Tuesday 20 June 2017

ঈদের শপিং ও খলীফা উমার (রাঃ)



ঈদের শপিং ও খলীফা উমার (রাঃ) 

উমার (রাঃ)। ইসলামি ইতিহাসের দ্বিতীয় খলিফা। পৃথিবীর ইতিহাসে এক দক্ষ প্রশাসক। তাঁর প্রশাসন-নীতি অনুপ্রাণিত করেছে বহু রাষ্ট্রনায়ককে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। ইতিহাসও যুগ যুগ ধরে সাক্ষ্য বহন করে চলেছে তাঁর প্রজা-প্রেমের। তিনি ছিলেন প্রায় অর্ধ পৃথিবীর শাসকসে-সময়ে বায়তুল-মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) দেখাশুনা করতেন আবু উবাইদা (রাঃ)। সহজ করে বললে, তিনি উমার-সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন।

কাল বা পরশু ঈদ। চারিদিকে বাতাবরণ উৎসব-মুখর। ঈদের শোপিংয়ে মেতেছে পাড়া। বাচ্চারা সব আনন্দে আত্মহারা। নতুন জামার রং মনে লেগেছে তাদের। নতুন সাজে ছেলেমেয়েদের দেখে নয়ন জুড়াতে সব মায়েরাই চায় তাই বিনয়-জড়ানো কন্ঠে স্ত্রী স্বামী উমার (রাঃ)-কে বললেন- ‘শোনো, এই ঈদে আমাদের জন্য নতুন জামাকাপড় না হলেও চলবে। কিন্তু ছোট ছেলেটা নতুন কাপড়ের জন্য বায়না ধরেছে। রীতিমত কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিয়েছে একটু দেখো না, যদি কোনোভাবে সম্ভব হয়।’ 

অর্ধ পৃথিবীর শাসক উমার (রাঃ) অকপট উত্তর দিলেন- ‘আমার যে নতুন কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই!' তবে পরক্ষণেই পিতৃসুলভ দুর্বলতা ও আবেগের কাছে তাঁর প্রতাপ পরাজিত হল। তিনি আবু উবাইদা (রাঃ)-কে চিঠি লিখলেন, এক মাসের অগ্রিম বেতন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে

খলিফার এই চিঠি দেখে আবু উবাইদা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। আমীনুল্‌ উম্মাহ্‌ বা ‘জাতির বিশ্বস্থ ব্যক্তি’ রূপে পরিচিত তিনি। সজল চোখে উত্তর লিখলেন- ‘হে আমীরুল্‌ মুমেনীন, হে বিশ্বাসীদের নেতা, অগ্রিম বেতন বরাদ্দের বিষয়ে আমার দু’টি জিজ্ঞাস্য আছে। আর আপনাকেই তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। বিষয় দু’টি হল- 
(ক) আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি না? 
(খ) বেঁচে থাকলেও, জনগণ আপনাকে খেলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবে কিনা?’ 

উত্তর দেখে উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। অশ্রুজলে দাড়ি সিক্ত হয়ে গেল তাঁর। দু’ হাত তুলে মহান প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করলেন, হে আল্লাহ! আবু উবাইদা (রাঃ)-এর প্রতি করুণা করো, তাঁকে দীর্ঘায়ু দান করো!   

[তথ্যসুত্রে- আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ইবনে কাসীর (রহঃ)]

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

Saturday 17 June 2017

তালাক বিতর্ক ও ইসলামী দৃষ্টিকোণঃ কিছু কথা


তালাক বিতর্ক ও ইসলামী দৃষ্টিকোণঃ কিছু কথা
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
তালাককে, বিশেষত তিন তালাককে কেন্দ্র করে আশির দশকের সেই শাহ বানু ঘটনার পর থেকে বেশ ধুন্ধুমার লেগে রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনগুলির মধ্যে। এসব দেখে মাঝেমাঝে মনের আকাশে উঁকি দেয় নানা জিজ্ঞাসা, নানা প্রশ্ন তালাক আদতে কী? বিতর্ক না বিতর্কের নিরসন? এর প্রয়োজনীয়তা কতটা? ইসলাম কেন বৈধ করল? এর সঠিক পদ্ধতিটাই বা কী, ইত্যাদি?  
তালাক কী এবং কেন?— তালাক হল বন্ধন ছিন্ন করার নাম, বিবাহ-বন্ধন। আর বিবাহ মানুষের প্রয়োজন; মানব-শৃঙ্খলকে অটুট রাখার জন্য। তাই আল-কুরআনের ভাষায় বিবাহ মানবজীবনের একটি ‘মিসাক্ব গালীয’ (বলিষ্ঠতম অঙ্গীকার) [সূরা আন্‌-নিসা ২১]। আর এই সম্পর্ককে মধুর ও স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে বিয়ের পূর্বে একে অপরকে দেখার আদেশ ও অনুমতি দেওয়া হয়েছে। [তিরমিযি ১৮৭] আর বিয়ের পরে উভয়কে নিজ নিজ অধিকার স্পষ্ট রূপে জেনে পালন করার আদেশও দেওয়া হয়েছে। [তিরমিযি ১১৬৩, আবুদাউদ ১৮৩০] যাতে কেউ কোনো ভাবে বঞ্চিত না হয়। এছাড়া পরস্পরের ত্রুটিগুলি মার্জনা করে ভালো দিকগুলিকে মনে স্থান দেওয়া উচিৎ। এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। [সূরা আন্‌-নিসা ১৯, মুসলিম ২৬৭২] এবং মনে রাখা দরকার, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের অংশ। [সূরা আলে ইমরান ১৯৫] এমনকি পরস্পরের আচ্ছাদনও। [সূরা আল-বাক্বারা- ১৮৭] তাই যখনই এই বিশ্বাস ও ভাবনা থেকে তাঁদের উভয়ে বা কেউ একজন সরে দাঁড়ায়, তখনই দেখা দেয় সমস্যা, মন-মালিন্য, কলহ; এমনকি সন্দেহও। ধীরে ধীরে স্ফুলিঙ্গ রূপ নেয় অগ্নিকুণ্ডের। যাতে ভস্ম হয়ে যায় দুটো প্রাণী, দু’টি পরিবার এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ।
অতএব কোনো ক্ষেত্রে যদি মতানৈক্য দেখা দেয়, তাহলে উভয়ের উচিৎ পরিস্থিতির পর্যালোচনা করা। ভুলত্রুটি চিহ্নিত করা এবং শান্তভাবে তার সমাধান খোঁজা। প্রয়োজনে তাঁরা কোনো তৃতীয় ব্যক্তির সাহায্য নেবে বা পারিবারিক স্তরে সে-সম্পর্কে আলোচনা করবে। এ মর্মে স্বামী-পরিবারের লোকজনদের সেই স্ত্রীর প্রতি যত্নবান ও আন্তরিক হওয়া আবশ্যিক। [সূরা আন্‌-নিসা ১৯] আর স্মরণে রাখা ভালো যে আর যদি তোমরা তাদের উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদের আশঙ্কা করো তাহলে স্বামীর পরিবার থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। যদি তারা মীমাংসা চায় তাহলে আল্লাহ উভয়ের মিল করে দেবেন।” [সূরা আন্‌-নিসা ৩৫]
এর পরেও যদি বিতর্ক থেকে যায় তাহলে বিচ্ছেদের পথে যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ্ তাআলার নিকট বৈধ জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও অপছন্দনীয় হচ্ছে তালাক [আবু দাউদ ১৮৬৩]। এবং যে মহিলা তার স্বামীর নিকট কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়াই তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধি হারাম (নিষিদ্ধ) করে দেওয়া হয়” [আবুদাউদ ১৮৯৯]। এছাড়া তিনটি ক্ষেত্রে সিরিয়াস হয়ে বা ঠাট্টা করে বলা সমান। সেগুলি হল— (ক) বিয়ে, (খ) তালাক (গ) এবং স্ত্রীকে এক বা দু’ তালাক দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়া [তিরমিযি ১১৮৪, আবুদুউদ ২১৯৪]      
তালাকের পদ্ধতি— খুব চিন্তা ভাবনা করেই তালাকের পথে পা বাড়ানো উচিৎ। কারণ, যেভাবে বিবাহ দু’টি অপরিচিত ব্যক্তিকে যুক্ত করে, একইভাবে তালাক সেই দু’জনকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সুতরাং বিয়ের জন্য যেভাবে মাসের পর মাস কথাবার্তা ও আলাপ-আলোচনা করা হয়; পরিবারের বয়োজ্যষ্ঠদের এবং বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। সবার সম্মতি নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে বড়োদের উপস্থিতিতে বিবাহকার্য সম্পন্ন করা হয়। একইভাবে তালাকও হওয়া উচিৎ। [সূরা আল-বাক্বারা ২২৯] 
আর এক্ষেত্রে প্রথমে বকেয়া মোহর পরিশোধ করতে হবে। তারপরে স্ত্রীর ‘পবিত্র’ অবস্থায় মিলনের পূর্বে লিখিত বা মৌখিক ভাবে এক তালাক দেবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তালাক শব্দটি বার বার বা তিন বার উচ্চারণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আর করলেও এক তালাকই গণ্য হবে, মাম ইবনে তাইমিয়া ও অন্যান্য আহলে হাদিস (সালাফি) বিদ্বানদের মতে। 
এরপর তিন (মাসিক) মাস হল ইদ্দত। এই তিন মাসের মধ্যে তাঁরা পরস্পরের নিকট ফিরে যেতে পারে; এ ক্ষেত্রে উভয়ের একই গৃহে অবস্থানের বিধানও রয়েছে, যাতে সুরাহার সম্ভাবনা প্রবল হয়। কিন্তু তিন মাস অতিক্রান্ত হবার পর স্বামী স্ত্রীকে ঘরে তুলতে পারবে না; আর যদি তুলতে চায় তাহলে স্ত্রীকে নতুন ভাবে মোহর দিয়ে বিয়ে করে ঘরে তুলতে হবে। তাই বিচ্ছেদের জন্য এক তালাকই যথেষ্ট বলে আমি মনে করি।
তবে কেউ যদি প্রয়োজন মনে করে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তালাক দেওয়ার; তার জন্য উত্তম পদ্ধতি (তালাক আহ্‌সান) হল— স্বামী উপযুক্ত কারণে স্ত্রীকে এক তালাক দিল। তারপর ইদ্দতের মধ্যে (শুধু সাক্ষী রেখে) বা ইদ্দতের পরে (নতুন মোহর দিয়ে বিয়ে করে) পদ্ধতি অনুযায়ী তাকে আবার ফিরিয়ে আনল। কিছু মাস বা বছর সংসার করার পরে আবার সমস্যা দেখা দিল; আবারও স্বামী নিয়ম মেনে তাকে (দ্বিতীয়) তালাক দিল। ইদ্দতের ভেতরে বা পরে নিয়ম মেনে আবারও ফিরিয়ে আনল। কিছু মাস ও বছর একসাথে থাকার পরে আবারও নানা সমস্যা দেখা দিল। ফলস্বরূপ স্বামী আবার স্ত্রীকে (তৃতীয়) তালাক দিল। এই তৃতীয় তালাকের পরে স্বামী আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।     
হালালাহ— তালাকের মতোই ‘হালালাহ’ পদ্ধতিটিও ভ্রান্তির বেড়া জালে আবদ্ধ। এবং বর্তমান সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হালালাহ্‌র এই বিকৃত রীতিই প্রচলিত। যদিও শাশ্বত ইসলামে এভাবে চুক্তি করে হালালাহ করা বা করানো অবশ্যই ঘৃণ্য ও হারাম। এমনকি অভিশপ্তও [তিরমিযি ১১২০]। কেননা এর প্রকৃত ও বৈধ রীতিটি সম্পূর্ণ রূপে ভিন্ন। আর সেটি হল— কোনো ব্যক্তি স্ত্রীকে এক তালাক দিল, পরে ঘরে তুলে নিল। কিছু দিন, মাস বা বছর পর দ্বিতীয় তালাক দিল, পরে আবার ঘরে তুলে নিল। কিছু দিন, মাস বা বছর সংসার করার পর আবার মনমালিন্য হল, আবার তালাক দিল; এভাবে তিন তালাক দিয়ে ফেলল। এরপর আর ঘরে তোলার অবকাশ নেই; পরপর দু’টি সুযোগ সে ব্যবহার করে ফেলেছে। এবার তাঁদের মিলনের সব পথ বন্ধ। কিছু দিন-মাস বা বছর পরে সেই মেয়েটির অন্য একজনের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। তার সাথে কিছু দিন সংসারও করল। কিন্তু কিছু দিন-মাস বা বছর পর তাঁদের সংসারও ভেঙে গেল। সেও (এক) তালাক দিল। মেয়েটি ইদ্দতের তিন মাস (মাসিক) অতিবাহিত করে ফেলেছে; এমত অবস্থায় যদি প্রথম স্বামীটি চায়, তাঁকে প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করতে পারে। তা বৈধ। কিন্তু এই কাজ যদি পরিকল্পনা করে সম্পাদন করা হয় তাহলে তা অবৈধ ও হারাম হবে।    
বিচ্ছেদের পদ্ধতিসমূহ— ইসলামে বিচ্ছেদের বেশ কয়েকটি পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে; ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার জন্য। যাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কারো প্রতি কোনো রকম অবিচার না হয়। (ক) প্রথম পদ্ধতিটি হল তালাক। এই অধিকার ইসলাম পুরুষদের দিয়েছে; কারণ তালাক সেই ব্যক্তির জন্য যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে” [ইবনে মাজাহ্‌ ২০৮১]। (খ) দ্বিতীয় পদ্ধতি সমর্পিত তালাক। এই পদ্ধতির মাধ্যমে পুরুষ তালাকের নিজ অধিকার স্ত্রীকে সমর্পণ করে দেয়। আর যদি স্বামী এর জন্য কোনো শর্তারোপ করে তাহলে শর্ত পূরণের পর স্ত্রী তার এই অধিকার প্রয়োগ করে তালাক দিতে পারে। (গ) তৃতীয় পদ্ধতি খোলা’। এই পদ্ধতিও নারীর জন্য। যদি তার মনে হয় সে দাম্পত্য জীবনের অধিকার ও দায়িত্বসমূহ পালন করতে পারছে না, তাহলে সে স্বামীর নিকট বিচ্ছেদ চাইতে পারে। নারী মোহর ফিরিয়ে দেবে। আর সেই অর্থের বিনিময়ে পুরুষ তাকে তালাক দিয়ে দেবে। এরই নাম খোলা’। এছাড়া স্ত্রী বিচারকের কাছে গিয়ে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে নিকাহ ‘ফাসখ’ (বাতিল)-ও করাতে পারে।  
ইদ্দত— তালাকের পর ইদ্দত পালন করতে হয়। এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে [সূরা আত্‌-তালাক ১]। ইদ্দত পালন ছাড়া দ্বিতীয় বিবাহ বৈধ নয়। এক বা দুই তালাকের পর (একে তালাকে রাজ্‌’য়ী বলা হয়, ইদ্দত স্বামীর ঘরেই পালন করবে) ইদ্দতের মধ্যে স্বামী আবার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারে। তবে ইদ্দত পূর্ণ হয়ে গেলে নতুন করে বিয়ে করতে হবে। ঋতুবর্তীদের ক্ষেত্রে ইদ্দত তিনটি মাসিক [সূরা আল-বাক্বারাহ ২২৮], অঋতুবর্তীদের ক্ষেত্রে তিন মাস [সূরা আত্‌-তালাক ৪], আর গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত [সূরা আত্‌-তালাক ৪]।  
উপরের এই আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি বিশ্বাস করি, তালাক সমাজ জীবনে কোনো অপ্রাসঙ্গিক বস্তু নয়; বরং এই বিধানের বৈধতা জরুরি তবে এর ব্যবহারিক পদ্ধতিটি যেন সুস্থ ও সঠিক নিয়ম মেনে সম্পাদিত হয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। এবং সমাজকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কেননা আইন করে বা ব্যান করে তিন তালাকের অপব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। এই অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে হলে নারীপুরুষ সকলকে তালাকের সঠিক পদ্ধতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করতে হবে; অন্যথায় আরও বিনা-তালাকে বিচ্ছেদের সাক্ষ্যি থাকবে সমাজ।

[পূবের কলম, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯-এর দ্বীনদুনিয়া-তে প্রকাশিত]

Tuesday 13 June 2017

مصطفى لطفي المنفلوطي (١٨۷٦–١٩٢٤ م)


مصطفى لطفي المنفلوطي

(١٨۷٦–١٩٢٤ م)

هو تعريفه ومولده:

هو مصطفى لطفي بن محمد لطفي بن محمد حسن لطفي، أديب مصري نابغة في الإنشاء والأدب، انفرد بأسلوب نقي في مقالاته وكتبه. وله شعر جيد، فيه رقة وعذوبة.وُلد في سنة 1289 ه الموافق1876م من أب مصري وأم تركية في مدينة منفلوط لمصر لأسرة مشهورة بالتقوى والعلم.


نشأته وتعليمه:
التحق بكُتّاب القرية فحفظ القرآن الكريم كله وهو في التاسعة من عمره. ثم أرسله أبوه إلى الجامع الأزهر، فتلقى فيه طوال عشر سنوات علوم العربية والقرآن الكريم والحديث الشريف والتاريخ والفقه وشيئا من شروحات على الأدب العربي الكلاسيكي، ولا سيما العباسي منه. وكان شديد الرغبة في تحصيل المعرفة فاتصل بالشيخ الإمام محمد عبده، ولزم حلقته في الازهر، يستمع منه شروحاته العميقة لأيات من القرآن الكريم، ومعاني الإسلام.


نشاطاته الأدبية:
هو من الأدباء الذين كان لطريقتهم الإنشائية أثر فيمن بعده، وكان يميل إلى مطالعة الكتب الأدبية كثيراً، ولزم الشيخ محمد عبده فاستفاد منه. وسُجن بسببه ستة أشهر لقصيدة قالها تعريضاً بالخديوي عباس حلمي وكان على خلاف مع محمد عبده. ونشر في جريدة المؤيد عدة مقالات تحت عنوان النظرات، وولي أعمالاً كتابية في وزارة المعارف ووزارة الحقانية وأمانة سر الجمعية التشريعية.


وفاته:
أصيب بشلل بسيط قبل وفاته بشهرين، فأخفى نبأه عن أصدقائه، ولم يدع طبيبًا لعيادته. وفي نحو الساعة الثانية عشرة من الليلة انصرف إلى مكتبه، وما كاد يمكث طويلاً حتى أحس بتعب أعصابه وشعر بضيق في تنفسه، فدب الموت في جسمه في سكون، وكان صبح عيد الأضحى سنة 1924 م.


أدبه وأسلوبه:
كان أديبا موهوبا، حظ الطبع في أدبه أكثر من حظ الصنعة؛ قال فيه الزيات: "إنما كان أسلوب المنفلوطي في عصره كأسلوب ابن خلدون في عصره، بديعا أنشأه الطبع القوي على غير مثال". 

أهم كتبه ورواياته: 
له أعمال أدبية كثيرة، أهمها: النظرات في ثلاثة أجزاء، والعبرات وهو يضم تسع قصص، وله رواية "في سبيل التاج" ترجمها من الفرنسية وتصرف بها، ورواية أخرى "تحت ظلال الزيزفون" ترجمها من الفرنسية وجعلها بعنوان "ماجدولين". ومحاضراته مجموعة من منظوم ومنثور العرب.  
 
كتبه: عبد المتين وسيم  

Friday 2 June 2017

পবিত্র আল-কুরআন সবার জন্য


পবিত্র আল-কুরআন সবার জন্য
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

গত ২৫শে জানুয়ারি থেকে আরম্ভ হয়েছে ৪১তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বই মেলা। এই তিলোত্তমা নগরীর মায়া, বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসা টানে লেখক-পরিচালক-সাহিত্যরসিক-কাব্যমোদী সকলকে। তাই ছুটে আসে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুণীজন, সৃজনশীল, সত্যান্বেষু ও অনুসন্ধিৎসু মানুষেরা। বসে কবিতার আসর, সাহিত্যের আড্ডা। চলে বই-প্রকাশ অনুষ্ঠান। থাকে প্রেস কর্নারও।

বিগত ক’বছর ধরে যারা এই বই মেলায় এসেছেন নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শান্তির বাণী সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যত। তাঁরা ছুটছেন। এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছেন মিলন মেলা প্রাঙ্গণকে। বিতরণ করছেন পুস্তিকা-গ্রন্থ-ধর্মগ্রন্থ বিনা মূল্যে। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান, শিয়া-আহমাদি-সুন্নি-সালাফি সকলে। উদ্দেশ্য স্রষ্টার বাণী, শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রত্যেকের নিকট। তাতে একটি নতুন পালক সংযোজিত হল এবার। বাংলা ইসলামী প্রকাশনী ট্রাষ্ট ৪ঠা ফেব্রুয়ারি শনিবারে আয়োজন করল এক প্রেস কর্নারের। আলোচ্য বিষয় ছিল ‘কুরআন সবার জন্য’। অতিথি ও আলোচকরূপে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সমাজের বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধিগন। 

স্রষ্টার এই গ্রন্থটি যে কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, বরং সকল মানব জাতির জন্য; এমনকি সকল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে – এ কথাই বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্বের সাহায্য স্পষ্ট করেন বক্তারা। আলোচনায় উঠে আসে সূরা সাবা-র ২৮ নম্বর আয়াত [(হে নবী সাঃ) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সকল মানুষের জন্যে]-টি। এর পাশাপাশি সূরা আল-বাকারাহর ১৮৫ নম্বর আয়াত [এ গ্রন্থ পথ নির্দেশক সকল মানুষের]-টিও।

তারপরে আল-কুরআনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সম্বোধনের দীর্ঘ ফিরিস্তি উদ্ধৃত হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ ভাবে ‘বানি আদাম’ (আদম সন্তান), ‘নাস’ (মনুষ্য জাতি) ও ‘ইনসান’ (মানুষ) প্রভৃতি শব্দের মোড়কে আদম-সন্তানকে ৮৩৯ বার সম্বোধন করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘মুমিন’ ও ‘মুসলিম’ (বিশ্বাসী, ইসলাম ধর্মাবলম্বী)-র ন্যায় শব্দাবলী দ্বারা সম্বোধনের সংখ্যা ২১৩। সত্যিই গুগলে সহজলব্ধ এই তথ্যও প্রমাণ করে 'আল-কুরআন সবার জন্য', আমার আপনার সবার নিমিত্তে। 

এদিনের মনোগ্রাহী আলোচনায় যে-সব কথা অত্যন্ত সাবলীলভাবে ফুটে ওঠে তা হল- মহান আল্লাহ্‌র একটি গুণবাচক নাম আল-খালিক্ব (স্রষ্টা)। তিনি সকল সৃষ্টির স্রষ্টা। একটি হাদিসে কুদসি-তে রয়েছে, ‘সকল সৃষ্টি আল্লাহ্‌র পরিবার’। যদি সকল সৃষ্টি আল্লাহ্‌র পরিবার হয় তাহলে তাঁর এই কালজয়ী গ্রন্থটি শুধুমাত্র মুসলিম সমাজের জন্য নির্দিষ্ট হবে কেন? আল্লাহর সকল সৃষ্টি তো সমগ্র মানব জাতির জন্য। পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে মানুষের কল্যাণেই তার সৃষ্টি। সূর্য-আলো-বাতাস-জল সবার জন্যে। তাহলে স্রষ্টার মহাগ্রন্থটি শুধু মুসলিমদের জন্য খাস হবে কোন যুক্তিতে? আল্লাহ্‌র আরও একটি গুণবাচক নাম ‘আলীম’ (সর্বজ্ঞ)। সকল বস্তুকে তিনি জ্ঞান দ্বারা পরিব্যপ্ত করে রেখেছেন। তাই তিনি আদি পিতা আদমকে সৃষ্টি করে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানে তাঁকে সমৃদ্ধ করেন (সূরা আল-বাক্বারাহঃ ৩১)। এমনকি যখন তিনি এই মহাগ্রন্থটির অবতারণ আরম্ভ করলেন, সর্ব প্রথম শিক্ষণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বললেন, ‘তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন যা তাঁরা জানতো না’ (সূরা আলাক্বঃ ৫)। ‘ইনসান’ (মানুষ) শব্দের উল্লেখ করে স্রষ্টা প্রথম দিনেই তো স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ গ্রন্থ সবার।

প্রসঙ্গত, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, ধর্মীয় ও আধুনিক নানা ভাগে জ্ঞানের এই বিভাজন-এর উর্ধে, মানবের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে এমন সকল জ্ঞান- তা প্রাচ্যের হোক বা পাশ্চাত্যের, ধর্মীয় হোক বা আধুনিক সকলের জন্য। সবার তাতে সমান দায়িত্ব ও অধিকার। তাই বহু জ্ঞানের উৎস এই আল-কুরআন সবার।