Sunday 19 February 2023

বদিউর রহমানঃ ক্রস-কানেকশন


 
ক্রস-কানেকশন
বদিউর রহমান
 
দিন আগে এক অন্যতম প্রিয় ছাত্রের কন্যা সন্তানকে দেখতে সস্ত্রীক তার বাসায় গিয়েছিলাম। ছাত্রটি সরকারি কলেজের অধ্যাপক। সদ্য সরকারি আবাসনের চার তলায় থাকতে শুরু করেছে। ইদানিং আমার শ্বাসকষ্টের জন্য চারতলায় ওঠা সম্ভব নয় জানিয়েছিলাম। ছাত্রটি আমাকে ওই আবাসনের একতলায় এক যুবক ডাক্তারের ফ্ল্যাটে বসার ব্যবস্থা করে আমার স্ত্রীকে তার স্ত্রীর কাছে চার তলা ফ্লাটে বাচ্চা দেখতে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অধ্যাপক ছাত্র তার বাচ্চাটাকে কোলে করে একতলায় ফ্ল্যাটে নিয়ে এসে আমাকে বাচ্চা দেখায়। ইতিমধ্যে ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে আমার আলাপ জমে ওঠে। তিনি সদ্য অক্টোবরে বিয়ে করেছেন। তার ইঞ্জিনিয়ার স্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ হয় প্রথম আলাপেই দুজনকে আমার খুব ভালো লাগে।
 
ডাক্তার সাহেব এম ডি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি আমার শারীরিক ক্লেশ দেখে বুঝে গিয়েছিলেন আমার কি হয়েছে। ইদানিং আমার গলার স্বরটাও পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে কথা বলছি বলে আমার অসুখ বিসুখের কোন কথাই তাকে হ্যাংলার মতো বলতে চাইনি। হঠাৎ তিনি জিজ্ঞেস করলেন ইনহিলার নিই কিনা। তার পরেই বললেন গলাটা একটু দেখি। হা করলাম টর্চের আলো দিয়ে দেখে তিনি বললেন "একটু ফাঙ্গাস রয়েছে। ১০ ফোটা করে ক্যানডিড মাউথ পেন্ট লাগাবেন"
 
ডাক্তার সাহেবের ফোন নাম্বারটা নিলাম। বললাম আপনার নাম শুধু ডাক্তার মহাব্বত হোসেইন লেখা যাবে না? আপনার নামের মত আর একজন হোস্টেলমেট ডাক্তার যথারীতি আমার ফোনে রয়েছেন। তখন এই ডাক্তার সাহেব বললেন "তাহলে আমার নামের শেষে আনসারী লাগিয়ে দিন" তাই-ই করলাম।
 
এই ডাক্তারের কথা মত গলায় দুদিন ওয়েন্টমেন্ট দিয়েই উপকারটা উপলব্ধি করলাম। তৃতীয় দিনে ডাক্তারকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ফোন করলাম। বললাম “প্রথমে খুশি হয়েছিলাম যে এমন ওষুধের কথা বললেন যে, সেটা আমার পায়ের একটা আঙ্গুলের ছত্রাকের জন্য  ব্যবহার করা সবে শুরু করেছি। অতএব দেড় ২০০ টাকা দিয়ে আর ওষুধ কিনতে হবে না। কিন্তু ওষুধটা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি তাতে লেখা "ফর এক্সটার্নাল ইউজ তাই অধ্যাপক ছাত্রকে আমার হাতের ক্যান্ডিডটার ছবি পাঠিয়ে জানতে চাই যে, আপনি এটার কথা বলেছিলেন কিনা" সে আপনার কাছে জেনে নিয়ে আমাকে জানায় যে ক্যানডিড মাউথপেন্ট টা আলাদা। তাই একটা ওই মাউথপেন্ট কিনলাম। তা আপনার ওষুধটা বেশ কাজ হয়েছে‌। হয়ত আমার গলার স্বর শুনে বুঝতেই পারছেন। তাও তো ওটা রাত্রে শোবার আগে একবার করে ব্যবহার করেছি। টেলিফোনের ও প্রান্ত থেকে উত্তর এল “পারলে দু’বাররে ব্যবহার করবেন”। জিজ্ঞেস করলাম ‘তা চা কেমন চলছে’? বললেন 'আমি তো সারাদিনে বেশ কয়েকবার চা খাই জানেন তো' বললাম "আপনার হাতে সময় থাকলে আর একটু কথা বলতাম" বললেন "কাজ তো আছে, তা কি বলতে চান বলুন" বললাম "এরপর আপনি কি ডিগ্রী পাবেন? উত্তরে বললেন তা আল্লাহই ভাল জানেন" বললাম আপনি না বললেও আমি বলি? বললেন বলুন "এম ডি" তিনি হা হা করে হাসলেন। বললাম আর একটু সময় দিন নাবললেন 'বলুন কী বলবেন' বললাম আমার এক দোলাভাই ডাক্তার ই-আমেদ তখন মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগে কর্মরত। ডাক্তার আই এস রায় ও ডাক্তার বলাই মুখার্জি ইত্যাদি ছিলেন ওনার সিনিয়র। ডাক্তার বলাই মুখার্জি একবার বললেন "ডাক্তার আমেদ! এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে ফিরছিলাম রাজাবাজারে প্রায় প্রতিটি বাড়ির দরজায় নেমপ্লেটে দেখি "এম ডি" ডাক্তার আমেদ একটু অবাক! তার পরপরই ডাক্তার বলাই মুখার্জি হেঁয়ালিটা পরিষ্কার করে দিয়ে বললেন "অবশ্য এম ডি গুলো নামের আগে লেখা" আমি টেলিফোনের ওদিক থেকে হাসির আওয়াজ পেলাম। তারপর ওই ডাক্তার মহাব্বত কারমাইকেলের বিভিন্ন সঙ্গীসাথীর কথা বলতেই আমি বুঝলাম যে আমার ক্রস-কানেকশন হয়ে গেছে। দু’তিন ঘণ্টা পরে আমার কাঙ্খিত ডাক্তার মহাব্বতের সঙ্গে কথা বলে নিয়ে বেশ তৃপ্তি পাই।
 
ওনার ওষুধে উপকার পাচ্ছি তার জন্য ওনাকে ধন্যবাদ জানাতে পেরে নিজেকে হালকা লাগে। আর ভালো লাগে উনি আমাদের সল্টলেকের বাসায় আসার অনুরোধ গ্রহণ করছেন বলে। 
 
সল্টলেক
২৯/১২/২০২২