Thursday 31 December 2020

নবী চরিতঃ নবী (সাঃ)-এর মক্কা জীবন


 
নবী (সাঃ)-এর মক্কা জীবন
 
মানব জাতির মুক্তির দিশারী হিসেবে পৃথিবীতে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগমন ঘটে। সারা পৃথিবী যখন মিথ্যা, পাপ, ঘৃণা, অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল মানব জাতি যখন তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ইতিহাস ভুলে গিয়ে ইতর প্রাণীর চেয়েও হীনতর হয়ে পড়েছিল, ঠিক তখনই মানব জাতির মুক্তির দূত আল্লাহ্‌র তাআলার আশির্বাদ স্বরূপ মহানবী (সাঃ) মক্কায় প্রেরিত হন। নিম্নে মহানবী (সাঃ)-এর মক্কাজীবন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
 
জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৫৭০ খৃষ্টাব্দে ২৯শে আগস্ট (মতান্তরে ৯ বা ১২ই রাবিউল আউয়াল) সোমবারের দিন বিখ্যাত কুরাইশ বংশের হাসেমী গোত্রে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমিনা, পিতৃব্য আবু তালিব এবং দাদার নাম আব্দুল মুত্তালিব।
 
শৈশব ও বাল্যে মুহাম্মদ (সাঃ)
জন্মের দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিজাত আরবের প্রথা অনুযায়ী শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)-কে বিবি হালিমাকে দুধমাতা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। বিবি হালিমার নিকট তিনি লালিত পালিত হতে থাকেন। এর পর ছয় বছর বয়সে বালক মুহাম্মদ (সাঃ) মাতা আমিনার তত্বাবোধানে আসেন। কিছু দিন পর তিনি তাঁর মাতাকে হারান। ইয়াতিম মুহাম্মদ (সাঃ) এ সময় অসহায় হয়ে পড়লে দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁকে বুকে আঁকড়ে ধরেন। দুই বছর পর তিনিও মৃত্যু বরণ করেন। তখন চাচা আবু তালিব তাঁর অভিভাবক নিযুক্ত হন।
 
চাচা আবু তালিবের কাছে থাকাকালীন মুহাম্মদ (সাঃ) মেষ চরাতেন। ৫৮২ খৃষ্টাব্দে বার বছর বয়সে চাচা আবু তালিবের সঙ্গে তিনি ব্যাবসার উপলক্ষে সিরিয়া গমন করেন। সিরিয়া হতে ফেরার সময় তিনি উকাজের মেলায় হরবুল ফুজ্জার ও প্রতক্ষন করেন।
 
হিলফুল ফুযুল গনঃ
ষোল বছর বয়সে মুহাম্মদ (সাঃ) হরবুল ফুজ্জার যুদ্ধের বীভৎস তাণ্ডবলীলা দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হন। এর প্রতিকারের জন্য কনিষ্ঠ পিতৃব্য যুবাইর ও অন্য কয়েকজন উৎসাহী যুবককে নিয়ে ৫৯৫ খৃষ্টাব্দে হিলফুল ফুযুল গঠন করেন। এ সমিতির অন্তর্গত ফজল, ফাজেল, ফাজায়েল ও মোফাজ্জেল এ চারজন বিশিষ্ট সভ্যের নামানুসারে এটা হিলফ-উল-ফুযুল নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ।
 
আল-আমীন উপাধি লাভঃ
কোমল স্বভাব ও অমায়িক ব্যবহারের জন্য শৈশব থেকেই মহানবী (সাঃ)-কে সকলেই আন্তরীক ভাবে ভালোবাসতো এবং শ্রদ্ধা করতো। সত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়নতা প্রভৃতি গুণাবলীর জন্য তিনি আল-আমীন বা বিশ্বাসী উপাধি লাভ করেছিলেন।
 
খাদিজার সাথে বিবাহঃ
খাদিজা (রাঃ) ছিলেন আরবের এক ধনাঢ্য মহিলা। খাদিরা (রাঃ) মুহাম্মদ (সাঃ) এর সত্যবাদিতা ও মহানুভবতার সুখ্যাতি শুরে তিনি তাঁকে ডেকে আনেন। নবী (সাঃ) এর উপর ব্যাবসার ভার অর্পন করেন। কিছু দিনের মধ্যে ব্যাবসাতে প্রচুর লাভ হয়, খাদিজা (রাঃ) নবী (সাঃ) এর কর্মদক্ষতা, বিশ্বস্ততা ও কতিপয় অলৌকিক ঘটনা প্রতক্ষ করে খুব খুশি হন এবং তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব করেন। অতঃপর পিতৃব্য সম্মতিতে নবী (সাঃ) খাদিজা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন।
 
নবুওত প্রাপ্তিঃ
বিবি খাদিজা (রাঃ)-কে বিবাহের পর নবী (সাঃ) দৌন্য-দারিদ্রের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে নিজেকে স্রষ্টার ধ্যানে নিয়োজিত করেন। এ সময় মক্কার অদূরে হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ্‌র ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। ৬২০ খৃষ্টাব্দে রমজান মাসের ২৭ তারিখে তিনি জিব্রাইল (আঃ) মারফত আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে প্রথম ওহী বা নবুওত প্রাপ্ত হন।
 
ইসলাম প্রচারঃ
নবুওত প্রাপ্তির পর মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলাম প্রচারে নেমে পড়েন। তিনি প্রচার করতে থাকেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ মুহাম্মাদুর্‌ রাসূলুল্লাহ” (আল্লাহ্‌ এক তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রেরিত দূত)। প্রথম তিন বছর তিনি গোপনে ইসলাম প্রচার করেন। এ তিন বছরে মাত্র ৪০ জন লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করনে। নবুওতের চার বছর পর তিনি ধর্ম প্রচার করতে থাকেন।
 
কোরায়েশদের ইসলাম বিরোধিতাঃ  
ইসলামের প্রতি কুরাইশদের বিরোধিতার প্রধান কারণগুলি নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল
 
(ক) ধর্মীয় কারণঃ
ইসলাম মানুষকে একমাত্র আল্লাহ্‌র উপাসনা করতে শিক্ষা দেয়, এতে মূর্তি পূজার কোনো স্থান নেই, বরং একে তীব্রভাবে বিরোধিতা করা হয়েছে। অপরদিকে মক্কার কুরাইশরা ছিল মূর্তি উপাসক। তারা যুগ যুগ ধরে মূর্তি পূজায় অভস্থ ছিল। পূর্ব-পুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করতে তারা রাজী ছিলনা। সুতরাং তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে এবং তাঁর সাথে শত্রুতা করতে থাকে।
 
(খ) সামাজিক কারণঃ
ধর্মীয় কারনের সাথে সামাজিক কারনও জড়িত ছিল। কুরাইশগণ, পূর্ব প্রচলিত বৈষম্যের স্থলে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধি ছিল। ইসলাম ধর্ম কুরাইশদের অন্যায় অভিজাত্য খর্ব করায় তারা এর বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল সাম্য ও ভাতৃত্য প্রতিষ্ঠার জন্য, এটি ধনী  ও নির্ধন, স্বাধীন ও পরাধীণ এবং উঁচু-নিচুর সকল প্রভেদ অস্বীকার করেছে। উদ্ধত, আভিজাত্য, গর্বী ও শ্রেণী মনোভাবাপন্ন কুরাইশদের নিকটে ইসলামের সামাজিক সাম্য ছিল অত্যন্ত  বিরক্তিকর ও ঘৃণা-ব্যাঞ্জক।
 
(গ) নৈতিক ও রাজনৈতিক কারণঃ
ইসলামের প্রচার নৈতিক আদর্শ ও মূল্যবোধ পৌত্তলিক কুরাইশদের প্রচলিত রীতি-নীতির সম্পূর্ণ বিরোধি ছিল। ফলে ইসলামীক নীতি তারা মানতো না পারলে মুসলমানদের সাথে বিরোধ দেখা যায়। অপরদিকে মক্কার নগর-রাষ্ট্রে রাজনৈতিক কতৃত্বের স্থায়িত্ব ছিলনা। যাঁদের অর্থ ছিল এবং যিনি নগর-রাষ্ট্রের সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করতে পারতেন তারাই রাজনৈতিক কতৃত্ব ভোগ করতো।
 
(ঘ) অর্থনৈতিক কারণঃ
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুরাইশদের আক্রমণের অন্যতম কারন ছিল অর্থনৈতিক। মক্কা নগরীতে অবস্থিত কাবাগৃহের রক্ষণাবেক্ষণের দ্বায়িত্ব কুরাইশ পরিবারের উপর ন্যস্ত ছিল। একাজে প্রভূততাদের অর্থপার্জন হতো। ইসলামের বিজয় হলে তারা এ অর্থ থেকে ব্যাত্য হবেন ভেবে ইসলাম ও নবীর বিরুদ্ধে মারমুখী হয়ে ওঠে।
 
মুসলমানদের উপর কোরায়েশদের নির্যাতনঃ
ইসলামের বিস্তৃতির সাথে সাথে কুরাইশদের অত্যাচার ও নিপীড়ন বেড়ে উঠে। নবদিক্ষিত মুসলমানদের উপর তারা চড়াও হয়ে উঠে। ওপর দিকে কুরাইশরা নবী (সাঃ)-কে বিভিন্ন রকম প্রলভোন দেখিয়ে ধর্ম ত্যাগ করার তাগিদা দেয়, অর্থ, নারী ও মক্কার কতৃত্ব দেওয়ার লোভ দেখায় কিন্তু নবী (সাঃ) কোরআনের আয়াত পড়ে তাদের উত্তর দেন“(হে মুহাম্মদ সাঃ) তুমি বলে দাও, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তবে (পার্থক্য এটাই যে) আমার নিকট ওহি আসে যে, তোমাদের উপাস্য একক অদ্বিতীয়। অতএব যারা নিজ প্রভুর সাক্ষাৎ লাভের আশা করে তারা যেন সৎ কর্ম করে এবং নিজ প্রভুর উপাসনায় অন্য কাউকে শরীক না করে।” [১৮/১১০]
 
উপরিক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মহানবী (সাঃ) এর মক্কা জীবন দুঃখ-দুর্দশা, অত্যাচার ও লাঞ্ছনায় ভরপুর। জন্মের পর থেকে সারা মক্কা জীবনই বলা যায় তিনি অতি সংগ্রামের সাথে কাটিয়েছেন। কুরাইশদের হাজারো ষরযন্ত্র, প্রলোভন, লোভ-লালসা তাঁকে দমাতে পারেনি বরং শত লাঞ্ছনা ও গুঞ্জনা সহ্য করেও তিনি অধঃপতি আরব জাতিকে সত্যের পথে পরিচালিত করেছেন। পবিত্র কোরআনের এই বাণীকে আঁকড়ে ধরেছিলেন“হে রাসূল! তোমার নিকট তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ করা হয়েছে তুমি তা প্রচার করতে থাকো।” [/৭]

কলমে- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

Monday 28 December 2020

জাকারিয়া তামিরঃ অন্য গৃহে

 

অন্য গৃহে
জ়াকারিয়া তামির, সিরিয়া
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

একজন নির্দয় বিচারকের সামনে বসে আস্ত একটা সকাল কাটিয়ে দেওয়া প্রচণ্ড কষ্টকর। অত্যন্ত লজ্জাজনকসেই লজ্জা ভুলতে অনেক সময় লাগে। মনে কষ্ট হয় অনেকখালিদ হাল্লাবেরও তাই হয়েছে। তার মনেও সেই লজ্জা ভুলতে যথেষ্ট দহন হয়েছেতাই সে ভুলে যাওয়ার ভান করেছে। তবে যে ভাড়া বাড়িতে তার জন্ম  ও বেড়ে ওঠা সেই বাড়ি খালি করার হুকুম যে বিচারক দিতে পারেন তাঁকে নির্দয় ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই খালিদ মনে করে

যোহরের নামাজের পর এক ব্যক্তি মসজিদে আলোচনা করছিলো। খালিদ অত্যন্ত মনোযোগ ও আগ্রহ সহ তার কথা শুনতে লাগলো। সে বলছিল, মায়ের পায়ের নীচেই সন্তানের বেহেস্ত”এ কথা শুনে খালিদের হৃদয়ে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।

খালিদ বেরিয়ে পড়লো সেখান থেকে। বাড়ি পৌঁছে কোদাল ও বেলচা নিয়ে হাজির হল আঙিনায়; যেখানে তার মা একটা কাঠের চেয়ারে বসেছিলেন। কোদাল দিয়ে মায়ের ঠিক পায়ের নীচের মাটি খুঁড়তে শুরু করলো। বৃদ্ধ মায়ের কাতর চিৎকার শুনেও থামলো না। কিন্তু টানা কয়েক ঘন্টা খোঁড়াখুঁড়ির পরও নরম মাটি ছাড়া সেখানে আর কিছুই খুঁজে পেল নারাগে-ক্ষোভে কোদাল ও বেলচা ছুঁড়ে দিল। তারপর চায়ের সাথে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে কাপটা এগিয়ে দিল মায়ের দিকে। মা যখন অনিবার্য ঘুমে আচ্ছন্ন তখন খালিদ গর্তে একটি চাদর পেতে তার উপর দু’টি বালিশ রাখলো। সব ঠিকঠাক করার পর মা’কে তুলে শুইয়ে দিল সেই গর্তে। তারপর মা যে চেয়ারটায় বসেছিলেন ক্লান্ত মনে খালিদ সেটায় বসলো। বসে চুমুক দিল কাপের অবশিষ্ট চায়ে। তারও চোখের পাতা বন্ধ হবার ইঙ্গিত দিল। সেও আশ্রয় নিল মায়ের পাশে। মায়ের নিথর হাতটা আঁকড়ে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে অপেক্ষা করতে লাগলো কবরের চূড়ান্ত অন্ধকারের।

[২৪ বায়তুন্‌ আখ়ার— আল্‌-হ়িস়্‌রিম ৯৫]    

 

بيت آخر
زكريا تامر
 
تناسى خالد الحلاب وقوفه المهين صباحا أمام القاضي الصارم الذي حكم عليه بإخلاء البيت المستأجر الذي يسكنه منذ أن كان طفلا، وأنصت بخشوع وغبطة لمن كان يقول بعد صلاة الظهر إن الجنة تحت أقدام الأمهات، وعاد إلى البينت، وأحضر معولا ورفشا، وشرع في حفر الأرض تحت قدمي أمه القاعدة على كرسي خشبي في باحة البيت لا يتوقف أنينها المتوجع، واستمر في الحفر طوال ساعات، ولم يعثر إلا على تراب رطب، فرمى المعول والرفش مغتاظا، وساعد أمه على احتساء شاي ممزوج بالسكر والكثير من مسحوق حبوب منوّمة، فنامت أمه بعد دقائق، فبادر إلى وضع وسادتين في قاع الحفرة، وحمل أمه، ومددها على البساط ثم جلس على كرسيها يلهث متعبا، واحتسى ما تبقى من شايها، واستلقى في الحفرة لصق أمه، وأمسك بيدها الباردة، وأغمض عينيه راجيا ألا يتأخر ليل التراب.
[الحصرم 95 ]

Sunday 27 December 2020

সালেমা সালেহঃ মৃতদেহ



মৃতদেহ
সালেমা স়ালেহ়্, ইরাক
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম


আজকের সকালটা আর পাঁচটা সকাল থেকে ভিন্ন আজ ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে ট্যাক্সিচালকের নিষ্ফল চেঁচামেচির সাথে সুর মেলানোর কোনো ইচ্ছে আমিন আল্‌-কাসেমির নেই; আর না রাস্তাঘেঁষা প্রাচীরের ওপাশ থেকে উঁকি দেওয়া কমলাগাছগুলোর সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর কোনো আগ্রহ আছে তিনি আজ চিন্তায় ডুবে আছেন একটি জীবনকে কল্পনায় পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন ওই জীবনের সবটুকুই, প্রতিটা দিন, প্রতিটা ক্ষণ কল্পনার আয়নায় নিঃশব্দে এঁকে চলেছেন তিনি তাঁর মগ্নতা দেখে মনে হয়, স্মৃতির পুনর্বিন্যাস শেষ না করে তিনি আজ থামবেন না কারণ তিনি আশংকিত, সামান্য অমনোযোগিতার জন্য এক টুকরো স্মৃতিও যদি হারিয়ে যায় তাকে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না স্মৃতি-পুনরুদ্ধারের এই কাজটি শেষ করে কেবলরেকর্ড ক্লোজডশব্দ দুটো জুড়ে দিয়ে আজ আরো একটা ফাইল তিনি সারা জীবনের জন্য শেলফে তুলে রাখবেন কারো মৃত্যু-সনদ অফিসে পৌঁছোলে কাজটি তাঁকেই করতে হয় নগর প্রশাসনের নিবন্ধন বিভাগে কাজ করার কারণে বিগত দশ বছরে এই দাপ্তরিক শব্দ দুটি তাকে অসংখ্য বার লিখতে হয়েছে বছরের পর বছর শব্দ দুটি তিনি লিখে গেছেন কিন্তু তার অর্থ নিয়ে কখনই মাথা ঘামাননি মৃত ব্যক্তি, তার মা, তার স্ত্রী-সন্তান, তার সাফল্য-ব্যর্থতা, অধরা স্বপ্ন ইত্যাদি নিয়ে কখনই চিন্তা-ভাবনা করেননি কিন্তু আজ সকালে, যে সকালটা আর পাঁচটা সকাল থেকে ভিন্ন, আমিন আল-কাসেমি আবিষ্কার করলেন, ‘রেকর্ড ক্লোজ্শব্দ দুটি তাঁর পক্ষে আজ আর ভাবলেশহীন ভাবে লেখা সম্ভব নয় কারণ আজ যে মৃত্যু-সনদটা তাঁকে গ্রহণ করতে হবে সেটা তাঁরই ছেলের 
 
তিনি আজ সেই শিশুটিকে নিয়ে ভাবছেন যাকে দিনের পর দিন তিনি কোলে নিয়ে আদর করেছেন যে শিশুটি একসময় কয়েকটি অর্থহীন ধ্বনি ছাড়া আর কিছুই উচ্চারণ করতে পারতো না যাকে অর্থপূর্ণ শব্দ শেখাতে দিনের পর দিন সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে আজ সেই নাবালক ছেলেটির কথা ভাবতে হচ্ছে তাঁকে, যার নরম হাতটা ধরে তিনি কফি হাউসে নিয়ে যেতেন আজ তাঁর মনে পড়ছে সেই মুহূর্তগুলোর কথা যখন কোনো কারণে ভয় পেয়ে ছেলে বাড়ি ফিরলে তাকে কাছে ডেকে তিনি বলতেন, ‘বাবা, বড় হতে শেখো কিন্তু তাঁর সেই ছেলেটি কখনই বড় হয়ে ওঠেনি বাবার চোখে সন্তানেরা কখনই বড় হয়ে ওঠে না তাঁর কাছে সে তো শুধুই আঠারো বছরের এক কিশোর, যে সবে মাত্র দাড়ি কামাতে শিখেছে তিনি আজ সেই কিশোরের কথাই ভাবছেন যে একদিন তাঁকে বলেছিল, ‘বাবা, তুমি কি মনে করো আমি এখনও ছোটই রয়ে গেছি?’ আমিন আল-কাসেমি সেই দিনটির কথা ভাবছেন, যেদিন তিনি আবিস্কার করেছিলেন, তাঁর কিশোর ছেলেটি তাঁর কাছেই অচেনা তিনি নিজের ছেলেকে যতটুকু না জানেন তার চেয়ে বেশি চেনেন ও জানেন প্রতিবেশীর ছেলেদের তিনি সেই ছেলেটির কথা ভাবছেন, যাকে আজ চিরদিনের জন্য বাড়ি নিয়ে যাবেন
 
আজকের এই ব্যতিক্রমী সকালে আমিন আল-কাসেমির হৃদয়ে ক্রোধের আগুন জ্বলছে তাঁর ক্রোধ সেই বুলেটের প্রতি যেটি তাঁর ছেলের দেহ ভেদ করেছে তাঁর ক্রোধ তাঁকে চিৎকার করে কাঁদতে বলছে, ঘাতকের দিকে অস্ত্র তাক করতে বলছে কিন্তু দুঃখের দহন ক্রোধের দহনের চেয়েও বেশি জ্বালাময়ী তিনি কিছুই করলেন না তিনি প্রতিশোধের নিস্ফলতা নিয়ে ভাবলেন সাথে ভেবে দেখলেন একটি জীবনের নিস্ফলতা কথা আজ অবধি তিনি যা কিছু করেছেন সবই এখন অর্থহীন আজকের পর থেকেআবু মুতাসিমবলে তাঁকে আর কেউ ডাকবে না তিনি বিধ্বস্ত এবং ব্যাথিত তবে এই তীব্র যন্ত্রণা তাঁর চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রুও ঝরাতে পারলো না
 
অবশ্য ধরণের পরিস্থিতিতে নিরবতাই সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা-বাণী হয়তো তাই পুরো যাত্রাপথে তিন জনের একজনও কোনো কথা বলল না প্রচন্ড জ্যাম সত্ত্বেও ট্যাক্সি ড্রাইভার দ্বিতীয়বার চেঁচামেচি করলো না সঙ্গে থাকা তাঁর ভাইও জানতে চাইলো না কোথায়, কখন এবং কীভাবে ঘটনাটি ঘটেছে
 
কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্যাক্সি সামরিক হাসপাতালের গেটের কাছে দাঁড়ালো ভাইকে সাথে নিয়ে আমিন আল-কাসেমি হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করলেন তাঁদেরকে দেখে হাতে এক গোছা চাবি নিয়ে এগিয়ে এল এক সেনারক্ষী তাঁদেরকে অপেক্ষা করতে বলে করিডোরের ডানপাশের লোহার দরজাটি খুলে দিল দরজার ওপারে একটা বড় হল ঘর যার দুপাশের দেয়াল ঘেঁষে সমান্তরাল দুটি সারিতে অনেকগুলো মৃতদেহ সাদা কাপড়ে ঢাকা তাঁরা যেখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন সেই জায়গা থেকে সবগুলো দেহই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল সিলিং-ঘেঁষা ছোট ছোট জানালা দিয়ে আলো ঢুকে বিপরীত দিকের দেয়ালগুলোতে প্রতিফলিত হচ্ছিল ওই আলোতেই কালো মেঝের উপর সাদা কাপড়ে ঢাকা মৃতদেহগুলো হয়ে উঠেছিল দ্যুতিময়
 
ইতিমধ্যে একজন সার্জেন্ট সেখানে এসে হাজির লোহার দরজাটি খোলার পর সার্জেন্ট সেনারক্ষী এমনভাবে একপাশে সরে দাঁড়ালেন যাতে আগতরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারে হাতে থাকা নামের তালিকায় চোখ বুলিয়ে সামনে অপেক্ষমান লোকগুলোর দিকে সার্জেন্ট পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে তাকালেন সেখানে তখন চারজন দাঁড়িয়ে নীরবতা ভেঙ্গেআমিন আল-কাসেমি’- নাম উচ্চারণ করে তাঁকে সামনে এগিয়ে আসতে বললেন আমিন আল-কাসেমি দুকদম এগিয়ে এসে নিজের নাম-পরিচয় নিশ্চিত রে জানালেন, তিনিই মুতাসিম আল-কাসেমি বাবা সার্জেন্ট আরেকবার নামের তালিকাটি দেখলেন এবং একটি জায়গায় হাতের আঙুল রেখে আমিন আল-কাসেমিকে উদ্দেশ্য রে বললেনচলুন, চার নম্বরটা হয়
 
প্রথমে সার্জেন্ট নিজে ঘরে প্রবেশ করলেন তারপর তাঁকে অনুসরণ করে ধীর পায়ে আমিন তাঁর ভাই ভেতরে ঢুকলেন বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে আল্‌-কাসেমি প্রাণপণে চেষ্টা করছিলেন আবেগ দমন করার চতুর্থ মৃতদেহের ওপর থেকে ময়লা কাপড়টি সরিয়ে আল-কাসেমিকে সার্জেন্ট প্রশ্ন করলেনএটাই কি আপনার ছেলে?
 
ওটা যে তাঁর ছেলের মৃতদেহ নয় এটা বুঝতে আমিনকে দ্বিতীয়বার তাকাতে হয়নি কালো মেঘের মত মুখটায় যেন দুঃস্বপ্নের ঝাপটা লেগেছে ঘাড়ে, ঠিক কানের নিচে একটা বড়সড় গর্ত গুলিটা ওদিক দিয়েই ঢুকেছে এসব ভাবতে ভাবতেই আমিন আল-কাসেমি মাথা ঝাঁকালেন সার্জেন্ট চমকে উঠলেনএটা আপনার ছেলে নয়?
না ক্ষীণ কন্ঠে জবাব দিলেন আল্‌-কাসেমি 
 
মৃতদেহের মুখ ঢেকে দিয়ে সার্জেন্ট কাপড়ের এক কোণা টেনে কিছুটা উপরে তুললেন সেখানে বড় বড় কালো অক্ষরে নিহতের নাম লেখা ছিল আমিন আল-কাসেমি লক্ষ্য করলেন, নামের ঠিক নীচেই বিশ্রি করে লেখা রয়েছেপলাতক দেখে তাঁর বুকটা ধুপ করে কেঁপে উঠলো কিন্তু তিনি অবিচল থাকলেন নামের দিকে আনমনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সার্জেন্ট এর একটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করলেনকাপড়গুলো নিশ্চই এদিক-ওদিক হয়ে গেছে আসুন, অন্যগুলো দেখি
 
এই বলে আল-কাসেমিকে নিয়ে তিনি প্রথম মৃতদেহের কাছে গেলেন মুখের ওপর থেকে সাদা কাপড়টা সরিয়ে আল-কাসেমির দিকে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি এবারওনাসূচক ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালেন সার্জেন্ট পাশের মৃতদেহের কাছে গেলেন, মুখের ওপর থেকে কাপড়টা সরালেন আল্‌-কাসেমি জবাব দিলেনএটাও আমার ছেলে নয় সার্জেন্ট দমে গেলেন না একই ভাবে তৃতীয় দেহটিও দেখালেন তারপর চতুর্থ দেহটির কাছে গিয়ে মন্তব্য করলেনএটা আপনি আগেই দেখেছেন তারপর একে একে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম অষ্টম দেহটিও দেখালেন এবং প্রত্যেক বারই আল্‌-কাসেমি জবাবে নেতিবাচক সাড়া দিলেন
 
আপনি নিশ্চিত থাকুন, আপনার ছেলের মৃতদেহ খুঁজে বের করবই আমি নিশ্চিত যে ভুলবশত কাপড়গুলো ওলট-পালট হয়ে গেছে এসব কথা বলতে বলতে সার্জেন্ট শেষ মৃতদেহটির দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি বুঝতে পারছিলেন তার প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে শেষ মৃতদেহের কাছে এসে দাঁড়াবার পর মনের ভেতরে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল আল-কাসেমিকে তা বুঝতে দিলেন না তাই কাপড় সরাতে সরাতে বললেনএটাই শেষ দেহ এটা নিশ্চই আপনার ছেলের?   
 
আল-কাসেমি ছেলেটির মুখের দিকে তাকালেন দেখে তাঁর মনে হল, খুব বেশিদিন হয়নি ছেলেটি বয়ঃসন্ধি পেরিয়েছে বয়স বড়জোর ষোল হবে হালকা-পাতলা গড়ন মুখ দেখে মনে হচ্ছে, খুব শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে আল-কাসেমির তাকিয়ে থাকা দেখে সার্জেন্ট ভাবলেন, তাঁর মিশনের সফল সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে কিছুটা প্রশান্তির কন্ঠে আনমোনা আল-কাসেমিকে তিনি জিজ্ঞেস করলেনএটাই আপনার ছেলে, তাই না?
সম্বিৎ ফিরে পেয়ে টিমটিমে আশার আলো জাগিয়ে রেখে আল-কাসেমি আগের মতই মাথা ঝাঁকালেন বুঝিয়ে দিলেন, তার ছেলে এখনও বেঁচে আছে আর এতক্ষণ যা যা ঘটেছে তা মারাত্মক ভুলনা, এটা আমার ছেলে নয়
সার্জেন্ট কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লেন বললেনএটা হতেই পারে না নামটা আরেকবার বলুন তো?
এই বলে তিনি নামের তালিকাটি আরও একবার বের করলেন, কাগজটি তার সামরিক পোশাকের পকেটে ছিল, পড়তে শুরু করলেন— “মুতাসিম আল-কাসেমি চার নম্বর কাগজটি ভাঁজ করে পকেটে ভরে বললেন ভুল হবার তো কোনো সুযোগই নেই এক কাজ করুন, আপনি আমার সাথে চলুন
 
বলে সার্জেন্ট দরজার দিকে হাঁটতে শুরু করলেন ভাইকে সাথে নিয়ে আমিন আল-কাসেমি তাঁকে অনুসরণ করলেন সার্জেন্ট লোহার দরজাটি তালাবদ্ধ করে লম্বা করিডোর ধরে হাঁটতে লাগলেন দরজার কাছে আরো দুজন দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল, তিনি তাদের দিকে তাকাবারও ফুরসৎ পেলেন না করিডোরের শেষ মাথায় পৌঁছে বাম দিকে মুড়ে গিয়ে তারা তিনজন ছোট্ট একটি অফিস রুমে ঢুকলেন রুমে শুধু একটা টেবিল, চেয়ার আর ফাইল-ভর্তি একটি শেলফ টেবিলের ওপর একটি ফাইল আগে থেকেই রাখা ছিল সার্জেন্ট ফাইলটা হাতে তুলে নিয়ে দ্রুত কাগজ ল্টাতে শুরু করলেন ফাইল থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই চেয়ারটা টেনে বসলেন আর কাগজের পর কাগজ ল্টাতে থাকলেন কাঙ্ক্ষিত কাগজটি খুঁজে পাওয়ার পর তিনি থামলেন খোলা ফাইলটা টেবিলে রেখে হাতের তালু দিয়ে কাগজটিকে কয়েকবার ঘষে নিলেন যাতে বাতাসে উল্টে না যায় তারপর পড়তে শুরু করলেনমুতাসিম আমিন আল-কাসেমি, জন্ম ২১ জুলাই ১৯৭১, আল-আমিন কোয়ার্টার, ৭৬ উক্বা বিন নাফিস্ট্রিট আমিন আল-কাসেমির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেনতথ্যগুলো ঠিক আছে?
ঠিক আছে আমিন আল-কাসেমি বললেন
আপনার ছেলেকে কবে সেনাবাহিনীতে তলব করা হয়েছিল? সার্জেন্ট পরের প্রশ্ন করলেন
গত বছরের মার্চে, মার্চের আট তারিখে আল্‌-কাসেমি জবাব দিলেন
নাম-ঠিকানা যেহেতু ঠিক আছে, তার মানে আমাদের কোনো ভুল হয়নি সার্জেন্ট বললেন তারপর আরও দুচারটা পাতা উল্টে হাতে লেখা কয়েকটা লাইন পড়ে শোনালেনএপ্রিলের তারিখ, ফ্রন্ট লাইন শান্ত ছিল বিগত তিন দিনে কেউ কোনো গুলির শব্দ শোনেনি একজন লক্ষ্য করল, রাতের অন্ধকারে পাঁচজন সৈনিক চুপিসারে স্টেশন ত্যাগ করছে কিন্তু স্টেশন ত্যাগ করার কোনো নির্দেশই তাদেরকে দেওয়া হয়নি সুতরাং তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাবার চেষ্টা করছে পার্শ্ববর্তী এরিয়ার ডিউটিতে থাকা একজন সৈনিক তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে ফলস্বরূপ তারা তাদের কাপুরুষোচিত কাজের পরিণতি ভোগ করে পরবর্তীতে তাদের দেহ সংশ্লিষ্ট এরিয়া কমান্ডারের কাছে হস্তান্তর করা হলে তিনি প্রত্যেকের পরিচয় নিশ্চিত করেন তারা হলোনাবিল আব্দুল হামিদ, বাধ্যতামূলক নিযুক্তি, ১২ প্যালেস্টাইন স্ট্রিট; সামি আত্‌-তালিব, আস্‌-সালাম কোয়ার্টার; মুতাসিম আল-কাসেমি, আল-আমিন কোয়ার্টার, ৭৬ উক্বা বিন নাফেস্ট্রিট...
 
সার্জেন্ট এভাবেই একের পর এক নাম-ঠিকানা পড়ে যাচ্ছিলেন কিন্তু সেদিকে আল-কাসেমি কোন মনোযোগ ছিল না কারণ তার মনে ছেলের জীবিত থাকার যে ক্ষীণ আশা ছিল এবং সামরিক হাসপাতালে তাকে তলব করা নিছক ভুল বুঝাবুঝির কারণে হয়েছে বলে তার মনে যে একটা আবছা বিশ্বাস ঘর করেছিল সেই আশা বিশ্বাস ততক্ষণে ফিকে হয়ে গেছে সার্জেন্ট চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেনআপনি বরং আরেকবার দেখুন আমাদের ভুল হবার কথা নয় আপনার ছেলের নাম এই ফাইলেও আছে, মৃতদেহের সাথে পাঠানো তালিকাতেও আছে সব মিলিয়ে চোদ্দজন সেনার মৃতদেহ ওই রুমে আছে এবং প্রত্যেকের নাম স্পষ্ট অক্ষরে এই তালিকাতেও লেখা রয়েছে  
 
অফিস থেকে বেরিয়ে আল-কাসেমি তাঁর ভাইকে সাথে নিয়ে সার্জেন্ট আবার সেই হলরুমের গেটে পৌঁছোলেন মৃতদেহ নিতে আসা লোকেদের সংখ্যা ততক্ষণে পাঁচে গিয়ে ঠেকেছে লোহার দরজা ঠেলে তাঁরা তিনজন আবারও ভেতরে প্রবেশ করলেন ঢুকেই সোজাসুজি চতুর্থ মৃতদেহটির কাছে গেলেন সাদা কাপড়ের যে অংশে নাম লেখা ছিল সে অংশটুকু আলতো করে টেনে উপরে তুলে আল্‌-কাসেমিকে সম্বোধন করে সার্জেন্ট বললেনআপনি নিজেই দেখুন তারপর মৃতদেহের মুখের উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে দিলেন আল-কাসেমি মৃত সৈনিকের মুখের দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন এই প্রথম তিনি তাকে দেখছেন তারপর হতাশা-ভরা, ভারাক্রান্ত কন্ঠে উত্তর দিলেননা, এটা আমার ছেলে নয়
সার্জেন্ট লাশের মুখ ঢেকে দিয়ে অস্পষ্ট কণ্ঠে বললেনপার্থক্য কোথায়? জীবিত অবস্থায় ওদের কেউ কেউ দায়িত্ব পালন করেছে আর কেউ কেউ করেনি কিন্তু মৃত্যুর পর তারা প্রত্যেকেই সমান
 
সন্তানের মৃতদেহ গ্রহণ করার জন্য বাইরে অপেক্ষমান লোকেদের সংখ্যা ততক্ষণে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে সার্জেন্ট যে কোনো উপায়ে আল-কাসেমির ইস্যুটি এখানেই শেষ করতে চাইছিলেন আর তাই অধৈর্য হয়ে বললেনশুনুন মহাশয়, এই যুবকই আপনার ছেলে এখানে অন্য কিছু ঘটার কোনো সুযোগ নেই তালিকায় চোদ্দজনের নাম আছে এবং এই ঘরেও চোদ্দজনের মৃতদেহ আছে এটা যদি আপনার ছেলের মৃতদেহ না হয়, তাহলে কার?   
 
আল্‌-কাসেমিকে এসব প্রশ্ন করতে করতে হঠাৎ করে সার্জেন্টের মনে হলো, আল-কাসেমি হয়তো চতুর্থ মৃতদেহটিকে নিজের ছেলে বলে স্বীকার করতে চাইছেন না হয়তো সম্মুখ সমর থেকে কাপুরুষের মত পালিয়ে আসা পুত্রের কলঙ্কের দায় তিনি নিতে চাইছেন না মনে ধারণা বদ্ধমূল হবার পর তিনি কঠোর হলেন আল্‌-কাসেমির জন্য অস্বীকৃতির সকল দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললেনশুনুন, এটাই আপনার ছেলে যা ঘটেছে তা দুঃখজনক তবে আপনাকেই এই অপরাধের দায় নিতে হবে কারণ আপনি আপনার ছেলেকে ভালোভাবে লালনপালন করতে পারেননি তাকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে বড় করতে পারেননি
 
আল-কাসেমি বুঝতে পারলেন পরিস্থিতি ভিন্ন মোড় নিচ্ছে এরকম কিছু একটা যে ঘটতে পারে সে আশঙ্কা তিনি আগেই করেছিলেন তিনি ভাইয়ের দিকে তাকালেন তাঁর ভাই ইঙ্গিতে বিষয়টি এখানেই শেষ করার পরামর্শ দিলেন আল্‌-কাসেমি চতুর্থ মৃতদেহ থেকে একটু সরে দাঁড়ালেন সার্জেন্ট বললেনআপনাকে মৃতদেহ গ্রহণ করার প্রমাণ স্বরূপ এই কাগজে স্বাক্ষর করতে হবে
 
সার্জেন্টের দেখিয়ে দেওয়া স্থানে স্বাক্ষর করে আল-কাসেমি আবার ভাইয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন তারপর দুভাই মিলে মৃতদেহটি নিয়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলেন ভাড়া করা ট্যাক্সিটি সেখানেই তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল
 
[সালেমা স়ালেহ়্ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক চিত্রশিল্পী জন্ম ১৯৪২ সালে, ইরাকের মসুলে বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন এবং বাগদাদ চারুকলা ইনস্টিটিউটে চিত্রশিল্প সঙ্গীত নিয়ে অধ্যয়ন করার পর সাংবাদিকতার উপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেগণমাধ্যমের বৈশ্বিক প্রবণতাবিষয়ে গবেষণা করে পিএইডি ডিগ্রি অর্জন করেন বর্তমানে জার্মানিতেই থাকেন যাবৎ তাঁর টি ছোটগল্প সংকলন একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে এছাড়া জার্মান থেকে আরবি ভাষায় তাঁর অনূদিত বইয়ের সংখ্যা চোদ্দটি অনূদিত এই ছোটগল্পটি ‘আল্‌-জুস্‌সাহ্‌’ শিরোনামে ১৯৯৭-তে বার্লিনে বসে লিখেছিলেন]


الجثة

سالمة صالح
 
في هذا الصباح الذي لا يشبه أي صباح آخر لن يكون أمين القاسمي قادرا على أن يشاطر سائق التاكسي لعناته بسبب الازدحام أو يتأمل أشجار البرتقال التي بدأت تزهر خلف أسيجة الحدائق، لأنه كان قد انغلق على نفسه محاولا استرجاع حياة بكاملها، بكل تفاصيلها كأنه يخشى أن ينسى شيئا، وكان يحاول أن يعيد تنظيم هذه التفاصيل ليضع بعد ذلك نقطة لا يأتي بعدها شيء. ثم يضع ملاحظة "رقن قيده" ويغلق الملف إلى الأبد كما كان يفعل عادة وهو يستلم شهادة وفاة، تلك العبارة التي لا يعرف كم مرة كان عليه أن يكتبها في السنوات العشر التي عمل فيها موظفا في التسجيل المدني، دون أن يفكر فيما وراءها، دون أن يفكر في ذلك الإنسان الذي لم يعد موجودا، في الأم، الزوجة، الأطفال، النجاحات، الأخفاقات والرغبات التي لم تتحقق. في هذا الصباح الذي لا يشبه أي صباح آخر لن يستطيع أمين القاسمي أن يسجل هذه العبارة بعدم الاكتراث الذي اعتاده، لأن هذا الإنسان الذي لم يعد موجودا هو ابنه. سيفكر في الطفل الذي أجلسه على ركبته، في الأصوات التي تشبه الكلمات ثم في الكلمات الغريبة التي كان الطفل ينطق بها والتي كان يحاول أن يعيدها إلى أصلها، سيفكر في الغلام الذي صحبه إلى المقهى، وفي مناسبات بدا فيها مترددا أو خائفا "كن رجلا"، هذا الرجل الذي لم يصبحه، لأنه ظل في نظره صبيا، صبيا في الثامنة عشرة، تعلم حلاقة ذقنه منذ وقت قصير، سيفكر في اليافع الذي قال له مرة: "هل تحسبني طفلا؟" كان قد اكتشف ذات يوم أن هذا اليافع قد أصبح غريبا عنه، وأنه يعرف عن أبناء الجيران أكثر مما يعرف عنه. هذا الإبن الذي سيستعيده اليوم ويحتفظ به إلى الأبد.
 
في هذا الصباح الذي لا يشبه أي صباح آخر يعتريه الغضب وهو يفكر في الطلقة التي ثقبت الجسد الشاب فيتمنى لو يصرخ، لو يستطيع أن يطلق النار على أحد، ثم يسقط في الحزن حين يفكر في لا جدوى هذا، في لا جدوى حياة بكاملها. لم يعد ثمة معنى لكل ما فعله، ربما لن يناديه أحد بعد الآن، يا أبا المعتصم. كان مغلوبا وحزينا، لكنه لم يكن قادرا على البكاء.
 
كان الصمت هو لغة التضامن الوحيدة في مناسبة كهذه، لذلك لم يتبادل الثلاثة كلمة واحدة طول الطريق. لم يكرر سائق التاكسي شكواه من الازدحام، ولم يطرح شقيقه الذي رافقه إلى المستشفى العسكري أسئلة لا طائل منها، متى؟ أين؟ كيف حدث ذلك؟
 
حين دخل أمين القاسمي مع شقيقه المستشفى العسكري استوقفهما في مدخل البناية خفير يحمل في يده رزمة مفاتيح، طلب منهما التريث، ثم فتح الباب الحديدي القائم في الجهة اليمنى من المدخل فرأيا من مكانهما القاعة المستطيلة التي بدت لهما مكتظة بجثث انتظمت في صفين متوازيين بمحاذاة الجدار. كان الضوء الساقط من النوافذ الصغيرة القريبة من السقف ينعكس على الجدار المقابل منتشرا في الغرفة فيسمح بتمييز الجثث التي بدت كبقع مضيئة على الأرض الداكنة.
 
كان الخفير وهو عسكري برتبة عريف قد انسحب جانبا بعد أن فتح الباب وكأنه يريد إفساح الطريق للآخرين. ألقى نظرة على قائمة الأسماء التي بيده ثم أجال بصره في الرجال الواقفين في مدخل البناية الذين أصبحوا الآن أربعة، وبعد لحظة صمت أشار إلى أمين القاسمي أن يتقدم. فتقدم خطوتين وذكر اسمه مضيفا: "والد معتصم القاسمي" نظر العريف في قائمته من جديد ثم وضع اصبعه على أحد الأسماء في الورقة وقال: "تفضل، إنه الرابع". سبقهما بخطوات ثابتة إلى داخل القاعة فتبعه أمين القاسمي وأخوه بخطوات ثقيلة محاولين عدم إظهار أي عاطفة قد تسبب لهما متاعب لا قبل لهما بها. رفع العريف ملاءة متسخة عن الجثة الرابعة في الصف، والتفت إلى القاسمي: أهو ابنك؟
 
لم يكن أمين القاسمي بحاجة إلى إلقاء نظرة ثانية ليتبين أن الشاب المطروح أمامه ليس ابنه. هز رأسه نافيا وهو يفكر في الشاب الذي تعكر وجهه وكأنه يرى حلما مزعجا، وفي ثقب الرصاصة في عنقه، تحت الأذن. سأل العريف وقد فاجأه الموقف: أليس هذا ابنك؟ قال القاسمي بصوت واهن: لا.
 
أعاد العريف الملاءة على صدر الشاب ورأسه، ثم سحبها قليلا من الجانب حيث كتب الإسم بخط عريض أسود. قرأ أمين القاسمي تحته كلمة جبان، كتبت بنفس الخط الرديء الذي كتب به الإسم، فانقبض قلبه، لكنه بقي جامدا في مكانه. نظر العريف لحظة في الفراغ ثم بدا وكأنه قد وجد تفسيرا للأمر: لا بد أن الملاءات اختلطت، سنلقي نظرة على الآخرين. خطا إلى بداية الصف يتبعه القاسمي، رفع الملاءة عن الجثة الأولى ورفع رأسه مستفهما بنظره. إلا أن القاسمي هز رأسه نافيا، فأعاد الملاءة فوق رأس الجثة وخطا خطوة واحدة إلى اليمين ليرفع الملاءة عن الجثة الثانية. ليس هذا ابني، قال القاسمي. تابع العريف عمله فرفع الملاءة عن الجثة الثالثة وتجاوز الرابعة موضحا: هذه قد رأيتها. كشف الغطاء عن الجثة الخامسة والسادسة والسابعة والثامنة، وكان جواب القاسمي نفيا. سنجدها بالتأكيد، قال العريف، لا بد أن الملاءة استبدلت خطأ. حين وصل الجثة العاشرة كان قد فقد الثقة بأنه سيجد الشخص المطلوب وبدا هو الآخر قلقا. وعندما وصل الجثة الأخيرة كان قد يئس تماما، إلا أنه تظاهر بالثقة وقال وهو يرفع الملاءة: "لا بد أن يكون هو، فهذا هو الأخير." لكن القاسمي نظر إلى الشاب الذي لم يتجاوز سن اليفاعة، قدر عمره بست عشرة سنة، وجه ناحل، بدا وكأنه ينام في سلام. أيقظه العريف من ذهوله بصوت يشي بالانشراح وقد ظن أنه يوشك أن ينهي مهمته: إنه هو، أليس كذلك؟ لكن القاسمي هز رأسه وقد راوده شيء من الأمل في أن ابنه لا يزال حيا، وأن الأمر مجرد خطأ: كلا إنه ليس هو.
 
وقع العريف في حيرة وقال: هذا لا يمكن أن يكون. ماذا كان اسمه؟ أخرج قائمة الأسماء التي كان قد وضعها الآن في جيب قمصلته العسكرية، أعاد قراءة الأسماء: معتصم القاسمي، إنه الرابع في القائمة ولا مجال للشك. طوى القائمة وتقدم باتجاه الباب: "تعالا معي." تبعه الرجلان إلى خارج القاعة، أقفل الباب ومضى دون أن ينظر إلى الرجلين اللذين كانا ينتظران طول الوقت في مدخل البناية. قطع الممر إلى نهايته وانثنى يسارا، فتح غرفة مكتب ضيق وضعت فيه منضدة للكتابة ورف صفت فيه بعض الأضابير. كان ثمة ملف على المنضدة، تناوله العريف وفتحه مقلبا أوراقه، ودون أن يرفع بصره سحب الكرسي قليلا وجلس وراء المنضدة متابعا تقليب الصفحات، توقف عند إحداها، وضع الملف المفتوح على المنضدة ومر براحة يده على الصفحة هبوطا وصعودا ليمنعها من الانفلات، وقرأ: معتصم أمين القاسمي، مولود في 21 حزيران 1971، العنوان: حي الأمين، شارع عقبة بن نافع، رقم الدار 76. أليس هذا صحيحا؟ صحيح، قال أمين القاسمي مؤيدا صحة المعلومات. سأل العريف: متى سيق ابنك إلى الخدمة؟
 
في آذار من العام الماضي، الثامن من آذار. قال القاسمي.
 
ليس ثمة خطأ، ما دام العنوان صحيحا، ليس ثمة خطأ. قال العريف. قلب بضع صفحات أخرى في الملف، توقف عند صفحة مكتوبة بخط اليد، وشرع يقرأ: في الخامس من نيسان وكانت الجبهة هادئة، حيث لم تسمع إطلاقة واحدة خلال الأيام الثلاثة الأخيرة، شوهد خمسة جنود، يتسللون من موقعهم ليلا ويمضون في وجهة مجهولة، ولما كانوا لم يكلفوا بمهمة تقتضي ذلك، لم يكن ثمة شك في أنهم حاولوا الهروب. وقد استطاع جندي من قاطع مجاور أن يتبين نواياهم فأطلق عليهم الرصاص، وهكذا نالوا جزاء جبنهم. أعيدت جثثهم إلى القاطع، وجرى التعرف على هوياتهم: نبيل عبد الحميد، جندي مكلف، شارع فلسطين، رقم الدار 12، سامي الطالب، حي السلام، معتصم القاسمي، حي الأمين، شارع عقبة بن نافع، رقم الدار 76 . تابع العريف القراءة، بينما كف القاسمي عن الإصغاء. تلاشت بارقة الأمل التي جعلته يؤمل أن ابنه لا يزال حيا وأن الأمر كله محض التباس.
 
نهض العريف مجددا وقال: عليك أن تلقي نظرة ثانية عليهم. لا مجال للخطأ، اسم ابنك موجود في الملف وفي قائمة التسليم. إنهم أربعة عشر جنديا وأسماؤهم مكتوبة في القائمة.
 
غادر العريف المكتب يتبعه القاسمي وأخوه، قطع الرجال الثلاثة الممر إلى مدخل البناية، كان عدد الرجال الذين يقفون في المدخل قد أصبح الآن خمسة. فتح باب القاعة ودخل يتبعه القاسمي وأخوه. إتجه إلى الجثة الرابعة، سوى الملاءة البيضاء في الموضع الذي كتب عليه الإسم وقال مخاطبا القاسمي: إقرأ بنفسك." ثم رفع الملاءة. نظر القاسمي إلى وجه الجندي الميت وكأنه لم يره في المرة الأولى، ثم قال بصوت يائس: لا، ليس هذا ابني."
 
تمتم العريف وهو يعيد الملاءة فوق وجه الشاب: "ما الفرق، حين يكون حيا، قد يكون إبنا صالحا أو عاقا، أما في الموت فإنهم جميعا متساوون." ثم قال بنفاد صبر محاولا أن ينتهي من الأمر بأي شكل ليتفرغ بعد ذلك للرجال الآخرين الواقفين في مدخل البناية الذين ازداد عددهم الآن: "إسمع، إن هذا الشاب ابنك، ليس ثمة مجال للشك. إنهم أربعة عشر في القائمة، وهم هنا أربعة عشر. إذا لم يكن هذا ابنك فمن يكون؟"
 
ومضت في رأس العريف فكرة أن الرجل ينكر ابنه لأنه قتل وهو يفر من الجبهة، ولأنه لا يستطيع أن يكون فخورا بابن ستبقى صفة الجبن لصيقة به كلما ذكر. قرر في هذه اللحظة أن يكون أكثر حزما وأن يسد الطريق على القاسمي الذي يتنكر لابنه. قال بصوت متهم هذه المرة: "إسمع يا رجل، هذا هو ابنك. إن ما حدث لأمر مؤسف حقا، لكنك تتحمل نصيبا من المسؤولية لأنك لم تحسن تربيته." تنبه القاسمي إلى أن الأمر بدأ يتخذ منحى آخر، وهو ما كان يخشاه، فنظر إلى أخيه ينتظر منه العون. أومأ الأخير إليه ألا يعارض، فتقدما من الجثة الرابعة في الصف. قال العريف: "عليك أن توقع بالاستلام." وقع القاسمي على الورقة حيث أشار العريف، وعاد إلى حيث يقف أخوه. حملا الجثة وخرجا إلى الشارع حيث كانت سيارة التاكسي في انتظارهما.
 
برلين 1997