Tuesday 28 June 2016

আবুল ওয়ালীদ আহমাদ ইবনু যায়দুন


আবুল্‌ ওয়ালীদ্‌ আহ়্মাদ ইব্‌নু যায়দুন  
(১০০৩ – ১০৭০ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
জন্ম ও পরিচয়ঃ
আব্বাসি খেলাফত ছিল আরবি সাহিত্য ও সংস্কৃতির স্বর্ণযুগ। সেই যুগের একজন বিখ্যাত স্পেনীয় সাহিত্যিক ছিলেন ইব্‌নু যায়দুন। তিনি একাদশ শতকের প্রথম ভাগে আরবি সাহিত্যের একজন অন্যতম সাধকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আহ্‌মাদ, উপনাম আবুল্‌ ওয়ালীদ। পিতার নাম ‘আব্দুল্লাহ্‌, পিতামহের নাম যায়দুন। তবে তিনি ইব্‌নু যায়দুন নামেই অধিক পরিচিত। ৩৯৪ হিজরি মোতাবেক ১০০৩ খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ‘আব্দুল্লাহ্‌ ধর্মীয় শাস্ত্রে এবং সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন।
 
শিক্ষা ও জীবনঃ
সুপণ্ডিত পিতার সান্নিধ্য কবির জীবনের উপযুক্ত ভিত্তি গড়ে দেয়। তাছাড়া জ্ঞান-নগরী কর্ডোভায় তাঁর শিক্ষার কোনও অভাব হয়নি। নিজ পিতার কাছেই তাঁর বিদ্যাচর্চার শুরু। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্ডিতদের সাহচর্য তাঁর জ্ঞান ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করে। তাঁদের কাছে তিনি সাহিত্য ও নানাবিধ বিষয়ের পাঠ গ্রহণ করেন।      
 
প্রাথমিক জীবনে প্রেম সংক্রান্ত একটি বিষয়ে তাঁকে অহেতুক কারাবরণ করতে হয়। খ্যাতনামা হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে তৎকালীন বাদশাহ আবুল্‌ হায্‌ম শত্রুদের প্ররোচনায় কারারুদ্ধ করেন। যাইয়্যাত সহ একাধিক ঐতিহাসিক মনে করেন, এটা ছিল কিছু সমকালীন প্রতিদ্বন্দ্বী কবিসাহিত্যিকদের ষড়যন্ত্রের কারণে।  
 
কর্মজীবনঃ
শিক্ষা-দীক্ষা শেষে আমাদের এই স্বনামধন্য কবি তৎকালীন বাদশাহ আবুল্‌ হায্‌ম ইব্‌নু জাহ্‌ওয়ারের রাজদরবারে মন্ত্রী রূপে নিযুক্ত হন। ঘটনাচক্রে কারারুদ্ধ হলে রাজপুত্র আবুল্‌ ওয়ালীদের সহায়তায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সিভিলিতে রাজা মু’তামিদের দরবারেও মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
 
পরলোকগমনঃ
আব্বাসি যুগের ও মুসলিম স্পেনের এই স্বনামধন্য কবি ৪৬৩ হিজরি মোতাবেক ১০৭১ খ্রিস্টাব্দে ইশ্‌বেলিয়ায় (সেভিলায়) ইহলোক ত্যাগ করেন।
 
কাব্য প্রতিভা ও রচনার বৈশিষ্টঃ
কাব্যরচনার পাশাপাশি তিনি গদ্য সাহিত্যেও যথেষ্ট সিদ্ধ হস্ত ছিলেন। তাঁর কাব্যের সর্বাধিক লক্ষনীয় বিষয় হল তাঁর জাতীয়তাবোধ। অর্থাৎ তিনি প্রাচ্য সংস্কৃতির অনুকরণ ত্যাগ করে স্পেনীয় চিন্তাধারার বাহক হয়েছিলেন। প্রেমিকার মিলনে ব্যর্থ কবির সাহিত্যেও বিয়োগান্ত নিদর্শন বিদ্যমান। তাঁর কাব্য সাহিত্য সম্বন্ধে যাইয়্যাত মন্তব্য করেছেন, ইব্‌নু যায়দুনের কবিতা স্পেনীয় আবেগ ও অনুভূতির প্রকৃত ছবি ও চিত্রায়ন।
 
পাশাপাশি, তাঁর গদ্যও ছিল সূক্ষ্ম সারমর্ম বিশিষ্ট। তাতে ছন্দের কৃত্রিমতা বা ভাষার দুর্বোধ্য ভাব তেমন দেখা যায় না। খুবই কম ছিল। তবে তাঁর গদ্যে বর্ণনার অতিরঞ্জন লক্ষ্য করা যায়। তাঁর রচনা পদ্ধতি আল্‌-জাহিযের সঙ্গে অত্যাধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিখ্যাত সাহিত্যিক ইব্‌নুল্‌ ‘আমীদের ন্যায় প্রবাদ ও সংবাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন, কঠিন গদ্যের মধ্যে কবিতার সাদৃশ্য তাঁর রচনার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট।
 
তিনি উৎকৃষ্টমানের ছন্দ-রচয়িতা ছিলেন। তাঁর বিখ্যাত কাব্য সৃষ্টি আল্‌-কাসীদাতুন্‌ নূনিয়্যাহ্‌, প্রেমিকা ওয়ালাদাহ্‌ বিন্‌তু আল্‌-মুস্তাক্‌ফী-কে উদ্দেশ্য করে লেখা। সেই কবিতার প্রথম পঙক্তিটি হল—
أضحى التنائي بديلا من تدانينا     وناب عن طيب لقيانا تجافينا
 
তাঁর বিখ্যাত দু’টি গদ্য নিদর্শন হল— (ক) রিসালাতুন্‌ জিদ্দিয়্যাহ্‌, কারারুদ্ধ অবস্থায় নিজ নির্দোষিতা প্রমান করে বাদশাহ আবুল্‌ হায্‌মকে উদ্দেশ্য করে এই রিসালাহ্‌ (চিঠি) লিখেছিলেন। (খ) রিসালাতুন্‌ হাযালিয়্যাহ্‌, নিজ প্রেমিকা ওয়ালাদাহ্‌র ভাষায় ইব্‌নু ‘আব্দুস-কে উপহাস করে এই রিসালাহ্‌ লিখেছিলেন। 

Wednesday 22 June 2016

আবুল কাসিম মুহাম্মদ ইবনু হানি


আবুল্‌ ক়াসিম মুহ়াম্মদ ইব্‌নু হানি   
(৯৩ – ৯৭৩ খ্রি)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 
পরিচিতি ও জন্মঃ
ইব্‌নু হানি একজন বিরল প্রতিভাধর স্পেনীয় কবি। পাশ্চাত্যের আরবি কবিগণের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি আব্বাসী যুগের অন্যতম কবি আল-মুতানাব্বীর সমকালীন ছিলেন, তাই তাঁকে মতানাব্বিউল্‌ গার্‌ব বা পাশ্চাত্যের মুতানাব্বী বলা হয়। প্রকৃত নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবুল্‌ কাসিম, পিতার নাম হানী, পিতামহের নাম সা’দূনতবে তিন ইব্‌নু হানি নামেই অধিক পরিচিত। তাঁর পিতাও কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন। তাঁর পিতার জন্ম আল্‌-মাহ্‌দিয়্যার কোনও এক গ্রামে হয়েছিল। বর্তমানে ওই অঞ্চলটি তিউনেসিয়ায় অবস্থিত। পরবর্তীতে তিনি স্পেনের আশবেলিয়ায় বসবাস শুরু করেন। আর এখানেই কবি ইব্‌নু হানি ৩২৬ হিজরি মোতাবেক ৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন 
 
প্রতিপালনঃ  
তাঁর বাল্যজীবন খানিকটা ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় অতিবাহিত হয়; কখনও আশ,বেলিয়ায় আবার কখনও আল্‌-বিরাহ্‌তে। যেহেতু পিতা সাহিত্যিক ছিলেন, তিনি সন্তানকে সাহিত্য ও কাব্য শেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। আর তাই এই দুই শহরের বিভিন্ন পণ্ডিতের সান্নিধ্যে ইব্‌নু হানি কাব্য ও সাহিত্যে ঈর্ষনীয় বুৎপত্তি অর্জন করেন। আর সেই সুবাদে সেখানকার তদানীন্তন আমীর-ওমারাদের, শাসক ও গভর্নরদের প্রিয়পাত্রে পরিণত হন।
 
কর্মজীবনঃ  
তাঁর দর্শনতত্ত্বের জন্য তাঁর নিজ শহরের অধিবাসীগন তাঁর প্রতি বিরুপ ধারণা পোষন করা শুরু করেন। তাঁর প্রতি বিভিন্ন প্রকার অপবাদ লাগানো হয়। বাধ্য হয়ে তিনি মরক্কো যাত্রা করেন। অতঃপর আয্‌-যাব শহরে গিয়ে জাফর ও ইয়াহ্‌ইয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কিছুদিন পর আবু তামীম মা’আদ বিন মান্‌সুর আল্‌-ফাতেমী তাঁকে ডেকে পাঠান। কবি সেখানে আল্‌-কির্‌ওয়ানের নিকটবর্তী আল্‌-মান্‌সুরিয়্যাহ্‌ প্রাসাদে অবস্থানকালে তাঁর প্রশংসায় এক অসাধারণ কবিতা রচনা করেন। এছাড়া তিনি জাওহার আস্‌-সাক্‌লী ও মুহাম্মদ বিন ‘উমার আশ্‌-শায়বানীরও প্রশংসা করেন। তবে ইব্‌নু হানীর স্পেন হতে মরক্কোয় স্থানান্তরের প্রকৃত কারণ কী সে সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিশাল বিতর্ক ও মতপার্থক্য রয়েছে।
 
মৃত্যুঃ  
৩৬ মতান্তরে ৪২ বছর বয়সে ৩৬২ হিজরীর রজব মাসে মোতাবেক ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন। কথিত আছে যে, তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে শাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু সংবাদ আবু তামীম আল্‌-মু‘ইয্‌য-এর নিকট পৌঁছলে তিনি দুঃখ করে বলেন
هذا الرجل، كنا نرجو أن نفاخر به شعراء المشرق، فلم يقدر علينا ذلك.
(ইব্‌নু হানি এমন একজন কবি, আমরা আশা করেছিলাম আমরা তাঁর মাধ্যমে প্রাচ্যের সকল কবিকে পরাজিত করবো; কিন্তু, তা আর হল না।)
 
তাঁর কাব্য প্রতিভাঃ
কাব্যকবিতায় তাঁর বুৎপত্তির জন্যই প্রচলিত আছে যে কবি হলে ইব্‌নু হানীর মতো হও। এ মর্মেই বলা হয়ে থাকে—
إن تكن فارسا فكن كعلي                    أو تكن شاعرا فكن كابن هاني
(তুমি যদি অশ্বারোহী হতে চাও তাহলে ‘আলীর মতো হও। আর যদি কবি হতে চাও তাহলে ইব্‌নু হানীর মতো হও।)       
 
কারণ, তিনি অনন্য প্রতিভাবান কবি ছিলেন। তাঁর কবিতার মধ্যে মুতানাব্বীর সাহসিকতা, আবু তাম্মামের বর্ণনাভঙ্গী, বুহ্‌তারীর ভাব ও মা’আর্‌রীর দর্শন পাওয়া যায়। তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন ছিলেন। তাঁর কবিতার উপজীব্য রূপে আমরা শোক, কুৎসা ও প্রশংসার আধিক্য লক্ষ করি। এছাড়া মরু অঞ্চলে ব্যবহৃত রূক্ষ শব্দসমূহের প্রয়োগ তাঁর কবিতায় লক্ষ করা যায়। ইব্‌নু খাল্লিকান তাঁর সম্পর্কে বলেছেন
ابن هانئ عند أهل المغرب كالمتنبي عند أهل المشرق
(প্রাচ্যবাসীদের কাছে যেমন মুতানাব্বী, ঠিক তেমনই পাশ্চাত্যবাসীদের কাছে ইব্‌নু হানী।)
 
তিনি তাঁর এক কবিতায় আল্‌-মু‘ইয্‌যু লে-দ্বীনিল্লাহ্‌-এর প্রশংসায় বলেছেন
أرياك أم نشر من المسك ضانك          ولحظك ام غضب الغرارين باتك
তাঁর একটি গযল কবিতায় তিনি বলেছেন
فتكات كرفك أم  سيوف أبيك               و كؤوس خمر أم مراشف فيك

Thursday 16 June 2016

العصر الجاهلي - عنترة بن شداد العبسي: سؤالا وجوابًا


 
عنترة بن شداد العبسي: سؤالا وجوابًا 
(525 – 608 م)
س: من كان عنترة؟
ج: كان عنترة بن شداد العبسي المضري شاعرا جاهليا من أصحاب المعلقات.
س: ما اسم أم عنترة؟
ج: اسم أمه زبيبة وكانت أمة حبشية.
س: أين وُلد عنترة؟
ج: ولد في نجد.
س: بم كان يُعرف عنترة؟
ج: كان يُعرف بفرسان العرب.
س: من كان مشتهرا بشاعر الفروسية.
ج: كان عنترة مشتهرا بشاعر الفروسية.
س: هو شاعر جاهلي، من أصحاب المعلقات، انتفى أبوه منه – من هو؟
ج: هو عنترة بن شداد.  
س: هو شاعر جاهلي، كان استعبده أبوه، وذات يوم قال له: "كر وأنت حر" – من هو؟
ج: هو عنترة بن شداد.   
س: هو شاعر جاهلي، من أصحاب المعلقات، صار مضرب المثل في الإقدام والجرأة – من هو؟
ج: هو عنترة بن شداد.
س: هو شاعر جاهلي، من أصحاب المعلقات، قاد كتائب عبس في حرب داحس والغبراء – من هو؟
ج: هو عنترة بن شداد.  
س: كنت أقدم إذا رأيت الإقدام عزما، وأحجم إذا رأيت الإحجام حزما، ولا أدخل موضعا لا أرى لي منه مخرجا. وكنت أعتمد الضعيف الجبان فأضربه الضربة الهائلة يطير لها قلب الشجاع فأثني عليه فأقتله – من قال؟
ج: قاله عنترة بن شداد.
س: من قال –
ولقد شربت من المدامة بعدما      ركد الهواجر بالمشوف المعلم    
فإذا سكرت فإنني مستهلك         مالي، وعرضي وافر لم يكلم
ج: قال عنترة بن شداد. 

الجمع والإعداد: عبد المتين وسيم الدين

Wednesday 15 June 2016

আব্দুর রাহমান ইবনু খালদূন


‘আব্দুর্‌ রাহ়্মান ইব্‌নু খ়াল্‌দূন  
(১৩৩২ – ১৪০৬ খ্রী)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
জন্ম ও পরিচিতিঃ
ইব্‌নু খ়াল্‌দূন একজন মহাপুরুষ। একজন প্রজ্ঞাবান মনীষী ও শেকড়সন্ধানী ঐতিহাসিক হিসেবে দুনিয়া জুড়ে তাঁর খ্যাতিইতিহাসের দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানের জনক। এ ছাড়া ভূগোল, সাহিত্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও তিনি পথিকৃতের মর্যাদায় ভূষিত। তাঁর প্রকৃত নাম ‘আব্দুর্‌ রাহ্‌মান, উপাধি ওয়ালীউদ্দিন, উপনাম আবু যায়েদ, পিতার নাম মুহাম্মদ, পিতামহের নাম খ়াল্‌দূন তবে তিনি ইব্‌নু খ়াল্‌দূন নামেই অধিক পরিচিত। ১৩৩২ খ্রিস্টাব্দে ২৭শে মে মোতাবেক ৭৩২ হিজরীর রমজান মাসের প্রথম দিনে তিউনিসিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা দক্ষিণ আরব থেকে সেভিলে হিজরত করেছিলেন। ইব্‌নু খ়াল্‌দূনের পূর্বকার কয়েক পুরুষ সেভিলে দীর্ঘকাল রাজকীয় উচ্চপদে আসীন ছিলেন।
 
শিক্ষা ও কর্মজীবনঃ
পিতা একজন প্রখ্যাত আলেম ছিলেন তাঁর কাছেই পড়াশোনায় হাতেখড়ি। তবে সময়ের সাথে সাথে তিনি অন্য শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানেও পড়াশোনা করেন। অনেক বিষয় অধ্যয়ন করলেও অত্যন্ত প্রতিভাধর এই মহাপুরুষ দর্শনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন। মাত্র বিশ বছর বয়সে তিনি ফেজের হাবশি সুলতান আবু ইসহাক ইব্‌রাহিমের খাস নবিশ হন। ফলে অল্প বয়সেই তিনি দরবারি সম্মান, খেতাব এবং অর্থবিত্তের মালিক হন। আর সেই সাথে লাভ করেন অতি ঘনিষ্ঠভাবে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জনের সুযোগ। তবে তিনি নানা কারণে এক স্থানে বেশিদিন থাকেননি বা থাকতে পারেননি। বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন রাজ্যে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। অবিরাম সফরে ইতিহাস, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞানের প্রত্যক্ষ জ্ঞানলাভের বিরল সুযোগ লাভ করেন। তিনি ছোট-বড় অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থ লিখে গেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন মুক়াদ্দামা’র জন্য। এটাই তার শ্রেষ্ঠ অবদান।
 
স্বীকৃতি ও মর্যাদাঃ
ইসলামের তিনি ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ সেবক। রক্ষণশীলতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিপরীতে একজন বাস্তববাদী ও যুক্তিশীল পণ্ডিত বলে এশিয়া ছাড়িয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সুদূর ইউরোপের বোদ্ধা মহলে। ইউরোপের বুদ্ধিজীবীরা যখন সমাজ-রাষ্ট্রের বিবর্তন স্রেফ ঈশ্বরের লীলাখেলা মনে করতো, তখন ইব্‌নু খ়াল্‌দূন জোর দিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্র ও সভ্যতার ক্রমপরিণতি কোনো আধিভৌতিক শক্তির অধীন নয়। তা হলো সমাজের বাস্তব ক্রমগতির ফল। তাঁর একটি অনন্য কীর্তি এই যে, তিনি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে রাজনীতিতে এবং রাষ্ট্রের সংগঠিত সমাজের সার্বিক জীবনধারায় অর্থনীতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ইব্‌নু খ়াল্‌দূন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম দার্শনিক। ম্যাকিয়াভেলী, বোঁদে, ভিকো, কোঁতে ও কোরনোটের পূর্বসুরী। একদিকে মুসলিম এবং সেইসাথে পাশ্চাত্যের অধিবাসী না হওয়ায় তাঁকে এখনকার পৃথিবীতে আর উপযুক্ত মূল্যায়ন করা হয় না
 
ইহলোক ত্যাগঃ
ইব্‌নু খ়াল্‌দূন শেষ জীবন কাটিয়েছেন মিশরে। তৈমুর লং-এর আক্রমণের ভয়ে যখন সমগ্র মিশর কাঁপছিল, ঠিক তখন তিনি তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি কূটনৈতিক দক্ষতায় তৈমুরের আক্রমণ থেকে সিরিয়া, মিশর সহ সমগ্র পশ্চিম অংশকে রক্ষা করেন। তাঁর কথায় মুগ্ধ হয়ে তৈমুর তাঁকে তার উজিরে আযম (প্রধান মন্ত্রী)-এর পদে নিযুক্ত করার প্রস্তাব দেনতবে ইব্‌নু খ়াল্‌দূন তা সুকৌশলে প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর এই অবদানের জন্য মিশরীয় সুলতান তাঁকে সমগ্র দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ পদে থাকা কালেই ১৪০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ মোতাবেক ৮০৮ হিজরীর ২৫ রমযান ৭৪ বছর বয়সে মিশরের কায়রোতে ইন্তিকাল করেন। তবে আজও তিনি আমাদের মনের আকাশে ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলছেন।  
 
তাঁর সৃষ্টিসমূহঃ
শত্রু-মিত্র সকলেই তাঁর প্রতিভাকে স্বীকৃতি জানিয়েছে তাঁর অনন্য সৃজনশীলতার জন্য। তিনি একাধিক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচিত কতিপয় গ্রন্থ হল— (ক) কিতাবুল্‌ ‘ইবার ওয়া দীওয়ানুল্‌ মুব্‌তাদা ওয়াল্‌ খাবার ফী আইয়ামিল্‌ ‘আরব ওয়াল্‌ ‘আজাম ওয়াল্‌ বার্‌বার ওয়া মান্‌ ‘আসারাহুম্‌ মিন্‌ জাবিস্‌ সুল্‌তানিল্‌ আক্‌বার, (খ) আখ্‌বারু দাওলাতু বানিল্‌ আগ্‌লাব বে-আফ্‌রিকিয়্যাহ্‌, (গ) আত্‌-তা’রীফু বে-ইব্‌নি খালদূন ওয়া রেহ্‌লাতিহী গার্‌বান্‌ ওয়া শার্‌কান, (ঘ) শিফাউস্‌ সাইল লে-তাহ্‌যীবিল্‌ মাসাইল। 

Wednesday 8 June 2016

জামীল সিদকী আজ-জাহাবীঃ আমার বুসাইনার প্রতি


আমার বুসাইনার প্রতি

জামীল স়িদ্‌ক়ী আজ়্-জ়াহাবী
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম


বুসাইনা, শত্রুরা আমার
গলা কাটুক বা গুলি করুক
তুমি ঘাবড়িয়ো না,
ধৈর্য ধরো আর মনে রেখো
স্বপ্নে আমাদের দেখা হবে

বিশ্বাস করো- বিপদের আনাগোনা 
কোন সম্ভ্রান্তের প্রতি শাপে বর হয়,
যদি সে ধৈর্য ধরে

তোমার প্রেমাস্পদকে, হে বুসাইনা!
কোনও বালুময় স্থানে রক্তাক্ত করে
যদি ঠেলে দেওয়া হয় মৃত্যুর পথে 
তুমি কেঁদো না, অশ্রু মুছে ফেলে
ধৈর্যের বর্মে নিজেকে মুড়ে নিও
আমি যে প্রথম নই;
যারাই নিজ জাতির উন্নতি চেয়েছে
অস্বীকার করেছে তাদের স্থবিরতাকে
আর সংগ্রাম করেছে
কুসংস্কার থেকে তাদের মুক্ত করার নিমিত্তে
তাঁরাই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে
আমার ও তাদের বাসনায় এ যে বিশাল ব্যবধান-
তাঁদের আমি বাঁচাতে চেয়েছি
আর তাঁরা চেয়েছে আমায় মারতে।
ধ্বংস হোক সে, যে ডেকে এনেছে
আমার তরে এ ঘোর বিপদ,
কবিসাহিত্যিকদের অভিসম্পাত হোক তার প্রতি!

জানো, এই ভূগর্ভে শুয়ে আছে অনেকে;
যদি প্রাণদণ্ডিত হই- এ পথে আমি একা নই।
চেয়ে দেখো উজ্জ্বল সূর্যের দিকে
তারও দীপ্তি অন্ধকারের চাদরে গা ঢাকা দেয়।
স্মরণ করো, বহুদিন সুখে কাটিয়েছি দুজনে
প্রণয়খেলাকে উপভোগ করেছি বহু দিন

তুমি তো জানো, প্রত্যেকেই ধ্বংসশীল।
তাই মৃত্যুর পরেও আমার অভিবাদন নিও;
তবে এ যাত্রায় যদি রক্ষা পাই
আত্মপ্রত্যয়ে সকল বিচ্যুতি বর্জন করবো,
অঙ্গীকার রইল।

অস্থির হয়ো না তুমি, হে বুসাইনা!
নির্দোষ মুক্তি পাবো- এ আমার নিটোল বিশ্বাস।

কবিতা প্রসঙ্গঃ
জামীল স়িদ্‌ক়ী আজ়্-জ়াহাবী প্রসিদ্ধ ইরাকী কবি। তিনি সারা জীবন মুক্ত চিন্তার চর্চা করেছেন। তার আল-মারআতু ওয়াদ-দিফায়ু আনহা’ (নারী ও তার প্রতিরক্ষা) শীর্ষক প্রবন্ধটি বিখ্যাত আল-মুয়াইয়াদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সারা ইরাকজুড়ে গণবিক্ষোভ আরম্ভ হয়। তৎকালীন প্রশাসন তাঁকে বন্দী করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়। সেই সময় কবি নিজ স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে উক্ত কবিতাটি রচনা করেন।
[শব্দের মিছিল, অনুবাদ বিভাগ, জানুয়ারি ২০১৭-তে প্রকাশিত]


কবিতাটির সরল অনুবাদ নিম্নে প্রদত্ত হল—
ও বুসাইনা, যদি শত্রুরা মৃত্যুকে আমার  নিকটবর্তী করে দেয়, তারা কোনও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে বা তরবারি দিয়ে আমাকে হত্যা করে;

তাহলে তুমি বিপদের সময় ধৈর্য ধরো আর বিশ্বাস রেখো আমি স্বপ্নে তমার সঙ্গে মিলিত হবো (আমাদের আবার দেখা হবে, গল্প হবে)

আর ধৈর্যই হল সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। যদি কোনও সম্ভ্রান্ত মহিলার উপর বিপদ আপতিত হয় তখন তার সম্মান বেড়ে যায়।

ও বুসাইনা, যদি তোমার জামীলকে ধ্বংস করে দেওয়া হয় রক্তাক্ত করে, এমনভাবে যে তার রক্ত প্রবাহিত হয় বালুময় উপত্যকার ভূমির উপর।

এই ধরণের বড় বিপদের জন্য তুমি ধৈর্যের বর্ম পরিধান করো আর (তোমার) গণ্ডদেশের দিয়ে প্রবাহিত অশ্রু মুছে ফেলো।

অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিজ সম্প্রদায়ের অগ্রগতি ও উন্নতি কামনা করে বিপর্যস্ত হয়েছে এমন ব্যক্তি আমার জাতির মধ্যে আমিই প্রথম নই (বরং আমার পূর্বেও নিজ জাতির উন্নতি ও অগ্রগতি চেয়ে একাধিক ব্যক্তি এমন বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে)।

সেই ব্যক্তি তাদের জন্য গতিহীনতাকে অস্বীকার করেছে, তাছাড়া সর্বদা তাদেরকে কুসংস্কারমুক্ত করার জন্য সংগ্রাম করেছে।

আমি তাদের জন্য জীবন চেয়েছি আর তারা আমার জন্য মৃত্যু। তাদের ও আমার বাসনার মাঝে বিশাল ব্যবধান।

আব্দুল্লাহ ধংস হোক। সে আমার জন্য এই বিপদ ডেকে এনেছে। তার প্রতি অভিশাপ সকল লেখক কবিসাহিত্যিকদের পক্ষ থেকে।

যদি মৃত্যু বরণ করি (তাহলে জেনে রেখো) আমি একাই ভূগর্ভে সমাধিস্থ হবো না, বরং বহু সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গ এই মাটিতে শুয়ে আছেন।

আর (এও মনে রেখো) সূর্য যদিও তা সর্বাধিক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, তারও আলো ক্ষীণ হয়ে পড়ে অন্ধকারের কারণে।

(স্মরণ করো) আমরা বহুদিন সন্তুষ্টি ও সুখের সহিত অতিক্রান্ত করেছি। আমরা উপভোগ করেছি প্রেম-ভালবাসা ও আসক্তিকে।

অতঃপর যদি আমি নিহত হই, (মন খারাপ করো না, জানোই তো) প্রত্যেক বস্তুই ধংসশীল। ও বুসাইনা, তোমার নিকট আমি আমার সালাম উপঢৌকন স্বরূপ প্রেরন করছি।

আর আমি যদি বেঁচে যাই, তাহলে (কথা দিচ্ছি) আমি আমার ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কে সচেতন হবো এবং নিজ পায়ে সুদৃঢ় ভাবে দাঁড়াবো।

বুসাইনা, তুমি অস্থির হয়ো না। আমি আমার নিষ্কৃতি ও সুপরিণতির ব্যাপারে নিশ্চিত এবং দৃঢ় বিশ্বাস।


جميل وبثين

جميل صدقي الزهاوي

[كان شاعر العراق جميل صدقي الزهاوي رجل الفكر الحر، ولأجل ذلك انتقده المسلمون شديدا وكرهوه كرها. ولما نشرت مقالته "المرأة والدفاع عنها" في مجلة "المؤيد" ظهر الخلاف وخرج الناس ضده في الطريق، حتى حبس وقضي بعقوبة الإعدام. فقال الشاعر هذه المنظومة يخاطب زوجه بثينه وسلّى بها يوم أصابته المحنة على أثر ما نشره في المؤيد عن المرأة المسلمة. الأدب العصري في العراق العربي، قسم المنظوم، ص-53، رفائيل بطئ]

 

أبثين إن أدنى العدو حمامي             بمسدس يذكيه أَو بحسامِ

فتجلدي عند الرزية واحسبي              أني اجتمعت إليك في الأحلام

والصبر أجدأ إن ألمّت نكبة             بكريمة ينمونها لكرام

أبثين إن أودى جميلك خابطاً            بدم له أهريق فوق رغام

فتدرعي للخطب صبراً وامسحي          من أَدمع فوق الخدود سجام

أَنا لست أول هالك في قومه             يَرجو تقدمهم مع الأقوام

يأبى لهم هذا الجمود ولا ينى             يَسعى لينقذهم من الأوهام

رُمتُ الحياة لهم وراموا مقتلي            شتّان بين مرامهم ومرامي

ويل لعبدالله جالب نكبتي                 ويل له من حاملي الأقلام

أَنا لست وحدي إن أمت رهن الثرى      كَم من كرام في التراب نيام

والشمس وهي أجلّ جرم بازغ             مقلوة أنوارها بظلام

عشنا زَماناً في بلهنية الرضى            متمتعين بألفة ووئام

فإذا قضيت وكل شيء هالك             فإليك أهدي يا بثين سلامي

ولئن أعش فسأنتهب من سقطتي         وأقوم منتصبا على الأقدام

لا تجزعي يا بثين إني واثق              ببراءتي وعواقب الأيام 



[1]

وفي بعض الروايات "بيراعتي" بدل "ببراءتي".