Saturday 24 September 2022

ইমাম মুসলিমঃ দ্বিতীয় বিশুদ্ধতম হাদিস গ্রন্থের রচয়িতা


 
ইমাম মুসলিমঃ দ্বিতীয় বিশুদ্ধতম হাদিস গ্রন্থের রচয়িতা 
 
ইমাম মুসলিম (রাহঃ) মুসলিম পণ্ডিতদের মধ্যে এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র, ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, হাদিস শাস্ত্রের এক অনন্য প্রতিভা ও দিকপাল পণ্ডিত। তিনি হাদিসের হাফিজ, হুজ্জাহ্‌ ও বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী ছিলেন। রিজাল শাস্ত্রে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। নিজ জীবনে একাধিক দেশ ও শহর ঘুরে তিনি হাদিস সংগ্রহের কাজ করেছিলেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান হল সাহীহ মুসলিম গ্রন্থ, যা মুসলিম জনমানসের কাছে দ্বিতীয় বিশুদ্ধতম হাদিস গ্রন্থ রূপে সমাদৃত।

জন্মপরিচিতি
নাম মুসলিম, উপনাম আবুল হুসাইন, উপাধি ‘আসাকিরুদ্দীন, পিতার নাম হুজ্জাজ। ২০২ হিজরি মোতাবেক ৮১৭ খ্রিস্টাব্দে খুরাসানের প্রসিদ্ধ শহর নিসাপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। ইবনু কাসীর (রাহঃ) বলেন— ইমাম শাফেয়ী (রাহঃ)-এর মৃত্যু সনেই ইমাম মুসলিম জন্ম গ্রহণ করেন। তবে ইমাম জাহাবী (রাহঃ) বলেন— ইমাম মুসলিম ২০৪ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেন। আর ইবনুল আসীর ও ইবনু খাল্লিকান (রাহঃ)-এর মতে— ইমাম মুসলিম ২০৬ হিজরিতে জন্ম গ্রহণ করেন।    
 
বাল্যকাল প্রতিপালন
তাঁর বাল্যকাল সম্পর্কে বিশদে কিছুই জানা যায় না। তবে তিনি বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। খুব অল্প বয়সেই পবিত্র আল-কুরআন হিফজ করেছিলেন। সে সময় নিসাপুর ছিল জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর পিতা ছিলেন একজন হাদিস বিশারদ ও পণ্ডিত ব্যক্তি। তাই তিনি নিজ পিতা সহ নিসাপুরের অনান্য ওলামা ও পণ্ডিতদের থেকে শিক্ষা অর্জন করেছিলেন।  
 
শিক্ষা জীবন
শৈশবকাল থেকেই অসাধারণ মেধাবী, চরিত্রবান ও বিনম্র স্বভাবের বালক রূপে তাঁর খ্যাতি ছিল। সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবদের মাঝে তিনি বরাবরই বেশ সমাদৃত ছিলেন। কিশোর বয়সেই হাদিস শ্রবণ ও চর্চা আরম্ভ করেন। হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহের সূচনা তিনি মাতৃভূমি নিসাপুর থেকেই শুরু করেন। সেই সাথে তাফসীর, ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে থাকেন। হাদিস শ্রবণের পর সঙ্গে সঙ্গে তিনি সমস্ত শ্রুত হাদিস লিখে রাখতেন। লেখা শেষে সহপাঠীদের সাথে হাদিসসমূহের পুনরালোচনা করতেন।   
 
হাদিস অন্বেষণে ভ্রমণ
তিনি কিশোর বয়সেই হাদিস চর্চা আরম্ভ করেন। মাতৃভূমি নিসাপুরেই তাঁর হাদিস শ্রবণের সূচনা।  হাদিস সংগ্রহের উদেশ্যে তিনি ব্যাপক ভ্রমণ করেছেন। বিশেষ ভাবে যে শহরগুলো হাদিস চর্চার জন্য বিখ্যাত ছিল, এমন প্রায় সব শহরে তিনি সফর করেছেন। তিনি খুরাসান, ইরাক, হিজায, সিরিয়া ও মিশর ভ্রমণ করেছেন এবং সেখানকার মুহাদ্দিসদের থেকে হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেছেন।  ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি ১২ বছর বয়সে হাদিস শ্রবণ আরম্ভ করেন। আর হাদিস সংগ্রহের জন্য ১৪ বছর বয়সে যাত্রা আরম্ভ করেন। হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে তিনি খুরাসান থেকে রওয়ানা হন এবং হিজাযে পৌঁছে সেখানকার মুহাদ্দিসদের থেকে হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেন। ইমাম বুখারী (রাহঃ) নিসাপুরে পৌঁছলে তিনি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁর বিপুল জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেন। হাদিসের অন্বেষণে তিনি কোনো কোনো শহরে একাধিক বার সফর করেছেন।
 
শিষ্যবৃন্দ
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হাদিস শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ফলে চতুর্দিকে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানপিপাসুরা তাঁর নিকট ছুটে আসতে আরম্ভ করে। সমসাময়িক বহু বরেণ্য বিদ্বানও তাঁর শিষ্যত্ব লাভ করতে আসেন। তাঁদের কয়েকজন হলেন— ইমাম তিরমিযি, ইব্‌রাহিম বিন ইস্‌হাক আস্‌-সায়রাফি, আহ্‌মাদ ইবনু হামদুন, আহমাদ ইবনু সালামাহ প্রমুখ।
 
পরলোকগমন
তিনি খুব দীর্ঘ জীবন লাভ করেননি। ২৬১ হিজরির ২৪শে রজব মোতাবেক ৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ই মে রবিবারের সন্ধ্যায় নিসাপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। নিসাপুর শহরের অভ্যন্তরে নাসিরাবাদ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
 
রচনাসমূহ
তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কয়েকটি হল— সাহীহ মুসলিম, আল-মুস্‌নাদ আল-কাবীর ‘আলা আস্‌মাইর রিজাল, আল-জামি’ আল-কাবীর ‘আলাল আব্‌ওয়াব, আল-‘ইলাল ইত্যাদি।
 
সাহীহ মুসলিম
মুসলিম হাদীস বিশারদদের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোরআন মাজিদের পর পৃথিবীর বুকে বিশুদ্ধতম দ্বিতীয় গ্রন্থ হলো সাহীহ মুসলিম। শক্তিশালী পরিকল্পনার পাশাপাশি অত্যন্ত যত্নের সাথে গুছিয়ে ইমাম মুসলিম তৈরি করেছেন সংকলনটি। উক্ত কর্মটি সম্পন্ন করতে তার সময় লেগেছে প্রায় পনেরো বছর। এই গ্রন্থ সংকলনে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সযত্ন সুন্দর বিন্যাসকে বিবেচনা করে তার যুগের পশ্চিমা বহু মুহাদ্দিস সাহীহ মুসলিমকে সাহীহ বুখারীর উপর প্রাধান্য দিয়ে তাকে শ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তাদের অন্যতম একজন হাফিজুল হাদীস আবু আলী নিসাবুরী বলেন আসমানের নিচে ইলমে হাদীস সংক্রান্ত ইমাম মুসলিমের কিতাব অপেক্ষা বিশুদ্ধতম কোন কিতাব নেই। হাদিসের এ গ্রন্থ সংকলনের ক্ষেত্রে ইমাম মুসলিম তাঁর একান্ত আস্থাভাজন ছাত্রদের সহযোগিতাও নিয়েছেন। তাঁর ছাত্র আহমদ বিন সালামা বলেনইমাম মুসলিমের সাথে তাঁর সাহীহ সংকলনের ক্ষেত্রে আমি পনেরো বছর কাজ করেছি
 
এতে প্রায় ১২ হাজার হাদীস রয়েছে (পুনরুক্তসহ)। পুনরুক্ত বাদ দিলে হাদীসের সংখ্যা হবে প্রায় ৪০০০। ইমাম মুসলিম পনেরো বছর সাধনার পর তার মুখস্থ তিন লক্ষাধিক হাদীস থেকে বাছাই করে বিশুদ্ধ হাদীসের এ সংকলনটি তৈরি করেছেন
 
-আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

Tuesday 20 September 2022

হাফিজ ইবরাহীমঃ ইমাম মুহাম্মদ আব্দুহুর প্রতি



আমি ত্যাগ করেছি আমার পূর্বের ধারণা
যেভাবে ত্যাগ করে নিজের ধারণা কোনো স্বাধীনচেতা মানুষ
আমি পুনর্বিবেচনা করেছি, নিজে থেকে করেছি সুবিচার
একজন বিবেকবান হিসেবে তা-ই ছিল আমার কর্তব্য
 
হে আমার মুর্শিদ, আমি কুড়ি দিন-কুড়ি রাত
আপনার সাহচর্য লাভ করেছি, দুচোখ ভরে
দেখেছি আপনার কার্যকলাপ
ছুঁয়ে দেখেছি আপনার বিশ্বাস
স্পর্শ করেছি আপনার চেতনা
যার পরনায় স্থিরতা লাভ করেছে আমার ঈমান  
পূর্বে যা  ডুবে ছিল দ্বিধাদ্বন্দের গহ্বরে।
আমি যখন যাত্রা শুরু করি
আমার চারপাশ ছিল নৈরাশ্যের অন্ধকারে মোড়া
কিন্তু যখন ফিরে এলাম
বুকের ভেতর বইছে ধৈর্যের স্রোত
দুচোখের পাতায় ভিড় করছে স্বপ্নেরা 
ওই নৌবিহারে ইম্‌রান পুত্র মূসার (আঃ) মতো
আমি শিখছিলাম বহু কিছু প্রতিনিয়ত
যেন আপনি আমার খিজির (আঃ)
সূরা কাহাফ জুড়ে রয়েছে যার বিবরণ।   
 
মুর্শিদ, আপনার সান্নিধ্য পেয়ে আমি মুগ্ধ
আমার হৃদয় বিলীন হয়ে গেছে আপনার ভালোবাসায়
যেভাবে সূচ হারিয়ে যায় গভীর সমুদ্রে;  
তবে আমি যদি কভু অপথে হাটি বা কুপথ ধরি  
আপনিই দিশা দেবেন আমাকে সুপথের  
মুর্শিদ, আমি মুগ্ধ আপনার আদর্শে
বিমোহিত আপনার কাজকর্ম দেখে
আর তাই আমার কলম
বুনে চলেছে শব্দমাল্য আপনার প্রশংসায়
যেন কোনো সাজদাবনত উপাসক
আল্লাহ্‌র ভয়ে অঝোরে অশ্রুপাত করছে 
আপনার চতুর্দিকে আবর্তিত হচ্ছে
জনসাধারণের আশা-আকাঙ্খা-স্বপ্ন
যেন আপনি এক স্বচ্ছ জলাধার, যার চারপাশে
ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য পাখপাখালি
মুর্শিদ, আপনার জ্ঞানালোকে
উদ্ভাসিত হয়েছে আমার মন
উদ্ভাসিত হয়েছে আমার চেতনা
দিশা পেয়েছে আমার কর্মকথা
তাই সারাক্ষণ আমি কুড়িয়ে চলেছি
আপনার মুখনিঃসৃত কুঁড়ি, ফুল ও ফল
আর আপনার প্রশংসার কুঁড়ি দিয়েআমার এ হৃদয়
প্রস্তুত করেছে এক পুষ্প স্তবক
যার দিকে দেখে ধাধিয়ে গেছে বসন্তের চোখ।
প্রত্যেক সকালে তাকে সঙ্গে নিয়ে
প্রবাহিত হচ্ছে মৃদু-মন্দ বাতাস
আর যখন ওই বাতাস অতিক্রম করছে উদ্যানগুলির ওপর দিয়ে
মেতে উঠছে সেই উদ্যানগুলি তার সুগন্ধে
 
হে সঠিক পথের দিশারী, আমি দেখছি
লোকেরা আবিষ্কার করেছে নিজেদের জন্য বহু রীতি
যে রীতিগুলি ইসলামের শাশ্বত রীতি হতে ভিন্ন।
তারা মনে করছে, মৃতদের কবরে
তাদের জন্য রয়েছে জীবনের রসদ
আর তাই সমাধিগুলির পরিক্রমা করছে তারা
সেখানে বসে মানত ও আহাজারি করছে
সময় অতিবাহিত করছে, কারণ তারা
নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ওই কবরগুলোর প্রতি
যে করে প্রাক-ইসলামী যুগে মক্কার লোকেরা  
নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল একাধিক মূর্তির প্রতি
লাত, মানাত, হুবল ও উজ্জার প্রতি;  
মুর্শিদ, আপনি এ মানুষগুলোকে  
আলোর পথ দেখিয়ে দিন, যাতে তারা
আপনার জ্ঞানের ছোঁয়া পেয়ে উন্নতি করে
ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে
নিজেদেরকে ক্ষমার যোগ্য করে তোলে
ঠিক যেভাবে সূর্য সমুদ্রের নোনাজলকে
সুপেয় পানিতে পরিনত করে
কারণ আপনিই তাদের সূর্য।
 
শুধু কি তা-, নাহ্‌!
আপনি দানশীল, ক্ষমাকারী
আপনি ন্যায়পরায়ণ, আর তাই
চারিদিকে আপনার শত্রু প্রচুর  
তবে আপনি বিদ্বেষ পোষণ করেন না কারুরই প্রতি 
বরং উপকার করেন সবার
এমনকি যারা ঘৃণা করে তাদেরও।
আর তাই আপনার জন্য বরাদ্দ রয়েছে এক বিশেষ স্থান
আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের ক্ষেত্রে
পরোপকার করুনার ক্ষেত্রে
যেন আপনার মুখমণ্ডলে
জামালুদ্দীন আফগানীর আভা
আর আপনার আলোয়ানে ভাস্বর হয়ে আছেন  
মহা তাপস  আহনাফ বিন কায়েস।
আমি লক্ষ্য করেছি, আপনার ফাতওয়া
কখনো কাউকে রাগান্বিত করে না।
আপনার ফাতওয়া ও জ্ঞানে যে
রয়েছে নবী ইউসুফের (আঃ) ছোঁয়া।
কি প্রাচ্য কি পাশ্চাত্য, যেখানেই থাকুক
কোনো দোদুল্যমান দ্বিধাগ্রস্থ ব্যাক্তি
আপনার জ্ঞান ও নির্দেশনা
তাঁকে পথ দেখাবার জন্য যথেষ্ট
কারণ, আপনি অর্জন করেছেন এমন পূর্ণতা
যদি তা স্পর্শ করে কোনো প্রকম্পিত ব্যাক্তির অবিশ্বাসকে
তাহলে সেও হয়ে যায় ধর্মপরায়ণ
হয়ে যায় নিষ্কলুষ ইমানদার
 
ভাবানুবাদআব্দুল মাতিন ওয়াসিম 


সরল অনুবাদঃ
আমি ভুল ধারণাগুলি পরিত্যাগ করেছি। আর স্বাধীন মুক্তচিন্তক ব্যাক্তি অনেক ক্ষেত্রে নিজ ধারণা পরিবর্তন করে। আমি নিজের থেকে সুবিচার করেছি, আর বিবেকবানেরা সুবিচার করে।
আমি কুড়ি দিন রাত (সেই) পথপ্রদর্শকের সাহচর্য সান্যিধ্য লাভ করলাম, ফলে আমার বিশ্বাস যা পূর্বে অস্থির ছিল স্থির হয়ে গেল।
অতঃপর আমি যাত্রা শুরু করলাম এমত অবস্থায় যে, আমার মনের মধ্যে নৈরাশ্যের একটি তরবারি বিরাজ করছিল। আর আমি ফিরে আসলাম এমত অবস্থায় যে আমার মনে গহীনে রচিত হয়ে গেছিল ধৈর্যের এক মহাগ্রন্থ।
আমি ইমরান-তনয় মুসা আঃ-এর মত শিক্ষার্থীতে পরিনত হয়েছিলাম, আর তিনি ছিলেন সূরা কাহাফে বর্ণীত সেই ব্যাক্তির ন্যায়।
আমার হৃদয় এমন এক সুচে পরিনত হয়েছিল যেটি আপনার প্রেমে নিমজ্জিত হয়ে পরেছিল। আমি যদি বিচ্যুত হই আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন।
আমার কলম (মন মতামত) আপনার প্রশংসায় এমন এক সাজদাবনত ব্যাক্তির ন্যায়, আল্লাহ্‌র ভয়ে যার অশ্রু প্রবাহিত হয়।
এমত অবস্থায় যে আপনার চতুর্দিকে (জনসাধারণের) আশা-আকাঙ্খা আবর্তিত হচ্ছে- আপনি যেন এমন স্বচ্ছ জলের ন্যায় যার উভয় পাশে পাখীরা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়।
আমার মনের মণিকোঠায় আমার অভিমত, আমার কর্ম আমার কথা উদ্ভাসিত হয়েছে। তাই আমার মন (তাঁর নিকট থেকে) ফল ফুল চয়ন করতে করতে রাত্রি অতিবাহিত করেছে।
আর আপনার প্রশংসার কুঁড়ি দিয়ে তা (আমার মন) এমন এক পুষ্প স্তবক প্রস্তুত করেছে, যার দিকে দেখে বসন্ত চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
প্রত্যেক সকালে তাকে সঙ্গে নিয়ে মৃদু-মন্দ বায়ু প্রবাহিত হয় এবং অতিক্রম করে উদ্যানগুলির ওপর দিয়ে, তখন উদ্যানগুলিও (তার সুগন্ধে) সুগন্ধময় হয়ে ওঠে।
হে সঠিক পথের দিশারী, আমি লোকেদেরকে দেখছি তারা নিজেদের জন্য এমন কিছু নতুন রীতি আবিষ্কার করে নিয়েছে যা হতে ইসলামী শরিয়ত সম্পূর্ণ রূপে পৃথক।
তারা মনে করছে মৃতদের কবরেই তাদের জন্য জীবন-রসদ রয়েছে। তাই তারা সেই কবর বা সমাধিগুলির নিকট যাচ্ছে এবং তার পরিক্রমা করছে।
এবং সেই কবরগুলির ওপর নির্ভরশীল হয়ে তারা সময় অতিবাহিত করছে, যেন তারা প্রাক-ইসলামী যুগের মূর্তিগুলির উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
তাই সেই মানুষগুলিকে সঠিক জ্ঞান দান করুন,  যাতে তারা আপনার জ্ঞানের আলো পেয়ে উন্নতি করতে পারে এবং ক্ষমার যোগ্য হয়।
যেমন সমুদ্রের জন্য সূর্য তেমনই তাদের জন্য আপনি,  সূর্য লবণাক্ত খারা পানিকে সুপেয় পানিতে পরিনত করে অতঃপর তা পান করা হয়।
আপনি অধিক দানশীল, ক্ষমাকারী ন্যায়বিচারক। যদিও আপনার প্রচুর শত্রু, কিন্তু আপনি বিদ্বেষমুক্ত পরোপকারী।
প্রত্যেক দিন তাঁর জন্য আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে এবং পরোপকার করুনার ক্ষেত্রেও একটি বিশেষ স্থান।
যেন তাঁর মুখমণ্ডলের আলোয় জামালুদ্দীন আফগানী উদ্ভাসিত এবং তাঁর পরিধেয় বস্ত্রাদির মাঝে আহনাফ বিন কায়েস আলোকিত।
আমি মনে করি, আপনি ফাতওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে কোনও বিবেকবানকে রাগান্বিত করেন না;  যেন আপনি ফাতওয়া জ্ঞানের ব্যাপারে ইয়সুফ ()-এর মতো।
যদি প্রাচ্যে কোনও প্রকম্পিত ও দ্বিধাগ্রস্থ ব্যাক্তি দাঁড়ায় তার জন্যও আপনি এবং তার জন্যও যদি পাশ্চাত্যে কোনও প্রকম্পিত ব্যাক্তি দাঁড়ায়।
আপনি এমন পরিপূর্ণতা অর্জন করেছেন যে তা যদি সেই প্রকম্পিত ব্যাক্তির অবিশ্বাসকে স্পর্শ করে তাহলে সে একনিষ্ঠ বিশ্বাসী অর্থাৎ ইমানদারে পরিনত হবে।


إلى الأستاذ الإمام الشيخ محمد عبده[1]
شاعر النيل حافظ إبراهيم
 
صَدَفتُ عَنِ الأَهواءِ وَالحُرُّ يَصدِفُ       وَأَنصَفتُ مِن نَفسي وَذو اللُبِّ يُنصِفُ 
صَحِبتُ الهُدى عِشرينَ يَوماً وَلَيلَةً                فَقَرَّ يَقيني بَعدَما كانَ يَرجُفُ
فَرُحتُ وَفي نَفسي مِنَ اليَأسِ صارِمٌ       وَعُدتُ وَفي صَدري مِنَ الحِلمِ مُصحَفُ
وَكُنتُ كَما كانَ اِبنُ عِمرانَ ناشِئاً         وَكانَ كَمَن في سورَةِ الكَهفِ يوصَفُ
كَأَنَّ فُؤادي إِبرَةٌ قَد تَمَغطَسَت             بِحُبِّكَ أَنّى حُرِّفَت عَنكَ تَعطِفُ
كَأَنَّ يَراعي في مَديحِكَ ساجِدٌ             مَدامِعُهُ مِن خَشيَةِ اللَهِ تَذرِفُ
كَأَنَّكَ وَالآمالُ حَولَكَ حُوَّمٌ                نَميرٌ عَلى عِطفَيهِ طَيرٌ تُرَفرِفُ
وَأَزهَرَ في طِرسي يَراعي وَأَنمُلي          وَلَفظي فَباتَ الطِرسُ يَجني وَيَقطِفُ
وَجَمَّعَ مِن أَنوارِ مَدحِكَ طاقَةً             يُطالِعُها طَرفُ الرَبيعِ فَيُطرَفُ
تَهادى بِها الأَرواحُ في كُلِّ سُحرَةٍ         وَتَمشي عَلى وَجهِ الرِياضِ فَتَعرُفُ
إِمامَ الهُدى إِنّي أَرى القَومَ أَبدَعوا         لَهُم بِدَعاً عَنها الشَريعَةُ تَعزِفُ
رَأَوا في قُبورِ المَيِّتينَ حَياتَهُم             فَقاموا إِلى تِلكَ القُبورِ وَطَوَّفوا
وَباتوا عَلَيها جاثِمينَ كَأَنَّهُم               عَلى صَنَمٍ لِلجاهِلِيَّةِ عُكَّفُ
فَأَشرِق عَلى تِلكَ النُفوسِ لَعَلَّها           تَرِقُّ إِذا أَشرَقتَ فيها وَتَلطُفُ
فَأَنتَ بِهِم كَالشَمسِ بِالبَحرِ إِنَّها          تَرُدُّ الأُجاجَ المِلحَ عَذباً فَيُرشَفُ
كَثيرُ الأَيادي حاضِرُ الصَفحِ مُنصِفٌ    كَثيرُ الأَعادي غائِبُ الحِقدِ مُسعِفُ
لَهُ كُلَّ يَومٍ في رِضى اللَهِ مَوقِفٌ          وَفي ساحَةِ الإِحسانِ وَالبِرِّ مَوقِفُ
تَجَلّى جَمالُ الدينِ في نورِ وَجهِهِ         وَأَشرَقَ في أَثناءِ بُردَيهِ أَحنَفُ
رَأَيتُكَ في الإِفتاءِ لا تُغضِبُ الحِجا       كَأَنَّكَ في الإِفتاءِ وَالعِلمِ يوسُفُ
فَأَنتَ لَها إِن قامَ في الشَرقِ مُرجِفٌ       وَأَنتَ لَها إِن قامَ في الغَربِ مُرجِفُ
كَمُلتَ كَمالاً لَو تَناوَلَ كُفرَهُ               لَأَصبَحَ إيماناً بِهِ يُتَحَنَّفُ

[1]  كان يزعم الشاعر حافظ إبراهيم عن الإمام محمد عبده، بأنه زعيم سياسي ومصلح اجتماعي يريد إصلاح القوم والشعب المصري على نهج الأوربا فظل يكرهه. لكن لمّا تشرف بمعيته في رحلة بحرية استغرقت نحو عشرين يوما، رجع عن ظنه فمدحه لجهوده المتواصلة في إصلاح قومه على الأساس الإسلامي والقيم الدينية بهذه المنظومة. والتمس من الشيخ للقيام بدعوته الإصلاحية هذه متواصلا. وهذه المنظومة في بحر الطويل.