রিমার চতুর্থ প্রতিশ্রুতি
জ়াকারিয়া তামির, সিরিয়া
একটি রাজনৈতিক সম্মেলনে প্রথম দেখা হাম্দান ও রিমার। প্রথম দেখাতেই হাম্দান রিমাকে ভালোবেসে ফেললো। কিন্তু উলটো দিক থেকে কোনো সাড়া পেলো না। তাই কিছু দিন পর হাম্দান অভিযোগ তুলল, রিমা একটা হার্টলেস মেয়ে। তার কোনো ইমোশন নেই। এই অভিযোগের কথা জানতে পেরে রিমা তাকে প্রতিশ্রুতি দিল, “শোনো যেদিন মানুষ চাঁদে পৌঁছবে সেদিন আমি তোমাকে ভালোবাসবে।” অতঃপর মানুষ যখন চাঁদে পৌঁছলো, চাঁদে গিয়ে চাঁদের মাটিতে পায়চারী করলো, রিমা হাম্দানকে দেওয়া তার সেই কথা রাখলো।
তারপর শুরু হল তাদের প্রেম পর্ব। ক’সপ্তাহ বাদে হাম্দান একদিন রিমার সাথে দেখা করলো। দেখা করে রিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলো। তার সব কথা শোনার পর রিমা তাকে কথা দিলো, “যেদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে সেদিন আমি তোমাকে বিয়ে করবে।” তার কিছু দিন পরেই সোভিয়েত ইউনিয়ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হল। আর রিমা তার দেওয়া কথা মতো হাম্দানকে বিয়ে করলো।
বিয়ের পর বেশ সুখ-স্বাচ্ছন্দে দিন কাটতে লাগলো হাম্দানের। তার মনে হল, সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। কিন্তু ক’মাস পরে একদিন রিমা লক্ষ্য করলো, হাম্দান বিষণ্ণ মনে বসে ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই হাম্দান বলল, “বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা নেই। বাড়িটা কেমন নির্জন, নির্জীব ও প্রাণহীন মনে হচ্ছে। অসহ্য লাগছে আমার এই বাড়িতে।” এই কথা শুনে রিমা ওয়াদা করলো, যেদিন বার্লিনের প্রাচীর ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে সেদিন সে একটা ফুটফুটে শিশু জন্ম দেবে। তারপর একদিন সত্যিই বার্লিনের প্রাচীর ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেলো। আর তার নুড়িপাঁথরগুলো বিক্রি হয়ে গেলো প্রাচীন নিদর্শন প্রিয় লোকেদের কাছে। রিমাও ওয়াদা মোতাবেক একটা ফুটফুটে শিশু জন্ম দিলো। দেখতে অবিকল হাম্দানের মতো। শুধু বাবার মতো গোঁফদাড়ি নেই এটুকুই যা।
তবে হাম্দানের এই সুখও দীর্ঘস্থায়ী হল না। একদিন সে রিমার কাছে অভিযোগ করলো, তার পকেট খালি। চারিদিকে হাড় হিম করা বেকারত্ব। শ্রমজীবীদের মাইনে খুবই কম। এসব শোনার পর রিমা তাকে ওয়াদা করে বলল, “অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তোমার অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে, যেদিন মার্কিন মুলুক সাম্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।” এবং অদ্ভুত ভাবে কিছু দিন পরেই আমেরিকা সাম্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হল। আর তার আকাশে লাল পতাকা পতপত করে উড়তে লাগলো। কিন্তু হাম্দানের অবস্থার কোনোরকম পরিবর্তন হল না। তার পকেট আগের মতোই ফাঁকা। চারিদিকে বেকারত্বের প্রকোপ আগের থেকেও তীব্র। আর শ্রমজীবীদের মাইন আগের মতোই; তাদের দুর্দশা ঘুচল না।
[৫৭ ওয়া’দুহা আর্-রাবে’— আল্-হিস্রিম ১৮৫]
অনুবাদ- আব্দুল
মাতিন ওয়াসিম