Wednesday 30 January 2019

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম - আশংকা


 আশংকা 

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

মেয়েটি দেখতে বেশ ভালোই। তবে, লেখাপড়ায় আগুন। উচ্চমাধ্যমিকে নজর কাড়া ফলাফল। মুসলিম। বাবা গরীব। এলাকা রক্ষণশীল। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে পিতা কোচিং-এর ব্যবস্থা করলেন। মেয়েটি বাবার আশা পূর্ণ করল। ডাক্তারি পড়তে চলে এলো কোলকাতায়। তৃতীয় বছরের মাথায় এক হিন্দু ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেল। গরীব পিতার একমাত্র মেয়ে। আর ছেলেটি এক বিশেষ সংগঠনের সদস্য। 

দুঃখের বিষয়, ঐ গ্রাম থেকে বহু বছর আর কোনও মেয়ে কোলকাতায় পড়তে আসেনি...



মাহ‌মুদ দারবিশঃ বাবা, আমি ইউসুফ


বাবা, আমি ইউসুফ।

বাবা! আমার ভায়েরা 
আমায় ভালোবাসে না
আমায় তাঁদের সঙ্গে নিতে চায় না।

বাবা! তাঁরা আমায় হিংসা করে, জ্বালায়
আমার দিকে পাথর ছুঁড়ে
আরও ছুঁড়ে কথার বাণ ।
তাঁরা আমার মৃত্যু চায়
তাই মিছেমিছে প্রশংসা বিলায়।
তাঁরাই বন্ধ করে দিয়েছে, বাবা
তোমার দরজা
আমার মুখের উপর।
নিজ ভিটে থেকে
আমায় করেছে বিতাড়িত;
তাঁরাই ছড়িয়ে দিয়েছে বিষ
আমার দ্রাক্ষাকুঞ্জে
বাবা, তাঁরাই গুড়িয়ে দিয়েছে
আমার খেলনাগুলো ।

যখন কৌতুক বুলিয়ে যায়
বহমান মৃদু বাতাস, আমার চুলে  
তাঁরা কাতর হয়ে পড়ে ঈর্ষায়
আর আক্রমণ করে আমাকে, আক্রমণ করে তোমাকে;
বাবা, তাঁদের এমন কী  ক্ষতি করেছি আমি ? 
প্রজাপতিরা বিশ্রাম নেয়, আমার কাঁধে বসে
কুর্নিশ করে আমায় গমের শিসগুচ্ছ
আর পাখিরা উড়ে এসে বসে, আমার হাতের উপরে;
তাহলে কী ভুল করেছি আমি, বাবা
কেন এত লাঞ্ছনা আমার তরে ?

বাবা, তুমিই তো আমার নাম রেখেছো ইউসুফ;  
তাঁরা ঠেলে দিয়েছে আমায় কুয়োর অতলে  
আর দোষ চাপিয়েছে নেকড়ের ঘাড়ে;
ওই যে নেকড়েটা, বোধ করি সে-ও অধিক দয়ালু
আমার ভাইদের চেয়ে
বাবা, আমি যখন বলেছিলাম 
আমি স্বপ্নে দেখেছি, একাদশ গ্রহ নিয়ে চন্দ্র-সূর্য
রয়েছে হাঁটু গেড়ে আমার সামনে;
আমাকে সাজ্‌দা করছে তারা।”
আমি কি তখন কারুর কোনো ক্ষতি করেছিলাম, বাবা?   

[ইউসুফ (আ) একজন নবি অর্থাৎ আল্লাহ্‌-প্রেরিত দূত। বাইবেলে তাঁকে জোসেফ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। শৈশবে তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে জঙ্গলে একটি কূপে ফেলে দেয়; হিংসা ও বিদ্বেষে উন্মাদ হয়ে। ভাগ্যক্রমে একটি যাত্রীদল তাঁকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে চড়া দামে মিশরের বাজারে মিশরের আযীয (সে-সময় মিশরের সম্রাটকে আযীযু মিস্‌র বলা হতো)-এর কাছে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে তিনি মিশরের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন এবং অর্থের সমবণ্টন, ক্ষমা ও ন্যায় বিচারের জন্য ভুবনজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন। কবি এখানে ফিলিস্তিন-ইজরায়েল সংঘাতকে এই ঘটনার মোড়কে উপস্থাপন করেছেন বলে আমার ধারণা। কারণ, উভয় জাতিই আরবীয় ও উভয় আদর্শই সেমেটিক; যেন উৎসমূলের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা সহোদর। এই অনূদিত কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় শব্দের মিছিল, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮-এর অনুবাদ বিভাগে। এখানে তারই পুনঃপ্রকাশ।] 


أنا يوسف يا أبي
محمود درويش - فلسطين

أَنا يوسفٌ يا أَبي.
يا أَبي، إخوتي لا يحبُّونني،
لا يريدونني بينهم يا أَبي.

يَعتدُون عليَّ ويرمُونني بالحصى والكلامِ
يرِيدونني أَن أَموت لكي يمدحُوني
وهم أَوصدُوا باب بيتك دوني
وهم طردوني من الحقلِ
هم سمَّمُوا عنبي يا أَبي
وهم حطَّمُوا لُعبي يا أَبي

حين مرَّ النَّسيمُ ولاعب شعرِي
غاروا وثارُوا عليَّ وثاروا عليك،
فماذا صنعتُ لهم يا أَبي؟
الفراشات حطَّتْ على كتفيَّ،
ومالت عليَّ السَّنابلُ،
والطَّيْرُ حطَّتْ على راحتيَّ
فماذا فعَلْتُ أَنا يا أَبي،
ولماذا أَنا؟ 

أَنتَ سمَّيتني يُوسُفًا،
وهُمُو أَوقعُونيَ في الجُبِّ، واتَّهموا الذِّئب;
والذِّئبُ أَرحمُ من إخوتي..
أبتي! هل جنَيْتُ على أَحد عندما قُلْتُ إنِّي:
رأَيتُ أَحدَ عشرَ كوكبًا، والشَّمس والقمرَ، رأيتُهُم لي ساجدين؟

অ্যাডোনিসঃ পতন


 পতন 
মূল- অ্যাডোনিস, সিরিয়া
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

আমি বাস করি, নিজের ভাষা নিয়ে
মহামারী আর আগুনের মাঝে
মূক ও বধিরদের সাথে, এই বাক্‌হীন পৃথিবীতে।
আমি বাস করি, আপেলের বাগানে
স্বর্গালোকে 
প্রথম আনন্দ আর প্রথম হতাশা নিয়ে
মা হাওয়া-র উপস্থিতিতে
সেই অভিশপ্ত গাছ ও ফলের মালিকের সম্মুখে...। 
                        
আমি বাস করি, মেঘ আর বিদ্যুতের মাঝে
ক্রমশ বড় হয় এমন এক পাথরের গহ্বরে
এমন এক গ্রন্থের পাতায় পাতায়
যে গ্রন্থটি বলে দেয় সব গোপন-কথা

আর শোনায় পতনের কাহিনী

[অনূদিত এই কবিতাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় শব্দের মিছিল, জানুয়ারী ৩১, ২০১৮-এর অনুবাদ বিভাগে। এখানে তারই পুনঃপ্রকাশ।



السقوط
أدونيس
أعيش بين النار والطاعونْ
مع لغتي - مع هذه العوالم الخَرْساءْ
أعيش في حديقة التفّاح والسماءْ
في الفَرح الأول والقنوط
بين يديْ حواءْ -
سيّدَ ذاك الشجرَ الملعونْ
وسيّد الثمارْ ؛
...
أعيش بين الغيم والشرارْ
في حجرٍ يكبر ، في كتابٍ
يعلّم الأسرارَ والسقوطْ.

Saturday 26 January 2019

মাহমুদ দারবিশঃ পাসপোর্ট



আমাকে চিনতে পারেনি ওরা, অন্ধকারে
যে অন্ধকার শুষে নিয়েছিল সব রং
আমার পাসপোর্টের 
ওদের কাছে আমার ক্ষতগুলো ছিল
নিখাদ লোক-দেখানো
ভালোবেসে ছবি সংগ্রহ করে
এমন পর্যটকদের জন্য;  
ওরা চিনতে পারেনি আমাকে
আমার হাতের তালু ইদানীং
সূর্যবিহীন, আমাকে যে চেনে
এখানকার সকল গাছপালা
চেনে বৃষ্টি, বৃষ্টির সকল গান;
তাই আমাকে ছেড়ে যেও না
ফেলে যেও না বিবর্ণ ক’রে চাঁদের মতো!

যে চড়ুই পাখীরা
অনুসরণ ক’রে আমার হাতের তালুকে
ছুঁয়েছিল দূরবর্তী বিমানবন্দরের দরজা
গমে-ভরা বিস্তৃত এই মাঠ
এখানকার সব ক’টা জেলখানা
শ্বেত সমাধির সকল পাথর
কাঁটাতারে ঘেরা এই সীমানা
দুলতে থাকা সব ক’টা রুমাল, সকল দৃষ্টি
সবই ছিল আমার সাথে  
অথচ এসব কিছুকে
কেড়ে নিয়েছে ওরা আমার পাসপোর্ট থেকে

এই দু’হাত দিয়ে বহু দিন যত্ন নিয়েছি যে-মাটির
সেই মাটিতেই আজ আমি অচেনা
সেই মাটিতেই হারিয়ে গেছে
আমার নাম, আমার ঠিকানা
এই লজ্জা এখন আমি কোথায় রাখি!
আজকের অসহায় আইয়ুবরা
আকাশ কাঁপিয়ে আর্তনাদ করছে, 
স্থাপন করো না আর কোনো দৃষ্টান্ত
আমাদের নামে, হে সুশীল সমাজ!
হে বার্তাবাহকরা, জিজ্ঞেস করো না আর 
গাছপালাগুলোকে তাদের নাম 
জানতে চেয়ো না উপত্যকাসমূহের কাছে
তাদের মাতৃ-পরিচয়
এখন আমার ললাট থেকে
বিচ্ছুরিত হচ্ছে আলোর তরবারি
স্ফুরিত হচ্ছে নদীর জল

আমার হাত থেকে ঝর্ণাধারার মতো
প্রতিটি মানব-হৃদয় এখন আমার রাষ্ট্র
অতএব নিয়ে যাও আমার এই পাসপোর্ট!


[ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি মাহ্‌মুদ দারবিশ (১৯৪১-২০০৮) নিজ কবিতার দ্বারা আন্তর্জাতিক মননে সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। বিশ্বব্যাপী পাঠকবর্গ তাঁর কবিতার মাধ্যমে জানতে পারেন ফিলিস্তিনের হালহকিকত দেখতে পান ফিলিস্তিনিদের সমস্যা-সংগ্রাম-সংস্কৃতি সম্পর্কিত সঠিক বাস্তব ছবি তাঁর শব্দের ক্যানভাসে

আইয়ুব। হিব্রু ইসলামি সাহিত্যে একজন নবির নাম তাওরাত (ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ)-এর একটি অধ্যায়ের নামআইয়ুব সাহিত্যমানের বিচারে অত্যন্ত সমৃদ্ধ উন্নত সাহিত্যকীর্তি সেটি সেই অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে আইয়ুবের (আঃ) কথা ফুটে উঠেছে অসহায় নিষ্পাপ মানুষদের নির্যাতিত হওয়ার করুণ ছবি সেই সূত্র ধরেই কবি এখানে বর্তমান নির্যাতিত-নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জাতিকে আইয়ুব বলে সম্বোধন করেছেন। এই কবিতায় তিনি প্রকাশ করেছেন, কীভাবে ইসরাইলি আগ্রাসন তাঁদের সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে; এমনকি তাঁদের পরিচয়টুকুও। এই অনূদিত কবিতাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় শব্দের মিছিল, জানুয়ারী ২৬, ২০১৯-এর অনুবাদ বিভাগে। এখানে তারই পুনঃপ্রকাশ।



جواز سفر
محمود درويش

لم يعرفوني في الظلال التي
تمتصّ لوني في جواز السفر
و كان جرحي عندهم معرضا
لسائح يعشق جمع الصور
لم يعرفوني، آه.. لا تتركي
كفي بلا شمس
لأن الشجر
يعرفني ..
تعرفني كل أغاني المطر
لا تتركيني شاحبا كالقمر !
كلّ العصافير التي لاحقت
كفي على باب المطار البعيد
كل حقول القمح ،
كل السجون،
كل القبور البيض
كل الحدود ،
كل المناديل التي لوّحت ،
كل العيون
كانت معي، لكنهم
قد أسقطوها من جواز السفر
عار من الاسم من الانتماء؟
في تربة ربيتها باليدين ؟
أيوب صاح اليوم ملء السماء:
لا تجعلوني عبرة مرتين !
يا سادتي! يا سادتي الأنبياء
لا تسألّوا الأشجار عن اسمها
لا تسألوا الوديان عن أمها
من جبهتي ينشق سيف الضياء
و من يدي ينبع ماء النهر
كل قلوب الناس ..جنسيتي
فلتسقطوا عني جوار السفر !