Wednesday 12 August 2020

যেভাবে তিনি (সা) জয় করেছিলেন অবসাদকে

 

যেভাবে তিনি (সা) জয় করেছিলেন অবসাদকে

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

এক

হেরা পর্বত গুহায় ওই আলোকোজ্জ্বল দূতের সাথে অতি সংক্ষিপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন তিনি তড়িঘড়ি ফিরে এলেন বাড়ি কাঁপতে কাঁপতে সহধর্মিণীকে বললেন, যাম্মেলূনী, যাম্মেলূনী (আমাকে কিছু একটা দিয়ে ঢেকে দাও) একটু পরে, পুরো ঘটনা শোনার পর স্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করলেনআপনি আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দেন, পীড়িতদের সাহায্য করেন, অভুক্তদের খাওয়ান, অনাথদের যত্ন নেন, আত্মীয়দের খেয়াল রাখেন, সর্বশক্তিমান আপনার কোনো অমঙ্গল করবেন না কিছুক্ষণ পর দুজনে মিলে গেলেন সমাজের এক অভিজ্ঞ পণ্ডিত মশাইয়ের কাছে সব বৃত্তান্ত শুনে পণ্ডিত ওয়ারাকা বিন নওফাল বললেন, স্রষ্টা আপনাকে তাঁর দূত করে পাঠিয়েছেন তাঁর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপনাকে মনোনীত করেছেন।

তারপর বেশ কিছু দিন কেটে গেল, দেখা নেই ওই বার্তাবাহকের স্বভাবতই এক অজ্ঞাত অস্থিরতা জারণ করতে লাগলো মনের ভেতরটাকে। অন্যদিকে, সমাজের নানা প্রান্ত থেকে নানান রকমের তির্যক মন্তব্য, কটু কথা ও হাসিঠাট্টার রোল উঠতে লাগলো কার্যত অসহায় হয়ে পড়লেন তিনি, ধীরে ধীরে ডিপ্রেস্ড হয়ে গেলেন ভাবলেন, এ জীবন রেখে আর কী লাভ! আর তাই হেঁটে হেঁটে গেলেন পার্শ্ববর্তী পার্বত্য উপত্যকায়, নিজেকে শেষ করে দেবেন ভেবে সেখানেই আবার দেখা মিলল ওই ফেরেশ্তার দিগন্ত ঢেকে সামনে এসে হাজির হলেন তিনি আশ্বস্ত করলেন, অভয় দিলেন তাঁকে— মা ওয়াদ্দা’আকা রাব্বুকা ওয়ামা কালা (আপনার প্রভু আপনাকে ত্যাগ করেননি, আর না আপনার প্রতি বিরূপ হয়েছেন) খুব ভালো করেই তাঁকে বুঝিয়ে দিলেন— ওয়ালাল্‌ আখিরাতু খায়রুল্‌ লাকা মিনাল্‌ ঊলা (আপনার জন্য পরলোক ইহলোক অপেক্ষা উত্তম) তাহলে...! আরও বোঝালেন, শুধু তা-ই নয়, বরং— ওয়ালা সাওফা ইউ’তিকা রাব্বুকা ফাতার্‌যা (অদূর ভবিষ্যতে আপনার প্রভু আপনাকে এত কিছু দেবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন)এসবের পাশাপাশি তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিলেন তাঁর অতীতের কথা, তাঁর অনাথ-শৈশব, দ্বিধাগ্রস্ত যৌবনকাল ও আর্থিক সংকটের কথা। আর এভাবেই জীবনের কিছু নৈসর্গিক গল্পকথা নিয়ে অবতীর্ণ হল সূরাতু আদ়্-দ়ুহ়া যার পরনায় কেটে গেল তাঁর সাময়িক অবসাদ। দূর হল মনের অস্থিরতা। এবং মুক্তি পেলেন তিনি ডিপ্রেশনের কবল থেকে।    


দুই

প্রায় তিন বছর নিজের আদর্শ, চিন্তাচেতনা নিয়ে ম্যান টু ম্যান মত বিনিময়ের পর, তাঁকে আদেশ দেওয়া হল— “ওয়া আন্‌যির্‌ ‘আশীরাতাকাল্‌ আক়রাবীন” (এবার আপনি নিজ স্বজনদের সতর্ক ও সচেতন করে তুলুন)আর তাই একদিন সকালে সাফা পাহাড়ের গায়ে চেপে ‘ইয়া সাবাহাহ্‌’ বলে নিজ সমাজকে একত্রিত করলেন তিনি তারপর জনসমক্ষে স্পষ্ট ভাষায় নিজ মতাদর্শের কথা তুলে ধরলেন। কার্যতই সংঘাত দেখা দিল সত্য ও অ-সত্যেরশুরু হল সভ্যতার দ্বন্দ্ব। সেই সাথে শুরু হল অকথ্য অত্যাচার তাঁর ও তাঁর অনুগামীদের উপর। দিনদিন বাড়তে লাগল নির্যাতনের মাত্রা। সুমাইয়াহ্‌ বিন্‌তু ইয়াসির (রা)-এর দু’ পায়ে দড়ি বেঁধে সেই দড়ি আটকে দেওয়া হল বিপরীত-মুখী দু’টি উটের পায়ে, দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল সুমাইয়ার শরীর। মরুভূমির তপ্ত বালির উপর বেলাল (রা)-কে শুয়ে দিয়ে বুকের উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো বিশাল প্রস্তর-খণ্ড। খাব্বাব (রা)-কে মাদুরে লেপটে ধোঁয়া দেওয়া হলো তাঁর নাকেখোদ নবীজির পীঠে সাজ্‌দার সময় উটের ভুঁড়ি চাপিয়ে দেওয়া হল। তাঁর গলায় আটকে দেওয়া হল গামছার ফাঁসপ্রতিদিন এমন অকথ্য ও অকল্পনীয় নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হচ্ছিল তাঁকে ও তাঁর অনুগামীদের। আর এসব দেখেশুনে স্বভাবতই ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছিল তাঁর মন, তোলপাড় করে উঠছিল মনের ভেতরটা, কখনোসখনো হতাশা ও অবসাদের মেঘে ঢেকে যাচ্ছিল মনের আকাশ। তবে ঈমানের বদৌলতে এবং সহধর্মিণীর পূর্ণ সমর্থন ও পিতৃব্যের স্নেহ-ছায়ায় সকল হতাশা ঝেড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি এবং প্রতিনিয়ত দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছিল তাঁর অদম্য ইচ্ছা শক্তি। আর তারই ফলস্বরূপ দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছিল অনুগামীদের মিছিল। কার্যতই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো অন্ধকার যুগের ফারাও-নম্‌রুদেরা এবং ফরমান জারি করলো তাঁকে, তাঁর বংশ ও অনুগামী সহ সামাজিক বয়কট করারবাধ্য হয়ে তাঁরা আশ্রয় নিলেন ‘শে’আবে আবি তালেব’ উপত্যকায়ধীরে ধীরে দেখা দিল খাদ্য সংকট। নিরুপায় হয়ে গাছের ছাল, মাঠের ঘাস, শুকনো চামড়া জলে ভিজিয়ে খেতে লাগলেন তাঁরা। জীবন প্রকৃত অর্থেই থমকে গেল। মহাসংকটের এই তিন বছর যেন তিনটে শতাব্দীর রূপ ধারণ করে বসল। মা ও শিশুদের আর্তনাদে ফেটে গেল উপত্যকার বুক, তাঁদের কান্নায় ভারাক্রান্ত হয়ে গেল বাতাসের কান। হতাশার নিকষ কালো মেঘে আচ্ছন্ন হতে লাগল মনের আকাশ। ডিপ্রেস্‌ড হয়ে পড়লেন তাঁদের অনেকেইএরই মাঝে কিছু মানবিক মনের উদ্যোগ ও এক অদৃশ্য ইশারায় বয়কটের ফরমান বাতিল হয়ে গেল। উই পোকার হামলায় ভক্ষিত তৃণসম হয়ে গেল বয়কটের নথিপত্রফলে মুক্তি পেয়ে গেলেন তিনি ও তাঁর অসংখ্য অনুসারী অমানবিক নিপীড়ন থেকে। এবং নিস্তার পেলেন অবসাদের তীব্র মানসিক যন্ত্রণা থেকে। ফা-লিল্লাহিল্‌ হাম্‌দ!        

তিন

তিন বছর আড়ালে-আবডালে আলাপআলোচনা, তারপর জনসমক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার, সেই সাথে অনুগামীদেরও সাধ্যমতো প্রচারের ফলে মক্কার আনাচেকানাচে উচ্চারিত হতে লাগলো ‘আল্লাহু আক্‌বার’ ধ্বনি। মানবিক আচরণ, সাম্যের আদর্শ, ‘আদলের (ন্যায়ের) নীতি আশার আলো জাগিয়ে তুলল নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের মনে। ধীরে ধীরে অনুগামীদের ফিরিস্তি দীর্ঘ হতে থাকলো। ফলে বেড়ে গেল অন্ধকারের আস্ফালন। তীব্র থেকে তীব্রতর হল অত্যাচারের মাত্রা। কনিষ্ঠ সহোদর আব্দুল্লাহর একমাত্র সন্তানের উপর অমন নির্যাতন দেখে মনের ভেতরটা তোলপাড় করে উঠলো পিতৃব্য হাম্‌যা’র শিকার থেকে ফিরে সোজা গেলেন কা’বা চত্তরে। আবু জাহালকে বললেন, আজ থেকে আমি আমার প্রিয় ভাইপোর দলে, তোমার যা করার করোএই কথা শুনে আবু জাহালদের কপালের ভাঁজ আরও চওড়া হয়ে গেল। দুশ্চিন্তার আকাশ আরও ঘনীভূত হয়ে উঠল। এসব দেখেশুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন উমার (রা)দৃঢ় সংকল্প করলেন, না থাকবে বাঁশ না বাজবে বাঁশি। মূল সমস্যাকে উদখাত করার উদ্দেশ্যে হাতে উম্মুক্ত তরবারি নিয়ে নবীজিকে বধ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠলেন তিনিমাঝপথে জানতে পারলেন বোন ফাতেমা ও বোনাই সায়িদও তাঁর আদর্শ গ্রহণ করেছে। মাথায় রক্ত চেপে গেল, তাঁদের ঘরে ঢুকেই এলোপাথাড়ি হাত চালাতে লাগলেন। কিন্তু বোনের আত্মপ্রত্যয় দেখে বিস্মিত হলেন উমার, সূরা তাহা’র কিছু আয়াত পড়ে মন গলে গেল। রাসুলের নিকট ছুটে গিয়ে আশ্রয় নিলেন ইসলামে। আর তাঁর সাহসিকতার দরুন সেদিনই তাওহীদ ও শির্‌কের মাঝে কা’বা চত্তরেই পার্থক্য নিরূপিত হল। এবং তিনি হয়ে গেলেন— আল্‌-ফারুক।

হাম্‌যা ও উমার (রা)-এর সমর্থন হারিয়ে আবু জাহালদের সহ্য সীমা অতিক্রম করে গেল। মাথায় খুন চেপে বসলো। ফলত বেড়ে গেল অত্যাচারের প্রকোপ। বিপরীত প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অনুগামীদের সংখ্যাও দ্বিগুণ হতে থাকলো। এরই মাঝে নেমে এল এক মহাসংকট। নবীজি ও অনুগামীদের মাথা থেকে উবে গেল বটবৃক্ষের ছায়া। মৃত্যু হল চাচা আবু তালেবের। নড়বড়ে হয়ে গেল মনের ভীত, অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে চিরবিদায় নিলেন প্রথম ও প্রধান সমর্থক সহধর্মিণী খাদিজা (রা) অসহায় হয়ে গেলেন তিনি (সা) ও তাঁর অনুগামীরা। যেন আশ্রয় শব্দটিও আশ্রয়হীন হয়ে গেল। বিষণ্ণ মনে বেরিয়ে পড়লেন। যায়েদ বিন্‌ হারেসাকে সাথে নিয়ে হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেলেন তায়েফ। ভাবলেন তায়েফের মানুষ যদি তাঁর কথা শোনে। কিন্তু না, তারা তাঁকে পাগল বলে পাড়ার দুষ্টু শিশুকিশোরদের তাঁর পেছনে লেলিয়ে দিল। তাদের ঢিলের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে জ্ঞান হারালেন তিনি। লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। সহযাত্রী যায়েদ কষ্ট করে তুলে নিয়ে গেলেন পার্শ্ববর্তী এক বাগানে। ক্ষত থেকে রক্ত গড়িয়ে জুতোজোড়া জমে গেল। তবুও তাঁদের জন্য মঙ্গল কামনা করলেন। তাঁদের সুপথ প্রাপ্তির দু’আ করে বিষণ্ণ মন নিয়েই ফিরে এলেন মক্কায়।  

কোনোভাবেই দমে যাওয়ার পাত্র নন তিনি। থেমে যাওয়া তাঁর অভিধানে ছিল না। নিজের কাজে তিনি লেগে থাকলেন। মক্কার বাইরে বিভিন্ন গোত্রের সাথে দেখা করলেন। আলাপ করলেন পথচারীদের সাথে। হজ্জের মরসুমে বিভিন্ন প্রান্তের লোকেরা মক্কায় আসত প্রাচীন কাল থেকেই। সেই সুযোগকে কাজে লাগালেন। ধীরে ধীরে তাঁর কথা, তাঁর আদর্শ পৌঁছে গেল মক্কার বাইরে, এমনকি তাঁর মাতুলালয় মদিনাতেও। তাঁর এই সাফল্য চক্ষুশূল হল বিরোধীদের। অন্ধকারের সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে নড়েচড়ে বসল তারা। দারুন্‌ নাদ্‌ওয়া সভাকক্ষে সমবেত হয়ে নবীজিকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করতে লাগলো ঘৃণার সওদাগরেরাঅনেক তর্কবিতর্ক, শলাপরামর্শের পর আবু জাহালের মতই গৃহীত হল সেখানেঅন্ধকারের চাদরে মুড়ে প্রতিটি গোত্রের একজন করে যুবক হাতে তরবারি নিয়ে উপস্থিত হল নবীজির দরজায়সুযোগ বুঝে সকলে মিলে একসাথে আঘাত হানবে তরবারির। খতম করে দেবে তাঁকে। আর মৃত্যুর দায় বর্তাবে পুরো মক্কা সমাজের উপর। দরজায় তখন মৃত্যু দাঁড়িয়ে, তবুও আতঙ্কিত হলেন না তিনি। হতাশা-নৈরাশ্য-অবসাদকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সব দায়দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন আলি (রা)-কে। তারপর তাঁকে নিজের বিছানায় শুয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন জীবন-মরণ যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর নির্দেশ মতো। আর তিনিই তাঁকে এই সমূহবিপদ থেকে উদ্ধার করলেন। ষড়যন্ত্রকারীদের বুকের উপর দিয়েই পৌঁছে দিলেন এক নিরাপদ আশ্রয়ে, মদিনায়      


Tuesday 4 August 2020

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ এক অন্য বাঁধন


এক অন্য বাঁধন  

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 

— শোনো সাল্‌মা, তুমি মন খারাপ করো না ধৈর্য ধরো কপালের লিখন তো আর খণ্ডানো যায় না...

এই টা কথাই ছিল শেষ কথা এর বেশি আর কিছুই বলতে পারল না সালাম

সাল্মার সাথে ওর প্রথম আলাপ হয়েছিল কোলকাতা ইউনিভার্সিটিতে এম -তে ভর্তি হতে গিয়ে তারপর সেকেন্ড ইয়ারে উভয়ের গার্জিয়ান মিলে আক্ সম্পন্ন করেছিল তারও আট মাস পর, সালাম যখন একটা বেসরকারি স্কুলে জয়েন করল, কিছু দিনের মধ্যেই উভয়ের গার্জিয়ান অত্যন্ত অনাড়ম্বর ভাবে তাদের বিয়েটা দিয়ে দিলবিয়ের এক বছরের মাথায় একদিন হঠাৎ করে সালাম অসুস্থ হয়ে পড়ল এবং এক মাসের মধ্যেই তার মৃত্যু হল  

ইদ্দতের চার মাস দশ দিন সাল্‌মা বাপের বাড়িতেই অতিক্রান্ত করলতবে এর মাঝে বেশ ক’বার তাকে সেখানে দেখতে গেছিল তার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। তার বাবা ও তার শ্বশুর উভয়ে তার সাথে বেশ ক’বার দফায় দফায় আলোচনাতেও বসেছে প্রথমত সে কোনো উত্তর করেনি পরে অবশ্য তাদের কথা মেনে নিয়েছে আর তাই ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার ক’দিন পরেই সাল্মার আব্বাকে ডেকে পাঠালেন তার শ্বশুর সাল্মা ব্যাপারে আরও কিছু আলাপআলোচনা করবেন ভেবে।

নির্ধারিত দিনে সকাল বেলা সাল্মা, তার বাবা ছোট ভাই গাড়ি করে পৌঁছে গেল সাল্মার শ্বশুর দেওর বাপ-বেটা মিলে গতকালই টুকিটাকি বাজারঘাট করে নিয়েছেআজ যাতে আর বেরোতে না হয়। সকালের নাস্তার পর দোতলার বড় ঘরটায় সবাই মিলে আলোচনায় বসেছে গ্রামের ইমাম-মেম্বার সহ আরও কিছু গুণীজন হাজির হয়েছেন। সবাই যে যার মতো করে দু’চার কথা বলল সাল্মার বাবা চুপচাপ শুনছিলেন তিনি ইমাম সাহেবের কথার খেই ধরে বললেনইমাম সাহেব যথার্থই বলেছেন শরিয়তের নির্দেশ মতো সাল্মার বিয়ের ব্যবস্থা করা উচিৎ বিষয়ে আমি সাল্মার সাথেও কথা বলেছি আপাতত আমি ওকে বি এডে ভর্তি করে দেবো এবং মনে মনে পাত্রের খোঁজ করতে থাকবো তারপর সময় সুযোগ বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে

সাল্মার শ্বশুরও চুপচাপ সবার কথা শুনছিলেন তিনি সাল্মার বাবাকে ডেকে বললেন— “তোমাদের মাঝে স্বামী নেই এমন মেয়েদের তোমরা বিয়ের ব্যবস্থা করো [সূরা আন্‌-নূর ৩২] আল্লাহ্ এই আদেশ অমান্য করবো অমন অবাধ্য আমি নই তাই সাল্মা যখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত হবে আমি তার সিদ্ধান্তকে অবশ্যই মেনে নেবো তবে আমার একটা শর্ত আছে আমার তো দুই ছেলে ছিল বড় ছেলে তো এখন আর নেই তাই আমি সাল্মাকে মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করতে চাই...

ঠিক বুঝলাম না, একটু খোলাসা করে বলুন। সাল্‌মার বাবা প্রশ্ন করলেন।  

আমার বড় ছেলে তো আর নেই আর কোনোদিন ফিরেও আসবে না ওর জায়গাটা আমি সাল্‌মাকে দিতে চাই। তাই ওর বিয়ের যাবতীয় খরচ আমিই বহন করবো এবং বিয়ের পর, যেখানেই ওর বিয়ে হোক, যেমন আপনার কাছে যাবে, ঠিক তেমনই আমার বাড়িতেও আসবে আজ থেকে আমার এক ছেলে এবং এক মেয়ে এবং আমি আমার যৎসামান্য সম্পত্তির অল্পকিছু তাকে হেবা করতে চাই।    

শ্বশুর মশাইর এসব কথা সাল্মাও দরজার পাশ থেকে শুনছিল নিজের কান্নাকে আর সংবরণ করতে পারল না সে

২৯ জুলাই ২০২০

বাঁশকুড়ি, দঃ দিনাজপুর