৬৬) সূরাতু আত্-তাহ়্রীম
(নিষেধ)
মদীনায় অবতীর্ণ,
আয়াত ১২, রুকু’ ২
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
আল্লাহ্র নামে
(শুরু করছি); তিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
হে নবী (সাঃ), আল্লাহ তোমার জন্য যে জিনিস হালাল করেছেন নিজ স্ত্রীদেরকে
সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তুমি তা নিজের জন্য হারাম করছ কেন? (মনে রেখো,) আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়।
قَدْ فَرَضَ اللَّهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ وَاللَّهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
(হে পুরুষেরা) আল্লাহ তোমাদের জন্য
তোমাদের কসম থেকে অব্যহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (মনে রেখো,) আল্লাহ্ই
তোমাদের অধিপতি, অভিভাবক ও ত্রাতা। এবং তিনি সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।
وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِ وَأَظْهَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُ وَأَعْرَضَ عَن بَعْضٍ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِ قَالَتْ مَنْ أَنبَأَكَ هَذَا قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيمُ الْخَبِيرُ
(মনে করো, একবার) নবী (সাঃ) নিজ
স্ত্রীদের মধ্যে একজনকে (হাফ্সা রাঃ-কে) গোপনে কিছু কথা বলেছিলেন। অতঃপর যখন তিনি (হাফ্সা রাঃ) অন্য এক স্ত্রীকে (আয়েশা
রাঃ-কে) সেই কথাগুলো জানিয়ে দিলেন এবং আল্লাহ নবী (সাঃ)-এর নিকট তা প্রকাশ করলেন, তখন নবী (সাঃ) সে বিষয়ে কিছু কথা ব্যক্ত করলেন এবং কিছু
অব্যক্ত রাখলেন। অতঃপর নবী (সাঃ) যখন বিষয়টি তাঁর ওই স্ত্রীকে (হাফ্সা রাঃ-কে)
জানালেন, তখন তিনি (হাফ্সা রাঃ) (নবীজিকে) জিজ্ঞেস করে বসলেন, কে আপনাকে এ সম্পর্কে
অবহিত করল? নবী (সাঃ) বললেন, সর্বজ্ঞ ও সম্যক অবহিত সত্ত্বা (মহান আল্লাহ্)
আমাকে অবহিত করেছেন।
إِن تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا وَإِن تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ
(হে হাফ্সা ও আয়েশা রাঃ) যেহেতু
তোমাদের অন্তর (নবীজির পছন্দের বিরোধিতায়) অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, তাই যদি তোমরা
উভয়ে (অনুতপ্ত হয়ে) আল্লাহ্র দিকে প্রত্যাবর্তন করো (তাহলে আল্লাহ্ তোমাদেরকে
ক্ষমা করে দেবেন)। কিন্তু যদি নবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য করো, তাহলে জেনে রাখো যে, আল্লাহ, জিব্রায়িল (আঃ) এবং সৎকর্মপরায়ণ
মুমিনগণ তাঁর সহায় ও সাহায্যকারী। উপরন্তু, ফেরেশতাগণ
তো তাঁর সাহায্যের জন্য (সর্বদা প্রস্তুত হয়ে) আছেন।
عَسَى رَبُّهُ إِن طَلَّقَكُنَّ أَن يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا
(হে নবীর স্ত্রীগণ) যদি নবী
(সাঃ) তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন (অর্থাৎ তালাক দেন), তাহলে তাঁর পালনকর্তা
তাঁকে তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী প্রদান করতে পারেন, আর তাঁরা হবেন মুসলমান, ঈমানদার,
আজ্ঞাবহ, তওবাকারিণী, এবাদতগুজার, রোযাদার, অ-কুমারী (বিধবা বা
তালাকপ্রাপ্তা) এবং কুমারী।
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ
عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ
مَا يُؤْمَرُونَ
হে বিশ্বাসী লোকেরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে ওই (ভয়ানক)
আগুন হতে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের
ফেরেশতাগণ, যারা (কখনই) আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে না। বরং তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ
করা হয়।
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَعْتَذِرُوا الْيَوْمَ إِنَّمَا تُجْزَوْنَ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
(মহাপ্রলয়ের দিনে বলা হবে,) তোমরা
যারা (আলাহর দ্বীনকে) অস্বীকার করো, তোমরা আজ আর কোনো প্রকার
অজুহাত পেশ করো না। তোমরা (পার্থিব জীবনে) যে সব কাজ করতে (আজ) তোমাদেরকে তারই প্রতিফল
দেওয়া হবে।
يَا أَيُّهَا
الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ
عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ
يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى
بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا
وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে
আন্তরিকভাবে এবং বিশুদ্ধরূপে তওবা-অনুশোচনা করো। তাহলে হয়তো তোমাদের পালনকর্তা
তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে নানা ধরণের নদনদী প্রবাহমান। সেদিন মহান আল্লাহ নবী (সাঃ) এবং
তাঁর মুমিন সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর (অর্থাৎ জ্যোতি) তাদের সম্মুখে ছুটোছুটি
করবে এবং তাদের ডান হাতে (তাদের সৎকর্মসমূহের উজ্জ্বল খতিয়ান থাকবে)। তারা বলবে— প্রভু,
তুমি আমাদের নূরকে আমাদের জন্য পূর্ণ করে দাও (এবং আমাদের আলোকে
নিভিয়ে দিও না যতক্ষণ না আমরা নরকের উপরের ওই অত্যন্ত পিচ্ছিল পুলটা নির্বিঘ্নে
অতিক্রম করি) এবং আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।
يَا أَيُّهَا
النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ عَلَيْهِمْ وَمَأْوَاهُمْ
جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
হে নবী (সাঃ)! তুমি কাফের
(অবিশ্বাসী) ও মুনাফিকদের (দ্বিচারীদের) বিরুদ্ধে জেহাদ করো (অর্থাৎ তাদের অনিষ্ট
থেকে সমাজ ও পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম করো) এবং তাদের প্রতি কঠোর হও। তাদের
ঠিকানা হবে জাহান্নাম; আর তা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।
ضَرَبَ اللَّهُ
مَثَلًا لِّلَّذِينَ كَفَرُوا اِمْرَأَةَ نُوحٍ وَاِمْرَأَةَ لُوطٍ كَانَتَا تَحْتَ
عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا
مِنَ اللَّهِ شَيْئًا وَقِيلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدَّاخِلِينَ
মহান আল্লাহ কাফেরদের জন্য নূহ-পত্নী
ও লূত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন সৎকর্মপরায়ণ
বান্দার অধীনে ছিল। কিন্তু তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
করল (তাদের নিয়ে আসা ধর্মমতকে অস্বীকার করে)। ফলে নূহ (আঃ) ও লূত (আঃ) তাদেরকে (অর্থাৎ
নিজ নিজ স্ত্রীকে) আল্লাহ তা’আলার শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারলেন না এবং তাদেরকে বলা
হল, জাহান্নামীদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ করো।
وَضَرَبَ اللَّهُ
مَثَلًا لِّلَّذِينَ آمَنُوا اِمْرَأَةَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ
بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ
الظَّالِمِينَ
(অন্যদিকে,) মহান আল্লাহ মুমিনদের
জন্য ফেরাউন-পত্নীর (ফারাও-এর স্ত্রীর) দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, যখন সে দু’আ
করেছিল, প্রভু! তোমার নিকটে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করো এবং আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করো; এবং আমাকে
জালিম (অর্থাৎ অত্যাচারী, অংশবাদী ও অসৎ) সম্প্রদায় হতে মুক্তি দাও।
وَمَرْيَمَ
ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتْ
بِكَلِمَاتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِ وَكَانَتْ مِنَ الْقَانِتِينَ
(আরও দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন) ইমরান-তনয়া
মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে (তার
জামার আস্তিন দিয়ে) আমার পক্ষ থেকে (জিব্রিল আঃ মারফৎ) জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে
তার পালনকর্তার শব্দাবলী (অর্থাৎ তার বিস্ময় দেখে জিব্রিল আঃ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে
তাকে যে কথাগুলো বলেছিলেন [সূরা মার্ইয়াম ১৬ – ২৬]) ও গ্রন্থসমূহকে সত্য বলে
গ্রহণ করেছিল। প্রকৃতার্থেই সে ছিল বিনয়ী ও অনুগতদের একজন।
ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম