যারা
হজ্জ ও উম্রার সংকল্প করেছেন তাঁদের প্রতি!
আব্দুল মুহসিন বিন হাম্দ আল্-আব্বাদ আল্-বাদ্র
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
(ক)
হজ্জ
এবং উম্রা
কেবলমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য। তাই রিয়া (প্রদর্শন-প্রীতি)
এবং সুম্আ (খ্যাতির লোভ) থেকে বেঁচে থাকতে হবে। অর্থাৎ নির্ভেজাল সংকল্প নিয়ে এ
কাজ করতে হবে।
তাহলেই
পালনকারী
হজ্জ ও উমরার
আজ্র ও সাওয়াব (পুণ্য ও বিনিময়) লাভ করতে সফল হবে। সহিহ মুসলিমে (হা/৭৪৭৫) আবূ
হুরায়রা (রা)
থেকে বর্ণীত,
রাসূল (সা)
বলেছেন, “মহান
আল্লাহ বলেছেন,
শির্ককারীদের (অংশবাদীদের)
শির্ক
(অংশী স্থাপন)
থেকে আমি সম্পূর্ণ
রূপে
মুক্ত।
যে ব্যক্তি কোনো
আমলে
(ইবাদত-উপাসনায়) আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক (অংশীদার) স্থাপন করে, আমি তাকে তার
শির্কযুক্ত আমলসহ পরিত্যাগ করি”[1]।
অনুরূপভাবে সুনান ইব্নু মাজাহ্তে (হ/২৮৯০) যায়িফ
(দুর্বল)
সূত্রে আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা)
বিদায় হজ্জে বলেছেন,
“হে
আল্লাহ! এই হজ্জ না
লোক দেখানোর জন্য, আর
না খ্যাতি
অর্জনের জন্য”।[2]
(খ)
হজ্জ বা উম্রায় যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের আদব-কায়দা, নিয়মকানুন এবং পথ ও
পদ্ধতি ভালোভাবে শিখে নিতে হবে। বিষয়গুলো রপ্ত করার প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। এবং
সে-বিষয়ে প্রণীত কোনো ভালো বই সংগ্রহ করে সাথে রাখতে হবে। খুব ভালো হয় যদি
গ্র্যান্ড মুফ্তি শায়েখ আব্দুল আযিয বিন বায (রাহ) প্রণীত বইটি সাথে রাখা যায়।
বইটি অত্যন্ত উপকারী। এবং সম্ভব হলে হজ্জ ও উম্রার কোনো কাজ শুরু করার আগে সে
বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞ আলেম বা শরিয়াহ্ বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে। তাহলেই
ভুলভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। ইন্ শা আল্লাহ্!
(গ)
হজ্জের সফরে ভালো
ও সৎ
মানুষদের সাহচর্য লাভের চেষ্টা করতে হবে। তাহলে তাদের থেকে বহু
বিষয়ে জ্ঞান এবং শিষ্টাচার শেখা যাবে। সময়ে অসময়ে তাঁদের উপকার ও সাহায্য পাওয়া
যাবে। সাহিহ
বুখারী (হা/৫৫৩৪) এবং সাহিহ মুসলিমে (হা/৬৬৯২) আবূ মূসা আশ‘আরী
(রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন, “সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর
উদাহরণ হচ্ছে আতর বিক্রেতা এবং কামারের মতো। হয় আতর বিক্রেতা তোমাকে
আতর প্রদান করবে, না হয় তুমি তার কাছ থেকে আতর কিনে নিবে। তা নাহলে
অন্ততঃ তুমি
তার
কাছ থেকে সুঘ্রাণ তো
পাবে।
পক্ষান্তরে,
কামার হয় তোমার কাপড় জ্বালিয়ে দেবে, আর না হয় তুমি তার কাছ থেকে
দুর্গন্ধ পাবে”[3]।
(ঘ) হজ্জ ও
উম্রার
সফরে প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে বেরোতে হবে। যাতে অন্যের কাছে হাত পাততে না
হয়।
রাসূল (সা)
বলেছেন, “যে
ব্যক্তি হারাম এবং অন্যের কাছে হাত পাতা থেকে বেঁচে
থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে রক্ষা করবেন। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি
স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর
হতে চায়, আল্লাহ তাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বনির্ভর করবেন”[4]। [হাদিসটি
সাহিহ বুখারী
(হা/১৪৬৯) ও
সাহিহ
মুসলিমে (হা/২৪২৪)
আবূ সা‘য়িদ
খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত]
(ঙ) সৎচরিত্রবান
হতে হবে।
অন্যের সাথে উত্তম
ও সৎ
ব্যবহার করতে হবে।
রাসূল (সা)
বলেছেন, “তুমি
যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহকে ভয় করো এবং সংযমশীল হও।
মন্দ কিছু ঘটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো ভালো কাজ করো।
তোমার
ভালো
কাজ ওই
মন্দ কাজকে মুছে দেবে।
আর লোকজনের
সাথে উত্তম ব্যবহার করো”[5]।
[হাদিসটি জামে’তিরমিযীতে (হা/১৯৮৭) আবূ যার (রা) থেকে
‘হাসান’ সূত্রে বর্ণিত] অনুরূপভাবে সাহিহ মসুলিমে (হা/৪৭৭৬)
আব্দুল্লাহ বিন
আম্র
বিন
আল্-‘আস
(রা) থেকে ‘মারফূ’ সূত্রে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে
নিষ্কৃতি পেতে চায় এবং জান্নাত লাভের আশা করে, সে যেন আল্লাহ্র
প্রতি ও
শেষ দিনের
প্রতি ঈমান রাখা
অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং মানুষের সাথে এমন (উত্তম) ব্যবহার
করে, যেমন ব্যবহার সে নিজে অন্যদের থেকে আশা করে”[6]।
(চ)
হজ্জ ও উম্রা পালনকারীর জন্য বাঞ্ছনীয় যে সে যিক্র-আয্কার,
দো‘আ ও
আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকবে। মন্দ কথা থেকে জিহ্বাকে
সংরক্ষণ করবে।
ভালো ও
লাভজনক
কথা ছাড়া বলবে না।
দুনিয়া ও
আখেরাতে
(ইহলোক ও পরলোকে) উৎকৃষ্ট ও প্রশংসনীয় ফলাফল বয়ে আনে এমন সকল
কর্মকাণ্ডে নিজের
সময়কে ব্যয়
করবে।
রাসূল (সা)
বলেছেন, “যে
ব্যক্তি আল্লাহ্কে
এবং পরকালকে বিশ্বাস
করে
সে যেন ভালো
কথা বলে; নয়তো
চুপ করে
থাকে”[7]।
[বুখারী
হা/৬৪৭৫,
মুসলিম হা/৭৪, আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত]। রাসূল
(সা)
আরো বলেছেন, “দু’
ধরণের নেআমতে
(আশীর্বাদে) বেশির
ভাগ মানুষ প্রতারিত
ও প্রবঞ্চিত
হয়,
সুস্থতা এবং অবসরে”[8]। [বুখারী
হা/৬৪১২, ইবনু
আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত]
(ছ) কথা
বা কর্ম দ্বারা অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে। রাসূল (সা) বলেছেন, “মুসলিম
সে-ই ব্যক্তি, যার মুখ এবং হাতের (অর্থাৎ কথা ও কাজের)
অনিষ্ট থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদে থাকে”[9]। [বুখারী
হা/১০,
মুসলিম হা/৬৪]
কারো
যদি ধূমপানের
বদ অভ্যাস
থাকে
সে যেন সিগারেটের
দুর্গন্ধ ও
ধোঁয়ার
মাধ্যমে অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে সাবধান থাকে। বরং সম্পূর্ণরূপে ধূমপান
বর্জন করে আল্লাহ্র নিকট তওবা করা তার জন্য ওয়াজিব।
কেননা ধূমপানে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যের ক্ষতি, অন্যদিকে অর্থের অপচয়। জীবনের
সর্বক্ষেত্রেই
একজন মুসলিমের জন্য এই বিধিনিষেধগুলো মেনে চলা উচিৎ।
তবে হজ্জ ও উমরার
সফরে এগুলির
গুরুত্ব আরো বেড়ে
যায়।
قال الله تبارك وتعالى:
أنا أغنى الشركاء عن الشرك، من عمل عملًا أشرك فيه معي غيري تركته وشركه
اللهم حجة لا رياء فيها
ولا سمعة
শায়েখ আলবানী (রাহ)
তাঁর আস্-সিল্সিলাতুস্ সাহীহাহ্-তে (হা/২৬১৭) হাদিসটির আরো
কয়েকটি সনদ (বর্ণনা-সূত্র) উল্লেখ করেছেন।
তাই সবগুলো মিলে হাদিসটি হাসান লিগায়রিহী-এর পর্যায়ে পৌঁছেছে।
مَثَلُ
الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالسَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ وَنَافِخِ الْكِيرِ فَحَامِلُ
الْمِسْكِ إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ
مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً وَنَافِخُ الْكِيرِ إِمَّا أَنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ وَإِمَّا
أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً
وَمَنْ
يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللَّهُ وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللَّهُ
اتَّقِ
اللَّهَ حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهَا وَخَالِقِ
النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ
فَمَنْ
أَحَبَّ أَنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ وَيَدْخُلَ الْجَنَّةَ فَلْتَأْتِهِ مَنِيَّتُهُ
وَهُوَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَلْيَأْتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِى
يُحِبُّ أَنْ يُؤْتَى إِلَيْهِ
مَنْ
كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
نِعْمَتَانِ
مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ: الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
الْمُسْلِمُ
مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ