Thursday 27 October 2022

তাওফীক আল-হাকীমঃ বিস্মৃতির ব্যামো


 

বিস্মৃতির ব্যামো

তাওফ়ীক় আল্‌-হ়াকীম 

৩য় কিস্তি 


ডাক্তার— দু’ ফ্রাঙ্ক।

রোগী— এই নিন দু’ ফ্রাঙ্ক … না, না, আমি কোনো রসিদ চাই না। আমি আপনাকে প্রচণ্ড বিশ্বাস করি।

ডাক্তার— এটা রসিদ নয়। এটা প্রেসক্রিপশন।

রোগী— প্রেসক্রিপশন! কীসের? ও আচ্ছা, আপনি ডাক্তার! তা এতক্ষণ বলেননি কেন আমাকে?

ডাক্তার— চরম বিরক্তিকর, একেবারে অসহ্য। আমি এর মতো জটিল দ্বিতীয় কোনো কেস দেখিনি। সাবধান! ওটা যেন না হারায়।

রোগী— কী হারাবো না?

ডাক্তার— প্রেসক্রিপশন। আপনার হাতে যেটা আছে, ওটা একটা প্রেসক্রিপশন।

রোগী— প্রেসক্রিপশন! (রেখে দিয়ে) আমি তো এখুনি ভুল করে এটা নিয়ে চলে যেতাম। এই ধরুন।

ডাক্তার— আরে মশাই না, ফিরিয়ে দিচ্ছেন কেন? এটা আপনি রাখুন। এটা নিয়ে কোন ফার্মেসিতে যান। এতে যে ওষুধগুলো লেখা আছে সেগুলো কিনুন। আচ্ছা, আপনি কি কোন ফার্মেসিকে চেনেন বা জানেন?

রোগী— না, না, আমি কাউকেই জানি না।

ডাক্তার— আচ্ছা ঠিক আছে। একটু অপেক্ষা করুন। প্রেসক্রিপশনটা একটা খামে ভরে তার উপর নিকটবর্তী ফার্মেসির ঠিকানা লিখে দিচ্ছি। আপনার কাজ হবে, আপনি এখান থেকে বেরিয়ে সোজা ওখানে যাবেন। (লিখতে লাগলেন)

রোগী— অসংখ্য ধন্যবাদ। আর বেশীক্ষণ আপনাকে আটকে রাখবো না। চলুন এবার, আপনাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি।

ডাক্তার— আরে না, আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসবো। মশাই আপনি আমার চ্যাম্বারে এসেছেন।

রোগী— ওহো, আচ্ছা ঠিক আছে, আবার দেখা হবে, ডাক্তার বাবু।

ডাক্তার— অবশ্যই দেখা হবে। তবে হ্যাঁ, খামটা হারাবেন না যেন। এখুনি এটা নিয়ে ফার্মেসিতে যান।

রোগী— আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। তা কখনই হবে না। আমি আপনার কথা মতো চলবো। আসি তাহলে।

ডাক্তার— তেমনটাই আশা রাখছি।

রোগী— আপনি আমাকে দেখতে এসেছেন, তার জন্য আরও একবার ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ডাক্তার— ঠিক আছে, এবার আসুন, আল্লাহ্‌ হাফেজ। (দরজা বন্ধ করে দিলেন) উফ্‌, বেচারা। বিশেষ কোনো লাভ হবে না। তবে এই ওষুধে কিছুটা যদি সারে। (দরজায় নক করলেন) সাইয়েদুনি আছো? পরবর্তী রোগীকে পাঠাও।

সাইয়েদুনি— স্যার, এখুনি যে লোকটা বেরিয়ে গেল, সে আমাকে বলল যে সে এখুনি ফিরে আসবে।

ডাক্তার— এ কী বলছো তুমি?

সাইয়েদুনি— হ্যাঁ স্যার এটাই বাস্তব। সে তার কোর্টটা না নিয়ে চলে গেছে। আমি তা স্মরণও করিয়েছি। তার হাতে একটা খামও ছিল।

ডাক্তার— হ্যাঁ হ্যাঁ … ওটা প্রেসক্রিপশন … কেন কী হয়েছে?

সাইয়েদুনি— সে আমাকে বলল— নিশ্চিন্ত থাকুন। আমি এই খামটা ডাক বাক্সে ফেলতে যাচ্ছি। এখুনি ফিরে আসবো …!

ডাক্তার— কী, প্রেসক্রিপশনটা ডাক বাক্সে ফেলবে?! হায় আল্লাহ্‌, কোন লাভ হল না …! ঠিক আছে সাইয়েদুনি, পরবর্তী রোগীকে পাঠাও…


সমাপ্তি

অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম



داء النسيـــــان

توفيق الحكيم
 
الطبيب: ألفا فرنك.
المريض: إليك المبلغ ... لست أريد إيصالا بذلك. إني شديد الثقة بك .
الطبيب: ليس هذا إيصالا، إنما هو الروشتة.
المريض: الروشتة؟ إذا أنت طبيب، لماذا لم تقل لي ذلك؟
الطبيب: شيء مزعج للغاية! مزعج جدا! أنا لم أرَ قط مثل هذه القضية. حذار أن تفقدها .
المريض: أفقد ماذا؟
الطبيب: الروشتة. هذه الورقة التي بين يديك هي الروشتة.
المريض: الروشتة! عدم المؤاخذة ... كنت على وشك أن أحملها معي خطأ. خذها 
الطبيب: كلا، يا سيدي لا تردها لي. احملها، واذهب إلى إحدى الصيدليات، واشتر الدواء الموصوف فيها. أتعرف صيدلياً؟
المريض: لا ... لا أعرف أحدًا.
الطبيب: حسناً، انتظر. سأضع الروشتة داخل الظرف، وسأكتب على الظرف عنوان أقرب صيدلية وليس عليك إلا أن تقصدها بعد خروجك من هنا. (يكتب)
المريض: شكراً ألف مرة. لن أبقيك أطول من ذلك. اسمح لي بأن أشيعك إلى الباب .
الطبيب: كلا، كلا، سأشيعك أنا. من هنا، يا سيدي .
المريض: آه أنت ... حسنا إلى اللقاء، يا سيدي العزيز.  
الطبيب: إلى اللقاء، ولا تضع الظرف، احمله حالا إلى الصيدلية .
المريض: اطمئن ... لا يمكن أبدا، سأتبعك، تفضل. 
الطبيب: أرجوك .
المريض: إني أكرر شكري لك على مجيئك لرؤيتي .
الطبيب: حسنا ... حسنا، مع السلامة، (يقفل الباب). أوف. مسكين هذا الرجل، لا يرجى منه أية فائدة. ولكن لعل هذا العلاج يفيده بعض الشيء (يقرع الباب) ادخل ... أهذه أنت، يا سيدوني (الممرضة)؟ ليدخل المريض التالي. 
سيدوني: إن الرجل الذي خرج قبل قليل قال لي إنه سيعود على الأثر.
الطبيب: ماذا تقولين؟
سيدوني: هذه هي الحقيقة، يا سيدي. لقد ذهب دون أن يأخذ قبعته .. فذكرته بها، وكان يحمل ظرفا .
الطبيب: أجل ... إنها الروشتة ... ماذا حدث؟
سيدوني: قال لي: اطمئني فأنا ذاهب لأضع هذا الظرف في صندوق البريد وسأعود ... !
الطبيب: ماذا يضع الروشتة في البريد؟!. يا الله لا فائدة! لا فائدة! أدخلي المريض التالي، يا سيدوني، المريض التالي...

 

النهاية

Wednesday 26 October 2022

নাজিব মাহফুজ নোবেল বিজয়ী মিশরীয় ঔপন্যাসিক

 

নাজিব মাহ়্ফ়ুজ় নোবেল বিজয়ী মিশরীয় ঔপন্যাসিক  

(১৯১১ ২০০৬)

 

আরবি ভাষার কিংবদন্তি ঔপন্যাসিক নাজিব মাহফুজ। ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। আরব লেখকদের মধ্যে তিনিই প্রথম ও সাহিত্যে একমাত্র নোবেল বিজয়ী। আরবি সাহিত্যে যেসব লেখক অস্তিত্ববাদ নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন, তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। আরব বিশ্ব ছাড়িয়ে তিনি অবস্থান করে নিয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা সাহিত্যিকদের তালিকায়।

 

জন্ম ও পরিচিত

পূর্ণ নাম নাজিব মাহ়্ফ়ুজ় আব্দুল আজীজ ইব্‌রাহীম আহ্‌মাদ আল্‌-বাশা। জন্ম মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিশরে। ১৯১১ সালের ১১ই ডিসেম্বর কায়রোর আল-জামালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বয়স যখন ১৩ বছর, তখন তাঁর বাবা তাঁর জন্মস্থান আল-জামালিয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়ে আল-আব্বাসিয়া গ্রামে চলে যান। তাঁরা বহু বছর সেখানে বসবাস করেন। পিতার মৃত্যুর পরও নাজিব মাহ়্ফ়ুজ় তাঁর মাকে নিয়ে সেখানে অনেকদিন বসবাস করেন। তারপর তিনি চলে আসেন পুরনো কায়রোর আল-আজহার এলাকায়।

 

প্রতিপালন ও শিক্ষা

তাঁর বয়স যখন সাত, ১৯১৯ সালের বিখ্যাত বিপ্লব ঘটে মিশরে, যা পরবর্তী জীবনে তাঁকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯৩০ সালে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকেই দর্শনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তারপর তিনি স্নাতকোত্তরের অভিসন্দর্ভ রচনা আরম্ভ করেন। বিষয় ছিল ইসলামি দর্শনে সৌন্দর্য। কিন্তু মাঝ পথে নিজ চিন্তার পরিবর্তন ঘটান। অতঃপর দর্শনের পরিবর্তে সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।

 

কর্মব্যস্ততা

ওয়াক্‌ফ মন্ত্রণালয়ের সাংসদ সচিব রূপে দীর্ঘ আট বছর (১৯৩৮ ১৯৪৫) কাজ করেছেন। তারপর নির্দেশনা মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক সচিব রূপে। তারপর সেন্সর বোর্ডের সেক্রেটারির দায়িত্ব সামলেছেন। ১৯৬০ সালে তিনি চলচিত্র পর্ষদের পরিচালক হন। তারপর চলচিত্র, সম্প্রচার ও টিভি-রেডিও বিভাগের উপদেষ্টা হন। শেষে চলচিত্র ও সম্প্রচার বিভাগের সভাপতি রূপে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত কাজ করেন। তারপর সরকারী কর্ম থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

 

সংসার জীবন

৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত ছিলেন নাজিব মাহফুজ। তার আশঙ্কা ছিল, যদি বিয়ে করে সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে লেখালেখির ক্ষতি হবে। কিন্তু সেই আশঙ্কাকে পাশে রেখে ১৯৫৪ সালে আতিয়াতুল্লাহ ইব্‌রাহিম নামের এক নারীকে বিয়ে করেন নাজিব মাহফুজ। তাদের সংসারে দুটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। তবে তিনি তার নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সব সময়ই খুব অন্তর্মুখী ছিলেন ও একা থাকতে ভালোবাসতেন। প্যারিস রিভিউকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তাই তিনি নিজেই বলেছেনআমি কখনো ডিনার পার্টি বা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেতে চাই না। এমনকি আমার বন্ধুদের বাড়িতেও ঘুরতে যাই না। আমি তাদের সঙ্গে দেখা করি ক্যাসিনো কাসর আ-নীল অথবা কোনো কফি হাউজে।

 

মৃত্যু ও পরলোকগমন

১৯৭২ সাল পর্যন্ত নাজিব মাহ়্ফ়ুজ় সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত ছিলেন। চাকরি ছাড়ার পরে নিয়মিত কলাম লিখতেন বিভিন্ন প্রভাবশালী পত্র-পত্রিকায়। তবে বেশি লিখতেন আল-আহরাম পত্রিকায়। এসব কলাম নিয়ে পত্রিকাটি ২০০১ সালে একটি বইও বের করে। প্রায় ৭০ বছর লেখালেখিতে সক্রিয় থাকা এ মহান সাহিত্যিক ২০০৬ সালের ৩০ আগস্ট কায়রোয় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। এ দীর্ঘ জীবনে তিনি আরবি সাহিত্যকে তুলে ধরেন বিশ্বদরবারে।

 

সৃজনশীলতা ও রচনাসমূহ

তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই দর্শনের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। ১৯৩৪ সালে বর্তমান কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় (তৎকালীন ফুয়াদ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন সাহিত্যের একজন গভীর পাঠক। ছাত্রজীবনে ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় রচিত বহু গ্রন্থ গভীর আনন্দের সাথে অধ্যয়ন করেনবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র থাকাকালীনই তিনি তিনটি ছোট আকৃতির ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখে ফেলেন। তিনি ১৭ বছর বয়সে লেখালেখি শুরু করেন। তাঁর লিখিত প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৩৯ সালে। তবে লেখালেখির শুরুতেই খ্যাতি পেয়ে জাননি, করতে হয়েছে অনন্য সাধনা। প্যারিস রিভিউতে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর লেখালেখি শুরুর গল্প বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন

১৯২৯ সালে আমার লেখালেখির যাত্রা শুরু। তখন আমার সবগুলো গল্প প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। মাজাল্লার সম্পাদক সালামা মুসা বলতেন, “তুমি সম্ভাবনাময়, কিন্তু এখন পর্যন্ত ভালো কিছু লিখতে পারনি। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরের কথা আমার বিশেষভাবে মনে পড়ে, কারণ সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু, হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলেন। আমার গল্প আবা আল-আকদারপত্রিকায় ছাপা হলো, সেটা আমার জন্য মাজাল্লা প্রকাশকদের পক্ষ থেকে একধরনের অপ্রত্যাশিত উপহার ছিল। সেটা আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

 

১৯৫২ সালের জুলাই মাসে সংগঠিত মিসর বিপ্লবের আগে তার প্রায় ১০টি বই প্রকাশিত হয়। এই বিপ্লবে তার লেখালেখি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এরপর তিনি বেশকিছু বছর তাঁর লেখালেখি বন্ধ রাখেন। ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস সুলাসিয়্যাতুল্‌ কাহেরাহ্‌’ (কায়রো ট্রিলজি) যা তাঁকে সারাবিশ্বে পরিচিত করে তোলে। তাঁর লিখিত মোট উপন্যাসের সংখ্যা ৩টি, ছোটগল্পের সংখ্যা ২২৩টি। এছাড়াও লিখেছেন টি নাটক এবং ২৬টি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য। তাঁর লিখিত অনেক গল্প নিয়ে মিসরে ও বিভিন্ন দেশে নির্মিত হয়েছে বহু চলচ্চিত্র।

 

নাজিব মাহ়্ফ়ুজ় তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রথম দশ বছর যে কয়েক ডজন ছোটগল্প রচনা করেছেন, তার অধিকাংশই শহুরে জীবনের নানা অন্ধকার দিক নিয়ে লিখিত এবং তাঁর গল্পের অনেক চরিত্রই সরাসরি জীবন থেকে নেয়া। ফলে অতি দ্রুত সময়ে তিনি পাঠকদের হৃদয়ে জায়গা করে নেন১৯৪৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে তাঁর যে উপন্যাসগুলো প্রকাশিত হয়, তা সাধারণভাবে বাস্তবতাবাদী সামাজিক উপন্যাস বলে অভিহিত হয়। এসব উপন্যাসের মধ্যে খান আল্‌-খালীলী, জুকাকুল্‌ মিদাক (মিদাক সরণী), আস্‌-সারাব (মরীচিকা), বিদায়াহ্‌ ওয়া নিহায়াহ্‌ (শুরু ও শেষ) সুলাসিয়্যাতুল্‌ কাহেরাহ্‌ (কায়রো ট্রিলজি) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য১৯৫৯ সালে প্রকাশিত আওলাদু হাররাতিনা ৯জেবেলাউইর শিশুরা) দিয়ে তার লেখালেখিতে পরিবর্তন আসে। রূপক ও প্রতীকধর্মী রাজনৈতিক বিষয়াদি এ সময়ে তিনি তাঁর লেখায় তুলে ধরেন। লেখায় দার্শনিক ও জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিষয়সমূহ প্রাধান্য পেতে শুরু করে। তাঁর এই গ্রন্থটি একইসাথে বিখ্যাত এবং বিতর্কিত। নিজ দেশ মিশরে আজও বইটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। ১৯৬৭ সালে লেবানন থেকে সর্বপ্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয় এই উপন্যাসটি। এ সময়ে প্রকাশিত তাঁর উল্লেখযোগ্য অন্যান্য উপন্যাস হচ্ছে, আল্‌-লিস্‌সু ওয়াল্‌ কিলাব (চোর ও কুকুর), সার্‌সারাতুন্‌ ফাওকান্‌ নীল (নীলের ছোট ছোট কথা) এবং মিরামার ইত্যাদি।

 

খান-আল-খালীলী কায়রোর আল-আযহার মসজিদের পাশের একটি বাজার। এই বাজারের অজস্র অলিগলি ও তাদের উপাখ্যানকে কেন্দ্র করেই নাজিব মাহ়্ফ়ুজ় লিখেছেন তার খান-আল-খালীলী উপন্যাসটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কায়রো শহরকে কীভাবে বদলে দেয়, সেই কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে যূকাকুল্‌ মিদাকমাহফুজের প্রথমদিকের উপন্যাসের মধ্যে এই উপন্যাস সবচাইতে বিখ্যাত, সম্ভবত তখন পর্যন্ত তার সবচাইতে পরিণত সৃষ্টিও। এই উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে মেক্সিকো থেকে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে মিদাক গলি নামেই।

 

মাহফুজকে মিশরে ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয় তার বিখ্যাত উপন্যাস কায়রো ট্রিলজিএই সুবৃহৎ উপন্যাসের রয়েছে আলাদা আলাদা তিনটি খণ্ড যথাবাইনাল্কাস্রাইন (প্যালেস অব ওয়াক), কাস্‌রুশ্‌ শাওক (প্যালেস অব ডিজায়ার) আস্‌-সুক্‌কারিয়াহ্‌ (সুগার স্ট্রিট); এগুলো মূলত নাজিব মাহফুজের পুরনো গ্রাম আল-জামালিয়ার তিনটি রাস্তার নামে নামকরণকৃত। কেউ কেউ এই উপন্যাসকে আরব বিশ্বের ওয়ার অ্যান্ড পিসবলে আখ্যায়িত করে থাকেন। কায়রো ট্রিলজির জন্য নাজিব মাহ়্ফ়ুজ় ১৯৫৭ সালে মিশরের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

 

নাজিব মাহফুজের প্রায় সব উপন্যাসে কাল একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার চরিত্ররা সবসময় কাল নিয়ে ভাবে। তার উপন্যাসে আমরা প্রায়শ এই সব বাক্যাবলীর সাক্ষাৎ পাইসময় এক ভয়ঙ্কর সহযাত্রী, সময় আমার বন্ধুর অবস্থা এ কী করেছে? তার মুখে একটি বীভৎস মুখোশ এঁটে দিয়েছে! তাঁর এই কালজয়ী সৃষ্টিই তাঁকে বিশ্বের দরবারে অমর করে তুলেছে নোবেলের মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছে সেই সাথে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গেছে আরবি উপন্যাস ও আরব মননশীলতা

 

কলমেআব্দুল মাতিন ওয়াসিম

Tuesday 25 October 2022

Ibnul Faridh's Mystical Wine


خمرية ابن الفارض

Ibnul Fāridh's Mystical Wine

 

شَـرِبْنَا عـلى ذكْـرِ الحبيبِ مُدامَةً    سـكِرْنَا بها من قبل أن يُخلق الكَرْمُ

I quaffed a sip of wine to the remembrance of my beloved that rendered me inebriated even before vineyards were ever created.


لـها البدرُ كأسٌ وهيَ شمسٌ يُدِيرُهَا   هـلالٌ وكـم يـبدو إذا مُزِجَتْ نَجم

A wine which is the sun; its cup is the full moon, served by a crescent; reflecting many a star when duly mixed.


ولـولا شـذَاها مـا اهتدَيتُ لِحانِها    ولـولا سَـناها مـا تصَوّرها الوَهْمُ

Had it not been for its scent, I would not have discovered its tavern. Had it not been for its splendor, my mind would have never fancied it.


ولـم يُـبْقِ منها الدّهْرُ غيرَ حُشاشَةٍ    كـأنّ خَـفاها في صُدور النُّهى كتْم

Eternity has but consumed it all; its concealment in the bosom of the wise is a well-guarded secret.


فـإن ذُكـرَتْ في الحَيّ أصبحَ أهلُهُ    نَـشاوى ولا عـارٌ عـليهمْ ولا إثم

When mentioned in a gathering, people become enraptured; unashamedly drunk; ecstatically sinless.


ومِـنْ بـينِ أحشاء الدّنانِ تصاعدتْ    ولـم يَـبْقَ منها في الحقيقة إلاّ اسمُ

From the midst of earthen jugs it has soared on high, with nothing left of it save only a name.


وإن خَطَرَتْ يوماً على خاطرِ امرئِ    أقـامتْ بـه الأفـراحُ وارتحلَ الهمّ

Whenever it flashes in a man’s mind, great rejoicings abound, worries depart.


ولـو نَـظَرَ الـنُّدْمَانُ خَـتمَ إنائِها    لأسـكَرَهُمْ مـن دونِـها ذلكَ الختم

If drinking companions see the seal of its jar, its sight leaves them intoxicated; albeit not imbibing.


ولـو نَـضحوا منها ثرَى قبرِ مَيّتٍ    لـعادتْ اليه الرّوحُ وانتَعَشَ الجسم

If a dead man’s grave were sprinkled with it, his soul would return to him; his body revives.


ولـو طَرَحُوا في فَيءِ حائطِ كَرْمِها    عـليلاً وقـد أشـفى لـفَارَقَهُ السّقم

If a sick man were placed in the wall-shadow of its vineyard, his illness at once vanishes, even if on the verge of death.


ولـو قَـرّبُوا من حانِها مُقْعَداً مشَى    وتـنطِقُ مـن ذِكْـرَى مذاقتِها البُكْم

If a cripple were brought near its tavern, he would soon rise and walk; the mere remembrance of its taste enables the dumb to speak.


ولـو عَبِقَتْ في الشرق أنفاسُ طِيبِها    وفـي الـغربِ مزكومٌ لعادَ لهُ الشَّمُّ

If its fragrant breath permeates the East, a man with a congested nose in the West would soon regain his smell.


ولـو خُضِبت من كأسِها كفُّ لامسٍ    لـمَا ضَـلّ فـي لَيْلٍ وفي يَدِهِ النجم

If the hand of him who touches it were dyed with its color, he would never lose his way at night; a star in his hand.


ولـو جُـليتْ سِـرّاً على أَكمَهٍ غَدا    بَـصيراً ومن راووقِها تَسْمَعُ الصّم

If secretly revealed to a sightless man, he would see; the very sound of its filtering makes the deaf hear.


ولـو أنّ رَكْـباً يَمّموا تُرْبَ أرْضِهَا    وفـي الرّكبِ ملسوعٌ لمَا ضرّهُ السّمّ

If a troop of people set out in search of its soil, and among them one who’s stung, poison would not cause him harm.


ولو رَسَمَ الرّاقي حُرُوفَ اسمِها على    جَـبينِ مُـصابٍ جُـنّ أبْرَأهُ الرسم

If a necromancer inscribes its name on the forehead of a madman, he would be healed of his madness by the script.


وفـوْقَ لِـواء الجيشِ لو رُقِمَ اسمُها    لأسـكَرَ مَـنْ تحتَ اللّوا ذلك الرّقْم

If its name were writ on an army flag, all under the flag would be inebriated.


تُـهَذّبُ أخـلاقَ الـنّدامى فـيّهْتَدي    بـها لـطريقِ العزمِ مَن لا لهُ عَزْم

It polishes the character of drinking companions; even the faltering one is spurred on; goaded to the path of firm determination.


ويـكرُمُ مَـن لـم يَعْرِف الجودَ كَفُّه    ويـحلُمُ عـند الـغيظ مَن لا لهُ حِلم

It opens the hand of the tight-fisted miser, endowing him with generosity; it makes the irate lenient, with temper subdued.


ولـو نـالَ فَـدْمُ الـقومِ لَثْمَ فِدَامِها    لأكْـسـبَهُ مَـعنى شـمائِلها الـلّثْم

If an inarticulate person kisses the cap of its bottle, it suffices to endure him with its qualities sublime.


يـقولونَ لـي صِفْهَا فأنتَ بوَصفها    خـبيرٌ أَجَـلْ عِندي بأوصافها عِلم

They ask me to give an account of it, saying “you can accurately describe it”. Yes, indeed I can! Its description is well familiar to me.


صـفاءٌ ولا مـاءٌ ولُـطْفٌ ولا هَواً    ونـورٌ ولا نـارٌ وروحٌ ولا جِـسْمٌ

It is clear, with no water; subtle, with no air; light, with no fire; soul, with no body.


تَـقَـدّمَ كُــلَّ الـكائناتِ حـديثُها    قـديماً ولا شـكلٌ هـناك ولا رَسم

Since time immemorial it has been an engrossing tale, even though intangible; formless.


وقـامت بـها الأشـياءُ ثَـمّ لحكمَةٍ    بـها احتَجَبَتْ عن كلّ من لا له فَهْمُ

Things were all made and sustained by it, but for a wise reason it became hidden from all who lack understanding.


وهامتْ بها روحي بحيثُ تمازَجا    اتّـحـاداً ولا جِـرْمٌ تَـخَلّلَه جِـرْم

My soul, infatuated by it, became inseparably joined to it; with no bodily union between the two.


فَـخَـمْر ولا كـرْم وآدَمُ لـي أب    وكَـرْم ولا خَـمْر ولـي أُمُّـها أُمّ

Hence a vine-less wine, Adam is my Father; a wine-less vine, its Mother is mine.


ولُـطْفُ الأوانـي في الحقيقة تابع    لِـلُطْفِ الـمعاني والمَعاني بها تَنْمُو

Transparency of receptacles is intimately linked to subtle meanings, swelling and expanding within goblets clear.


وقـد وَقَـعَ الـتفريقُ والـكُلّ واحد    فـأرواحُنا خَـمْرٌ وأشـباحُنا كَـرْم

Separation has taken place, while the Whole is an indivisible One; our souls are the wine, our phantoms the vine.


ولا قـبلَها قـبل ولا بَـعْدَ بَـعْدَهَا    وقَـبْليُّة الأبْـعادِ فـهْي لـها حَـتْم

None has ever preceded it, none will be subsequent to it; primordial dimensions surely belong to it.


وعَصْرُ المَدى من قَبله كان عصرَها    وعـهْدُ أبـينا بَـعدَها ولـها الـيُتم

Timelessness has ever been its epoch cycle. It is fatherless, as our father’s age dawned in its wake.


مـحاسِنُ تَـهدي المادِحينَ لوَصْفِهَا    فَـيَحْسُنُ فـيها مـنهُمُ النّثرُ والنّظم

Its splendid charms inspire lauders to extol its loveliness; excelling in its description, in verse and prose.


ويَـطْرَبُ مَـن لم يَدْرِهَا عند ذِكْرِهَا    كَـمُشْتَاقِ نُـعْمٍ كـلّما ذُكـرَتْ نُعم

It’s very mention transports him who has never previously heard of it; like a seeker of Nu’m passionately desiring her whenever mentioned and discussed.


وقـالوا شَـرِبْتَ الإِثـمَ كـلاّ وإنّما    شـرِبْتُ التي في تركِها عنديَ الإِثم

They say “you have quaffed sin when you drank of it,” O, no! I have sipped that which the abstention from I consider impious, profane.


هـنيئاً لأهـلِ الدّيرِ كمْ سكِروا بها    ومـا شـربوا مـنها ولـكِنّهم هَمّوا

Blessed are the monastics and monks, they so frequently intoxicated with it; they, however, never drank it; only endeavored.


وعـنديَ مـنها نَـشْوَةٌ قبلَ نشأتي    مـعي أبـداً تـبقى وإنْ بَليَ العَظْم

As for me, I was intoxicated by it even before I appeared on the stage of life; it is ever with me, even when my bones revert to dust.


عـليكَ بها صِرْفاً وإن شئتَ مَزْجَها    فَـعَدْلُكَ عـن ظَلْم[1] الحبيب هو الظُّلم

Imbibe it undiluted, mix it if you will; but if you shun the mouth of the beloved, you would have unjustly acted.


فَـدُونَكَهَا فـي الـحانِ واستَجْلها به    عـلى نَـغَمِ الألـحان فهيَ بها غُنْمُ

Hurry! Seek it out in the tavern; uncover its beautiful face to the sweet melodies, for indeed it is a matchless gain.


فـما سـكنَتْ والـهمَّ يوماً بموضع    كـذلك لـم يـسكُنْ مـع النَّغَم الغَم

It never abides with care and worries in the same spot; even as soulful tunes with distress never dwell.


وفـي سـكرةٍ منها ولَوْ عُمْرَ ساعةٍ    تَـرَى الدَّهْرَ عبداً طائعاً ولك الحُكْم

To be intoxicated with it even for an hour, eternity itself becomes your servant; you, in command.


فلا عَيْشَ في الدُّنْيا لمَن عاشَ صاحياً    ومَـن لم يَمُتْ سُكْراً بها فاته الحزم

He who lives sober leads a meaningless existence; he who doesn’t drink to death is a spineless weakling.


عـلى نـفسه فليَبْكِ مَن ضاع عُمْرُهُ    ولـيسَ لـهُ فـيها نَصيبٌ ولا سهمُ

Let him, who has wasted his life, abstaining from it, lament for himself; having no lot or allotment in it at all.


Abdul Matin Wasim


[1]

ترجمتُ الظَلم بفتح الظاء إلى mouth لأن هذه الكلمة تعني بحسب ما ورد في محيط المحيط ماء الأسنان وبريقها