Tuesday 24 May 2016

আন‌তারা বিন‌ শাদ্দাদ আল‌-আবাসী

আন্‌তারা বিন্‌ শাদ্দাদ আল্‌-‘আবাসী

(৫২৫ – ৬০৮ খ্রিঃ)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

পরিচিতি ও জন্মঃ

আনতারা মু’আল্লাকা কবিগোষ্ঠীর অন্যতম একজন। তিনি আবাস গোত্রের সৈনিক কবি ও আরবের অন্যতম বীরযোদ্ধা ছিলেন। ষষ্ঠ শতাব্দীতে আরবের বিখ্যাত নাজ্‌দ প্রদেশের আবাস গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। নাম ‘আন্‌তারা, উপনাম আবুল্‌ মুগাল্লাস, পিতার নাম ‘আম্‌র, পিতামহের নাম শাদ্দাদ পিতা ছিলেন ‘আবাস গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। কিন্তু মা যুবাইবা ছিলেন আফ্রিকান ক্রীতদাসী। কবির গায়ের রং কালো ছিল। তাই তাঁকে “আহাদু আগ্‌রিবাতিল্‌ ‘আরাব” (أحد أغربة العرب) অর্থাৎ আরবের কাক নামে অনেকে ডাকতো।  

 

দাসত্বের জীবন হতে মুক্তিঃ

দাসীর পুত্র দাস। এই নিয়মানুযায়ী তিনি ছিলেন দাস। তাই সম্ভ্রান্ত আবাস গোত্রে জন্মলাভ করা সত্ত্বেও তাঁকে বাল্যকালে দাসত্বের মর্মপীড়ায় দগ্ধ হতে হয়ে ছিল। তবে একদা আরবের কতিপয় গোত্র সম্মিলিত ভাবে আবাস গোত্রের প্রতি আক্রমণ করে তাদের উটগুলি নিয়ে চলে যায়। আবাসের লোকেরা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। তাদের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিহতকারীদের দলে ‘আন্‌তারাও ছিলেন। তাঁর পিতা তাকে আক্রমণ করতে বলায় কবি প্রতি উত্তরে বলেন—

العبد لا يحسن الكر وإنما يحسن الحلب والضر.

(দাসেরা তো আক্রমণ ভালো করতে পারে না। দাসেরা শুধু দুগ্ধদোহনের কাজ ভালো পারে।)

 

পিতা তাঁর কথার শ্লেষ বুঝতে পেরে তাঁকে স্বাধীন করে দিলেন। বললেন—  "كر وأنت حر"(তুমি আক্রমণ করো, তুমি আজ থেকে স্বাধীন, মুক্ত) অতঃপর আনতারা ক্ষিপ্রগতিতে আক্রমণ করলেন এবং ছিন্তাইকারীদের পরাজিত করে উটগুলিকে ফিরিয়ে আনলেন। ফলস্বরূপ পিতা তাঁকে মুক্ত করে নিজ বংশে শামিল করে নিলেন।

 

সৈনিক কবির মৃত্যুঃ

এই ঘটনার পর কবি ‘আন্‌তারার নাম ও খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। অগ্রগতি ও সাহসিকতার বিষয়ে তিনি প্রবাদ বাক্যে পরিণত হলেন। দাহিস ও আল্‌-গাব্‌রার যুদ্ধে তিনি আবাসের সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। উত্তম পন্থায় সেনাবাহিনী পরিচালনা করে তিনি নেতৃত্বের উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিলেন। অতঃপর বয়সবৃদ্ধির কারণে শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং ৬০৮ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন।

 

কাব্যপ্রতিভাঃ

ঐতিহাসিকদের ধারণা, দাস অবস্থায় তিনি কোনো কবিতা রচনা করেননি। কারণ দাসত্বের গ্লানি আবেগের প্রজ্বলনকে অবদমিত রাখে। অতঃপর যখন পিতা তাঁকে স্বাধীনতার স্বাদ প্রদান করলেন এবং ‘আব্‌লার প্রণয়বাণে তাঁর হৃদয় বিদ্ধ হল, তখন তাঁর বক্ষ হতে কবিতা উপচে পড়তে লাগল। তিনি গৌরবাত্মক, প্রেমমূলক ও যুদ্ধ বিষয়ক অসাধারণ কতিপয় কবিতা রচনা করেছেনতাঁর কবিতায় গজলের স্বাদ ও গৌরবের গাম্ভীর্য বিদ্যমান।

 

তাঁর কবিতার মূল বৈশিষ্ট হল তিনি অন্যান্য জাহেলী কবিদের তুলনায় অধিক সরল শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া তাঁর কবিতায় বীরত্বের ছাপ সুস্পষ্ট। তিনি পলায়নকে জানতেন না। এবং যখন তিনি গজল গাইতেন, উন্নত ও সুমিষ্ট শব্দ ব্যবহার করতেন। তাঁর কবিতায় আন্তরিকতার ছাপও স্পষ্ট। এছাড়া লক্ষ্য করা যায় যে তাঁর কবিতার চিত্র ও চিন্তা মরুকেন্দ্রিক।

 

তাঁর মু’আল্লাকাঃ

একদা আবাস গোত্রের এক ব্যাক্তি তাঁকে এই বলে লজ্জা দেয় যে," أنا أشعر منك" (আমি তোমার থেকে বড় কবি)‘আন্‌তারা তাকে ভর্ৎসনা করেন এবং তার প্রতিউত্তর স্বরূপ তার এই সাহিত্য সমৃদ্ধ অসাধারণ মু’আল্লাকাটি রচনা করেন। তিনি তাঁর এই কবিতার এক জায়গায় মদের প্রতি নিজ আসক্তিকে অভিনব ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন—

ولقد شربت من المدامة بعدما    ركد الهواجر بالمشوف المعلم

(আমি মদ পান করেছি প্রখর উত্তাপ কমে যাওয়ার পর মোহরাঙ্কিত মুদ্রা ব্যয় করে)

এই কবিতাতেই অন্য এক স্থানে তিনি নিজের বীরত্বকে এভাবে প্রকাশ করেছেন—

ومدجّج كره الكمــاة نزاله     لا ممعـن هربا ولا مستسلم

جادت يداي له بعاجل طعنة     بمثقّب صدق الكعوب مقوم

(অস্ত্রসজ্জিত সৈনিক, যার সাথে মোকাবেলা করতে ভয় পায় অভিজ্ঞ তীরন্দাজেরা, এড়িয়ে চলে, যে পলায়নপদ নয়, আত্মসমর্পণকারীও নয়

সোজা, তীক্ষ্ণ উন্নতমানের বর্শা-বল্লম নিয়ে আমি দ্রুত সেই সৈনিকের উপর চড়াও হয়েছি

লাবীদ বিন‌ রাবীআহ‌ আল-আমেরী

লাবীদ বিন্‌ রাবী‘আহ্‌ আল-‘আমেরী

(৫৬০ – ৬৬১ খ্রিঃ)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

জন্ম ও পরিচয়ঃ

প্রাক-ইসলামী যুগের তৃতীয় স্তরের একজন উৎকৃষ্ট কবি। মুয়াল্লাকা কবি গোষ্ঠীর মধ্যে তিনিই একমাত্র মুসলিম। তিনি লাবিদ বিন রাবিয়া আল-আমেরী, পিতৃব্য আবুল বারা’ ছিলেন একজন দক্ষ যোদ্ধা ও বর্শা নিক্ষেপকারী, পিতা রাবিয়া ছিলেন নাজ্দের একজন বিখ্যাত দানশীল ব্যাক্তি ও কবির জননী ছিলেন আবস গোত্রীয়।

 

প্রাথমিক জীবনঃ

বয়ঃসন্ধিক্ষণে উপনীত হয়ে তিনি তাঁর সাহিত্য সাধনা আরম্ভ করেছিলেন। আবুল বারা’ ও তার ভাইদের সঙ্গে বালক লাবিদও নুমান বিন মুন্যিরের নিকট উপস্থিত হন। সেখানে তিনি প্রতিপক্ষ রাবি’ বিন যিয়াদের কুৎসা করে একটি কবিতা রচনা করেন, যেটি শুনে নাবিগা মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি গাসাসেনাহ্ সম্রাটদেরও প্রশংসা করেছিলেন।

 

ইসলাম গ্রহণঃ

কিলাব্ গোত্রের ১৩ জন পুরুষের সঙ্গে নবী (সাঃ)-র নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলামের প্রতি চরম মুগ্ধ হয়ে তিনি কাব্যচর্চা ত্যাগ করেন। অনেকের মতে নিম্নোক্ত পঙক্তি ব্যতীত তিনি আর কোনও কবিতা রচনা করেননিঃ  

الحمد لله إذ لم يأتيني أجلي     حتى لبست من الإسلام سربالا

(যত গুণগান আল্লাহ্‌র, কারণ যতক্ষণ না আমি ইসলামে আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত হয়েছি মৃত্যু আমাকে স্পর্শ করেনি।)

 

মৃত্যুঃ

ইসলাম গ্রহণের পর তিনি কূফায় বসবাস করছিলেন। একদিন কুফার শাসক তাঁকে নতুন কিছু কবিতা রচনার জন্য আবেদন করেন। তিনি প্রতিউত্তরে ‘সূরা বাকারা’ লিখে পাঠান আর বলেন—

"منحني الله هذا عوض شعري بعد أن أصبحتُ مسلما"

(ইসলাম গ্রহণ করার পর, কবিতার পরিবর্তে আল্লাহ্‌ আমাকে এটা (কুরআন) প্রদান করেছেন।)

   

খলীফা উমার (রাঃ) তাঁর এই উত্তরে মুগ্ধ হয়ে তাঁর ভাতা ৫০০ থেকে ২০০০ দির্‌হাম (রৌপ্যমুদ্রা) করে দেন। মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর যুগে ৪১ হিঃ মোতাবেক ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে ১৫৭ মতান্তরে ১৪৫ বছর বয়সে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।

 

তাঁর কবিত্বঃ

তাঁর কবিতার উদ্দেশ্য ও উপজীব্য নানা প্রকৃতির। তবে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হল বর্ণনামূলক, গৌরবাত্মক, শোকগাথা ও জ্ঞানগর্ভমূলক। তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট হল তাঁর বর্ণনার গভীরতা ও ‘গরীব’ শব্দের প্রতি তাঁর আসক্তি। তা সত্ত্বেও তাঁর বর্ণনায় কোনও অস্পষ্টতা পরিলক্ষিত হয়নি। তাঁর এই পঙক্তি "ألا كلّ شيئ ما خلا الله باطل" (শোনো, আল্লাহ্‌ ব্যতীত যা কিছু আছে সবই বাতিল) সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) মন্তব্য করেছেন—

" أصدق كلمة قالها شاعر كلمة لبيد"

(কাব্যজগতে লাবীদের এই বাক্যই সর্বাধিক সত্য বাক্য।)

কাব্য জগতে তাঁর স্থানঃ

ইব্‌নু সালাম ও অন্যান্য সমালোচকগণ তাঁকে প্রাক-ইসলামী যুগের তৃতীয় স্তরের কবি হিসেবে গণ্য করেছেন। একবার তাঁকেই জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ব্যক্তিগত ভাবে জাহেলি কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? উত্তরে তিনি বলেছিলেন—

" رجل في قميصي"

(আমার এই জামা যে পরে আছে, সে-ই সবচেয়ে বড় কবি।)

 

তিনি তাঁর মু’আল্লাকায় বেশ কিছু অনুপম উপমা প্রদান করেছেন। যেমন তিনি এক জায়গায় বলেছেন—

وجلا السيول عن الطلول كأنها     زبر تجدّ متونها أقلامها

أَوْرَجْعُ وَاشِمَةٍ أُسِفَّ نَؤُورُهَا         كِفَفَاً  تَعَرَّضَ  فَوْقَهُنَّ  وِشَامُهَا

(আর প্লাবন উপত্যকা (-র রেখা) গুলিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে, (মনে হচ্ছে) যেন সেগুলি এমন গ্রন্থরাজি যার লিপি-পাঠকে লেখনি নতুনত্ব দান করেছে।

অথবা তা যেন উল্কি অঙ্কনকারিণীর পুনরাঙ্কন, যাতে বৃত্তাকারে কালি লেপন করা হয়েছেতাই তার ওপর রেখাগুলি প্রতিভাত হচ্ছে )

 

অন্য এক জায়গায় আরও সুন্দর ও অপূর্ব উপমা প্রদান করে শব্দ দিয়ে এক অসাধারণ ছবি এঁকেছেন—

وَتُضِيءُ في وَجْهِ الظَّلامِ مُنِيرَةً         كَجُمَانَةِ الْبَحْرِيِّ  سُلَّ  نِظَامُهَا

(রাতের প্রথম প্রহরে সে জ্যোৎস্না-স্নাত হয়ে জ্বলজ্বল করছিল, (এবং যখন চক্রাকারে ঘুরছিল) যেন কোনো ডুবুরীর মুক্তোর মালা, যার সুতোটা ছিঁড়ে গেছে।)  

আলী বিন আল-আব্বাস ইবনুর রূমী


‘আলী বিন্‌ আল্‌-‘আব্বাস ইব্‌নুর্‌ রূমী
(৮৩৬ – ৮৯৬ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পরিচিতি ও জন্মঃ
মুসলিম সভ্যতার স্বর্নযুগ আব্বাসীয় শাসনামলে যে সকল মনীষা আরবী সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন ইব্‌নুর্‌ রূমী তাঁদের অন্যতম। তিনি একজন স্বভাব কবি ছিলেন। প্রশংসা, কুৎসা, শোকগাথা বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কবিতা রচনা করেছেন। প্রকৃত নাম ‘আলী, পিতার নাম ‘আব্বাস, পিতামহের নাম জুরায়েজতাঁর উপনাম আবুল হাসান, তবে তিনি ইবনুর রূমী নামে অধিক পরিচিত। তিনি বাগদাদে ২ই রজব ২২১ হিজরি মোতাবেক ৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। এখানেই তিনি লালিত পালিত। তিনি আ’ব্দুল্লাহ বিন ঈ’সার মুক্ত দাস ছিলেন। তাঁর জননী একজন পারসিক বংশদ্ভূত পুন্যময়ী মহিলা ছিলেন। তিনি মুহাম্মাদ বিন হাবীবের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। বাল্য বেলাতেই তিনি কাব্যচর্চার প্রতি মনোনিবেশ করেন।      
 
জীবনীঃ
তিনি জীবনের কক্ষপথে নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেগুলি তাঁর কবিতায় প্রতিবিম্বিত হয়েছে। তিনি পিতার নিকট হতে বহু সম্পত্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তার এক বৃহদাংশ অপব্যায় ও অপচয় করে নষ্ট করে ফেলেন। অবশিষ্ট সম্পদ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। অন্য দিকে মৃত্যু একের পর এক তাঁর পারিবারিক সদস্যদের আক্রমন করতে থাকে। পিতার পরা তাঁর মা, অতঃপর বড় দাদা, তার পর মামা ইহলোক ত্যাগ করেন। বৈবাহিক জীবনে স্ত্রী ও তিন সন্তানও তাঁকে শোক সাগরে ভাসিয়ে যান। সম্ভবত এই ঘটনাগুলি তাঁকে চরম ভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি অস্থির জীবন যাপন করতে আরম্ভ করেন। সর্বদা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। তাই লোকেরা তাঁকে নিয়ে বিদ্রূপ করত এবং তাঁর থেকে দূরে থাকতো।     
 
মৃত্যুঃ
তিনি বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাগদাদে ২৮৩ হিজরি মোতাবেক ৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন। বাগদাদেই তাঁকে সমাধিস্ত করা হয়। আক্কাদ বলেছেন— আল-মু’তাযিদের মন্ত্রী আবুল হাসান কাসিম বিন উ’বাইদুল্লাহ তাঁর কুৎসাকে প্রচণ্ড ভয় পেতেন। তাই তাঁর চক্রান্তে ইবনে ফিরাশ তাঁর বৈঠকেই কবিকে বিষ-মিশ্রিত হালওয়া খাওয়ান। খাওয়ার পর কবি যখন বিষক্রিয়া অনুভব করতে লাগলেন তখন মন্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোথায় যাচ্ছেন? উত্তর করলেনঃ যেখানে আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন। মন্ত্রী বললেন— আমার পিতাকে সালাম জানাবেন। উত্তরে কবি বললেন— আমি তো আর নরকে যাচ্ছি না (ما طريقي إلى النار)।
 
তাঁর কবিত্বঃ
তিনি আটজন আব্বাসী খলীফার যুগ পেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত সকলেই তাঁর প্রশংসাগাথাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাঁকে কোনও প্রকার উপঢৌকন প্রদান করা হতে বিরত ছিল। এ প্রসঙ্গেই কবি বলেছেন—
قد بُلينا في دهرنا بملوكٍ أدباءٍ عَلِمْتُهمْ شعراءِ     إن أجدنا في مدحِهم حسدونا فحُرِمنا منهُمْ ثوابَ الثناءِ
জীবনে অনেক ব্যথা বেদনার সম্মুখীন হওয়ায় তিনি শোকগাথা রচনায় বুৎপত্তি ও নৈপুণ্য অর্জন করেছিলেন। ঐতিহাসিক ইবনু খাল্লিকান বলেছেন—
"الشاعر المشهور صاحب النظم العجيب والتوليد الغريب، يغوص على المعاني النادرة فيستخرجها من مكانها ويبرزها في أحسن صورة ولا يترك المعنى حتى يستوفيه إلى أخره ولا يبقي فيه بقية".
 
তাঁর কাব্যিক বৈশিষ্টঃ
সঠিক ও সূক্ষ্ম উপলব্ধি, প্রশংসার সঙ্গে গর্বের মিশ্রণ, কৃত্রিমতা বর্জন তাঁর কবিতার মূল বৈশিষ্ট। শ্রোতা ও পাঠকদের বিপর্যয়ের কাহিনী শোনানো ও মৃত্যুর উল্লেখ করতঃ উপদেশ প্রদান তাঁর কাব্য প্রতিভাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। তাঁর সমকালীন কবিদের তুলনায় তিনি বর্ণনার ক্ষেত্রে ও কুৎসা রচনার ক্ষেত্রে অধিক পটু ও দক্ষ ছিলেন। তিনি সঙ্গীত ও অন্ত্যমিলের প্রতি ব্যাপক গুরুত্বারোপ করতেন।

Thursday 12 May 2016

العصر الجاهلي - لبيد بن ربيعة العامري: سؤالا وجوابًا


 
لبيد بن ربيعة العامري: سؤالا وجوابًا 
(560 – 661 م) 
س: من كان لبيد؟
ج: كان أبو عقيل لبيد بن ربيعة العامري شاعرا جاهليا والمسلم الوحيد من أصحاب المعلقات.  
س: هو شاعر جاهلي، من أصحاب المعلقات، كان عمه فارس مضر ومشتهرا بملاعب الأسنة – من هو؟
ج: هو لبيد بن ربيعة.  
س: هو المسلم الوحيد من أصحاب المعلقات، أسلم وحفظ القرآن الكريم فهجر الشعر – من هو؟
ج: هو لبيد بن ربيعة.  
س: ما هو البيت الوحيد الذي قاله لبيد بعد إسلامه – كما قاله البعض؟
ج: البيت الوحيد الذي قاله لبيد بعد إسلامه هو:   
الحمد لله إذ لم يأتني أجلي      حتى لبست من الإسلام سربالا
س: هو شاعر جاهلي، لم يقل بعد الإسلام إلا بيتا واحدا وإن عُمّر في الإسلام طويلا فيعد من الجاهليين – من هو؟
ج: هو لبيد بن ربيعة.  
س: متى وأين توفي لبيد؟
ج: توفي بالكوفة في أول خلافة معاوية سنة 41 من الهجرة.
س: كم سنة عاش لبيد بن ربيعة؟
ج: عاش نحو مئة وخمس وأربعين سنة.
س: من قال:
ولقد سئمت من الحياة وطولها          وسؤال الناس هذا كيف لبيد
ج: قاله لبيد بن ربيعة.

الجمع والإعداد: عبد المتين وسيم الدين

Wednesday 4 May 2016

খোঁজ-খবর

 খোঁজ-খবর 
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

সুরেন বর্মণ। বয়স পঁয়ষট্টি বছর হবেপেশায় কৃষক। নিজে নিরক্ষর, কিন্তু শত কষ্ট করে হলেও একমাত্র ছেলে সোমেনকে হোস্টেলে রেখে পড়িয়েছেন। সোমেন ভালো রেজাল্ট করেছে, চাকরিও পেয়েছে; এখন সে কলকাতায় সেটেল্ড। আর সুরেন বাবু থাকেন সেই অজপাড়া গাঁ চণ্ডীপুরে নিজ কুঁড়েঘরেই।
গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি ছোট মোড়, আয়ড়া। সেখানে কিছু দোকানপাট আছে। সেদিন চৈত্রের আকাশ আগুণ ঝরাচ্ছিলএকটু বেলা গড়াতেই, সুরেন বাবু হাঁটতে হাঁটতে মোড়ে গেলেন। এক মোবাইল দোকানে গিয়ে বললেন- বাবাজি, দেখো তো বো কী সমস্যা হইছে এই মোবাইলটার?
দোকানদার- না তো -কিছুক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে- কোন সমস্যা নেই, কাকু সব ওকে আছে।
সুরেন বাবু, ক্ষীণ কণ্ঠে- তাইলে, সোমেনের ফোন কেনে আসেনা... 
আজ পাঁচ দিন হল ছেলের কোন ফোন আসেনি। বুকের ভেতরটা কেমন খাঁ খাঁ করছিল। রাতটা কোন রকমে কাটালেন। ভোরবেলা মোরগের ডাকাডাকি শুরু হতেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলেন পাশের বাড়িতে বিমলের কাছে। বিমল স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। কাকভোরে উঠে পড়তে বসেছে। সুরেন বাবু তার কাছে ছুটে গিয়ে বললেন- বাবু, আইজ ক’দিন হলি তোর সোমেন দা’র ফোন আসেইনি; ওক ফোনটা লাগেই দি তো। বিমল ফোনটা লাগিয়ে দিল। ফোনটা রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা। বিমল আর একবার ডায়াল করল। আবার রিং হয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে সুরেন বাবুর উৎকণ্ঠার পারদও চড়চড় করে উপরে উঠছে। তৃতীয় বার রিং করাতে কে একজন রিসিভ করলো। সুরেন বাবু উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা মিশ্রিত কণ্ঠে এক নাগাড়ে বলতে লাগলেন- বেটা, ভালো আছি তো? আইজ ছ’দিন হলি ফোন আসেইনি, তোর মাও খুব চিন্তা করছে...
ও প্রান্ত থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো- সোমেন অসুস্থ, এখন ঘুমোচ্ছে। আমি ওর শ্বশুর বলছি। আপনি পরে করুন।    
সুরেন বাবুর বুকটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠল। বিমলের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। তখন তাঁর চোখের কোণ চিকচিক করছিল। গিন্নী দরজায় অপেক্ষা করছিলেন, তাঁকে দেখে সুরেন বাবুর চোখের জল আর বাঁধ মানল না।
তবে, তাঁর কাঁদার মূল কারণটা কী, ছেলের অসুস্থতা না অবহেলা- তা অজানাই রয়ে গেল।


[পূবের কলম, ১লা জানুয়ারি ২০১৭-এর সাহিত্য বিভাগে প্রকাশিত]

Image may contain: 1 person