অনেক না-বলা কথা বলতে চাই, কিন্তু...
ভাই আজীজ,
সালামুল্লাহ আলাইকা,
গতকাল তোমার অমূল্য
সময় ফোনে এক ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট কথা বলে
নষ্ট করেছি। দীর্ঘক্ষণ কথা বললে
আমার স্ত্রী
বিরক্ত হন। আমার কল্যান কামনায়
বলেনঃ “অত কথা বললে
মাথা খারাপ
হবে। শুধু দরকারি
কথা বলে
ফন ছেড়ে
দেবে”। সি ইজ্ পার্শিয়ালি রাইট,
আসলে ওরা বোঝে না যে
মনের মানুষদের
সঙ্গে কার্পণ্য
করে মেপেজুপে
কথা বলা
যায় না। অত কথা
বলার পরেও
অনেক না
বলা কথা
থেকে যায়। গতকাল বিগত দিনের
স্মৃতিচারনা না
করলেও পারতাম। মুখ্যত কথা বলছিলাম আলিয়া মাদ্রাসায় পঠনপাঠন কালে বিভিন্ন পাঠ্য বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে। তারমধ্যে আবার কেন্দ্রভূত হয়েছিলাম মুআল্লাকার নির্ধারিত কাব্যগুলির মধ্যে। বিশেষ করে ইম্রাউল কায়েস ও জুহাইরকে পর্যালোচনা করে তৃপ্ত হচ্ছিলাম। আর যেহেতু বর্তমানে তুমি একজন সুবক্তা ওয়াজ-মহফিলে গুরুগম্ভীর স্বরে দৃপ্ত কণ্ঠে প্রত্যয়ের সঙ্গে যখন বক্তব্য পেশ করো শ্রোতারা শুনেছি মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্ট চিত্তে শুনতে থাকে। আর সেই প্রসঙ্গে কুরআন শরীফের যে সব আয়াতগুলো পরিস্থিতি অনুযায়ী উদ্ধৃতি সাধারণত দিতে হয় বলে অনুমান করি সেগুলোরও আলোচনা করতে থাকি। আর যখন বললাম ইম্রাউল কায়েসের কবিতা দিয়েও বক্তব্য রাখা যায় এবং সেটা কিভাবে বলছিলাম। তুমি পুলকিত হচ্ছিল। আমাদের তৎকালীন শিক্ষকদের উক্তি উল্লেখ করেও কিছু কথা বলছিলাম। তুমিও কথাগুলো মনে করে পুলকিত হচ্ছিলে। একবার তো তুমি বলেই ফেললে ‘সেসব কথাগুলো তুই এখনও স্মৃতিতে ধরে রেখেছিস।” বলি, চেষ্টা করেও যে ভুলতে পাড়ি না। যখন বলি “তুমি তাহের সাহেবকে মুমতাজ পড়ার সময় যে সমস্ত আলটপকা কথা বলে বসতে সেগুলো কি মনে পড়ে?” উত্তরে বলেছিলি তাঁরা কত স্নেহ করতেন। কত কথা হয় শেষ আর হয় না। কিছু দিন আগে একবার
বলেছিলি ‘কই তোর ফোন
তো সকালের
দিকে আর
পাই না’। বলেছিলি; অবশ্য তোর
সকাল হয়
৮টা ৯টার
পর। একবারই একদিন আর্লি মর্নিংয়ে ফোন করেছিলি”। অন্য দিকে তোর
ভোর চারটেয়
ওঠা আর
ফজরের নামাযে
লম্বা সুরা
দিয়ে নামায
পড়া তো
দীর্ঘ দিনের
অভ্যাস। ঐ কৃচ্ছসাধন আমার এখানে
দেখার সুযোগ
হয়েছিল শুধু
একবার। যখন বলেছিলি
সকাল পাঁচ
টায় তোর
এক কাপ
চা চায়-
পাঁচ থেকে
ছ’মিনিট দেরী
হলে তুই
রাগ করে
উঠে যাস। তোর ওই রাগটা
আমি যেন
চাক্ষুস করি। তোর অধৈর্য হওয়ার
স্বভাবটা চিরকালীন
সেটা ক’দিন আগে
তোর মেয়ের
বাড়িতে একটা
ফোন নাম্বার
লিখে দেওয়ার
জন্য কাগজ
আর পেন
চাওয়ার সময়
আবার লক্ষ
করি। ওই দিনিই
একটু পরে
তোকে বলেছিলামঃ
“ওদেরও গৃহস্থালির
অনেক কাজে
ব্যস্ত থাকতে
হয়”। তোমার আদেশ তৎক্ষণাৎ
পালন করা
সম্ভব নয়;
এ কথাটাও মনে রাখতে
হবে। সেদিন কাগজ
কলম পেলাম
ডাক্তারের ফোন নম্বর
দিলাম।
তুমি তোমার
সুবিধার জন্য
ডাক্তার
না দেখিয়ে
চলে গেলে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বাধীনতা
আছে। তবে তোমার
ওই ছোট
জামাইয়ের ফোন নম্বর
চেয়েছিলাম। তুমি আজও
দাওনি।
গতকাল তোমাকে ফোন
করার পর
আর একজনকে
ফোন করি। তিনি আমারই
মত রিটায়ার্ড প্রোফেসর। তিনি অবশ্য
ল’
এর অধ্যাপক। তাঁর সঙ্গেও যথারীতি
দীর্ঘক্ষণ কথা
হয়। আবার আমার
গৃহিণীর বকুনি
খাই। অনেকদিন থেকেই
উনি ডায়াগনোসিস
করেছেন আমার
মাথাটা খারাপ
হয়ে গেছে। অন্য একজন একথাও
বলেছেন- “ওনার মেয়ে মারা
যাওয়ার পর
থেকে ওনার মাথায় গন্ডগোল
হয়ে গেছে”। হাসি পায়। হাসি না।(فَلْيَضْحَكُوا قَلِيلًا وَلْيَبْكُوا كَثِيرًا)
গতকাল তোমাদের সঙ্গে
কথা বলার
পর সাড়ে
ন’টা দশটা
থেকে গলায়
খুব ব্যাথা। হয়তো
সিগারেট খাওয়ার
পরিনাম ও
উপকারিতা। গলার এই
অবস্থার জন্য
অদূর ভবিষ্যতে
কোথায়, কোন দিকে চলেছি
জানি না। হয়তো বা ধূমপানটাই
কারণ। দশ পনেরো
বার গার্গেল
করলাম। সন্ধ্যা থেকে
অন্য রকম
ভয়ের উদ্রেক
হল,
সৈয়দ নিয়ে
রসিকতা করেছিলাম
বলে এমনটা
হল না তো?
আবার কালো
সৈয়দ বলার
ধৃষ্ঠতা দেখালাম। হয়তো
আমার ঔদ্ধত্ত
দেখানোটাই কারণ! আশরাফদের শিরোমণিদের সঙ্গে
বেহুরমতি করলে
নাকি কোন
দিক থেকে
আযাব আসবে
কেউ বলতে
পারে না। শামসুল-হুদা রোডে
একবার হয়েছিল। ওই প্রসঙ্গে ‘মাজযুব’ শিরনামে একটা
লেখা লিখে
আমার এক
ছাত্রকে দিয়েছিলাম
টাইপ করতে। তাকেই আমার আজে
বাজে লেখা
বেশি করে
দিই। অন্য কয়েকজন
ছাত্রও আমাকে
সাহায্য করে। আর আজকাল তো
সকলেই ব্যস্ত। তবুও নানা ব্যস্ততার
মাঝেও তারা
আমার কাজগুলো
করে দেয়। কিন্তু ‘মাজযুব’ লেখাটা যাকে দিয়েছিলাম
সে হারিয়ে
ফেলেছে।
যেদিন বলছিলি আল্লাহ
তোকে পায়ে
হেঁটে চলার
শক্তি এখনও
দিয়ে রেখেছে। এখনও গাড়ি চালাচ্ছিস,
ইত্যাদি। আমার ব্যাক্তিগত
ব্যাথা বেদনা
আর ক্ষত
নিয়ে এখনও
সব কাজ
নিজে করতে
পারছি সেটা আল্লাহর রহমত। তাঁর করুণার তো
সীমা নেই।
فبأي
آلاء
ربكما
تكذبان
তোমার নিজস্ব ব্যাথা
বেদনা, শারিরীক ও মানসিক ক্লাশ
ইত্যাদি নিয়ে
তুমি জীবন-যাপন করছ
আমিও তাই
করে চলেছি। আমি তুমিই কেন,
অধিকাংশ মানুষ
তাই করে
চলেছে, যতদিন না শেষ
লগ্নের সময়
আসে। সময় তো
আসবেই। তাই তুমি
বন্ধুদের বিদায়
দেওয়ার সময়
ইদানীং প্রায়ই
বলে থাক
‘একটু দাঁড়াও
একবার ভালো
করে দেখে
নিই”। ইসলামের শিক্ষাই হল
তাই। সাক্ষাতের সময়
ভাল ব্যাবহার
করবে ।
ভাববে এটাই
তোমার শেষ
সাক্ষাৎ।
আজ কথা বলতে অসুবিধা
হচ্ছে। কথা বলতে
পারাটাও যে
কত বড়
নেআমত যৎসামান্য
হলেও সম্যক
বুঝতে পারছি। সব কিছুর পরও
বলি, লাকাল্ হাম্দু ওয়া লাকাশ্ শুক্র। মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি
পেলে কথা
কম হতে
থাকে। এতদিন আজেবাজে
বকেছি। এখন থেকে
কথা না
বলতে পারার
জন্য আপাত
দৃষ্টিতে হয়তো আমি জ্ঞানী হতে চলেছি!
হয়তো বা ফোর্সিবলি
কষ্ট হলেও
বলতে বাধ্য
হচ্ছি প্রাসঙ্গিক
অপ্রাসঙ্গিক অনেক
কথা আর
হয়তো তোকে শুনতে
বাধ্য করব
না। আমার অবস্থায়
হয়তো অনেকে খুশি
হবে,
অনেকে অনুকম্পা
দেখাবে, দেখাবে সহমর্মিতা। মুষ্টিমেয় কয়েকজন
হয়তো তাৎক্ষনিক কষ্ট
পাবে। সবাই নিজের
ব্যস্ততায় আবার
ভুলে যাবে। কে কার কথা
মনে রাখে।
এই পৃথিবীটা পরবর্তী
পৃথিবীরই আর
এক ছোট্ট
রূপ। যে পৃথিবীর
বর্ণনা পাওয়া
যায় আল্লাহ
তা’লার অমর
বাণীতেঃ
يَومَ يَفرّ المَرء من أَخيه. وَأمّه وَأَبيه. وَصَاحبَته وَبَنيه. لكلّ امرئ منهم يَومَئذ شَأنٌ يغنيه
তোমার
মেহফিলগুলোতে লোক জমানোর প্রসঙ্গে বলেছিলে অনেক মেটেরিয়াল আছে, আমি গতকালও বলেছিলাম ইম্রাউল কায়েস দিয়েও ওয়াজ করা যায়। শ্রোতারা কিছুই বোঝে না। অনেক কথা বলে ফেললাম। ক্ষমা করিস।
বদিউর রহমান
১৫/১০/২০২১
সল্টলেক