Tuesday 24 May 2016

লাবীদ বিন‌ রাবীআহ‌ আল-আমেরী

লাবীদ বিন্‌ রাবী‘আহ্‌ আল-‘আমেরী

(৫৬০ – ৬৬১ খ্রিঃ)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

জন্ম ও পরিচয়ঃ

প্রাক-ইসলামী যুগের তৃতীয় স্তরের একজন উৎকৃষ্ট কবি। মুয়াল্লাকা কবি গোষ্ঠীর মধ্যে তিনিই একমাত্র মুসলিম। তিনি লাবিদ বিন রাবিয়া আল-আমেরী, পিতৃব্য আবুল বারা’ ছিলেন একজন দক্ষ যোদ্ধা ও বর্শা নিক্ষেপকারী, পিতা রাবিয়া ছিলেন নাজ্দের একজন বিখ্যাত দানশীল ব্যাক্তি ও কবির জননী ছিলেন আবস গোত্রীয়।

 

প্রাথমিক জীবনঃ

বয়ঃসন্ধিক্ষণে উপনীত হয়ে তিনি তাঁর সাহিত্য সাধনা আরম্ভ করেছিলেন। আবুল বারা’ ও তার ভাইদের সঙ্গে বালক লাবিদও নুমান বিন মুন্যিরের নিকট উপস্থিত হন। সেখানে তিনি প্রতিপক্ষ রাবি’ বিন যিয়াদের কুৎসা করে একটি কবিতা রচনা করেন, যেটি শুনে নাবিগা মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি গাসাসেনাহ্ সম্রাটদেরও প্রশংসা করেছিলেন।

 

ইসলাম গ্রহণঃ

কিলাব্ গোত্রের ১৩ জন পুরুষের সঙ্গে নবী (সাঃ)-র নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলামের প্রতি চরম মুগ্ধ হয়ে তিনি কাব্যচর্চা ত্যাগ করেন। অনেকের মতে নিম্নোক্ত পঙক্তি ব্যতীত তিনি আর কোনও কবিতা রচনা করেননিঃ  

الحمد لله إذ لم يأتيني أجلي     حتى لبست من الإسلام سربالا

(যত গুণগান আল্লাহ্‌র, কারণ যতক্ষণ না আমি ইসলামে আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়েছি মৃত্যু আমাকে স্পর্শ করেনি।)

 

মৃত্যুঃ

ইসলাম গ্রহণের পর তিনি কূফায় বসবাস করছিলেন। একদিন কুফার শাসক তাঁকে নতুন কিছু কবিতা রচনার জন্য আবেদন করেন। তিনি প্রতিউত্তরে ‘সূরা বাকারা’ লিখে পাঠান আর বলেন—

"منحني الله هذا عوض شعري بعد أن أصبحتُ مسلما"

(ইসলাম গ্রহণ করার পর, কবিতার পরিবর্তে আল্লাহ্‌ আমাকে এটা (কুরআন) প্রদান করেছেন।)

   

খলীফা উমার (রাঃ) তাঁর এই উত্তরে মুগ্ধ হয়ে তাঁর ভাতা ৫০০ থেকে ২০০০ দির্‌হাম (রৌপ্যমুদ্রা) করে দেন। মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর যুগে ৪১ হিঃ মোতাবেক ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে ১৫৭ মতান্তরে ১৪৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

 

তাঁর কবিত্বঃ

তাঁর কবিতার উদ্দেশ্য ও উপজীব্য নানা প্রকৃতির। তবে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল বর্ণনামূলক, গৌরবাত্মক, শোকগাথা ও জ্ঞানগর্ভমূলক। তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট হল তাঁর বর্ণনার গভীরতা ও ‘গরীব’ শব্দের প্রতি তাঁর আসক্তি। তা সত্ত্বেও তাঁর বর্ণনায় কোনও অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হয়নি। তাঁর এই পঙক্তি "ألا كلّ شيئ ما خلا الله باطل" (শোনো, আল্লাহ্‌ ব্যতীত যা কিছু আছে সবই বাতিল) সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) মন্তব্য করেছেন—

" أصدق كلمة قالها شاعر كلمة لبيد"

(কাব্যজগতে লাবীদের এই বাক্যই সর্বাধিক সত্য বাক্য।)

কাব্য জগতে তাঁর স্থানঃ

ইব্‌নু সালাম ও অন্যান্য সমালোচকগণ তাঁকে প্রাক-ইসলামী যুগের তৃতীয় স্তরের কবি হিসেবে গণ্য করেছেন। একবার তাঁকেই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ব্যক্তিগত ভাবে জাহেলি কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন—

" رجل في قميصي"

(আমার এই জামা যে পরে আছে, সে-ই সবচেয়ে বড় কবি।)

 

তিনি তাঁর মু’আল্লাকায় বেশ কিছু অনুপম উপমা প্রদান করেছেন। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেছেন—

وجلا السيول عن الطلول كأنها     زبر تجدّ متونها أقلامها

أَوْرَجْعُ وَاشِمَةٍ أُسِفَّ نَؤُورُهَا         كِفَفَاً  تَعَرَّضَ  فَوْقَهُنَّ  وِشَامُهَا

(আর প্লাবন উপত্যকা (-র রেখা) গুলিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে, (মনে হচ্ছে) যেন সেগুলি এমন গ্রন্থরাজি যার লিপি-পাঠকে লেখনি নতুনত্ব দান করেছে।

অথবা তা যেন উল্কি অঙ্কনকারিণীর পুনরাঙ্কন, যাতে বৃত্তাকারে কালি লেপন করা হয়েছেতাই তার ওপর রেখাগুলি প্রতিভাত হচ্ছে )

 

অন্য এক জায়গায় আরও সুন্দর ও অপূর্ব উপমা প্রদান করে শব্দ দিয়ে এক অসাধারণ ছবি এঁকেছেন—

وَتُضِيءُ في وَجْهِ الظَّلامِ مُنِيرَةً         كَجُمَانَةِ الْبَحْرِيِّ  سُلَّ  نِظَامُهَا

(রাতের প্রথম প্রহরে সে জ্যোৎস্না-স্নাত হয়ে জ্বলজ্বল করছিল, (এবং যখন চক্রাকারে ঘুরছিল) যেন কোনো ডুবুরীর মুক্তোর মালা, যার সুতোটা ছিঁড়ে গেছে।)  

No comments:

Post a Comment