Saturday 9 December 2017

আমীরুশ শুআরা আহমাদ শাওকী


আমীরুশ্‌ শুআরা আহ়্মাদ শাওক়ী
(১৮৬৮১৯৩২ খ্রি)
 আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পরিচিতি ও জন্মঃ
কবি আহ়্মাদ শাওক়ী সেই পাঁচজন কবির মধ্যে শীর্ষস্থানীয় যাঁদের হাতে আধুনিক আরবী কাব্য সাহিত্য প্রতিপালিত হয়েছে এবং যাঁদের হাত ধরে আরবী কবিতা পূর্ণতা লাভ করেছে। তাঁর নাম আহ়্মাদ শাওক়ীতিনি আমীরুশ্‌ শুআরা (আধুনিক কবি-সম্রাট) উপাধিতে ভূষিত। ১৮৬৮ সালে ১৬ই অক্টোবর মিসরের রাজধানী কায়রোতে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা আরবীয়, মাতা তুর্কীশ, পিতামহী কুর্দিশ এবং মাতামহী গ্রীক বংশোদ্ভূত। এভাবে চারটি পৃথক সংস্কৃতি তাঁর ধমনীতে প্রবাহিত হয়েছিল।    
 
শিক্ষা জীবনঃ
চার বছর বয়সে তাঁকে কুত্তাবুশ্‌ শায়েখ সালেহ নামক মক্তবে ভর্তি করা হয়। অতঃপর মাদ্‌রাসাতুল্‌ মুব্‌তাদিয়ান এবং মাদ্‌রাসাতুত্‌ তাজ্‌হিযিয়্যাহ্‌তে পাঠ গ্রহণ করেন। তারপরে আইন মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দু’ বছর পর অনুবাদ বিভাগ হতে ফরাসী ভাষা শেখেন এবং এ বিষয়ে সনদ অর্জন করেন। ১৮৮৭-তে আইন ও সাহিত্য অধ্যয়নের জন্য তিনি পর্যায়ক্রমে ফ্রান্সের মনপালিয়া ও প্যারিস যাত্রা করেন। ১৮৯১ সালে ইস্তানবুল হয়ে মিসর প্রত্যাবর্তন করেন।    
 
দরবারী কবিঃ
ফিরে এসে তিনি শাসক ‘আব্বাস হিল্‌মীর নৈকট্য লাভ করেন। দিনের পর দিন তাঁদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হতে থাকে। এভাবে তিনি শাসকের কবি ও মুখপাত্রে পরিণত হন। ১৯৮৪ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত প্রাচ্যবিদদের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে মিসরের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে তিনি তাঁর বিখ্যাত কবিতাকেবারুল্‌ হাওয়াদিস ফী ওয়াদিন্‌ নীলআবৃত্তি করেন।   
 
নির্বাসনেঃ
১৯১৫ সালে যখন ইংরেজরা খিদিভ ‘আব্বাসকে ক্ষমতাচ্যুত করল প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে জার্মানি ও তুরস্ককে সমর্থন করার অজুহাতে এবং তাঁর পরিবর্তে হুসাইন কামিলকে সিংহাসনে বসালো কবি প্রকাশ্য এর বিরোধিতা করলেন। ফলে তাঁকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হল। তিনি স্পেনের বার্সিলোনায় চলে গেলেন। সেখানেই নির্বাসনের পাঁচ বছরের (১৯১৫১৯১৯) অতিবাহিত করলেন।
 
জাতির কবিঃ
১৯২০-তে দেশে ফিরে তদানীন্তন মিসরের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে অংশ গ্রহণ শুরু করেন। রাজনৈতিক সংস্কার, জাতীয় সমস্যাসমূহের সমাধান ও আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনের ব্যাপারে সরব হন। অতঃপর ১৯২৪ সালে তাঁকে মাজ্‌লিসুশ্‌ শুয়ূখ (আমাদের রাজ্যসভার মতো একটা সংসদীয় কমিটি)-এর সদস্য করা হয়। ১৯২৭ সালে কায়রোর অপেরা হাউসে অনুষ্ঠিত কাব্য মেলায় আরব বিশ্বের কবি-বিদ্বান ও রাজনীতিবিদদের উপস্থিতিতে তাঁকে আমীরুশ্‌ শুআরা (আধুনিক যুগের কবি-সম্রাট) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এই বিরল প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বটি ১৯৩২-এর ১৪ই অক্টোবর কায়রোয় মৃত্যু বরণ করেন।      
 
তাঁর রচনাসমূহঃ
তাঁর কবিতার সংকলনটি “আশ্‌-শাওকিয়্যাত” নামে চার খণ্ডে প্রকাশিত। এছাড়া “আস্‌ওয়াকুয্‌ যাহাব” তাঁর সামাজিক প্রবন্ধসমূহের সংকলন। তিনি ছয়টি কাব্যনাট্য রচনা করেছেন। যথা— মাস্‌রা‘উ কালিউবাত্‌রা, মাজ্‌নূনু লায়লা, কাম্‌বীয, ‘আলী বিক আল্‌-কাবীর, ‘আন্‌তারাহ্‌, আস্‌-সিত্তু হুদা তাঁর লেখা তিনটি উপন্যাস হল— ‘আয্‌রাউল্‌ হিন্‌দ, লাদিয়াস, ওয়ারাকাতুল্‌ আস।
 
তাঁর কাব্য প্রতিভাঃ
আব্বাসী কবি আল্‌-মুতানাব্‌বীর পরে তাঁর মতো প্রতিভাধর কবি আর একটাও জন্মায়নি। তাঁর প্রাচীন ও নব্য রচনা শৈলীর মিশ্রণে এক অভিনব ও নতুন কাব্য রীতির প্রবর্তন, ভাষার সাবলীলতা, উপস্থাপনের মাধুর্য, বিষয়বস্তুর আবেদন পাঠক মনকে বিমোহিত করে। তাঁর কবিতার মূল উপজীব্য হল দেশ প্রেম, ধর্ম প্রীতি, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এবং জীবনের মায়া। তিনি নবী (সাঃ)-র প্রশংসায় রচিত তাঁর বিখ্যাত আল্‌-হামাযিয়্যাতুন্‌ নাবাবিয়্যাহ্‌ কবিতার সূচনায় বলেছেন
وُلد الهــدى فالكائنات ضيــاء              وفــم الـزمــان تبســم وثنـــاء
(পথপ্রদর্শক জন্মেছেন। তাই নিখিল বিশ্ব আলোয় ঝলমল করছে। সময়ে মুখে হাসি ও বন্দনার ধ্বনি।)
তাঁর এক কবিতায় শিক্ষক সমাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন 
قــم للمعــلم وفـــه التبجيــلا                   كـاد المعـلم أن يكـون رسولا
(দাঁড়িয়ে পড়ো, শিক্ষককে পূর্ণ রূপে সম্মান করো। কারণ শিক্ষকেরা হচ্ছেন প্রায় নবী-রসূলদের মতো।)
দামেস্কের প্রশংসায় রচিত কবিতার সূচনায় তিনি বলেছেন    
آمنت بالله واستـثـنيـت جنتــه             دمشـق روح وجنات وريحـان
(আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান এনেছি, তাঁর তৈরি স্বর্গকে আলাদা রেখে বলছি, দামেশকাস হচ্ছে প্রাণ, কোমল বাতাস ও সুগন্ধিতে ভরা একটা স্বর্গ।)

No comments:

Post a Comment