Friday 28 April 2017

الأدب العربي الأندلسي - أبو بكر محمد ابن العربي المعافري الأندلسي



أبو بكر محمد ابن العربي المعافري الأندلسي
(١٠٧٥ – ١١٤٨م)
 
تعريفه ومولده:
هو محمد بن عبدالله بن محمد المعافري، المشهور بالقاضي أبو بكر ابن العربي الإشبيلي المالكي عالم أهل الأندلس ومسندهم من حفاظ الحديث، وهو غير محي الدين بن عربي الصوفي. وكان أبوه من كبار أصحاب أبي محمد بن حزم الظاهري بخلاف ابنه القاضي أبي بكر؛ فإنه منافر لابن حزم، مُحِطٌ عليه بنفس ثائرة. ولد في إشبيلية سنة ‏468‏ هـ.

نشأته:
تأدّب ببلده وقرأ القراءات وسمع به من أبي عبد الله بن منظور وأبي محمد بن خزرج، ثم انتقل ورحل مع أبيه سنة 485 هـ ودخل الشام فسمع من الفقيه نصر المقدسي وأبي الفضل بن الفرات وببغداد من أبي طلحة النعالي وطراد وبمصر من الخلعي وتفقه على الغزالي وأبي بكر الشاشي والطرطوشي.

انشغالاته ووفاته:
كان ثاقب الذهن، عذب المنطق، كريم الشمائل، كامل السؤدد، ولي قضاء إشبيلية، فحمدت سياسته، وكان ذا شدة وسطوة، فعزل، وأقبل على نشر العلم وتدوينه. ومات في فاس في ربيع الآخر سنة 543 هـ، ودفن بها. وقال عنه ابن بشكوال: هو الإمام الحافظ، ختام علماء الأندلس.

هو المجدد الخامس للأمة:
ويرى البعض أن أبا بكر بن العربي هو المجدد الخامس للأمة مصداقا لحديث رسول الله: إن الله يبعث لهذه الأمة على رأس كل مائة سنة من يجدد لها دينها.

مؤلفاته:
قد أخذ جملة من الفنون حتى أتقن الفقه والأصول وقيد الحديث واتسع في الرواية وأتقن مسائل الخلاف والكلام وتبحّر في التفسير وبرع في الأدب والشعر‏.‏ وصنف كتباً كثيرة في الحديث والفقه والأصول والتفسير والأدب والتاريخ. وأشهرها وأهمها يلي:

قانون التأويل، وأحكام القرآن، وأنوار الفجر، والناسخ والمنسوخ، والقبس في شرح موطأ الإمام مالك، والعواصم من القواصم، وعارضة الأحوذي في شرح الترمذي، والمسالك على موطأ مالك، والإنصاف في مسائل الخلاف، وأعيان الأعيان، والمحصول في أصول الفقه، وكتاب المتكلمين.

الإعداد: عبد المتين وسيم الدين

Saturday 1 April 2017

এই সংকটের মুকাবেলা কীভাবে করবো...?


  এই সংকটের মুকাবেলা কীভাবে করবো...?    
          আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 

বর্তমানে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনাগুলি, পৃথিবীর মানচিত্রের সর্বত্রে, উদ্বেগের কারণ সকল মানব জাতির জন্য; বিশেষত মুসলিমদের জন্য। আর এসবেতে মুসলিমদের মানসিক চাপ ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে। কঠিন হতে কঠিনতর পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে মানব-সভ্যতা।  ভয় ভীতির এক থমথমে পরিবেশ চারিদিকে। মানচিত্রজুড়ে ছলে-বলে-কৌশলে মুসলমানদের ভীত-সন্ত্রস্ত করার অপচেষ্টাও চলছে হরদম। কোথাও মসজিদের মিনারে জোরপূর্বক কোন পতাকা উত্তোলন করে। কোথাও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে। কোথাও 'ভিড়তন্ত্রের' মাধ্যমে খুন করা হচ্ছে অসহায় মুসলিমদের, নানা অজুহাতে। ইসলাম বা মুসলিম-ঘেঁষা নাম রয়েছে এমন শহর-বন্দর-স্টেশনের আকিকা (নাম পরিবর্তন) করার তোড়জোড়ও চলছে নাগপুরজাত মস্তিষ্কসমূহে। মাদ্‌রাসা-মক্তব-জাতীয় সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানগুলি বিকল তো কোথাও বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়াস পরিকল্পনা পাড়ার চেনা চা-দোকান থেকে আরম্ভ করে দিল্লির মসনদ অবধি শোনা দেখা যাচ্ছে। ফলে, বিবিধের মাঝে মিলন মহান, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানবিকতার উত্তরীয় ক্রমশঃ সংকীর্ণ হচ্ছে। আর এসবের কারণে উদ্বিগ্ন বহু মানুষ; বিশেষত আক্রান্ত সংখ্যালঘু সমাজ

এই সংকটের মুহূর্তে আমরা কি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাব, নাকি -সংকটের মুকাবিলা করবো! অবশ্যই মুকাবিলা করবো। আর এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুকাবেলা করতে প্রথমেই আমাদেরকে দেশের সংবিধান অধ্যয়ন করতে হবে, জানতে হবে আইনকানুনের ব্যবহার। জাগিয়ে তুলতে হবে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধকে। উঁচু-নীচু, জাতপাত ইত্যাদিকে নস্যাৎ করে সকলকে মানবশৃঙ্খলে গেঁথে ফেলতে হবে। বর্ণ-ধর্ম-জাতি নির্বিশেষে সবাইকে বুকে টেনে নিতে হবে। সেই সাথে, অত্যাচারী যেই হোক না কেন, সকলে মিলে পীড়িতের পাশে দাঁড়াতে হবে, মানবতার স্বার্থে, শান্তি-প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে

আর মর্মে, স্রষ্টা প্রদত্ত কিছু বিধান, যা সকল মানবের তরে প্রেরিত, এই সংকটের মুকাবিলা করতে আমাদের সহায়ক হবে আমার ধারণা। সর্বপ্রথমে আমাদের মনে রাখতে হবে, একটি হাদিসে 'মুসলিম কে?' প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যার কথা কাজে অন্য কোনো মানুষ আঘাত পায় না সে- প্রকৃত মুসলিম’ (আহ্‌মাদ ৭০৮৬, নাসায়ি ৪৯৯৫) অতঃপর অনুধাবন করতে হবে আল-কুরআনে আলোচিত মুসলমানদের সে-সময়ের কথাগুলো যখন তারা ছিলেন অত্যন্ত অসহায়। বদর, উহুদ, খন্দক, হুনাইন মাওতার রণক্ষেত্রে তাঁরা যে শোচনীয় অবস্থা, ভয়াবহ পরিস্থিতি ভীষণ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিলেন সে-সব পরিস্থিতিকে অনুভব করার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি এও মনে রাখতে হবে যে, দিনের শেষে তাঁরাই জয়ী হয়েছিলেন। এবং হুদায়বিয়ার সন্ধি যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের জন্য ছিল পরাজয়ের নামান্তর, তবুও তাঁরা সে-সব শর্ত মেনে সন্ধি করেছিলেন এবং সময়ের ব্যবধানে উৎপীড়নের উত্তাল ঢেউ স্তিমিত হলে সেই পরাজয়ই রূপান্তরিত হয়েছিল 'ফাত্‌হুম্মুবিন' (প্রকাশ্য জয়)-এ। 

আমার ধারণা, এই সময় ভয়-ভীতি ত্যাগ করে আমাদের উচিৎ আত্মসমালোচনা করা। সেই সাথে আল-কুরআনে বর্ণীত জাতিসমূহের ধ্বংসের কারণ অনুধাবন করা এবং তা থেকে বাঁচার উপায় উপকরণ অন্বেষণ করা। পাশাপাশি বিষয়টিও স্মরণে রাখা যে, পবিত্র আল-কুরআনে নানা স্থানে পৃথিবীর সকল সমস্যা, দুর্যোগ অস্থিরতার কারণ হিসেবে মানবজাতির কর্মকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন সূরা আর-রুম-এর ৪১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “জলে স্থলে দুর্যোগ দেখা দিয়েছে মানুষের নিজের কর্মের কারণে। যাতে এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ্তাদেরকে সেই অসৎ কর্মসমূহের শাস্তি (কুফল) আস্বাদন করান। হয়তো এর পরে তারা ফিরে আসবে সৎ পথের দিকে আর সূরা আর-রা-এর ১১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যদি না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করতে উদ্যোগী হয়! সূরা আনফালে বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “কোনো জাতি কোনো অনুগ্রহ লাভ করার পর যদি তার পরিবর্তন ঘটায় বা সে ক্ষেত্রে কোনোরূপ দুর্নীতি করে তাহলে আল্লাহ তা ছিনিয়ে নেন।"  

আমার বিশ্বাস, এই অপ্রত্যাশিত সংকটপূর্ণ অবস্থার জন্য আমরা নিজেরাই অনেকটা দায়ী। কারণ, কবির ভাষায়, " যামানে মে মুয়ায্‌যায্থে মুসাল্‌মাঁ হো-কার/ আওর হাম খার হুয়ে তারেকে কুরআঁ হো-কার" এখন চারিদিকে মুসলিম-অমুসলিম বিভাজন, আমরা-ওরা' দ্বৈরথ চলছে। এমন কঠিন মুহূর্তে আমরাও মদিনার বহুস্বরবাদী সমাজ ব্যবস্থার কথা, মানব কল্যাণের নিমিত্তে আমাদের সৃষ্টির কথা, বিশ্বভ্রাতৃত্বের কথা, সহমর্মিতা সহযোগিতার পাঠ ভুলে গিয়ে নিজ স্বার্থসিদ্ধিতে সদা-ব্যস্ত। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আজকাল ব্যক্তি পরিবারের স্বার্থের গণ্ডি পেরিয়ে দেশ, দশ, সমাজ বিশ্বপরিবারকে স্পর্শই করতে পারে না!  

আমি মনে করি, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদেরকে সর্বপ্রথমে প্রত্যাবর্তন করতে হবে তাক্বওয়া (আল্লাহ্‌-ভীতি সংযমশিলতা)- পথে। সেই সাথে ধৈর্যের মশালকে হাতে নিয়ে জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে হবে। সূরাতু আলে ইমরানের ১২০ নং আয়াতে কথাই তো বলা হয়েছে, “তোমরা যদি তাক্বওয়ার পথ অবলম্বন করো ধৈর্য ধারণ করো তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।" সূরাতু আত্‌-ত্বালাক্বে সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন 'তিনি', “যে ব্যক্তি তাক্বওয়া অবলম্বন করবে মহান আল্লাহ্তার জন্য সংকট থেকে বেরোনোর পথ করে দেবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে জীবিকা প্রদান করবেন যা তার কল্পনারও বাইরে 

তাছাড়া, আমাদের ইতিহাসের প্রতিটা পাতা, প্রতিটি অনুচ্ছেদ যে এমন অসংখ্য সংকটের কাহিনীতে পূর্ণ। সংকট আজকের নয়। পৃথিবীর বুকে যে দিন থেকে শুরু হয়েছে আলো-অন্ধকারের দ্বৈরথ, সত্য-মিথ্যার লড়াই, পথ-অপথের দ্বন্দ্ব, ন্যায়-অন্যায়ের সংঘর্ষ সেদিন থেকেই সংকটে রয়েছেন আলোর পথযাত্রীরা, ন্যায়ের সমর্থনকারীরা। অতএব বহু আগে থেকেই সতর্ক-বার্তা জারি করা হয়েছে যে, হকপন্থীদেরকে এমন অনেক কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। আর সে-সব ক্ষেত্রে তাঁদের করণীয়, ধৈর্য সহ এসবের মুকাবেলা করা। যেমনটা সূরাতু আলে ইমরানের ১৮৬ নং আয়াতে উদ্ধৃত হয়েছে, “তোমরা আহ্‌লে কিতাব (তাওরাত ইঞ্জিলের অনুসারীদের অর্থাৎ, ইহুদি খ্রিষ্টানদের) অংশীবাদে বিশ্বাসীদের (পৌত্তলিকদের) থেকে অনেক সময় বহু কষ্টদায়ক কথা শুনবে; এমন অবস্থায় তাক্বওয়ার নীতির উপর অটল থেকে যদি তোমরা ধৈর্য ধরো তাহলে তা হবে অসীম সাহসিকতার পরিচয় 

পাশাপাশি এও মনে রাখতে হবে যে, নৈরাশ্য হতাশাবাদ ইসলামের পরিপন্থী (সুরাতু আয্‌-যুমার ৫৩) একজন প্রকৃত মুসলিমকে হতাশা কখনই গ্রাস করতে পারে না। অতএব আমরা যদি ধৈর্যের বর্মে আচ্ছাদিত হয়ে, তাক্বওয়ার পাথেয় হাতে নিয়ে, নিজেদের সকল তাত্ত্বিক-বিভেদ ভুলে গিয়ে, ইসলামের মৌল উৎসদ্বয়কে দু'হাতে ধারণ করে ন্যায়-সাম্য-শান্তি প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেমে পড়ি, তাহলে -আমার বিশ্বাস- পৃথিবীজুড়ে অশান্তির জায়গা দখল করবে শান্তি, দারিদ্র্য ঘুচে যাবে প্রাচুর্যের আগমনে, আলোর আভায় উদ্ভাসিত হবে অন্ধকার এবং ন্যায়ের জন্য পথ ছেড়ে পালাবে অন্যায়। হয়তো এজন্যেই কবি আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, "সাবাক পাড় ফির সাদাকাত কা আদালাত কা শুজাআত কা/ লিয়া জায়েগা কাম তুঝসে দুনিয়া কি ইমামাত কা" তাই, আমি বিশ্বাস করিআমরা যদি প্রকৃত 'বিশ্বাসী' হই আমরাই সফল হবে (সুরাতু আলে ইমরান ১৩৯) কবির ভাষায়, 'আমরা করবো জয়, নিশ্চয়'!  



[পূবের কলম, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮ (দ্বীনদুনিয়া)-তে প্রকাশিত]