ইমাম মুসলিমঃ দ্বিতীয় বিশুদ্ধতম হাদিস গ্রন্থের রচয়িতা
জন্ম ও পরিচিতি
শৈশবকাল থেকেই অসাধারণ মেধাবী, চরিত্রবান ও বিনম্র স্বভাবের বালক রূপে তাঁর খ্যাতি ছিল। সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবদের মাঝে তিনি বরাবরই বেশ সমাদৃত ছিলেন। কিশোর বয়সেই হাদিস শ্রবণ ও চর্চা আরম্ভ করেন। হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহের সূচনা তিনি মাতৃভূমি নিসাপুর থেকেই শুরু করেন। সেই সাথে তাফসীর, ইতিহাস ও অন্যান্য বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে থাকেন। হাদিস শ্রবণের পর সঙ্গে সঙ্গে তিনি সমস্ত শ্রুত হাদিস লিখে রাখতেন। লেখা শেষে সহপাঠীদের সাথে হাদিসসমূহের পুনরালোচনা করতেন।
তিনি কিশোর বয়সেই হাদিস চর্চা আরম্ভ করেন। মাতৃভূমি নিসাপুরেই তাঁর হাদিস শ্রবণের সূচনা। হাদিস সংগ্রহের উদেশ্যে তিনি ব্যাপক ভ্রমণ করেছেন। বিশেষ ভাবে যে শহরগুলো হাদিস চর্চার জন্য বিখ্যাত ছিল, এমন প্রায় সব শহরে তিনি সফর করেছেন। তিনি খুরাসান, ইরাক, হিজায, সিরিয়া ও মিশর ভ্রমণ করেছেন এবং সেখানকার মুহাদ্দিসদের থেকে হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেছেন। ঐতিহাসিকদের মতে, তিনি ১২ বছর বয়সে হাদিস শ্রবণ আরম্ভ করেন। আর হাদিস সংগ্রহের জন্য ১৪ বছর বয়সে যাত্রা আরম্ভ করেন। হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে তিনি খুরাসান থেকে রওয়ানা হন এবং হিজাযে পৌঁছে সেখানকার মুহাদ্দিসদের থেকে হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেন। ইমাম বুখারী (রাহঃ) নিসাপুরে পৌঁছলে তিনি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং তাঁর বিপুল জ্ঞান ভাণ্ডার থেকে হাদিস শ্রবণ ও সংগ্রহ করেন। হাদিসের অন্বেষণে তিনি কোনো কোনো শহরে একাধিক বার সফর করেছেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হাদিস শাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। ফলে চতুর্দিকে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানপিপাসুরা তাঁর নিকট ছুটে আসতে আরম্ভ করে। সমসাময়িক বহু বরেণ্য বিদ্বানও তাঁর শিষ্যত্ব লাভ করতে আসেন। তাঁদের কয়েকজন হলেন— ইমাম তিরমিযি, ইব্রাহিম বিন ইস্হাক আস্-সায়রাফি, আহ্মাদ ইবনু হামদুন, আহমাদ ইবনু সালামাহ প্রমুখ।
তিনি খুব দীর্ঘ জীবন লাভ করেননি। ২৬১ হিজরির ২৪শে রজব মোতাবেক ৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ই মে রবিবারের সন্ধ্যায় নিসাপুরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। নিসাপুর শহরের অভ্যন্তরে নাসিরাবাদ কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। কয়েকটি হল— সাহীহ মুসলিম, আল-মুস্নাদ আল-কাবীর ‘আলা আস্মাইর রিজাল, আল-জামি’ আল-কাবীর ‘আলাল আব্ওয়াব, আল-‘ইলাল ইত্যাদি।
মুসলিম হাদীস বিশারদদের সর্ব সম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোরআন মাজিদের পর পৃথিবীর বুকে বিশুদ্ধতম দ্বিতীয় গ্রন্থ হলো সাহীহ মুসলিম। শক্তিশালী পরিকল্পনার পাশাপাশি অত্যন্ত যত্নের সাথে গুছিয়ে ইমাম মুসলিম তৈরি করেছেন সংকলনটি। উক্ত কর্মটি সম্পন্ন করতে তার সময় লেগেছে প্রায় পনেরো বছর। এই গ্রন্থ সংকলনে তার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সযত্ন সুন্দর বিন্যাসকে বিবেচনা করে তার যুগের পশ্চিমা বহু মুহাদ্দিস সাহীহ মুসলিমকে সাহীহ বুখারীর উপর প্রাধান্য দিয়ে তাকে শ্রেষ্ঠ হাদীস গ্রন্থ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তাদের অন্যতম একজন হাফিজুল হাদীস আবু আলী নিসাবুরী বলেন— আসমানের নিচে ইলমে হাদীস সংক্রান্ত ইমাম মুসলিমের কিতাব অপেক্ষা বিশুদ্ধতম কোন কিতাব নেই। হাদিসের এ গ্রন্থ সংকলনের ক্ষেত্রে ইমাম মুসলিম তাঁর একান্ত আস্থাভাজন ছাত্রদের সহযোগিতাও নিয়েছেন। তাঁর ছাত্র আহমদ বিন সালামা বলেন— ইমাম মুসলিমের সাথে তাঁর সাহীহ সংকলনের ক্ষেত্রে আমি পনেরো বছর কাজ করেছি।
-আব্দুল মাতিন ওয়াসিম