Friday 29 January 2016

العصر الجاهلي - الوقائع والأمور الجاهلية: سؤالا وجوابا


 
العصر الجاهلي – الوقائع والأمور الجاهلية: سؤالا وجوابا 
 
الأسواق الجاهلية
س: ما هي أهم أسواق العصر الجاهلي؟
ج: أهم أسواق العصر الجاهلي: عكاظ، والمجنة، وذو المجاز.
س: ما هي أشهر أسواق الجاهلي؟
ج: أشهرها سوق عكاظ.
س: ما هي أقوى أسواق الجاهلي أثرا في تهذيب العربية؟
ج: أقواها سوق عكاظ أثرا في تهذيب العربية.  
س: أين ومتى تقوم سوق عكاظ؟
ج: تقوم عكاظ بين طائف ونخلة هلال ذي القعدة وتستمر إلى العشرين منه.
س: أين ومتى تقوم سوق المجنة؟
ج: تقع سوق المجنة في موسم الحج في بلاد قبيلة كنانة.
س: أين تقع سوق ذي المجاز؟
ج: تقع سوق ذي المجاز في شرق مكة المكرمة ويبعد عنها مسافة 21 كم.
 

أهول الحروب الجاهلية
س: بين من وقعت حرب البسوس؟
ج: وقعت حرب البسوس بين بكر وتغلب.
س: كم سنة دامت حرب البسوس؟
ج: استمرت هذه الحرب أربعين عاما.
س: بين من وقعت حرب داحس والغبراء؟
ج: وقعت حرب داحس والغبراء بين عبس وذبيان.
س: كم سنة دامت حرب داحس والغبراء؟
ج: دامت هذه الحرب أربعين سنة.
س: بين من وقعت حرب فجار؟
ج: وقعت حرب فجار بين كنانة وقيس.
س: كم سنة دامت حرب فجار؟
ج: دامت هذه الحرب عشرة أعوام.
س: بين من وقعت حرب بعاث؟
ج: وقعت هذه المعركة بين الأوس والخزرج.
س:  كم سنة استمرت حرب بعاث؟  
ج: استمرت حرب بعاث الأخيرة أربع سنوات.
س: من هو الملك الذي خرج لهدم الكعبة؟
ج: هو أبرهة.
س: ماذا يراد بأيام العرب؟
ج: يراد بأيام العرب الحروب التي وقعت بين القبائل العربية في الجاهلية.

الجمع والإعداد: عبد المتين وسيم الدين  

আরবী ও বাংলাঃ একটি তুলনামূলক আলোচনা


আরবী ও বাংলাঃ একটি তুলনামূলক আলোচনা
                                                                                      কাজী মাকীন

বাগদাদে সম্বর্ধিত কবিগুরু 

      উদারচিন্তক সাহিত্যপ্রেমী মাত্রেই অবগত থাকবেন যে, প্রাচীন সাহিত্যগুলির মধ্যে অন্যতম ও সমৃদ্ধ একটি সাহিত্য হলো আরবী সাহিত্য ইতিহাস অনুসারে যার পথচলা শুরু হয় খ্রিষ্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতক থেকে, যদিও এর অস্তিত্ব আরো আগে থেকে। প্রাক-ইসলামী যুগ থেকে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখা আঠারো শতকের শেষ ভাগে এসে আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই সাহিত্যসমুদ্রের মোহনায় মিলিত হয়। এখানে আমার মূল উদ্দেশ্য সাহিত্যের ইতিহাস বর্ণনা নয়; বরং ভারতে, বিশেষত বাংলায় এর চর্চা কতটুকু, দুটি সাহিত্যের মধ্যে চিন্তাগত সমন্বয় ইত্যাদি নিয়ে একটু আলোকপাত করা।
      প্রথমেই বলবো, একটি সুপাঠ্য ভাষা ও সাহিত্য হিসাবে এর গ্রহণযোগ্যতা সারা বিশ্বে তো বটেই, ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গেও ক্রমবর্ধমানএমনকি রাষ্ট্রসংঘ এই ভাষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর একে তার অন্যতম প্রশাসনিক ভাষারূপে যুক্ত করে এবং পরবর্তীতে ইউনেস্কো(UNESCO) বছরের এই দিনটিকেআন্তর্জাতিক আরবী ভাষা দিবস বলে স্বীকৃতি দেয় যাতে অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে এর মেলবন্ধন ঘটে। কিন্তু শুধু পঠনপাঠনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যে দুরূহ বা উন্নতির গতি যে শ্লথ হবেই তা বলা বাহুল্য। আমরা এর চর্চা কতটা করছি তা লক্ষ্যণীয়। এটা অনস্বীকার্য যে, বিদেশী ভাষারূপে এখানে এই ভাষার চর্চা প্রায় সবটাই academic
      যে কোনো বিদেশী সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ তৈরীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো অনুবাদ সাহিত্য, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি কোনো বিদেশী ভাষা তার পরিবর্তিত রূপ নিয়ে যদি বাংলা ভাষায় মিলিত হয় তাতে এই ভাষা আসলে সমৃদ্ধই হয়। বিদেশী ভাষা প্রসঙ্গে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অতিথি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন –
ইংরেজী শিক্ষার সার্থকতা আমাদের সাহিত্যে বঙ্গীয় দেহ নিয়ে বিচরণ করছে বাংলার ঘরে ঘরে, এই প্রদেশের শিক্ষানিকেতনেও সে তেমনই আমাদের অন্তরঙ্গ হয়ে দেখা দেবে, এজন্য অনেক দিন আমাদের মাতৃভূমি অপেক্ষা করেছে।” (ছাত্রসম্ভাষণ)
কিন্তু আক্ষেপের বিষয়, কিছু অনুবাদ হলেও অন্যান্য অনুদিত সাহিত্যের সঙ্গে তাল মেলাবে, আরবী সাহিত্যকে সেই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারিনি আমরাই। দায়বদ্ধতা আমাদের; তাই যত শীঘ্র সম্ভব পদক্ষেপ আমাদেরই নিতে হবে।
*     *
      এবার আসি সমন্বয়ের প্রসঙ্গে। সীমিত পঠিত সাহিত্যের উপর নির্ভর করেই উভয় সাহিত্যের মধ্যে যে নির্যাস খুঁজে পেয়েছি তা থেকেই কবি-লেখকদের চিন্তাধারার মিলন সন্ধানে ব্রতী হয়েছি। তবে প্রকাশের ভাষা ভিন্ন হলেও চিন্তার ভাষা যে সকল ভাষাভাষীর মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতেই পারে এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। উল্লেখ্য যে, সীমাবদ্ধ জ্ঞান ও পরিসরের কারণে শুধুমাত্র কবিতায় মিল খোঁজার প্রয়াস করলাম। আধ্যাত্মিকতা, স্বাধীনতা, উপমা, চিত্রকল্প বর্ণনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বহু কবিরই চিন্তার নৈকট্য লক্ষ্য করা যায়। তারই কিছু বিবরণ এখানে তুলে ধরলাম।
      শুরু করতে পারি নজরুলের হামদ (আল্লাহর প্রশংসা) ও নাত (নবীর প্রশংসা) সূচক কবিতাগুলি নিয়ে। এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হয় হামদ ও নাত মূলত সপ্তম শতকের শুরু থেকে আরবী সাহিত্যের একটি বহুল প্রচলিত শাখা। নজরুলের হাত ধরে যার বাঙলা রূপ বাঙলা সাহিত্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়াও নজরুলের হাত ধরেই কোরানের উন্নত সাহিত্যগুণ বাঙলা সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে কোরানের বেশ কিছু অধ্যায়ের কাব্যিক অনুবাদ দ্বারা।

      উভয় সাহিত্যের বহু কবিতাতেই আধ্যাত্মিকতার অনুপম নির্যাস খুঁজে পাওয়া যায়। এ যুগের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় তার এই মেঘ থেকে বৃষ্টিকবিতায় এক অপ্রতিরোধ্য পরিণতির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, যার সামনে জীবন তুচ্ছ
দিন যাচ্ছে, যাবে
প্রকৃতই কি যাচ্ছে দিন? থেমে নেই? স্থবিরতা নেই?
মৃত্যুর মহান আসে জীবনের তুচ্ছতার কাছে।
যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলির ২৬ সংখ্যক কবিতায় তার শেষ পরিণতির আত্মোপলব্ধি দেখতে পাই
আর নাই রে বেলা, নামল ছায়া
ধরণীতে,
এখন চল রে ঘাটে কলসখানি
ভরে নিতে।
আব্বাসী যুগের কবি আবুল আতাহিয়ার উপদেশমূলক কবিতায় পাই মৃত্যুর অবশ্যম্ভাবিতা; তবুও শেষের কথা না ভেবে আমরা মত্ত থাকি পার্থিব বিলাসবৈভবে। তার কথায়
বিনোদনে মত্ত মোরা, কেটে যায় ক্ষণ।
জীবনে মগ্ন খেলায়, খেলিবে না যম।”(বঙ্গানুবাদ)
আবার গীতাঞ্জলিরই ১২০ সংখ্যক কবিতায় রবি ঠাকুরের ঐশ্বরিক আত্মোপলব্ধি অনুভব করি
সীমার মধ্যে অসীম তুমি
বাজাও আপন সুর।
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ
তাই এত মধুর।
প্রায় একই ভাবধারার উন্মেষ ঘটেছে ইরাকী কবি ইবনুল ফারিযের কবিতার ছত্রে, যার ভাবার্থ হলো
তুমি যদি আল্লাহপ্রেমে বিলীন হয়ে যাও,
তবেই তোমার নিজেকে একজন সার্থক, কৃতার্থ মানব বলে মনে হবে।

      বিশ্বকবি, বাঙালীর অকারণ স্বাজাত্যবোধের কূপমণ্ডুকতা ত্যাগ করে স্বাধীনচেতা হয়েছেন। তার কথায় – “সকলের চেয়ে অনর্থক কৃপণতা, বিদ্যাকে বিদেশী ভাষার অন্তরালে দূরত্ব দান করা, ফসলের বড়ো মাঠকে বাইরে শুকিয়ে রেখে টবের গাছকে আঙ্গিনায় এনে জলসেচন করা।(ছাত্রসম্ভাষণ)
তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এমন এক পৃথিবীর
যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গনতলে দিবস শর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি

একইভাবে বিদগ্ধ আধুনিক আরবী সমালোচক-কবি আব্বাস মাহমূদ আল আক্কাদ স্বাধীন ভূমির স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুবসমাজের কাছে আবেদন করেছেন তারসাকরানকবিতায়

আমাদের থেকে পরাধীনতাকে দূরে সরিয়ে দাও
আর স্বাধীনতাকে নিকটবর্তী কর।
----------
চূর্ণবিচূর্ন করে দাও অকল্যানের প্রাচীরকে
যতই দৃঢ় হোক না কেন সে প্রাচীর।”(বঙ্গানুবাদ)
ওপার বাংলার কবি শামসুর রহমান তার স্বাধীনতা তুমিকবিতায় স্বাধীনতার প্রতি স্নিগ্ধ আবেগ ও আশার প্রকাশ করেছেন
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ীর কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোষ্টার।”**
একই আশার অন্যরূপ প্রতিধ্বনি ঘটেছে কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়েরস্বাধীনতা কবিতায়
স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাঁচিতে চায়।
দাসত্ব শৃঙ্খল কে পরিবে পায় হে
কে পরিবে পায়।
যে সুর এক হয়ে গেছে আধুনিক আরবী কবিসম্রাট আহমাদ শাওকীর কবিতাআর-রিক্কু ওয়াল-হুররিয়্যাহ(পরাধীনতা ও স্বাধীনতা)’-তে
দাসত্বের শৃঙ্খলে জীবনের মাধুর্য তিক্ত হয়ে যায়।
দাসত্ব শৃঙ্খল মুক্তারচিত হলেও তা বহনযোগ্য নয়।”(বঙ্গানুবাদ)

      আবার প্রেমের কবিতায় কবি অসীম সাহা তার একজন বিভা’(বাংলাদেশের নির্বাচিত কবিতা)-য় প্রেমিকার তুলনা দিয়েছেন বন্য হরিণীর সঙ্গে, কখনো বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে
তোমার চোখে দেখেছিলাম বন্য হরিণীর চঞ্চলতা,
তোমার সারা অঙ্গে উঁচুনিচু পাহাড়ের উদ্ধৃত আবেগ।”**
প্রেমাস্পদের বিবরণে এইরূপ রোমান্টিকতা আরবীর প্রাচীন যুগেই আমরা দেখেছি ইমরাউল কায়েসেরমুয়াল্লাকাকবিতায়
আর সে ওয়াজরার* শাবক-বিশিষ্ট বন্য হরিণীর ন্যায় তাকিয়ে থাকে।
যখন সে গ্রীবা উত্থিত করে তা শ্বেতমৃগের গ্রীবার ন্যায় প্রতিভাত হয়।”(বঙ্গানুবাদ)
আব্বাসী যুগে এসেও খুঁজে পাই এইরূপ বিবরণ ইবনে রূমীরগায়িকা ওয়াহিদ কবিতায়
সে ছিল তরতাজা বৃক্ষের ন্যায় কোমলদেহী,
হরিণীর মতো আঁখিদ্বয় ও গ্রীবা
তার দেহবল্লরীকে আরো সুশোভিত করে তুলেছে।”(বঙ্গানুবাদ)

      প্রাকৃতিক চিত্রকল্প রূপায়নেও কোনো সাহিত্যই কম যায় না। দারিদ্র্যের সামনে সৌন্দর্যের নিরর্থকতা বোঝাতে কী নিখুঁত ভাবে কবি সুকান্ত পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটির সঙ্গে তুলনা করেছেন
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”**
অনুরূপভাবে রোম্যান্টিক আরবী কবি খলীল মুত্বরান তারআল-মাসা(সন্ধ্যা)’ কবিতায় জীবনসায়াহ্নে বেদনার শেষ অশ্রুবিন্দুর উপমা দিয়েছেন সমুদ্রে অস্তাচলগামী রক্তিম সূর্যের ডুবে যাওয়ার সঙ্গে
সূর্যের কিরণ ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয় মেঘের অন্তরালে
তারপর ডুবে যায় রক্তিম অশ্রুবিন্দুর মতো
যেন এটা সৃষ্টির শেষ অশ্রুবিন্দু, যা
একাকার হয়ে গেছে আমার অন্তিম আঁখিনীরবিন্দুর সঙ্গে”(বঙ্গানুবাদ)
আবার আল-মাহমুদ নিখুঁত সুন্দরভাবে চাঁদের চিত্রকল্প ফুটিয়ে তুলেছেন
কখন যে চাঁদ ওঠে আড়াআড়ি পাহাড়ের ফাঁকে;
যেন কার পাথুরে স্তনের কাছে ঝুলে শাদা
চাঁদির লকেট।”**

      এভাবে সাহিত্যের প্রতিটি শাখাতেই আমরা ভাবের মিলন অনায়াসে খুঁজে পাবো। কিন্তু আমরা লোকদেখানো ভাষা বা সাহিত্য প্রেম দেখাতে গিয়ে তুলনামূলক সাহিত্যচর্চার উপকারিতা ও অনাস্বাদিত উপলব্ধি থেকে নিজেদেরই বঞ্চিত করি। তদুপরি বর্তমানে কিছু কূপমণ্ডুক মানুষ তথা মিডিয়া(বিশেষতঃ আনন্দবাজার পত্রিকাগোষ্ঠী) কোনো অজ্ঞাত কারণে এটা প্রমান করতে বদ্ধপরিকর যে এটা সন্ত্রাসীদের ভাষা, সন্ত্রাসের ভাষা—যা কোনোভাবেই কাম্য ও সমর্থনযোগ্য নয়। সন্ত্রাসের নিজস্ব ভাষা থাকতে পারে, কিন্তু কোনো ভাষা সন্ত্রাসের কীভাবে হয়? তাহলে কীভাবে রাষ্ট্রসংঘের মতো সংগঠন এরকম একটি ভাষাকে এতটা স্বীকৃতি দেয়? এই ধরণের নীচ প্রচার সাহিত্যপিপাসুদের স্পৃহাকে তিলে তিলে নষ্ট করে, তা বলা বাহুল্য। আমি দৃঢ়বিশ্বাসী, ভাষাটি সম্বন্ধে ন্যূনতম ধারণা না রেখেই এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হওয়া অন্তত প্রকৃত সাহিত্যমোদীর পরিচয় নয়। সাহিত্যের রসাস্বাদন করে যারা তৃপ্তি পান, তুলনামূলক সাহিত্যরস যে আরো তৃপ্তিদায়ক—তারা খুব ভালো জানেন।
      এই প্রবন্ধ রচনার পিছনে আমার উদ্দেশ্য তাদের প্রলুব্ধ করা এমন এক স্বপ্নময় জগতের দিকে, যা যে কোনো তৃষিতের তৃষ্ণাকে নিবারণ করবে। আমাদের মনে রাখা উচিত, সাহিত্য কোনো ধর্মের নয়; সাহিত্য কোনো ব্যক্তির নয়; সাহিত্য একটি ভাষার আর ভাষা একটি জাতির।

*ওয়াজরা- স্থানের নাম

**বর্ণনাসুত্রঃ ‘বাংলাদেশের আধুনিক কাব্যপরিচয়’- দীপ্তি ত্রিপাঠী।



কাজী মাকিন
স্নাতকোত্তর (আরবি সাহিত্য), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় 

আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী

আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী  

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

নাম ও পরিচিতিঃ

ইসলাম-পূর্ব যুগে আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর নাম ছিল ব্দুশ্‌ শামস্। ইসলাম গ্রহণের পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাঁর নাম রাখেন আব্দুর্‌ রাহ্‌মান। তাঁর উপনাম আবু হুরায়রাহ্‌ (বিড়ালছানার পিতা) বিড়ালছানার প্রতি তাঁর আসক্তি, বিড়ালছানা নিয়ে নানা রকমের ক্রীড়াকৌতুকের কারণে রাসূল (সাঃ) তাঁকে আদর করে আবু হুরায়রাহ্‌ বলে ডাকতেন। তিনি নিজেও রাসুল (সাঃ)-এর দেওয়া নামটি খুব পছন্দ করতেন পিতার নাম সাখ্‌র আর মায়ের নাম উমাইয়া। দাওস গোত্রের সন্তান বলে তাঁকে আবু হুরায়রাহ্‌দ্‌-দাওসী নামেও অভিহিত করা হয়।

 

ইসলাম গ্রহণঃ

বিশুদ্ধ মতে, বিখ্যাত সাহাবী তুফায়িল ইব্‌নু ম্‌র আদ্‌-দাওসী (রাঃ)-এর দাওয়াতে ৭ম হিজরীতে খাইবার বিজয়ের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। মদীনায় আসার পর দাওস গোত্রের এ যুবক নিরবচ্ছিনভাবে রাসূল (সাঃ)-এর খিদমত ও সাহচর্য অবলম্বন করেন। আহ্‌লু সুফ্‌ফার সদস্য হিসেবে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা মসজিদে নববীতে অবস্থান করতেন। সব সময় রাসূল (সাঃ)-এর কাছ থেকে শিক্ষাদীক্ষা গ্রহণ করতেন। নানা বিষয়ে আলাপআলোচনা শুনতে পেতেন।

 

হাদিস শাস্ত্রে অবদানঃ

আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) হলেন সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি। সহীহ বুখারীতে তাঁর বর্ণিত একটি হাদীসে রয়েছে তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে একমাত্র আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) ব্যতীত আর কেউ আমার থেকে বেশী হাদিস বর্ণনাকারী নেই। আর তা এজন্য যে, তিনি (আব্দুল্লাহ বিন্‌ উমার রাঃ) হাদিস লিখতেন, আর আমি লিখতাম না। রাসুল (সাঃ) থেকে এতো বেশী হাদিস বর্ণনার ব্যাপারটি অনেকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতো। তাই তিনি বলেন, তোমরা হয়তো মনে করছো আমি খুব বেশী হাদিস বর্ণনা করছি। আমি ছিলাম রিক্তহস্ত, দরিদ্র্য, পেটে পাথর বেঁধে সর্বদা রাসুল (সাঃ)-এর সাহচর্যে কাটাতাম। আর অন্যান্য সাহাবীদের মধ্যে মুহাজিররা ব্যস্ত থাকতো তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং আনসাররা তাদের ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে। তিনি আরও বলেন, একদিন আমি বললাম, নবীজি (সাঃ) আমি আপনার অনেক কথাই শুনি কিন্তু তার কিছু কথা, কখনো অনেক কথাই ভুলে যাই। একথা শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন, “তোমার চাদরটি মেলে ধরো। আমি মেলে ধরলাম। রাসূল (সাঃ) ফুঁ দিলেন এবং বললেন, “তোমার বুকের সাথে চাদরটি লেপ্টে ধরো। আমি লেপ্টে ধরলাম। এরপর থেকে আর কোনো কথাই ভুলিনি। ইমাম বুখারী (রাহঃ)-এর মতে, আটশরও বেশী সাহাবী ও তাবেয়ী তাঁর নিকট থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। সাহাবীদের মধ্যে যাঁরা তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইব্‌নু আব্বাস, ইব্‌নু উমার, জাবির, আনাস, ওয়াসিলা (রাঃ) প্রমুখ।

 

প্রাত্যহিক জীবন ও শাসনকার্যঃ

দ্বিতীয় খলিফা উমার (রাঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বাহ্‌রাইনের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। পরে তাঁকে অপসারণ করেন। তারপর আবার নিযুক্ত করতে চাইলে তিনি প্রত্যাখান করেন এবং মদীনা ছেড়ে আকীক নামক স্থানে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন। মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর শাসনামলে আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) একাধিকবার মদীনার শাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তবে শাসন ক্ষমতা তাঁর স্বভাবগত মহত্ব, উদারতা ও অল্পেতুষ্টি ইত্যাদি গুণাবলীতে কোনো পরিবর্তন সৃষ্টি করতে পারেনি।
অগাধ জ্ঞান, সীমাহীন বিনয় ও উদারতার সাথে আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-এর মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহ প্রীতির এক পরম সম্মিলন ঘটেছিল। তিনি দিনে রোযা রাখতেন, রাতের তিন ভাগের প্রথম ভাগ নামাযে অতিবাহিত করতেন। তারপর তাঁর স্ত্রীকে ডেকে দিতেন। তিনি রাতের দ্বিতীয়ভাগ নামাযে কাটিয়ে তাদের কন্যাকে জাগিয়ে দিতেন। কন্যা রাতের বাকী অংশটুকু নামাযে দাঁড়িয়ে অতিবাহিত করতেন। এভাবে তাঁর বাড়ীতে সমগ্র রাতের মধ্যে কখনো ইবাদত বন্ধ হতো না। বিখ্যাত পণ্ডিত ক্‌রামা বলেন, আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)  প্রতিদিন বার হাজার বার তাসবীহ পাঠ করতেন। তিনি বলতেন, আমি আমার প্রতিদিনের পাপের সম পরিমাণ তাসবীহ পাঠ করে থাকি। আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) নিজে যেমন মুরুব্বিদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন, তেমনি সকলকে তিনি উপদেশ দিতেন মাতাপিতার সাথে সদাচরণের, আত্মীয় স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার। একদিন তিনি দেখতে পেলেন, দুজন লোক পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে একজন অন্যজন থেকে অধিকতর বয়স্ক। কনিষ্ঠজনকে ডেকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সঙ্গে যে লোকটি হাঁটছেন, তিনি তোমার কে হন? ছেলেটি উত্তর দিল, আমার আব্বা তিনি বললেন, তুমি কখনো তাঁর নাম ধরে ডাকবে না, তাঁর আগে আগে চলবে না এবং তাঁর বসার আগে কোথাও বসবে না।

 

মৃত্যুঃ
অন্তিম রোগ শয্যায় আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) আকুল হয়ে কাঁদছেন। জিজ্ঞেস করা হলো কাঁদছেন কেন? উত্তর দিলেন, তোমাদের এ দুনিয়ার জন্য কাঁদছি না। কাঁদছি দীর্ঘ ভ্রমণ ও স্বল্প পাথেয়র কথা চিন্তা করে। যে পথটি জান্নাতে বা জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছেছে, আমি এখন সেই পথের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। জানি না, আমার এই পথ আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে। আল্লামা ইব্‌নু হাজার আস্‌কালনী (রাহঃ) ল্‌-ইসাবা গ্রন্থে আবু সুলাইমানের সূত্রে উল্লেখ করেছেন, আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) ৭৮ বছর বেঁচে ছিলেন। রাসুল (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল তিরিশ বছরের কিছু বেশী। অনেকের মতে, তিনি ৫৫ হিজরিতে পরলোকগমন করেন। কিন্তু বিখ্যাত পণ্ডিত ওয়াকেদীর মতে, তাঁর মৃত্যু ৫৯ হিজরিতে হয়েছিলতবে ইমাম বুখারী (রাহঃ)-এর মতে তিনি ৫৭ হিজরিতে মৃত্যু বরণ করেন। 

অধিক হাদিস বর্ণনার কারণঃ

আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) মাত্র তিন বছর রাসুল (সাঃ)-এর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। অথচ তাঁর থেকে ৫৩৭৪টি হাজার হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মাত্র তিন বছর সময়ে এত সংখ্যক হাদিস বর্ণনা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছিল তিনটি কারণে 

 

() আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) শেষ তিনটা বছর খেয়ে না খেয়ে রাসুল (সাঃ)-এর নিকট পড়ে থাকতেন। তিনি ছিলেন আহ্‌লু সুফ্‌ফার একজন। মুহাজিররা যখন বাজারে ব্যস্ত থাকতেন আর আনসাররা যখন নিজেদের সম্পদের দেখাশনা করতেন, তখনও তিনি রাসুল (সাঃ)-এর সাথে থাকতেন। ফলে অনেক হাদিস তার পক্ষে শোনা সম্ভব হতো, তা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হতো না।

 

() তাঁর স্মরণশক্তি ছিল প্রখর। সেটা আসলে ছিল রাসুল (সাঃ)-এর একটি মুজিযাএকবার তিনি স্মরণশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ করায় রাসুল (সাঃ) তাঁকে তাঁর চাদর বিছিয়ে দিতে বলেনঅতঃপর রাসুল (সাঃ) ওই চাদরের উপর নিজের দুহাত ফেরে তাঁকে চাদরটি জড়িয়ে নিতে বলেন। এরপর থেকে তিনি আর কোনো হাদিস ভুলেননি

 

() তাঁর ছাত্র সংখ্যা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ফলে তাঁর একটি বর্ণনা বিভিন্ন সূত্রে মুহাদ্দিসদের (রাহঃ) নিকট এসে পৌঁছেছে। আর এভাবে তাঁর বর্ণীত হাদিসগুলি স্মৃতির পাতা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, বরং তা ধীরে ধীরে খাতায়-পাতায় স্থান পেয়ে অমরত্ব লাভ করেছে।