Saturday 14 March 2020

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ আদিবা



আদিবা
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

ধীরে ধীরে বাতাসের কাঁধে চেপে
পাড়ি দিয়েছে ছাইয়ের স্তূপ
ম্যাড়ম্যাড়ে রঙ্গে সেজে উঠেছে আবার
দোকানের ভাঙাচোরা শাটারগুলো
দু-চার ফোঁটা বুঁদাবাঁদিতে মিশে গেছে
রাস্তার পাশের ও চৌমাথার যত দাগ
আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়েছে বাজারটা
ধীমা-আঁচে জ্বলে উঠেছে উনুন
চাপা আর্তনাদ ও মৃদু পদধ্বনিতে
ভার হয়ে আছে বাতাসের বুক; 
সহপাঠী রিতার গালে আজ
দোলের রং, মুখে খিলখিল হাসি   
একলা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আদিবা
তারও খুব শখ অমন করে সাজার
বাবা বলেছিল, তাকেও আগামী ঈদে
অমন একখানা জামা কিনে দেবে;  
কিন্তু হঠাৎ সে-দিন বিদ্বেষের বিষ দাঁত
এবং ঘৃণার বুলেটে আক্রান্ত হলেন তিনি     
ক্ষতবিক্ষত দেহটা বাড়ি ফিরল নতুন কাপড়ে মুড়ে
সাদা ধবধবে সে-কাপড়, আর আদিবা
নির্বাক-নিষ্পলক-নতশির দাঁড়িয়ে সেখানে  
তার শ্রবণ পথে হানা দিচ্ছিল বাতাসের অনুরণন--
‘আদিবা মা, কোথায় তুমি?
দেখো তোমার জন্য কী এনেছি,  
লালা টুকটুকে সুন্দর একখানা জামা’
ওদিকে, কাফনের সাদা রং ততক্ষণে প্রায় লাল!

আদিবা খুব ছোট, অতশত সে বোঝে না
তবে বোঝে, ঈদ আসবে, যাবে, আসবে
দু-একটা নতুন-পুরাতন জামাও জুটবে তার বরাতে
শুধু আসবে না, যে মানুষটা কাজ শেষে
বাড়ি ফিরে দরজায় দাঁড়িয়ে দরাজ কণ্ঠে হাঁক ছাড়তো,
“আদিবা, আদিবা মা কোথায় তুমি?!”
ওই ডাক আর কোনোদিন ভাসবে না বাতাসে
ভাসবে শুধু তার অনুরণন
আদিবার কানে-মনে-মননে।   
১৩-০৩-২০২০
কলকাতা- ২৩