Friday 28 February 2020

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ ফরিয়াদ



ফরিয়াদ
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

তোমাকে এভাবে জ্বলতে দেখে
দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার
রুদ্ধ প্রায় ধমনীর প্রবাহ
থেঁতলে যাচ্ছে ভেতরের সব শিরা-উপশিরা  
ঝাপসা হয়ে বুজে আসছে  দু’চোখের পাতা    
সমস্ত রকম ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
আজ আমি জ্বলছি, পুড়ছি। আর আমার শরীর
ক্রমশ হয়ে আসছে নিস্তেজ;
যদি এভাবে অস্থিরতা বুকে নিয়ে মৃত্যু হয় আমার
তাহলে আমার এই দেহ তুমি রোপে দিও
কোনো বৃক্ষচারার ন্যায় এ মাটির বুকে কোথাও    
যাতে বহু বছর বাদে আমার কপালে, হাতে বা বুকে  
কোথাও এসে বাসা বাঁধে, আশ্রয় নেয় কোনো এক পাখি!

২৭-০২-২০২০
কোলকাতা- ২৩ 

Sunday 23 February 2020

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ বাবা...!



বাবা...!
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

সেদিন বিকেলে ওর ফোনটা আমাকে থামিয়ে দিয়ে
ও বেরিয়ে গেল রুম থেকে
হয়তো বিশেষ কোনো কাজে
আমি তখনো সেখানেই বসে একই রকম ভাবে
আর ওর ফোনটা আমার বাম হাতে
হঠাৎ কেঁপে উঠলো হাতটা
বুঝতে পারলাম ভাইব্রেট করছে ফোনটা
দেখলাম একটা কল এসেছে
স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে “বাবা”;
বুকের ভেতরটা কেমন চিনচিন করে উঠলো
স্বাভাবিক নিঃশ্বাস একটু ঘন হয়ে
বেরিয়ে এল দীর্ঘশ্বাস রূপে
চিকচিক করে উঠলো দু’চোখের কোণ
আজ আট বছর পেরিয়ে গেল
এই নামে কোনো কল আসে না আমার ফোনে
আর কোনোদিন আসবে না, ভেসে উঠবে না
ওই শব্দটা অমন ভাবে আমার ফোনের স্ক্রিনে।


২৩-০২-২০২০
কোলকাতা- ৭০০০৩৯

Thursday 20 February 2020

নাজিব মাহফুযঃ অর্ধ দিবস



অর্ধ দিবস  
মূল- নাজিব মাহফুয, মিশর
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

[নাজিব মাহফুয। বিখ্যাত মিশরীয় কথা সাহিত্যিক। জন্ম ১৯১১ সালে কায়রোতে। ১৯৮৮ সালে অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম সুলাসিয়্যাতুল্‌ ক়াহেরাহ্‌ (কায়রো তিনগ্রন্থি বা কায়রো ট্রিলজি, ১৯৫৬-৫৭ সালে প্রকাশিত)-এর জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। আরবি ভাষাভাষী লেখকদের মধ্যে তিনিই প্রথম নোবেল জয়ী। তাঁর প্রকাশিত ছোটগল্পের সংখ্যা ২২৩ এবং উপন্যাসের সংখ্যা ৩৫। অনূদিত এই গল্পটি তাঁর আল্‌-ফাজ্‌রুল্‌ কাযিব (প্রতারক ভোর) গ্রন্থের দ্বিতীয় গল্প। গল্পটিতে তিনি সময়ের দ্রুত বয়ে চলার সাথে পরিকল্পনাবিহীন নগরায়নকেও তুলে ধরেছেন নিস়্‌ফু ইয়াউমিন্‌” (অর্ধ দিবস) শিরোণামে। কায়রোতেই ২০০৬-এর ৩০শে আগস্ট তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। ]

বাবা হাঁটছিলেন। তাঁর ডান হাত ধরে তাঁর পাশাপাশি আমিও হাঁটছিলাম। তিনি হাঁটছিলেন লম্বা লম্বা পায়ে। আর তাঁর সাথে তাল মিলাতে আমি প্রায় দৌড়োচ্ছিলাম। আমার পরনে ছিল নতুন জামাকাপড়। গায়ে সবুজ জ্যাকেট। পায়ে কালো জুতো। আর মাথায় লাল তারবুশি টুপি। কিন্তু তাতে আমার মোটেই আনন্দ হচ্ছিল না। কারণ আমি জানতাম যে, আজ ঈদের দিন নয়। অন্য কোনো উৎসবও নেই আজ। বরং কিছুক্ষণ পরেই আমাকে স্কুল নামের এক অদ্ভুত জায়গায় রেখে আসা হবে। বলতে গেলে, এক রকম ফেলে আসা হবে।

সেদিন ছিল স্কুলে আমার প্রথম দিন। আমি যখন বাবার হাত ধরে হাঁটছিলাম মা জানালায় দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন। আমিও ফিরে ফিরে মা’কে দেখছিলাম এই আশায়, হয়তো আমাকে এ যাত্রাতেও রক্ষা করবেন। কিন্তু না, মা তেমন কিছুই করলেন না। আমি বাবার সাথে এগিয়ে চললাম। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা হাঁটতে লাগলাম বায়নাল্‌-জানায়িন্‌ সরণী ধরে। তার দু’পাশে ফসলের ক্ষেত, গাঢ় সবুজ মাঠ, সারিবদ্ধ গাছগাছালি, খেজুর, নাশপাতি, হেনা আরও কতকিছুর বাগান। হাঁটতে হাঁটতে আমি বাবাকে শুধালাম, “আমাকে স্কুলে কেন নিয়ে যাচ্ছ? আমি এমন কী দোষ করেছি, বলো না!  

আমার এই কথা শুনে বাবা হেসে ফেললেন। বললেন, “আমি তো তোমাকে কোনো শাস্তি দিচ্ছি না। আর স্কুল তো শাস্তির জায়গা নয়। স্কুল হল এমন একটা জায়গা যেখানে গিয়ে তোমার মত শিশুরা বড় হয়। ভালো মানুষ তৈরি হয়। আচ্ছা, তুমি কি বড় হতে চাও না?! তোমার ভাইদের মতো, বাবার মতো হতে চাও না?!

বাবার এই কথায় আমি আশ্বস্ত হতে পারলাম না। বাড়ির মায়া ছিন্ন করে রাস্তার শেষ প্রান্তে অবস্থিত, উঁচু এবং শক্তপোক্ত দেয়ালে ঘেরা, প্রাসাদোপম সুরক্ষিত ওই স্কুলে নিক্ষিপ্ত হবার মধ্যে কোনো মঙ্গল আছে বলে আমার বিশ্বাস হল না। তবুও বাবার হাত ধরে হাঁটতে থাকলাম। হাঁটতে হাঁটতে আমরা পৌঁছে গেলাম স্কুলের মেইন গেটে। উঁচু দেয়ালের ওপারে মস্ত বড় একটা মাঠ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েতে গিজগিজ করছে। বাবা আমাকে বললেন—ভেতরে যাও। ওদের সাথে ভাব করো। হাসিমুখে কথা বলো। পরিচিত হও। এমন ব্যবহার করো যাতে সবাই তোমাকে ভালোবাসে...।”

আমি ইতস্তত করছিলাম। ভয়ে শক্ত করে বাবার হাতটা ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু তিনি হাতটা ছাড়িয়ে পেছন থেকে আলতো ক’রে ঠেলে আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলেন। বললেন—একটু সাহস করো। আজ থেকে তোমার সত্যিকারের জীবনযাত্রা শুরু। ছুটি হলে আমাকে এখানেই পাবে। আমি এখানেই দাঁড়িয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।”

আমি কয়েক পা সামনে এগোলাম। একটু দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালাম। সবকিছু কেমন ঝাপসা, অস্পষ্ট। আরেকটু এগিয়ে আবার তাকালাম। এবার আমার বয়সী ছেলেমেয়েদের মুখগুলো ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠল। ওদের কাউকেই আমি চিনি না। ওরাও আমাকে চেনে না। মনে হল, আমি পথহারা কোনো পথিক। ততোক্ষণে ওরাও আমাকে লক্ষ্য করেছে। আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকাতে শুরু করেছে। তাদের মধ্য থেকে একটি ছেলে এগিয়ে আসল। কাছে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমাকে কে নিয়ে এসেছে?”
ফিস্‌ফিস্‌ করে বললাম—বাবা।”
সে খুব সহজ ভাবে শান্ত গলায় বলল—আমার বাবা মারা গেছে।”

তার কথা শুনে আমি থ’ হয়ে গেলাম। কী বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম। এমন সময় ক্যাঁচক্যাঁচ-ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে বিশাল গেটটা বন্ধ হয়ে গেল। তা দেখে অনেকেই ভয়ে কান্নাকাটি জুড়ে দিল। তারপর টুং-টুং টুং-টুং করে ঘন্টা বেজে উঠল। একজন ম্যাডাম কয়েকজন লোককে সাথে নিয়ে আমাদের কাছে আসলেন। লোকগুলো আমাদেরকে কয়েকটি লাইনে দাঁড় করিয়ে দিল। একটা বিশাল মাঠে আমরা কয়েকটা অসম দলে ভাগ হয়ে দাঁড়ালাম। মাঠটা তিন দিক থেকে উঁচু উঁচু দালানে ঘেরা। প্রতিটা দালানের প্রত্যেক ফ্লোরে একটা করে কাঠের ছাদ-ওয়ালা লম্বা ব্যালকনি। যার উপর থেকে খুব সহজেই মাঠের প্রতিটি কোণায় নজরদারি করা যায়। সেখানে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে ম্যাডাম বললেন— সোনামনিরা! এটা তোমাদের নতুন বাড়ি। এখানেও মা-বাবা আছে। যা কিছু মজার এবং উপকারী তার সবই তোমরা এখানে পাবে খেলাধুলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি সব। অতএব চোখের জল মুছে ফেলো এবং জীবনটাকে হাসি-আনন্দে বরণ করে নাও।”

ধীরে ধীরে আমরা বাস্তবটাকে অনুভব করতে লাগলাম। মেনেও নিলাম খানিকটা আনন্দের সাথে। আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হতে লাগলো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের মাঝে ভাব সৃষ্টি হল। আমরা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হলাম। অনেক ছেলে আমার বন্ধু হল। আমি বহু মেয়ের প্রেমে পড়লাম। আমার মনে হলো, স্কুল সম্পর্কে আমার পূর্ব-ধারণা ভুল ছিল। আমি কল্পনাও করতে পারিনি, স্কুল এত চমৎকার একটি জায়গা এবং স্কুলে এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতা হবে।

বন্ধুদের সাথে অনেকক্ষণ খেলাধুলা করলাম। বল খেললাম। ঘোড়ায় চড়লাম। দোলনায় দোল খেলাম। আরও কত কী করলাম। মিউজিক রুমে গিয়ে জীবনে প্রথম বারের মত গান গাইলাম। একটি ক্লাসে আমাদেরকে বর্ণমালার সাথে, ভাষার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো। আরেকটি ক্লাসে দেখানো হলো পৃথিবীর মানচিত্র আঁকা মস্তবড় একটা গ্লোব। তাতে দেশ ও মহাদেশের মানচিত্র খুব নিখুতভাবে আঁকা। গ্লোবটা ঘুরছিল; তার সাথে যেন দেশ ও মহাদেশগুলোও ঘুরছিল। এরপর আমরা সংখ্যা শিখলাম। যোগ-বিয়োগ শিখলাম। আমাদের শোনানো হলো স্রষ্টার মহিমা, বিশ্ব সৃষ্টির কাহিনী এবং প্রলয় ও পরকালের কথা। দুপুর বেলা বিরতির সময় মজার মজার রকমারি খাবার দেওয়া হল। আমরা খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পরে আমাদেরকে ঘুম থেকে তোলা হল। যাতে আবারও নতুন কিছু শিখি। নতুন নতুন খেলায় মেতে উঠি। আনন্দ করি। পরস্পরকে ভালোবাসি; একে অপরের বন্ধু হই।  

তবে পথটা পুরোটাই মসৃণ ছিল না; আর না সিস্টেমটা পুরোপুরি মধুর ছিল। ওখানে আমাদেরকে অনেক নিয়ম মানতে হয়েছিল। অনেকগুলো ছোটোখাটো ঝড়ঝাপটা সামলাতে হয়েছিল। বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিরও সম্মুখীন হয়েছিলাম এবং ধৈর্য সহ সেসবের মুকাবিলা করেছিলাম। সারাক্ষণ সজাগ এবং প্রস্তুত থাকতে হয়েছিল কারণ বিষয়টা নিছক খেলাধুলায় সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং সবকিছুতেই একটা প্রতিযোগিতার মনোভাব ছিল। তাই বোকামি বা অলসতার কোনো অবকাশ ছিল না। কারণ সামান্য ভুলেই ঝগড়া বেধে যেতে পারতোমারামারি হতে পারতোভালোবাসার বদলে শত্রুতা কিংবা তিক্ততা সৃষ্টি হতে পারতো। হয়তো তাই ওই ভদ্রমহিলা আমাদের দিকে তাকিয়ে কখনো হাসতেন; কখনো চিৎকার ক’রে ধমক দিতেন। আবার কখনো আমাদেরকে শিষ্টাচার শেখাতে প্রয়োজনে ছড়ি হাতে নিতেও দ্বিধা করতেন না।

সবকিছু কেমন বদলে গেছিল। স্বর্গতুল্য যে ঘর ছেড়ে আমারা স্কুলে এসেছিলাম সেই ঘরে ফিরে যাবার কথা আমরা ভুলেই গেছিলাম। প্রচেষ্টা, অধ্যবসায় আর সংগ্রাম ছাড়া আমাদের সামনে আর কিছুই ছিল না। কারণ সকল তিক্ততার মাঝে প্রতিকূল পরিবেশেও যারা সুযোগকে কাজে লাগায় তারাই তো সাফল্যের বরপুত্র হয়।

বেলা শেষে টুং-টুং টুং-টুং করে আরও একবার ঘন্টা বেজে উঠল। ছুটির ঘন্টা। জানিয়ে দিল, বেলা গড়িয়ে গেছে। কাজও ফুরিয়ে গেছে। ক্যাঁচক্যাঁচ-ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ ক’রে স্কুলের বিশাল গেটটা আবার খুলে গেল। ছেলেমেয়েরা গেটের দিকে ছুটতে শুরু করলো। আমিও বন্ধুবান্ধবদের বিদায় জানিয়ে গেটের বাইরে এসে ওই জায়গায় দাঁড়ালাম যেখানে বাবার থাকার কথা— “এখানেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেন, বাবা বলেছিলেন। কিন্তু কোথায়?” বেশ কয়েকবার এদিক ওদিক তাকালাম। কিন্তু বাবার দেখা পেলাম না। বাধ্য হয়ে গেটের একপাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও যখন বাবার দেখা পেলাম না, ঠিক করলাম একাই বাড়ি ফিরবো।

এক পা-দু’ পা ক’রে হাঁটতে আরম্ভ করলাম। কয়েক পা এগোতেই এক বৃদ্ধের সাথে দেখা। পয়লা নজরেই তাকে চিনতে পারলাম। তিনিও আমাকে চিনতে পারলেন। হাসি মুখে সালাম-মুসাফাহ্‌ ক’রে আমার খবরাখবর জানতে চাইলেন। আমিও মাথা নাড়িয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তৎক্ষণাৎ সৌজন্যমূলক প্রশ্ন করলাম— আপনি ভালো আছেন তো?
—“এই তো আছি কোনোরকম! আল্লাহ্‌ যে হালে রেখেছেন আর কি।”  

এই বলে আরেকবার হাত মিলিয়ে তিনি হাঁটতে লাগলেন। আমিও হাঁটা আরম্ভ করলাম। কিন্তু কয়েক কদম হাটঁতেই থমকে দাঁড়ালাম। হায় আল্লাহ্‌, এ কি! বায়নাল্‌-জানায়িন্‌-এর রাস্তাটা কোথায়? এখানে এসব কীভাবে হল, কখন হল? এত গাড়ি-ঘোড়া কোথা থেকে এলো? এখানে এত মানুষ আগে তো দেখিনি! এরাই বা কোথা থেকে এলো? এত অল্প সময়ে রাস্তার দু’পাশে আবর্জনার স্তুপ জমলো কীভাবে? রাস্তার দু’পাশে সারি সারি শস্যক্ষেত এবং ফলমূলের বাগান ছিল সেগুলো কোথায় গেল? রাস্তার দু’পাশে এই যে সারি সারি উঁচু উঁচু দালান! এতগুলো দালান এত অল্প সময়ে কী করে গড়ে উঠল? রাস্তাঘাট যেন থিকথিক করছে ছেলেছোকরাতে। আহ, বাতাসে কি বিরক্তিকর শোরগোল! মোড়ে মোড়ে হকারের দল বিদঘুটে আওয়াজ করছে। সাপুড়েরা দাঁড়িয়ে খেলা দেখাচ্ছে আর টুকরী থেকে বের করছে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। সামনের দিকে একদল লোক ঢাকঢোল পেটাতে পেটাতে হাঁক ছাড়ছে। তাদের চেঁচামেচি শুনে আরও একটু এগিয়ে গেলাম কি আশ্চর্য, রাস্তার পাশেই সার্কাস বসেছে!

যেভাবেই হোক আমাকে দ্রুত বাড়ি ফিরতে হবে; তাই সেসব থেকে নজর সরিয়ে আমি গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে থাকলাম। সামনের দিকে দু’-চার পা এগিয়ে গিয়ে দেখলাম, কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বলের গাড়িগুলো লাইন ধরে প্রতাপের সাথে ধীরে ধীরে অতিক্রম করছে। দমকলের একটি গাড়ি খুব জোরে সাইরেন বাজাচ্ছে। বুঝতে পারছে না, কীভাবে গাড়ির ওই সারি ভেদ করে আগুণের লেলিহান শিখাকে প্রশমিত করবে। ডানদিকে একটু দূরে ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং আরোহীর হাতাহাতি চলছে। আর আরোহীর স্ত্রী সাহায্যের জন্য আকুতি করছে। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না।

আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। মাথাটা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। মগজের ভেতরটা কিলবিল করতে লাগলো। মনে হলো, আমি পাগল হয়ে যাব। সকাল থেকে সন্ধ্যা, এই অর্ধ-দিবসে এত কিছু বদলে গেল! কিন্তু কীভাবে? বাবা হয়তো জানে, বলতে পারবে। বাড়ি গেলে হয়তো সব জানতে পারবো। কিন্তু আমাদের বাড়িটা! কোথায়, কোন্‌ দিকে? চারিদিকে তো শুধু উঁচু উঁচু কংক্রিটের জঙ্গল আর মানুষের মিছিল। আশা ও আশংকার দোলাচলে দুলতে দুলতে সামনের চৌরাস্তার দিকে আরেকটু এগিয়ে গেলাম। বায়নাল্‌-জানায়িন্‌ পেরিয়ে আবু-খাওদাহ্‌ সরণী ধরলাম। রাস্তা পেরোলেই ওপারে আমাদের বাড়ি। কিন্তু রাস্তায় গাড়ির স্রোত বইছে! কখন শেষ হবে বোঝা যাচ্ছে না! দমকলের সাইরেনটা তার সর্বস্ব শক্তি দিয়ে চেঁচাচ্ছে। আর গাড়িটা একটু একটু করে কচ্ছপের মতো এগোচ্ছে। মনে মনে বললাম, “আল্লাহ্‌, আগুনটা যেন নিভে যায়!” তারপর একটু বিরক্তি-মাখা স্বরে বিড়বিড় করলাম, কখন যে রাস্তাটা পার হতে পারবো!

রাস্তার এপারেই দাঁড়িয়ে ছিলাম দীর্ঘক্ষণ। ওভাবে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মোড়ের মুখে যে লন্ড্রি দোকানটা আছে, ওর পিচ্চি ছেলেটা এগিয়ে এলো। কাছে এসে হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরল। তারপর বিচক্ষণ লোকেদের মতো করে বলল—দাদু! চলো আমি তোমাকে রাস্তা পার করে দিচ্ছি।”

[আল্‌-ফাজ্‌রুল্‌ কাযিব ৩১ – ৩৫, দারুশ্‌ শুরূক়, কায়রো, ২০০৯]



نصف يوم
نجيب محفوظ 

سرت إلى جانب أبى متعلقا بيمناه. جريت لألحق بخطاه الواسعة. ملابسى كلها جديدة، الحذاء الأسود والمريلة الخضراء والطربوش الأحمر. غير أنى لم أسعد بالملابس الجديدة سعادة صافية، فيومى لم يكن يوم عيد ولكنه أول يوم يلقى بى فى المدرسة. وقفت أمى وراء النافذة تراقب موكبنا الصغير فالتفت نحوها كالمستغيث بين حين وآخر تقدمنا فى شارع بين الجناين تحف به من الجانبين حقول مترامية مزروعة بالخضر والتين الشوكى وأشجار الحناء وبعض النخلات. قلت لأبى بحرارة:
-لماذا المدرسة... لن أفعل ما يضايقك أبدا.
فقال ضاحكا:
-أنا لا أعاقبك، المدرسة ليست عقابا، ولكنها المصنع الذى يخلق من الأولاد رجالا نافعين، ألا تريد أن تصير مثل أبيك وأخوتك؟!
لم أقتنع. لم أصدق أنه يوجد خير حقا فى انتزاعي من بيتى الحميم ورميى فى هذا المبنى القائم في نهاية الطريق مثل حصن هائل شديد الجدية والصرامة عالي الأسوار. ولمّا بلغنا البوابة المفتوحة تراءى لنا الفناء واسعا ومكتظا بالأولاد والبنات. وقال أبى:
-ادخل بنفسك وانضم إليهم، ابسط وجهك وابتسم، و كن مثالا طيبا.. 
ترددت وشددت أصابعى على راحته، ولكنه دفعنى برفق وهو يقول:
-كن رجلا، اليوم تبدأ الحياة حقا، ستجدنى فى انتظارك وقت الانصراف.
مشيت خطوات ثم وقفت أنظر: أنظر ولا أرى. ثم: أنظر فتلوح لى وجوه الأولاد والبنات. لا أعرف أحدا ولا أحد يعرفنى.
شعرت بأننى غريب ضائع. ولكن ثمة نظرات اتجهت نحوى بدافع من حب الاستطلاع. واقترب منى ولد وسألنى:
-من الذى جاء بك؟
فهمست:
-أبي.
فقال ببساطة:
-أبى ميت.
لم أدر ماذا أقول له. وأغلقت البوابة مرسلة صريرا مؤثرا. أجهش البعض بالبكاء. دق الجرس. جاءت سيدة يتبعها نفر من الرجال. أخذ الرجال يرتبوننا صفوفا. انتظمنا شكلا دقيقا فى فناء واسع محاط من ثلاث جهات بأبنية مرتفعة مكونة من طوابق، وبكل طابق شرفة طويلة مسقو فة بالخشب تطل علينا. وقالت المرأة:
-هذا بيتكم الجديد، هنا أيضا آباء وأمهات، هنا كل شىء يسر أو يفيد من اللعب إلى العلم إلى الدين، جففوا الدموع واستقبلوا الحياة بالأفراح....
استسلمنا للواقع. وسلمنا الاستسلام إلى نوع من الرضا.. وانجذبت أنفس إلى أنفس. ومنذ الدقائق الأولى صادق قلبى من الأولاد من صادق، وعشق من البنات من عشق، حتى خيل إلى أن هواجسى لم تقم على أساس. لم أتصور قط أن المدرسة تموج بهذا الثراء كله. ولعبنا شتى الألعاب من أرجوحة وحصان وكرة. وفى غرفة الموسيقى ترنمنا بأول الأناشيد. وتم أول تعارف بيننا وبين اللغة. وشاهدنا الكرة الأرضية وهى تدور عارضة القارات والبلدان. وطرقنا باب العلم بادئين بالأرقام. وتليت علينا قصة خالق الأكوان بدنياه وآخرته ومثال من كلامه. وتناولنا طعاما لذيذا. وغفونا قليلا. وصحونا لنواصل الصداقة والحب واللعب والتعلم.
وأسفر الطريق عن وجهه كله فلم نجده صافيا كامل الصفاء والعذوبة كما توهمنا. وبما تدهمه رياح صغيرة وحوادث غير متوقعة فهو يقتضى أن نكون على تمام اليقظة والاستعداد مع التحلى بالصبر. المسألة ليست لهوا ولعبا. ثمة منافسة قد تورث ألما وكراهية أو تحدث ملاحاة وعراكا. والسيدة كما تبتسم أحيانا تقطب كثيرا وتزجر. ويعترضنا أكثر من تهديد بالأذى والتأديب. بالإضافة إلى ذلك فإن زمان التراجع قد مضى وانقضى ولا عودة إلى جنة المأوى أبدا. وليس أمامنا إلا الاجتهاد والكفاح والصبر، وليقتنص من يقتنص ما يتاح له وسط الغيوم من فرص الفوز والسرور.
ودق الجرس معلنا انقضاء النهار وانتهاء العمل. وتدفقت الجموع نحو البوابة التى فتحت من جديد. ودعت الأصدقاء والأحبة وعبرت عتبة البوابة. نظرت نظرة باحثة شاملة فلم أجد أثرا لأبى كما وعد. انتحيت جانبا أنتظر. طال الانتظار بلا جدوى فقررت العودة إلى بيتى بمفردى.. وبعد خطوات مر بى كهل أدركت من أول نظرة أننى أعرفه. هو أيضا أقبل نحوى باسما فصافحنى قائلا:
-زمن طويل مضى منذ تقابلنا آخر مرة، كيف حالك؟
فوافقته بانحناءة من رأسى وسألته بدورى:
-وكيف حالك أنت؟
أجاب:
-كما ترى، الحال من بعضه، سبحان مالك الملك!
وصافحنى مرة أخرى وذهب. تقدمت خطوات ثم توقفت ذاهلا. رباه.. أين شارع بين الجناين؟ أين اختفى؟.. ماذا حصل له؟ متى هجمت عليه جميع هذه المركبات؟! ومتى تلاطمت فوق أديمه هذه الجموع من البشر؟ وكيف غطت جوانبه هذه التلال من القمامة؟ وأين الحقول على الجانبين؟ قامت مكانها مدن من العمائر العالية، واكتظت طرقاتها بالأطفال والصبيان، وأرتج جوها بالأصوات المزعجة. وفى أماكن متفرقة وقف الحواة يعرضون ألعابهم ويبرزون من سلالهم الحيات والثعابين. وهذه فرقة موسيقية تمضى معلنة عن افتتاح سيرك يتقدمها المهرجون وحاملو الأثقال. وطابور من سيارات جنود الأمن المركزى يمر فى جلال وعلى مهل. وعربة مطافى تصرخ بسرينتها لا تدرى كيف تشق طريقها لإطفاء حريق مندلع. ومعركة تدور بين سائق تاكسى وزبون على حين راحت زوجة الزبون تستغيث ولا مغيث. رباه! ذهلت. دار رأسى. كدت أجن. كيف أمكن أن يحدث هذا كله فى نصف يوم، ما بين الصباح الباكر والمغيب؟ سأجد الجواب فى بيتى عند والدى. ولكن أين بيتى؟ لا أرى إلا عمائر وجموعا. وحثثت خطاى حتى تقاطع شارعى بين الجناين وأبو خودة. كان على أن أعبر أبو خردة لأصل إلى موقع بيتى، غير أن تيار السيارات لا يريد أن ينقطع. وظلت سارينا المطافى تصرخ بأقصى قوتها وهى تتحرك كالسلحفاة، فقلت: لتهنأ النار بما تلتهم. وتساءلت بضيق شديد: متى يمكننى العبور؟ وطال وقوفى حتى اقترب منى صبى كواء يقوم دكانه علي الناصية، فمدّ إلي ذراعه قائلا بشهامة:
-يا حاج.. دعنى أوصلك..
(الفجر الكاذب صـ ۳١ – ۳۵، دار الشروق القاهرة، عام ٢٠٠٩)  

[শব্দের মিছিল, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, অনুবাদ বিভাগ-এ প্রকাশিত]


Sunday 16 February 2020

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ ভালোবাসা


ভালোবাসা
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

ঘুরে ফিরে আসি তোমার দ্বারে,
বার বার আসি, শতবার আসি।
নদীর মতো আঁকাবাঁকা পথ বেয়ে
প্রতিটি বাঁকের কোণে ধাক্কা খেয়ে
মন্থর হয় গতি, তবুও আসি।


এ পাড় ভাঙ্গে ও পাড় গড়ে
থেমে থাকে না স্রোত
বয়ে যায় নিজ লক্ষ্যে
মাঠ ঘাট সব পেরিয়ে
বন জঙ্গল ডিঙিয়ে
পৌঁছে যায় গন্তব্যে
মিশে যায় সাগরে।


আমিও থেমে থাকি না
ছুটে চলি, তোমার পানে
মনের সব আবেগ
বুকের চাপা কষ্ট
সব কিছু নিয়ে ছুটি
হাঁটি, হামাগুড়ি দিই
কখনো দৌড়াই
ইচ্ছে যে একটাই--
তোমার বুকে মাথা রেখে
কোন একদিন হারিয়ে যাব
তোমার মনের গভীরে !


০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
কলকাতা - ৭০০০৩৯ 

Tuesday 11 February 2020

الشيخ أبو الحسن علي الندوي



الشيخ أبو الحسن علي الندوي
(١٩١٤ – ١٩٩٩ م)
- عبد المتين وسيم  
تعريفه وميلاده:
هو مفكر إسلامي وداعية كبير وعالمٌ رباني أبو الحسن علي بنُ عبد الحي، وأديبٌ تميز بجمال الأسلوب وصدقِ الكلمات، وكان في شخصه مدرسة وحركة بنشاطاته العلمية والدعوية  وانتاجـاته الأدبية. ينتهي نسب أسرته إلى الإمام الحسن بن علي بن أبي طالب رضي الله عنه، ولذلك اشتهرت الأسرة بالحسنية. وُلِدَ بقرية تكيه كلان بمديرية راي بريلي في الولاية الشمالية بالهند عام 1914م في أسرة دينية علمية.

نشأته:
تُوُفِّي أبوه عام 1923م وهو لم يزل دون العاشرة، فتولَّى تربيتَه أمُّه الفاضلةُ، وأخوه الأكبُر عبد العلي. بدأ تعلُّم العربيةِ على الشيخ خليل اليماني عام 1924م واستفاد- في دراسة اللغة العربية وآدابها - من عمَّيهِ الشيخ عزيز الرحمن والشيخ محمد طلحة، وتوسع فيها وتخصص على الأستاذ الدكتور تقي الدين الهلالي عند مقدمه في ندوة العلماء عام 1930م. والتحق بجامعة لكهنؤ في القسم العربي عام 1927م  وحصل على شهادة فاضل أدب في اللغة العربية وآدابها.

حياته العملية:
عُيِّن مُدَرِّسًا في دار العلوم لندوة العلماء عام 1934م، ودرَّس فيها التفسير، والحديث، والأدب العربي، والمنطق. وأَسَّسَ مركزًا للتعليمات الإسلامية عام 1943م، واختير عضوًا في المجلس الانتظامي الإداري لندوة العلماء عام 1948م، وعُيِّن نائب المعتمد لندوة العلماء للشئون التعليمية عام 1951م، ثم اختير أمينًا عامًّا لندوة العلماء عام 1961م، وظل فيه حتى وفاته عام 1999م. وشارك في تأسيس رابطة الأدب الإسلامي. وكان رئيس مجلس أبناء مركز  أكسفورد للدراسات الإسلامية.

نشاطاته العلمية والصحافية:
نُشِرَ له أوَّلُ مقالٍ بالعربية في مجلة المنـار عام 1931م وظهر له أوَّلُ كتابٍ بالأردية عام 1938م، بعنوان سيرة سيد أحمد شهيد. وألقى محاضرات في جامعة دمشق وفي الجامعة الإسلامية بالمدينة المنورة  وعدَّةَ محاضرات في جامعة الرياض وفي كلية المعلِّمين.
وشارك في تحرير مجلة الضياء العربية الصادرة من ندوة العلماء عام 1932م؛ كما شارك في مجلة الندوة الأردية الصادرة من ندوة العلماء أيضًا عام 1940م. وأصدر مجلة التعمير الأردية عام 1948م. وكان المشرفُ العام على مجلة البعث الإسلامي العربية الصادرة منذ عام 1955م، وجريدة الرائد العربية الصادرة منذ عام 1959م، وجريدة تعمير حيات الأردية الصادرة منذ عام 1963م، ومجلة الأدب الإسلامي الصادرة من رابطة الأدب الإسلامي العالمية.

رحلاته في طلب العلم:
سافر إلى مدينة لاهور عام 1929م، وكانت أوَّلَ رحلةٍ له، حيث التقى بشاعر الإسلام محمد إقبال، وثانية في عام 1930م وثالثة في عام 1931م فقرأ على العلامة اللاهوري حجة الله البالغة للشاه ولي الله الدهلوي. ورافق العلامة الدكتور تقي الدين الهلالي في رحلته إلى بنارس، وأعظم كره، ومئو، ومبارك فور. وسافر إلى ديوبند عام 1932م، وأقام بدار العلوم ديوبند واستفاد خاصة في التفسير وعلوم القرآن.

تقدير وتكريم:
اختير عضوا مراسِلاً في مجمع اللغة العربية بدمشق، وعضواً في المجلس الاستشاري الأعلى للجامعة الإسلامية بالمدينة المنورة. ومنح جائزة الملك فيصل العالمية لخدمة الإسلام عام 1980م وشهادة الدكتوراة الفخرية في الآداب من جامعة كشمير عام 1981م. ولمّا تأسَّست رابطة الأدب الإسلامي العالمية عام 1984م اختير رئيسا عاما لها. ومنح جائزة الشخصية الإسلامية لعام 1998م في رمضان، وجائزة السلطان برونائ من مركز أكسفورد للدراسات الإسلامية عام 1998م.
  
أهم مؤلفاته:
1- ماذا خسر العالم بانحطاط المسلمين.
2- مذكرات سائح في الشرق العربي.
3- ربانية لا رهبانية.
4- المد والجزر في تاريخ الإسلام.
5- المسلمون في الهند.
6- الصراع بين الفكرة الإسلامية والفكرة الغربية في الأقطار الإسلامية.
7- رجال الفكر والدعوة في الإسلام.
8- عن الصوفية.
9- التربية الإسلامية الحرة.
10- القادياني والقاديانية.
11- بين الدين والمدنية.
12- موقف الإسلام من الحضارة الغربية.
13- السيرة النبوية.
14- كارثة العالم العربي وأسبابها الحقيقية.
15- روائع إقبال.
16- صورتان متضادتان عند أهل السنة والشيعة الإمامية.
17- نظرات في الأدب.
18- بين الدين والمدنية.
19- من رجالات الدعوة.
20- سيرة خاتم النبيين.
21- قصص النبيين للأطفال.
22- إلى الإسلام من جديد.
23- الصراع بين الفكرة الإسلامية والفكرة الغربية.
24- نحو التربية الإسلامية الحرة.
25- الأركان الأربعة في ضوء الكتاب والسنة.
26- إذا هبت ريح الإيمان.
27- الإسلام والغرب.
28- العقيدة والعبادة والسلوك.
29- ردة ... ولا أبا بكر لها.
30- المسلمون وقضية فلسطين.
31- الإسلاميات بين كتابات المستشرقين والباحثين المسلمين.
32- العرب والإسلام.
33- موقف العالم الإسلامي تجاه الحضارة الغربية.
34- نفحات الإيمان.
35- شخصيات وكتب.

 وفاة العلامة الندوي:
وكان الشيخ قد توفاه الله في يوم الجمعة وفي شهر رمضان المبارك أثناء اعتكافه بمسجد قريته تكية بمديرية راي باريلي في شمال الهند سنة 1419هـ الموافق 1999م، وجرى دفنه مساء نفس اليوم في مقبرة أسرته بالقرية رحمه الله. ولم يكن هم الشيخ إصلاح المسلمين وإنهاض الوطن الإسلامي وترقيّة مدرسته فحسب، بل كان  يعني بهــداية البشـــر ويهتمّ برفاهية الشعوب ورخاء الوطن الإنساني كله، فقد كان عالميا إنسانيا.