Thursday 18 May 2023

বদিউর রহমানঃ অনুপ্রেরণা


 
অনুপ্রেরণা
বদিউর রহমান
 
আমার বয়স বাহাত্তরেরও বেশি। তা বললে কি হবে! আমার এক প্রিয় বন্ধু আছে, সে সবে ফাইভ পাশ করে সিক্সে উঠেছে। বন্ধু না বলে বান্ধবী বলা ভাল। একটা নাম করা ইংরেজি ইস্কুলে পড়ে। তার সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্ব। সে তার মনের অনেক কথা আমাকে বলে।
 
তার এমনিতে বুদ্ধিসুদ্ধি খুব ভাল, বরং অনেকের থেকে বেশি ভাল। কিছুক্ষণ পড়াশুনা করলে ওর মোটামুটি হয়ে যায়। কিন্তু তার মা, বিশেষতঃ আমার স্ত্রী, তার বড়মা চায়, সে সবসময় বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে পড়াশুনা করুক। সে জন্য তাকে যখনই দেখেন মোবাইল দেখছে, তিনি তার স্বরে চিৎকার করে বকা দিতে থাকেনআর তাতেই নাকি আমার বন্ধুরও জেদ চেপে যায়। সে তখন কিছুতেই মোবাইল ছাড়ে না। নানা কারণে তার মা বাংলা, অংক বিভিন্ন বিষয়ের জন্য বাড়িতে গৃহশিক্ষক রেখেছেন।
 
আমার বন্ধুটি তাদের কাছে পড়তে যায়, কিন্তু খুব অনিচ্ছা নিয়ে সে জন্য টিচার আসার ঠিক আগের মূহুর্তে তার একটু ঘুম ঘুম আসে এমনিতে সে দিনের বেলা কিছুতেই ঘুমায় না কিন্তু টিচারের জন্য একটু ঘুম আনতে হয় আরও কিছু কায়দা সে রপ্ত করেছে যাতে টিচারের কাছে গেলেও একটু কম পড়তে হয় যেমন টিচারের কাছে যাওয়ার পর বিষয়ের বইখাতা খুঁজতে একটু সময় কাটানো পড়তে বসে ঘন ঘন টয়লেট পাওয়া সেখানেও একটু সময় কাটানো বুদ্ধিমানের মত কাজ করতে সে বেশ পটুতার টিচারদের সঙ্গে সখ্যতা করে সমঝোতা করে কম কম পড়াসেটা কী রকম বলি; বাংলার অর্পিতা ম্যাডামের সঙ্গে রফা হল যে, তিনি তার নিজের লেখা শোনাবেন আর তার জন্য একটু কম পড়াবেনআর অঙ্কের কলেজ ছাত্রী ম্যাডামের সঙ্গে রফা হল, তার হাত চুলকে দিতে হবে, তাহলে কম অঙ্ক করাবেনএইভাবে স্কুলের টিচারদেরও বেশ হাত করেছেআমার বন্ধুটা অঙ্কে বেশ ভালস্কুলে অঙ্কে কয়েকবার পুরো নম্বর তুলে কিছু টিচারের নজর কেড়ে নেয়আর্ট স্যরকেও ম্যানেজ করে সব আর্ট তাকে দিয়েই করিয়ে নেয়অবশ্য টেনিস খেলতে তার খুব ভাল লাগেতাই বিকালে পল স্যারের কোচিং-এর পরও তাকে টেনিস খেলতে যেতেই হবেআর একটা ভাল কাজ বাংলার অর্পিতা করিয়েছেসে ভুলিয়ে ভালিয়ে তার ছাত্রীকে বেশ কয়েকটা বাংলা কবিতা মুখস্থ করিয়েছে; সেগুলো আবৃত্তি শিখিয়েছে; তার মধ্যেশুঁয়োপোকাঅন্যতমতাছাড়াও সে বাংলা গল্প পড়তে শিখিয়েছেবন্দে আলী মিঞা, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, কুমুদরঞ্জন প্রমুখদের চিনিয়েছে
 
গত বছর সল্টলেক বইমেলায় ওকে সুকুমার রায়ের আবোলতাবোল ---- কিনে দেওয়া হয়েছিল আর সেদিন সন্ধ্যাতেই কুমড়োপটাশ, ‘পেঁচা পেঁচানি ইত্যাদি পড়ে শোনানো হয়েছিলপেঁচা পেঁচানি নিয়ে আমাকে আমার স্ত্রীকে ইঙ্গিত করে সে রসবোধের পরিচয় দেয়দিন হল আমাকে ফোন করে লীলা মজুমদারের হলুদ পাখির পালক পড়েছে জানালগল্পটা কী জানতে চাইলে সে তার সারমর্ম আমাকে শোনালো! আমি অবাক! আরও অবাক আমাকে হঠা বলে বসল, “আজকাল আর লিখছ না?” বললাম, প্রায় মাস দুয়েক হল আমি অসুস্থতুমি তা জানোতাই আর লিখতে পারছি নাওদিক থেকে যা শুনলাম, তাতে আমি শুধু আশ্চর্যান্বিতই নই, পুলকিতও বটেশুনি কী, আমার বন্ধু বলছে, “লেখাটা ছেড়ো নাব্যাথা, বেদনা আর কষ্টের দিনগুলো কেমন কাটছে, তাই লিখে রাখোযতটুকু পারো লেখোকিন্তু লেখোআমিও একটু একটু করে লেখা শুরু করেছিকথাগুলো শুনে এত আনন্দিত হয়েছি যে, ছোট্ট বন্ধুটিকে বলি, “কথা দিচ্ছি আজীবন লেখার চেষ্টা করবআর একটা ছোট্ট বাচ্চার কাছে এভাবে অনুপ্রাণিত হব, জীবনেও কল্পনা করিনি
 
সল্টলেক
২৭//২৩


No comments:

Post a Comment