অভিপ্রায়
বদিউর রহমান
আরবী সাহিত্যে মরুভূমির সতত
প্রতিচ্ছবি
যেখানে নিলোফারের দেখা মেলে
ভাগ্যবানের।
প্রখর সূর্যকিরণের শাণিত বর্শাফলকে
হয়েছি বারংবার ক্ষতবিক্ষত।
বেদুইন চরিত্রের সঙ্গে মেলাতে
পারিনি হাত
শত চেষ্টাতেও হতে পারিনি একাত্ম;
নিশিদিন এঁকেছি মরূদ্যানের
ছবি
স্বপ্ন ভেঙেছে খান খান।
অজানা অচেনা মরুপথে
ক্লান্ত এ পথিক;
বৃষ্টিভেজা শীতল তরুছায়ার আশায়
আজ আমি অস্থির চাতক।
লায়লা-মজনুর প্রেম আখ্যানে
আর মজে না মন।
কায়েসের১ ঘোড়ার
হ্রেষাধ্বনি
আর যোগায় না সাহস।
উনায়যার২ তাঁবু-সঙ্গীতের মূর্চ্ছনায়
আর ভরে না প্রাণ।
শানফারা৩
আনতারার৪ রণহুঙ্কারে
বেদুইন শোণিত হলেও উষ্ণ
হিমপ্রবাহ এ বঙ্গসন্তানের
শিরায়
শিহরে ওঠে রক্তপাতের ভয়ে।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের
যুদ্ধদামামা থেকে
অনেক যোজন দূরে
শান্তির নীড় খোঁজে এ মন।
উকায৫ মেলার
কাব্য মালা
সুখপাঠ্য হয়ে থাক
মোআল্লাকায়৬;
এবার বাড়ী ফেরার পালা।
ছোটবেলার মত
গরুর গাড়ীর ছৈ-এ বসে
যেতে চাই বারানতলায়।
ফেরার পথে
এক হাতে বাদামভাজার
ঠোঙ্গা,
অন্য হাতে ভেঁপুর বাঁশি
নিয়ে
ছৈ এর দুলুনিতে
ঘুম চোখে ফিরে যেতে চাই
অখ্যাত গ্রামের বাড়িতে।
এখানে ধুলোবালির অদ্ভুত
গন্ধ
এখানে গাছের পাতা ঘন সবুজ,
পাখির গান মধুর,
দীঘির জল নীল, গভীর।
অন্তহীন মরুভূমির মরীচিকার
পিছনে দৌড়ে
আজ আমি ক্লান্ত, অবসন্ন।
এবার বাংলার সবুজে
সুখশয্যার সময়।
এ মাটির সোঁদা গন্ধের মাঝে
এবার শুয়ে থাকার পালা।
রচিও শয্যা আমার
বকুলের ছায়ায়;
সেখানে কিছু দূর্বাঘাস,
তরুলতা যেন থাকে।
ক্লান্ত আরব বেদুইন এখন
বাংলা মায়ের কোলে
চিরনিদ্রায় মগ্ন।
CUTA- Tea club-এ পঠিত
৩১/০১/২০১১
…………………………………………………………………………………
টীকাঃ-
১) ইমরাউল
কায়েসঃ প্রাক-ইসলামী যুগের
সর্বাধিক খ্যাত
তথা আরবী
সাহিত্যের সর্বকালের
অন্যতম বিখ্যাত
কবি। অশ্বের বর্ণনার
নিপুণতায় তিনি
অনুপম। মৃত্যু ৫৪০
খ্রীঃ(ফাখুরী)।
২) ইমরাউল
কায়েসের প্রেমিকা
তথা মুয়াল্লাকা
কাব্য রচনার
প্রেরণা—যার
সঙ্গে প্রেমলীলার
কাহিনী বিবৃত
হয়েছে উক্ত
কাব্যের ছত্রে
ছত্রে।
৩) শানফারাঃ
প্রাক-ইসলামী
যুগের দুঃসাহসী
যাযাবর কবি,
যার ‘লামিয়াতুল
আরব’ কাব্য
আরবী সাহিত্যের
অনন্য সম্পদ। মৃত্যু ষষ্ঠ শতকের প্রথমদিকে(ফাখুরী)।
৪) আনতারাঃ মুয়াল্লাকার
অন্যতম কবিরূপে গণ্য করা হয়। প্রবল আত্মমর্যাদাবোধ-সম্পন্ন, বীর, যোদ্ধা কবি।
মৃত্যু ৬১৫ খ্রীঃ (ফাখুরী)
৫) প্রাক-ইসলামী যুগে
অনুষ্ঠিত তিনটি বৃহত্তম মেলার মধ্যে একটি। মক্কার দক্ষিণ-পূর্বে মক্কা ও তায়েফের
মধ্যবর্তী নাখলাহ নামক স্থানে এই মেলা বসত। স্বনামধন্য কবিদের সাহিত্য আসরে মুখরিত
হতো উকাযের মেলা প্রাঙ্গণ।
৬) প্রাক-ইসলামী যুগ তথা
সর্বকালের অন্যতম সেরা আরবী সাহিত্য সম্পদ। আব্বাসী যুগের প্রারম্ভে হাম্মাদুর
রাবিয়াহ কর্তৃক সংকলিত এই গ্রন্থে সাতজনের কাব্য স্থান পেয়েছে। কারও মতে দশজনের।
ক্লান্ত আরব বেদুইন এখন... |