Sunday 25 December 2016

أبو العلاء المعري


أبو العلاء المعري

(٩٧٣ – ١٠٥٧ م)

تعريفه ومولده:

هو شاعر وفيلسوف وأديب من العصر العباسي، غريب أوانه وفريد أيامه، وفيلسوف الشعراء وشاعر الفلاسفة أبو العلاء أحمد بن عبد الله بن سليمان القضاعي التنوخي المعري الملقب بـرهين المحبسين، وُلد في معرة النعمان في الشمال السوري عام 363 هـ الموافق973 م.

 

نشأته وتعليمه:

لمّا بلغ الرابعة من عُمره أُصيب بالجدري، فذهب بيُسرى عينيه وابيضّت اليمنى، فلا يعرف إلا الحمرة. مع ذلك أكبّ على العلوم وأخذ عن أبيه مبادئها، ثمّ راح يطوف في مختلف البلاد باحثا منقبا، مختلفا إلى المكتبات ودور العلم، مترددا على العلماء والرهبان. ثمّ رحل بعد وفاة أبيه إلى بغداد حيث تلقى العلوم اليونانية والفلسفة الهندية.

 

رهين المحبسين:

كان في بغداد يختلف إلى مجالس العلم؛ إذ أتاه نبأ مرض أمه فغادرها إلى المعرة؛وكان في الطريق إذ توفيت،فجزع عليها شديدا حتى لزم بيته وسمّى نفسه رهين المحبسين،وامتـنع عن أكل اللحوم وشتى منتجات الحيوان. وأكب على المطالعة والكتابة فأنجزمؤلفات مهمة.

 

وفاته:  

كان قد حرم على نفسه الزواج، فلم يزل أعزب حتى توفي عام 449 هـ الموافق 1057م. وكان قد أوصى أن يكتب على قبره:                         

هـذا جنــاه أبي عليّ      ومـا جنيتُ على أحــد

 

شعره: 

قال الشعر لإحدى عشرة سنة، ولم يمنعه ذهاب بصره من إجادة التشبيه. ينقسم شعره إلى قسمين: (أ) شعر الشباب: وهو فيه أكثر المبالغة، واضح التقليد بين التكلف، قلّد فيه المتنبي واستمدّ منه أكثر معانيه، واستخفّ بقواعد اللغة؛ ويجمعه سقط الزند. (ب) شعر الكهولة: وهو فيه قليل المبالغة والتكلف؛ قد عارض فيه المتقدمين من العرب، فآثر اللفظ الجزل والأسلوب البدوي، وركب القوافي الصعبة. وقد وعته اللزوميات.

 

نثره:    

كان في نثره كثير المبالغة، مفعما بالغريب، متكلف السجع، كثير الاصطلاحات العلمية. ثمّ حكم فلسفته في نثره فقلّت المبالغة، وفاضت الجمل بالمعاني.

 

إنجازاته العلمية والفكرية:

قد ألف عدة مؤلفات، ذهبت بأكثرها ريح الحروب الصليبية، فلم يبق إلا ما يلي: سقط الزند، اللزوميات، الدرعيات، الفصول والغايات، رسالة الغفران، رسالة الملائكة، ديوان رسائله.

 

نموذج من شعره:

كان بالغا في المدح، فقال يمدح صديقا له:

أنت شمس الضحى فمنك يفيد الصبـ      ح مــا فيــه مـن ضيـاء ونـور

وكان بارعا في لطف التشبيه، قال: 

وكسا الأرض خدمة لك يا مو      لاه دون المــلوك خضر الحرير

كتبه: عبد المتين وسيم 

Wednesday 14 December 2016

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ শিশুটি কাঁদছে



শিশুটি কাঁদছে
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

সরু পঙ্কিল রাস্তাটি,
শহরের কোলাহলপূর্ণ ব্যস্ততা থেকে বেরিয়ে
পাড়ি দিয়েছে এক নির্জন গ্রামের দিকে;
কিছুটা দূরে সেই রাস্তাতেই পড়ে আছে
একটি লাশ, এক মধ্যবয়সী মহিলার;
পাশে বসে শিশুটি অবিরাম কেঁদে চলেছে
খাঁ খাঁ মাঠ, কোনও দিকে কেউ নেই; 
হ্যাঁ, গল্পটি আলেপ্পোর। 

তপ্সিয়া,কলকাতা
২৮/০৮/২০১৫


Monday 12 December 2016

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ কবির স্বপ্ন আজও অপূর্ণ


কবির স্বপ্ন আজও অপূর্ণ
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

আজ ২২ শে শ্রাবণ, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস। বাঙালী জীবন যে রবিময়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই, অনেক বাঙালিকে দেখি এই দিনে ঘটা করে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে। আমি মনে করি, স্মরণ করা না করা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার; ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত ব্যপার কে কীভাবে স্মরণ করবে। তবে আমি বোধ করি, কবিগুরুকে স্মরণ করার স্বার্থকতা হবে- তাঁর স্বপ্ন, তাঁর ভাবনাগুলোকে বাস্তব রূপ দেওয়া। হয়তো তা-ই হবে কবির প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনও।

তাই আজ যখন চারিদিকে এক পলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করি, দেখি বাঙালী বাঙালিয়ানা খুইয়ে কোথাও পূর্ববঙ্গীয়-পশ্চিমবঙ্গীয়, কোথাও উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গীয়, কোথাও আবার শুধুই হিন্দু-মুসলিম হয়ে রয়ে গেছে; আর বাঙালী নেই। তখন বুকের ভেতরটা কেমন টনটন করে ওঠে। নৈরাশ্যের অন্ধকার ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করতে আরম্ভ করে রবিময় ভাবনাগুলোকে। আর খুব ইচ্ছে করে বলতে, চেঁচিয়ে বলতে- রবি, তুমি ব্যর্থ হয়েছ, তুমি যে আজ বাঙালীর মননে বিস্মৃত। তোমাকে স্মরণে রেখেছে সকলে, কিন্তু কেউ তোমার স্বপ্নগুলোকে স্মরণ রাখেনি, কেউ আগ্রহী নয় সেগুলোর বাস্তবায়নে। তুমি ব্যর্থ, প্রকৃত অর্থেই বিফল...। তুমি প্রার্থনা করেছিল--- 'ভারতেরে করো সেই স্বর্গে জাগরিত' 

কোন স্বর্গের স্বপ্ন দেখেছিলে, রবি তুমি? এই স্বর্গে যে চারিদিকে চিত্ত ভয়ে ভরা, মাথা সর্বদা নিচু, জ্ঞানীরা চাটুকদার, মিথ্যা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্গত হচ্ছে, ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ মানবতা, জাতির প্রাচীর দ্বারা খণ্ডিত সমাজ; এই স্বর্গে যে, এক মুঠো ভাতের বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে নারী-সম্ভ্রম, এক টুকরো মাংসের জন্য মানুষ খুন হচ্ছে, মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে যৌবন কেটে যাচ্ছে গরাদের পেছনে, পারস্পরিক স্পর্শে কেউ হয়ে উঠছে অপবিত্র তো কেউ পবিত্র, আর এভাবেই কেউ কেউ লাভ করছে দেবত্ব ও প্রভুত্ব...।  

থাক ঢের হয়েছে, আর স্বপ্ন দেখিয়োনা। তোমার স্বর্গের স্বপ্ন যে শুধুই স্বপ্ন, রবি। কিন্তু আমাদের এই স্বর্গ তো বাস্তব, আরও বেশি বাস্তব রূপ নিচ্ছে প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন...।

আর তাই, অজান্তেই অন্তঃকোণে প্রশ্ন জাগে- কী লাভ এমন স্মরণে?  

Thursday 8 December 2016

সামাজিক কর্মে মুসলিম মেয়েদের অংশগ্রহণঃ কিছু দৃষ্টান্ত


সামাজিক কর্মে মুসলিম মেয়েদের অংশগ্রহণঃ কিছু দৃষ্টান্ত
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

ইস্‌লাম ও ইসলামি বিপ্লব, সূচনালগ্ন থেকেই যথাযোগ্য সঙ্গ ও সমর্থন পেয়েছে নারী জাতির। এমনকি দাওয়াতের (ইসলামের প্রতি আহবানের) পথে ও ঈমানের প্রতিরক্ষায় তাঁদের আত্মত্যাগ সর্বজনবিদিতএই মুসলিম উম্মতের (জাতির) সূচনাই হয়েছিল এক মহীয়সী নারী, খাদিজা রা-কে দিয়ে। পরবর্তীতে ইসলামের সেবায় সর্বস্ব ত্যাগ করে তিনি এক বিরল নজির সৃষ্টি করেছেন। সে-সময়ে ইসলামের সমুন্নতির জন্য সর্বপ্রথম প্রাণের আহূতি দিয়েছিলেন যায়েদ বিন হারেসা রা; তার কিছু দিন পরেই তাঁর এই যাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করেন এক বিদুষী নারী, সুমাইয়া বিন্‌তে খাইয়াত (রা) নিজ প্রাণ বিসর্জন করে। তিনি ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় শহীদ।
মক্কা-পর্বে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলিম জাতির উপর নেমে এসেছিল অত্যাচার ও নিপীড়নের এক বিভীষিকাময় তিমিরাচ্ছন্ন রাত; যখন মুসলিম ও তাঁদের সকল সহায়ক ও সমর্থকদেরকে সামাজিক বয়কট করা হয়েছিল শিয়াবে আবি তালিব নামক গিরি-উপত্যকায়। তিন বছরের এই বয়কটে সর্বপ্রকার আর্থ-সামাজিক সুবিধা হতে বঞ্চিত করা হয়েছিল তাঁদেরকে। উল্লেখ্য যে, এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নিজ শিশু-সন্তানদের প্রতিপালন ও দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন মূলত নারীরাই; তাই তাঁরাই অধিক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
এই মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন হতে মুক্তির নিমিত্তে একদল মুসলিম মাতৃভূমি ত্যাগ করে যাত্রা করেন হাব্‌শার (বর্তমান নাম- ইথিওপিয়া) দিকে; এই যাত্রায় ৮৩ জন পুরুষের সঙ্গে ১৮ জন মহিলাও অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বায়‘আতে উক্ববা (উক্‌বা নামক স্থানে শপথ) ছিল ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের উদ্দেশে প্রথম সমাবেশ। সেই সমাবেশে মদিনার কলহপূর্ণ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাসুল সা-এর নিকট শপথ গ্রহণ করেছিলেন পঁচাত্তর জনের একটি দল; যাতে দু’জন মহিলাও শামিল ছিলেন- আম্মারা নাসীব বিনতে কা‘আবআসমা বিনতে ‘আমর (রা)
এর কিছুদিন পর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে স্বয়ং নবী (সা) মাতৃভূমি ত্যাগ করে মদিনার পথে যাত্রা করেন, ইতিহাসে এই যাত্রাই ‘হিজরত’ নামে পরিচিত। উল্লেখ্য, এই হিজরতই ইসলামি আন্দোলনকে শাসন ব্যবস্থার রূপ দিয়েছিল; তিলে তিলে গড়ে উঠেছিল ‘মুসলিম উম্মাহ’এই যাত্রায় তাঁর (সা) সঙ্গী হয়েছিলেন বাল্যবন্ধু আবু বাক্‌র (রা)আর তাঁরই দুই মেয়ে আস্‌মাআয়েশা (রা) এই যাত্রার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে সাহায্য করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁরা ও তাঁদের মতো আরও অনেক মহিলা ইসলামের জন্যই মাতৃভূমির মায়ামমতা বিসর্জন দিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ইয়াসরিবে, হিজরত পরবর্তী সময় থেকে যা ‘মদিনা’ নামে খ্যাত। 
শেষনবী (সা) পূর্ববর্তী যুগেও বহু সামাজিক কাজে মহিলারা অংশ নিত। এ ধরণের কিছু নমুনা ইতিহাস নিজ বক্ষে আজও ধরে রেখেছে। যেমন- নবী শো‘আয়েব (আ)-এর দুই কন্যা মাদ্‌ইয়ানের প্রান্তরে মেষ চারণের কাজ করতো। এ প্রসঙ্গে আল-কুরআনের বর্ণনা-       
“যখন তিনি (মুসা আ) মাদ্‌ইয়ানের পানির (কূপের) নিকট পৌঁছলেন, দেখলেন- একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে আর তাদের থেকে একটু দূরে দু’জন মহিলা নিজ মেষগুলোকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুসা (আ) বললেন- কী ব্যাপার তোমাদের? তাঁরা বলল- আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ পর্যন্ত রাখালেরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে না যায় আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ তখন তিনি (মুসা আ) তাঁদের মেষগুলোকে পানি পান করালেন তারপর তিনি ছায়ার নিচে আশ্রয়গ্রহণ করে বললেন- হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন আমি তার মুখাপেক্ষী (কিছুক্ষণ পর) তাঁদের (সেই দুই মহিলার) একজন লজ্জা শালীনতার সাথে তাঁর কাছে এসে বলল- আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করেছেন, আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাবার পারিশ্রমিক দেওয়ার জন্য  মূসা (আ) শো‘আয়েব (আ)-র নিকট এসে সমস্ত বৃত্তান্ত তুলে ধরলেন। তিনি (শো‘আয়েব আ) বললেন- ভয় পেয়ো না, তুমি অত্যাচারী সম্প্রদায়ের কবল হতে মুক্তি পেয়েছ”  [সূরা আল্‌-ক্বাসাস: ২৩-২৬]
একদা সাবা প্রদেশের সর্বময় কর্তৃত্ব ছিল এক নারীর হাতে, বিল্‌কিস। তিনি উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যাদি সম্পাদন করতেন; আর এজন্যই আল্‌-কুরআন তাঁর প্রশংসা করেছে। তাঁর সম্পর্কে কুরআনের বর্ণনা-    
“সে (বিল্‌কিস) বলল- হে পারিষদবর্গ! আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্র প্রাপ্ত হয়েছি। ‘এটি সুলাইমান (আ)-র নিকট হতে এবং পরম করুণাময়, অসীম দয়াময় আল্লাহ্ নামে অহমিকা করে আমাকে অমান্য করো না এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও।’ তিনি বললেন- হে পারিষদবর্গ! আমার এই সমস্যায় তোমরা পরামর্শ দাও; আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা তোমাদের উপস্থিতিতেই করি তারা বলল- আমরা তো শক্তিশালী কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই। কী আদেশ করবেন ভেবে দেখুন তিনি বললেন- রাজা-বাদশাহ্রা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্ত করে; তারাও একই আচরণ করবে আমি তাদের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি; দেখি দূতগণ কী উত্তর নিয়ে ফিরে আসেন।” [সূরা আন্‌-নামাল : ২৯-৩৫]


মসজিদ-ঈদগাহে মেয়েদের অংশগ্রহণ
মসজিদে যত ধরণের দ্বীনি অনুশীলন-ইবাদত সম্পাদিত হয় প্রায় সবগুলোতেই পুরুষদের সাথে মেয়েরা অংশগ্রহণ করত; রাসুল সা এবং পরবর্তীতে চার খলিফার যুগে (এমনকি বর্তমানেও পবিত্র কাবা ঘরে, নবীর মসজিদে এ রীতির প্রচলন লক্ষ করা যায়। এছাড়া উপমহাদেশের কিছু মসজিদেও এর ব্যবস্থা রয়েছে) বিষয়ে পবিত্র হাদিসে বহু বিবরণ এসেছে সহিহ্‌ মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে-তোমরা নারীদের মসজিদে যেতে নিষেধ করো না এই অনুমতি দিবারাত্রি সমস্ত সালাতের (নামাযের) জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য তা-সে অন্ধকারে ইশার (রাতের) সালাতের জন্য হোক, বা ভোরের সময় ফজরের সালাত জন্য হোক সহিহ্‌ বুখারি মুসলিমে একটি বর্ণনায় রয়েছে- রাতে সালাত আদায়ের জন্য তোমাদের স্ত্রীরা যদি মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চায় তাহলে তাদের অনুমতি দাও সহিহ্‌ বুখারি এবং মুসলিমের অন্য একটি হাদিসে আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন- মুসলিম নারীরা রাসুল (সা)-এ সাথে ফজরের সালাতে অংশগ্রহণ করত সে-সময় তাঁরা চাদরে আবৃত থাকত সালাত (নামায) শেষে যখন তাঁরা নিজ গৃহে ফিরে যেত তখন ভোরের অন্ধকারের জন্য তাদেরকে চেনা যেত না [তাহ্‌রিরুল মার্‌আহ্ফি আস্‌রির রিসালা /১৮১-১৯৪]
নবির যুগে মসজিদ কেবল সালাত আদায়ের স্থান ছিল না, বরং মসজিদ ছিল বিভিন্ন অনুশীলনের কেন্দ্র তাতে পুরুষ নারী উভয়েই অংশ নিত মেয়েরা সালাত ছাড়া তিকাফও (রমযান মাসের শেষ দশ দিন মসজিদে অবস্থান করে উপাসনায় মগ্ন থাকা) করত বুখারি ও মুসলিমে আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত- রাসুল (সা) রমযানের শেষ দশকে তিকাফ করতেন মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই রীতি পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর উম্মুহাতুল্‌ মুমেনিন (মুমিনদের মায়েরা, রাসুল সা-র স্ত্রীদের এই নামে সম্বোধন করা হয়) তাঁর এই আমল-কে অব্যাহত রেখেছিলেন [তাহ্‌রিরুল মার্‌আহ্ফি আস্‌রির রিসালা  /১৮১-১৯৪]
সালাত তিকাফ ছাড়াও, অনেক সময় মেয়েরা নিজ পরিবারের তিকাফরত সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাত করতে মসজিদে যেত সাধারণ জনসভাতেও তাঁরা অংশ নিত মসজিদে যে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হতো তাতে তাঁরা শরিক হত বিচারালয়ে তাঁরা উপস্থিত থাকত তাছাড়া অসুস্থদের শুশ্রূষা করতো। আবার কখনো মসজিদের পরিচর্যার কাজে মসজিদে আসত [তাহ্‌রিরুল মার্‌আহ্ফি আস্‌রির রিসালা  ২/১৮১-১৯৪]

ঈদগাহে মেয়েদের উপস্থিতির নির্দেশ রাসুল (সা) নিজেই দিয়েছেন। সহিহ বুখারিতে রয়েছে, উম্মে আতিয়া (রা) বর্ণনা করেছেন-রাসুল (সা) নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা যেন প্রাপ্তবয়স্কা বিবাহযোগ্য মেয়েদের, পর্দানাশীন মেয়েদের, এমনকি ঋতুবতী মেয়েদেরকেও ঈদগাহে নিয়ে যাই ঋতুবতী মেয়েরা সালাতে শামিল হবে না; তবে তাঁরা মুসলিম জাতির জন্য দুআ কল্যাণ-প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করবে রাসুল (সা) এ-অবধিও বলেছেন- যদি কোন মেয়ের চাদর না থাকে তাহলে সে যেন অন্য কোনো বোনের থেকে ওই দিনের জন্য একটি চাদর ধার নিয়ে নেয় [ত্বাবাক্বাতু ইব্‌নে সাদ  ৮/৩০৩-৩১০]

পৃথিবীর প্রায় সকল জাতি, ধর্ম সমাজে নানাবিধ সামাজিক কাজে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের অংশগ্রহণ একটি চিরপ্রচিলত নিয়ম বিভিন্ন ইবাদত, সামাজিক কার্যাদি ও আল্লাহ্‌র পথে নানাবিধ সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণ ও অংশগ্রহণের পদ্ধতি-কৌশল হাদিসে সবিস্তারে আলোচিত হয়েছে। সমাজকে সংঘবদ্ধ ও সমৃদ্ধ করতে সেই হাদিসগুলির পুনঃঅধ্যয়ন ও সে-অনুযায়ী কর্মসম্পাদনের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমার ধারণা। তবে মনে রাখতে হবে, তাতে যেন কোনোভাবে নারী-পুরুষ কারও মর্যাদা ক্ষুন্ন না হয়।
[পূবের কলম, দীনদুনিয়ায় প্রকাশিত]