জামা‘আতু আবুলু বা অ্যাপোলো গ্রুপ
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
আধুনিক আরবি জগতে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য সংগঠন। এখানে একত্রিত হয়েছিল মিশর তথা আরব বিশ্বের আবেগপ্ররণ কবিদের একটি গোষ্ঠী। এদের মধ্যে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল তারা হলেনঃ ইবরাহীম নাজী, আলী মাহমুদ তহা, আলী আল-আনানী, কামিল কিলানী, মাহমূদ ইমাদ, জামীলা আলাইলী প্রমুখ।
১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দে বিখ্যাত কবি আহমাদ যাকী আবু শাদীর-এর হাত ধরে এই সংগঠনের সূচনা। এর প্রথম সম্পাদক রূপে নিযুক্ত হন আমীরুশ শুআরা আহমদ শাওকী। এক বছরের মধ্যেই তার মৃত্যু হলে তার স্থলাভিষিক্ত হন খালীল মুত্বরান। তার পর এই দায়িত্বে আসেন প্রতিষ্ঠাতা আবু শাদী। এই আন্দোলন স্থায়ী থাকে ১৯৩২-৩৬ খ্রীষ্টাব্দ।
এই সংগঠনের কার্যকলাপের যে অভিনবত্ব এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে বিস্তৃতি তা ‘অ্যাপোলো’ নামক একটি গ্রীক যন্ত্রের কার্যকলাপের ভিন্নমুখীনতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তাই এই সংগঠনের নাম রাখা হয় ‘অ্যাপোলো’। এদের কর্মসূচীর মধ্যে ছিল সাংস্কৃতিক প্রগতি, দর্শন-প্রেম, ধর্মীয় মূলনীতির দৃঢ়ীকরণ এবং চারিত্রিক উন্নতি। এদের লক্ষ্য ছিল রোমান্টিসিজ্ম্।
দেওয়ান-গোষ্ঠীর মতো এটা কোনো নির্দিষ্ট কবি গোষ্ঠী ছিল না। তারা কবিতা রচনার কোনো নিয়মাবলী লিপিবদ্ধ করেনি যা লিখন-পদ্ধতি, বিষয়, চিন্তাধারা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় ও অভিনবত্বের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গীকে সীমাবদ্ধ করবে। এক্ষেত্রে আবু শাদী একটি প্রশাসনিক সংবিধান প্রতিষ্ঠা-ই যথেষ্ট মনে করেছিলেন, যার মধ্যে লিখিত থাকবে কিছু সাধারণ উদ্দেশ্যাবলী, যা আরবি কবিতাকে প্রগতিশীল করে তুলবে এবং এই লক্ষ্যের দিকে কবিদের প্রচেষ্টাকে আরো এগিয়ে দেবে, আর শৈল্পিক, সামাজিক এবং বস্তুগত ভাবে কবিদের স্তরকে উন্নীত করবে। কবিতার নবজাগরণ এবং প্রসার আরও সম্মুখবর্তী করা এর আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল।
মাজাল্লাতু আবুলু (مجلة أبولو) নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হতো যা ১৯৩৪ সালে স্থগিত হয়ে যায়। এটিকে এই সংগঠনের সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক এবং চিন্তাধারার একটি প্রামান্য উৎস রূপে গণ্য করা হয়। এটি দেওয়ান-আন্দোলনের প্রভাবকে স্তিমিত করে দিয়েছিল এবং তার জায়গা দখল করেছিল। এই সংগঠন একটি নতুন কবি-প্রজন্মের জন্ম দেয়, যারা রোমান্টিসিজ্মের ভাবধারার সঙ্গে একাত্ম হয়েছিল। যেমন—ইবরাহীম নাজী, আলী মাহমূদ ত্বহা, মাহমূদ হাসান ইসমাইল প্রমুখ।
এই রোমান্টিক কবি গোষ্ঠী, দুঃখী ও বঞ্চিতের প্রেমের চিত্রায়ণের মাঝেই অভিনবত্বের ভিন্নতা খুঁজে পেয়েছিলেন, যেটা বিচ্ছেদ বা মৃত্যুতে গিয়ে শেষ হয়েছে। এদের সাহিত্যে মানবরূপ পরিস্ফুটিত হয়েছিল একাকী, বঞ্চিত দুঃখী রূপে, যা আমরা ইবরাহীম নাজী, আলী মাহমূদের কবিতায়; আব্দুল হালীম, মুহাম্মদ যারীদের উপন্যাসে খুঁজে পাই। এছাড়াও তাদের নাটক, উপন্যাস প্রভৃতিতে বাস্তবের সামনে থেকে মানুষের পলায়নপর মানসিকতা স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে। দেওয়ান-গোষ্ঠীর তুলনায় অ্যাপোলো-গোষ্ঠী অনেকাংশে বিতর্ক মুক্ত ছিল।
No comments:
Post a Comment