন্ডনে। জীবনের শেষ ১৫টি বছর লন্ডনেই অতিবাহিত করেন এবং সেখানেই ১৯৯৮-র ৩০শে এপ্রিল মৃত্যু হয়। তবে তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী চার দিন পর দামেস্কের বাবুস্‌ সাগীর কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ৭৫ বছরের এই দীর্ঘ জীবনে তিনি রচনা করেছেন ৩৫টি কাব্যগ্রন্থ সহ পঞ্চাশটিরও বেশি গ্রন্থ। ত়ুফ়ূলাতু নাহ্‌দ (স্তনের শৈশব, ১৯৪৮), সাম্বা (১৯৪৯), ক়াস়ায়িদুন্‌ মুতাওয়াহ়্‌হ়িশাহ্‌ (বন্য কবিতা, ১৯৭০), মিয়াতু রিসালাতি হ়ুব্বিন্‌ (১০০টি প্রেমপত্র, ১৯৭০), ক়ামূসুল্‌ আশেক়ীন (প্রেমিকের অভিধান, ১৯৮১) তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম]

 

 

القدس

نزار قباني

 

بكيت.. حتى انتهت الدموع
صليت.. حتى ذابت الشموع
ركعت.. حتى ملّني الركوع
سألت عن محمد،

فيكِ وعن يسوع
يا قُدسُ، يا مدينة تفوح أنبياء
يا أقصر الدروبِ بين الأرضِ والسماء

* * *

يا قدسُ، يا منارةَ الشرائع
يا طفلةً جميلةً محروقةَ الأصابع
حزينةٌ عيناكِ، يا مدينةَ البتول
يا واحةً ظليلةً مرَّ بها الرسول
حزينةٌ حجارةُ الشوارع
حزينةٌ مآذنُ الجوامع
يا قُدس، يا جميلةً تلتفُّ بالسواد
من يقرعُ الأجراسَ في كنيسةِ القيامة؟
صبيحةَ الآحاد..
من يحملُ الألعابَ للأولاد؟
في ليلةِ الميلاد..

* * *

يا قدسُ، يا مدينةَ الأحزان
يا دمعةً كبيرةً تجولُ في الأجفان
من يوقفُ العدوان؟
عليكِ، يا لؤلؤةَ الأديان
من يغسل الدماءَ عن حجارةِ الجدران؟
من ينقذُ الإنجيل؟
من ينقذُ القرآن؟
من ينقذُ المسيحَ ممن قتلوا المسيح؟
من ينقذُ الإنسان؟

* * *

يا قدسُ.. يا مدينتي

يا قدسُ.. يا حبيبتي
غداً.. غداً.. سيزهر الليمون
وتفرحُ السنابلُ الخضراءُ والزيتون
وتضحكُ العيون..
وترجعُ الحمائمُ المهاجرة..
إلى السقوفِ الطاهرة
ويرجعُ الأطفالُ يلعبون
ويلتقي الآباءُ والبنون
على رباك الزاهرة..
يا بلدي..
يا بلد السلام والزيتون