Wednesday 6 April 2016

আবু হাফস উমার ইব‌নুল‌ ফারিদ


আবু হ়াফ়্স়্ ‘উমার ইব্‌নুল্‌ ফারিদ়্
(১১৮১ ১২৩৫ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্মঃ   
ইব্‌নুল্‌ ফারিদ়্ আব্বাসী যুগের অন্যতম প্রতিভাধার কবি। তিনিই সর্বপ্রথম আরবী সাহিত্যে সফল ভাবে সাংকেতিক পন্থার প্রবর্তন করেন। আরবি কাব্যজগতের একমাত্র সূফি কবি তিনিই। তাঁর প্রকৃত নাম ‘উমার, উপনাম আবু হাফ্‌স, উপাধি শার্‌ফুদ্দীন ও সুল্‌তানুল্‌ ‘আশেকীন (প্রেমিককুলের সম্রাট)। পিতার নাম ‘আলি, উপাধি আল্‌-ফারিদ়্কবি ১১৮১ খ্রিস্টাব্দের ২২শে মার্চ মিশরের রাজধানী কায়রোতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা সিরীয়ার হামাত-এর অধিবাসী ছিলেন। এজন্যই তাঁর নামের শেষে আল্‌-হামাবী যোগ করা হয়।
 
প্রতিপালন ও বিদ্যার্জনঃ
তিনি এক ধার্মিক উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন উচ্চ আদালতের একজন প্রধান বিচারপতি। তাই তিনি, বাল্যকালে পিতার নিকটেই প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। আর সেই সঙ্গে তাঁর ধর্মীয় অনুশীলনও চলতে থাকে। যৌবনকালে তিনি কায়রোয় উপকন্ঠে অবস্থিত আল্‌-মুকাত্তাম পর্বতে গিয়ে তপস্যা করে কাটাতেন।
 
সূফিতত্ত্বে দীক্ষাঃ
ধর্মতত্ত্বের জ্ঞানার্জনের পর তাঁর মন সূফিতত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ক্রমাগতভাবে সূফিতত্ত্বের প্রতি তাঁর বিশ্বাস দৃঢ় হতে দৃঢ়তর হয়। তাই তিনি সূফিতত্ত্বে অনুসন্ধান ও অনুশীলনের মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করেন।
 
মক্কার পথেঃ
যৌবনে পদার্পন করে তিনি কায়রোর সায়ফিয়া কলেজের তোরনের পাশে এক দরবেশ মুদীর কথা অনুযায়ী হজ পালনের জন্য মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। হজ্জপালনের পর, পবিত্রভূমির প্রেমে আবদ্ধ হয়ে জীবনের পনেরটি বসন্ত মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে অতিবাহিত করলেন।
 
প্রত্যাবর্তন ও পরোলকগমনঃ
মক্কা নগরীতে দীর্ঘকাল অবস্থানের পর তিনি মাতৃভূমি মিশর প্রত্যাবর্তন করেন। অবশিষ্ট জীবন তিনি সন্মানের সহিত মিশরেই অতিবাহিত করেন। অবশেষে ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২৩শে জানুয়ারি তিনি মৃত্যু বরণ করেন। আল্‌-মুকাত্তাম পাহাড়ের পাদদেশে তাঁকে সমাহিত করা হয়
 
তাঁর গুনাবলীঃ
তিনি অত্যন্ত সুশ্রী, আল্লহ্‌ভীরু ও দরবেশ প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। তাঁর নগরবাসীরা তাঁর প্রচুর সম্মান করত। তিনি পথ দিয়ে যাওয়ার সময় লোকেরা তাঁর নিকট একত্রিত হয়ে তাঁর কাছে দুয়ার আবেদন করত।
 
কাব্য প্রতিভাঃ
আরব বিশ্বের সুফি কবি তিনিই। যৌবনে পদার্পন করেই কবি তা রচনা আরম্ভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন মরমী কবি। তাই তাঁর প্রায় সমস্ত কবিতাই আধ্যাত্মগান্ধী। আরবি কাব্য-জগতে আত্‌-তারীকাতুর্‌ রাম্‌যিয়্যাহ্‌ বা সাংকেতিক পন্থার প্রবর্তক তিনিই। তাঁর কাব্য প্রতিভা সম্পর্কে আহ্‌মাদ হাসান যাইয়্যাত বলেছেন, তিনি (ইব্‌নুল ফারিদ) আরব কবিদের মধ্যে সর্বাধিক কালাম-এর ব্যবহারে ও প্রয়োগে যত্নশীল ছিলেন। অলংকার শাস্ত্রের বাদী’, জেনাস ও তিবাকের অধিক ব্যবহার তাঁর কবিতায় লক্ষ্য করা যায়।
 
কাব্যিক বৈশিষ্টাবলীঃ
তাঁর কবিতার ভাষা সহজ-সরল ও তাঁর রচনাশৌলী প্রশংসনীয়। তাঁর অধিকাংশ কবিতার ভাব দ্ব্যার্থবোধক। তাঁর বহু কবিতা বাহ্যতঃ সুরসঙ্গীত বলে প্রতীয়মান হয়। অথচ আভ্যন্তরীন মর্ম সূফীতত্ত্বমূলক। তাই সেগুলি মুর্‌শিদ ও মাদকাসক্ত উভয় শ্রেণীর নিকট সমাদৃত তাই তাঁর কবিতা যেমন যিক্‌রের মাহ্‌ফিলে পঠিত ও পরিবেশিত হতো ঠিক তেমনই পানশালায় সুরার আসরে হতো। কবিতা রচনার পূর্বে তাঁকে অবচেতন অবস্থা আচ্ছন্ন করে রাখতো। সেই অবচেতন অবস্থা কখনো কখনো দশ দিন পর্যন্ত দীর্ঘ হতো। সেই অবস্থায় তিনি খাওয়াদাওয়া কোনো কিছুই করতেন না। তার পর সম্বিৎ ফিরে পেলে গড়গড় করে কবিতা ডিক্টেট করতেন। তিনি তাঁর এক বিখ্যাত কবিতার সূচনায় মদের প্রশংসায় বলেছেন
شربنا على ذكر الحبيب مدامة                    وسكرنا لها من قبل أن يخلق الكرم
ওই কবিতাতেই মদের প্রভাবকে তিনি এভাবে ব্যক্ত করেছেন
ولو قولوا من جانها مقعدامشى                   وتنطق من ذكرى مذاقتهاالبكم
তিনি একজন সফল গজল রচয়িতাও ছিলেন। যেমন তিনি তাঁর এক কবিতায় বলেছেন
وأسأل نجوم الليل هل زاري الكرى               جفني؟ وكيف يزور من لم يعرف

No comments:

Post a Comment