৭৪) সূরাতু আল্-মুদ্দাস্সির (চাদরাবৃত ব্যক্তি)
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৬, রুকু’ ২
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ
الرَّحِيمِ
আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু (আরম্ভ করছি)।
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ
হে চাদরাবৃত (মুহাম্মদ সাঃ)!
قُمْ فَأَنذِرْ
ওঠো এবং (জনসাধারণকে সত্য-মিথ্যা ও ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে)
সতর্ক করো;
وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ
এবং তোমার প্রভুর মহিমা ও মাহাত্ম্য ঘোষনা করো;
وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ
নিজ অন্তর ও আচ্ছাদন পবিত্র করো;
وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ
এবং যাবতীয় অপবিত্রতা হতে দূরে থাকো।
وَلَا تَمْنُن تَسْتَكْثِرُ
তবে অধিক প্রতিদান পাওয়ার আশায় দান করো না।
وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ
বরং নিজ পালনকর্তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে ধৈর্য ধারণ করো।
فَإِذَا نُقِرَ فِي النَّاقُور
যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে;
فَذَلِكَ يَوْمَئِذٍ يَوْمٌ
عَسِيرٌ
সেদিনটি অত্যন্ত কঠিন ও সংকটের দিন;
عَلَى الْكَافِرِينَ غَيْرُ
يَسِيرٍ
অবিশ্বাসীদের জন্য (তার সংকট) মোটেও সহজ নয়।
ذَرْنِي وَمَنْ خَلَقْتُ
وَحِيدًا
তাকে আমার হাতে
ছেড়ে দাও, যাকে আমি একাই অনন্য করে
সৃষ্টি করেছি;
وَجَعَلْتُ لَهُ مَالًا
مَّمْدُودًا
অতঃপর বিপুল ধন-সম্পদ
দিয়েছি;
وَبَنِينَ شُهُودًا
এবং সদাসঙ্গী পুত্রবর্গ
দিয়েছি;
وَمَهَّدتُّ لَهُ تَمْهِيدًا
তাকে বিপুল ভাবে আর্থিক সচ্ছলতা প্রদান করেছি;
ثُمَّ يَطْمَعُ أَنْ
أَزِيدَ
তারপরও সে আশা করে, যেন আমি তাকে আরও বেশী দিই।
كَلَّا إِنَّهُ كَانَ
لِآيَاتِنَا عَنِيدًا
কখনই নয়! সে আমার
নিদর্শনসমূহের বিরুদ্ধাচরণ করেছে।
سَأُرْهِقُهُ صَعُودًا
অতিসত্ত্বর আমি তাকে শাস্তির
পাহাড়ে আরোহণ করাবো।
إِنَّهُ فَكَّرَ وَقَدَّرَ
সে চিন্তা করেছে
এবং মনঃস্থির করেছে;
فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ
ধ্বংস হোক সে, কীভাবে সে এমন বিষয়ে মনঃস্থির
করেছে!
ثُمَّ قُتِلَ كَيْفَ
قَدَّرَ
নিপাত যাক সে, কীভাবে সে এমন কাজের
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে!
ثُمَّ نَظَرَ
সে পুনরায় দৃষ্টিপাত
করেছে;
ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ
অতঃপর
ভ্রূকুঞ্চিত এবং মুখ বিকৃত
করেছে;
ثُمَّ أَدْبَرَ وَاسْتَكْبَرَ
অতঃপর
পৃষ্ঠপ্রদশন এবং অহংকার করেছে।
فَقَالَ إِنْ هَذَا إِلَّا سِحْرٌ
يُؤْثَرُ
তারপর এই বলে মন্তব্য করেছে যে, এটা লোক-পরম্পরায় প্রাপ্ত জাদু
বৈ আর কিছুই নয়;
إِنْ هَذَا إِلَّا قَوْلُ الْبَشَر
এটা তো আদ্যোপান্ত মানুষেরই উক্তি।
سَأُصْلِيهِ سَقَرَ
আমি তাকে নিক্ষেপ করবো সাক়ার নামক নরকে।
وَمَا أَدْرَاكَ مَا سَقَرُ
সাক়ার সম্পর্কে তুমি কী জানো?
لَا تُبْقِي وَلَا تَذَرُ
সাক়ার এমন এক জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড যা (নিক্ষিপ্তকে) অক্ষত রাখবে না
এবং ছেড়েও দেবে না।
لَوَّاحَةٌ لِّلْبَشَر
বরং মানুষকে দগ্ধ
করবে (তাদের শরীরের মাংস-চামড়া সব ঝলসে
দেবে)।
عَلَيْهَا تِسْعَةَ عَشَرَ
এই সাক়ার নরকে নিয়োজিত রয়েছে উনিশ জন (ফেরেশতা প্রহরী রূপে)।
وَمَا
جَعَلْنَا أَصْحَابَ النَّارِ إِلَّا مَلَائِكَةً وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ
إِلَّا فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُوا لِيَسْتَيْقِنَ الَّذِينَ أُوتُوا
الْكِتَابَ وَيَزْدَادَ الَّذِينَ آمَنُوا إِيمَانًا وَلَا يَرْتَابَ الَّذِينَ
أُوتُوا الْكِتَابَ وَالْمُؤْمِنُونَ وَلِيَقُولَ الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم
مَّرَضٌ وَالْكَافِرُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَذَا مَثَلًا كَذَلِكَ يُضِلُّ
اللَّهُ مَن يَشَاء وَيَهْدِي مَن يَشَاء وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا
هُوَ وَمَا هِيَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْبَشَر
আমি ফেরেশ্তাদেরকে জাহান্নামের
তত্ত্বাবধায়ক ও প্রহরী করেছি। এবং কাফের ও অবিশ্বাসীদেরকে পরীক্ষা করার
জন্যেই আমি ফেরেশ্তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি; যাতে আসমানি গ্রন্থের অনুসারীদের দৃঢ়বিশ্বাস জন্মে এবং বিশ্বাসীদের ঈমান বৃদ্ধি পায় আর তারা উভয়ে
অর্থাৎ আহ্লু কিতাব ও মুমিনরা এতে সন্দেহ পোষণ না করে; এবং যাতে অন্তরে রোগ আছে এমন লোকেরা এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে, আল্লাহ এর দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ যাকে
ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে চালিত করেন। আর তোমার প্রভুর বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন; এই বর্ণনা ও উল্লেখ তো মানুষের জন্য কেবলই উপদেশ স্বরূপ।
كَلَّا وَالْقَمَر
কখনই নয়, চন্দ্রের শপথ;
وَاللَّيْلِ إِذْ أَدْبَرَ
এবং রাতের শপথ যখন তার
অবসান ঘটে;
وَالصُّبْحِ إِذَا أَسْفَرَ
এবং ঊষার শপথ যখন তা
আলোকোদ্ভাসিত হয়;
إِنَّهَا لَإِحْدَى الْكُبَر
নিশ্চয়
জাহান্নাম গুরুতর বিপদসমূহের মধ্যে অধিক ভয়াবহ;
نَذِيرًا لِّلْبَشَر
সকল মানুষের জন্য
সতর্ককারী;
لِمَن شَاء مِنكُمْ أَن يَتَقَدَّمَ
أَوْ يَتَأَخَّرَ
তোমাদের মধ্যে যারা অগ্রসর হতে চায় বা যারা পিছিয়ে পড়ে সবার জন্য।
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ
رَهِينَةٌ
প্রত্যেক
ব্যক্তিই তার কৃতকর্মের কাছে দায়বদ্ধ;
إِلَّا أَصْحَابَ الْيَمِين
কেবল ডানপন্থীরা ছাড়া (যাঁদেরকে
মহাপ্রলয়ের দিন কৃতকর্মের ফলাফল তাঁদের ডান হাতে প্রদান করা হবে);
فِي جَنَّاتٍ يَتَسَاءلُونَ
তারা জান্নাতে ঠাই পাবে এবং (সেখানে) জিজ্ঞাসাবাদ
করবে;
عَنِ الْمُجْرِمِينَ
অপরাধীদেরকে তাদের অবস্থান সম্পর্কে—
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ
(তোমাদের) কোন্ কাজ ও বিষয়গুলো তোমাদেরকে এই সাক়ার জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে?
قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ
তারা উত্তরে বলবে— আমরা নামাজী ছিলাম না;
وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ
আমরা অভাবগ্রস্তকে
আহার্য্য দিতাম না;
وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ
আমরা (স্রোতে গা ভাসিয়ে) সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম;
وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّين
এবং প্রতিফল প্রদানের (এই) মহা দিবসকে অস্বীকার
করতাম।
حَتَّى أَتَانَا الْيَقِينُ
আর এ অবস্থাতেই একদিন মৃত্যু আমাদেরকে আক্রান্ত করলো।
فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ
الشَّافِعِينَ
(সেদিন) সুপারিশকারীদের
সুপারিশ তাদের কোনও উপকারে আসবে
না।
فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ
مُعْرِضِينَ
তাদের কী এমন হল যে, তারা উপদেশ বাণী (পবিত্র আল্-কুর্আন) থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিয়েছে?
كَأَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنفِرَةٌ
যেন তারা কোনো ইতস্ততঃ ও বিক্ষিপ্ত গর্দভের দল;
فَرَّتْ مِن قَسْوَرَةٍ
যা হট্টগোলের
কারণে সিংহের সম্মুখ হতে পলায়নপর।
بَلْ يُرِيدُ كُلُّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ
أَن يُؤْتَى صُحُفًا مُّنَشَّرَةً
বরং তাদের
প্রত্যেকেই চায় যে, তাদের
প্রত্যেককে একটি করে উম্মুক্ত
গ্রন্থ দেয়া হোক।
كَلَّا بَل لَا يَخَافُونَ الْآخِرَةَ
কখনই নয়, বরং তারা পরকালকে ভয়ই করে না।
كَلَّا إِنَّهُ تَذْكِرَةٌ
কখনই না, এটা (অর্থাৎ আল-কুরআন) তো উপদেশ
মাত্র।
فَمَن شَاء ذَكَرَهُ
অতএব যার ইচ্ছা হবে সে এর থেকে অবশ্যই
উপদেশ গ্রহণ করবে।
وَمَا يَذْكُرُونَ إِلَّا أَن يَشَاء
اللَّهُ هُوَ أَهْلُ التَّقْوَى وَأَهْلُ الْمَغْفِرَة
তবে মহান
আল্লাহ্র ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতিরেকে কেউই উপদেশ গ্রহণ করতে পারবে না। কেবলমাত্র তিনিই ভয়ের
যোগ্য এবং ক্ষমার অধিকারী।
ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম