Thursday 8 September 2022

নবী (সাঃ)-এর হিজরতের কারণ ও ফলাফল



ইসলামী আন্দোলনের পথ
, সত্যের পথ, বিপ্লবের পথ আজীবন কাঁটায় ভরা। তবে রজনী যতই গভীর হয়, সোনালী ঊষার আবির্ভাবও ততই নিকটবর্তী হয়। তাই আমরা দেখতে পাই, বাতিল শক্তির আঘাত যখন চরমে ওঠে তখন সত্যপন্থীরা মাতৃভূমির হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ত্যাগ করে অন্যত্র হিজরত করতে বাধ্য হয়। এমনকি এক ক্রান্তিলগ্নে মহানবী (সাঃ) জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন।
 
হিজরতের অর্থঃ  
হিজরত শব্দটি আরবি হাজরুনশুব্দমূল থেকে নির্গত। এর অর্থ হল একস্থান থেকে অন্যস্থানে বের হওয়া, দ্বিতীয় অবস্থানের জন্য প্রথম অবস্থান ছেড়ে দেয়া, ত্যাগ করা, জন্মভূমি ত্যাগ করা, সম্পর্কচ্ছেদ করা ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জনের মানসে ইসলামের পতাকা সমুন্নত করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশে আশ্রয় গ্রহণ করাকে হিজরত বলে। আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি বলেন, হিজরত হল বিবাদ বিপর্যয়ের ভয়ে এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দারুল কুফর ত্যাগ করে দারুল ইসলামে প্রস্থান করা। তবে ইসলামের ইতিহাসে হিজরত বলতে মক্কার কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নবুয়ত প্রাপ্তির ১৩তম বছর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে আবু বকর (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে মহানবী (সাঃ)-এর মক্কা থেকে মদিনায় দেশান্তরিত হওয়াকে বুঝায়।
 
হিজরতের কারণঃ
মহানবী (সাঃ)-এর হিজরতের কারণকে দুই দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ণয় করা যায় প্রত্যক্ষ কারণ এবং পরোক্ষ কারণ। নিম্নে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলঃ  
 
(ক) প্রত্যক্ষ কারণঃ
) আকাবার শপথঃ
আকাবার প্রথম ও দ্বিতীয় শপথের পর মদিনায় ইসলাম ধর্ম দ্রুত প্রসার লাভ করতে থাকে। বিশেষ করে দ্বিতীয় শপথের পর মদিনার নবদীক্ষিত মুসলমানগণ মহানবী (সাঃ)-কে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য মদিনায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। সে সময় হতেই ইয়াসরিবে যাওয়ার পরিকল্পনা হযরতের মনে স্থান লাভ করে।
 
) অভিজাত কুরাইশদের বিরোধিতাঃ
মক্কার অভিজাত কুরাইশরা প্রথম থেকেই ইসলাম প্রচারের পথে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছিল। পুতুল পূজার অবসান হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের অর্থোপার্জনের পথ, সামাজিক মর্যাদা এবং রাজনৈতিক প্রভুত্ব সবই শেষ হয়ে যাবে, সেজন্য কুরাইশরা মরিয়া হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিরধিতা করছিল। অপরপক্ষে মদিনায় এরূপ কোনো অভিজাত সম্প্রদায় না থাকায় সেখানে ইসলাম প্রচার সম্ভব হবে ভেবে তিনি মদিনায় হিজরত করেন।
 
) পুরোহিতদের বিরোধিতাঃ
মক্কার পুরোহিতরা ছিল পৌত্তলিক। কাবা গৃহের একচ্ছত্র অধিকার ছিল তাদের হাতে। তাদের কায়েমী স্বার্থ বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা ইসলামের বিরোধিতা করতে থাকে। ফলে মক্কায় ইসলামের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় হযরত মদিনায় হিজরত করার সিদ্ধান্ত নেন।
 
) আপনজনদের ইন্তেকালঃ
সহধর্মিনী বিবি খাদিজা (রাঃ) এবং জীবনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক চাচা আবু তালেবের ইন্তেকালের ফলে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে মক্কার কাফেরদের শত্রুতা বহুগুণে বেড়ে যায়। এটাই হিজরতের অন্যতম কারণ।
 
) মদিনাবাসীদের দ্বন্দ্ব নিরসনঃ
মদিনায় বসবাসকারী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয় প্রসিদ্ধ। এ গোত্রদ্বয় দ্বন্দু কলহে লিপ্ত ছিল। তাদের মধ্যে মধ্যস্থকারী এবং শান্তি স্থাপনের জন্য একজন মহাপুরুষের প্রয়োজন তারা অনুভব করতে থাকে। অতঃপর নবীজির অসাধারণ ব্যক্তিত্বের সংবাদ পেয়ে তারা তাকে আমন্ত্রণ জানালো। ফলশ্রুতিতে মহানবী (সাঃ) মদিনায় হিজরত করতে মনস্থ করেন।
 
) মদিনার সাথে আত্মীয়তাঃ
মদিনায় ছিল মহানবী (সাঃ)-এর নানার বাড়ি এবং তার পূর্বপুরুষ হাশিমের শ্বশুরালয়। তাই ইসলাম প্রচারে মদিনাবাসীদের সহযোগিতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় তিনি সেখানে হিজরত করতে মনস্থ করেন।
 
) মুসআবের অনুকূল রিপোর্টঃ
দূরদর্শী মহানবী (সাঃ) নিজে হিজরত করার আগেই মুস্‌‘আব নামক জনৈক সাহাবীকে দাওয়াতী মিশনসহ মদিনায় প্রেরণ করেন। মুসআবের অনুকূল রিপোর্ট মহানবী (সাঃ)-এর মদিনায় হিজরতের বিষয়টা ত্বরান্বিত করে।
 
) ইহুদিদের ৎসুক্যঃ
মদিনার ইহুদিরা তাওরাত কিতাবের মাধ্যমে জানতে পারল যে, শেষ নবীর আবির্ভাব ঘটবে। তারা শেষ নবীকে ত্রাণকর্তারূপে গণ্য করে এবং তাকে সাদরে অভ্যর্থনা করার জন্য মদিনায় অপেক্ষা করে। মক্কায় ইহুদি সম্প্রদায় না থাকায় নবীরূপে স্বীকৃতি পাননি। এভাবে মদিনা হযরতের আশ্রয় ও কর্মস্থলে পরিণত হয়।
 
) ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাতঃ
মক্কার কুরাইশরা ধর্মান্ধ হয়ে পূর্ব পুরুষদের চিরাচরিত আচার অনুষ্ঠানকে আঁকড়ে ধরে মূর্তি পূজা করত। তারা মূর্তি পূজাকে বর্জন করে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হতে পারেনি। তাদের পৌত্তলিকতার প্রতি নবীজির তীব্র প্রতিবাদই ছিল কুরাইশদের বিরোধিতার মূল কারণ।
 
১০) যথেচ্ছাচারিতায় বাধা প্রদানঃ
ইসলাম নিষ্কলুষ, সৎ, অনাড়ম্বর ও নির্মল জীবনযাপনের ধারণা প্রচার করলে অনাচার, পাপাচার, মদ, জুয়া, সুদ, পরদ্রব্য হরণ, যথেচ্ছাচার, নারী নির্যাতন ও পাশবিক লালসা চরিতার্থের কাজে লিপ্ত মক্কাবাসীরা প্রচণ্ড বিরোধিতা সহকারে ইসলামের বিপক্ষে নেমে পড়ে। এমতাবস্থায় মক্কায় ইসলাম প্রচার কঠিন হয়ে পড়লে মহানবী (সাঃ) হিজরতের পরিকল্পনা করেন।
 
১১) মহানবীকে হত্যার ষড়যন্ত্রঃ
ইসলামের সম্প্রসারণ ও মহানবী (সাঃ)-এর সাফল্য কোনোভাবেই ঠেকাতে না পেরে কুরাইশ নেতারা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এহেন চরম পরিস্থিতিতে মহানবী (সাঃ) হিজরতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
 
১২) মহান আল্লাহ্‌র প্রত্যাদেশঃ
কুরাইশদের অত্যাচারের মাত্রা যখন সীমা ছড়িয়ে গেল, তখন মহান আল্লাহ তার রাসূল (সাঃ)-কে মদিনায় হিজরত করার নির্দেশ প্রদান করেন। সূরা ইয়াসীনে ঐশী বাণী লাভ করে আলী (রাঃ)-কে স্বীয় বিছানায় শায়িত করে আবু বাক্‌র (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে জন্মভূমির মায়ামমতা ত্যাগ করে ৬২২ খ্রিস্টাব্দে ২২ জুলাই রাসূল (সাঃ) ইয়াসরিবের পথে যাত্রা করেন।
 
() পরোক্ষ কারণঃ
) ইতিহাসসিদ্ধ কারণঃ
ইতিহাসের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম হল— Prophets are not honoured in their country. যুগে যুগে সকল নবী-রাসূলকে স্বজাতির লোকেরা দেশান্তরে বাধ্য করেছিল। আর নবীগণকেও দ্বীন প্রচারের সুবিধার্থে হিজরত করতে হয়েছে। এ পরিস্থিতির ধারাবাহিকতা রাসূল (সাঃ)-কেও আচ্ছন্ন করে।
 
) পরিবেশঃ
ধূসর মরু, শুষ্ক জলবায়ু এবং উষ্ণ আবহাওয়ার প্রভাবে মক্কাবাসীগণ ছিল স্বভাবতই রুক্ষ এবং বদমেজাজী। ইসলামের আহ্বানে সাড়া দেয়ার মতো মন তাদের ছিল না। পক্ষান্তরে শস্য-শ্যামল অনুকূল আবহাওয়া সমৃদ্ধ মদিনার মানুষ ছিল শান্ত, ভদ্র ও সুরুচিসম্পন্ন, যা ইসলাম প্রচারে সহায়ক হবে বলে রাসূল (সাঃ) মনে করেছিলেন। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, পরিবেশগত কারণেও মহানবী (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।
 
) মুসলমানদের সংখ্যা স্বল্পতাঃ
নবুয়ত প্রাপ্তির টানা ১৩ বছর দাওয়াতি কাজ পরিচালনা করা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। ফলে মুসলমানগণ কাফেরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। অতএব ইসলামের বিস্তৃতি, শক্তি বৃদ্ধি ও কাফেরদের মোকাবেলার প্রস্তুতি গহণ করার জন্য নবী (সাঃ) মদিনাকে বেছে নিয়ে হিজরত করেন।
 
হিজরতের ঘটনাঃ
উপরিউক্ত কারণগুলোর প্রেক্ষিতে মহানবী (সাঃ) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে আলী (রাঃ)-কে নিজ শয্যায় রেখে রাতের আঁধারে আবু বাক্‌র (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে মদিনা অভিমুখে যাত্রা করেন। বহু বাধা অতিক্রম করে দীর্ঘ ১৪ দিন পথ চলার পর অবশেষে তিনি মদিনায় পদার্পণ করেন এবং মদিবাসীগণ তাকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জ্ঞাপন করেন। এ ঘটনাই হিজরত নামে পরিচিত।
 
হিজরতের গুরুত্ব, ফলাফলতাৎপর্যঃ
ইসলামের ইতিহাসে হিজরত মহানবী (সাঃ)-এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূর প্রসারী ঘটনা। ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষা ও ইসলামকে সার্বজনীন ধর্ম হিসেবে এতিষ্ঠিত করাই ছিল হিজরতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। হিজরতের ফলাফল ছিল অত্যন্ত ব্যাপক। নিম্নে হিজরতের ফলাফল গুরুত্ব আলোচনা করা হল—
 
() ধর্মীয় গুরুত্বঃ
) আল্লাহর আদেশ পালনঃ
মক্কায় বিরাজমান সার্বিক প্রতিকূলতার প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ তার হাবীবকে অহীর মাধ্যমে হিজরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাই আল্লাহর আদেশ পালনে মহানবী (সাঃ)-এর হিজরতের গুরুত্ব অপরিসীম।
 
) মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠাঃ
হিজরতের পর পরই মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় মুসলমানদের মিলন কেন্দ্র হিসেবে মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠা করেন।
 
) ধর্মের প্রতি দৃঢ়তাঃ
হিজরত ইসলামের প্রতি মুসলমানদের দৃঢ়তার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মদিনায় আগমনকারী মুষ্টিমেয় মুসলমান শত প্রতিকূলতার মাঝে ইসলামের প্রতি যেরূপ অবিচল ও অটল ছিলেন তা নিঃসন্দেহে ধর্মের প্রতি তাদের গভীর আস্থা ও বিশ্বাসেরই বাস্তব প্রতিফলন।
 
) ইসলামের অগ্রগতিঃ
হিজরতের ফলে মদিনায় ইসলাম প্রচারের গতি অপ্রতিহত হয়ে ওঠে। মক্কার সংখ্যালঘিষ্ঠের ধর্ম মদিনায় হয়ে ওঠে সংখ্যাগরিষ্ঠের জীবন ব্যবস্থা। উপরন্তু বিভীষিকা ও ভীতিমুক্ত ইসলাম হিজরতের পর আত্মসংগঠনে মনোনিবেশ করার সুযোগ লাভ করে। মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার প্রচারিত ধর্ম ইসলাম দুর্বলতার যুগ অতিক্রম করে শক্তি ও সমৃদ্ধির যুগে পদার্পণে সক্ষম হয়।
 
() সামাজিক গুরুত্বঃ
) কলহের অবসানঃ
মহানবী হিজরতের পর মদিনার বিবদমান সকল গোত্রের দ্বন্দ্ব ও কলহের অবসান ঘটে। তার নেতৃত্বে আউস ও খাযরাজ সহ সকল গোত্রে কলহ, বিবাদ, হিংসাদ্বেষ ভুলে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
 
) জীবনধারা পরিবর্তনঃ
হিজরতের ফলে মহানবী (সাঃ) মক্কার কুরাইশদের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়ে এক সুস্থ অনুকূল পরিবেশে বসবাস করার সুযোগ লাভ করেন। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন হিজরত নবী (সাঃ)-এর জীবনে এক নতুন মোড় নিয়ে এসেছিলো।
 
) সামাজিক আইনের প্রবর্তনঃ
মদিনায় হিজরতের পরই সমস্ত সমাজবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করে তিনি বিবাহ, তালাক, বিধবা-বিবাহ, দাসপ্রথালোপ, উত্তরাধিকারী আইন প্রভৃতি সামাজিক ও পারিবারিক আইনকানুন প্রবর্তন করেন।
 
() রাজনৈতিক গুরুত্বঃ
) সনদ প্রণয়নঃ
মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্যে রাসূল (সাঃ) অন্য সব মতাদর্শীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বের প্রথম লিখিত রাষ্ট্রীয় সংবিধান মদিনা সনদ প্রণয়ন করেন। ঐতিহাসিক মুর বলেন, মদিনার হিজরতের ফলেই মহানবী (সাঃ) বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান মদিনা সনদ প্রণয়নে সক্ষম হন।
 
) ইসলামী রাষ্ট্রগঠনঃ
মদিনায় হিজরতে পর মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে রাসূল (সাঃ) সেখানে ইসলামী রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করেন। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ভেতরের দ্রষ্টা তার জীবনের পটভূমিতে স্থিতি লাভ করল এবং তিনি একজন বাস্তববাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন।
 
) জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিঃ
ইসলামের ভিত্তিতে মদিনার রাজনৈতিক মতাদর্শী গোষ্ঠী আনসার ও মুহাজির সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীরসম ঐক্যের সৃষ্টি হয়। ঐক্যবদ্ধ এ জনগোষ্ঠীর দৃঢ় মনোবল, ইসলাম ও ইসলামের প্রবর্তক মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রতি অবিচল আনুগত্য পরবর্তীতে শত্রুদের মোকাবেলায় বিশেষভাবে সহায়ক হয়।
 
) নাম পরিবর্তনঃ
রাসূল (সাঃ)-এর হিজরতের পর মদিনার পূর্ব নাম ইয়াসরিব পরিবর্তন করে মদিনাতুন্নবীরাখা হয়। পরবর্তীতে তা মদিনা নামেই প্রচার পায়।
 
) রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদালাভঃ
মদিনায় এসে মহানবী (সাঃ) রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদা লাভ করেন।
 
) হিজরী সন প্রবর্তনঃ
হিজরতের এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীকালে খলীফা উমার (রাঃ)-এর যুগে তাঁরই উদ্যোগে হিজরী সনের প্রবর্তন হয়।
 
) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইসলামঃ
মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মদিনায় হিজরতের ফলেই ইসলাম ক্রমে আন্তর্জাতিকভাবে অঞ্চলের পর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ইসলাম যে পরবর্তীতে বিশ্বের একটা উল্লেখ্যযোগ্য অংশ শাসন করে এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ইসলামের যে জয়-জয়কার দেখা যায়, তা এ হিজরতেরই প্রভাব।
 
() অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ
হিজরতের ফলে মদিনায় যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু হওয়ায় সমাজে সাম্য ও মৈত্রীর সুবাতাস বইতে থাকে, দূর হয় অর্থনৈতিক অনাচার-অবিচার ও অন্তহীন শোষণ ব্যবস্থা মুক্তি পায় আর্থিক অনটনের কবলে নিষ্পেষিত প্রাণগুলো।
 
উপসংহারঃ
ইসলামের ইতিহাসে হিজরতের গুরুত্ব অপরিসীম। হিজরতের মাধ্যমে মহানবী (সাঃ)-এর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য দেখা দেয়। তাই ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেছেন— হিজরত, যার দ্বারা নবীজির মক্কা পর্বের সমাপ্তি ও মদিনা জীবনের সূচনা হয়, মূলত সেই হিজরতই ছিল তাঁর জীবন ও কর্মে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও পটপরিবর্তন।

- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment