Tuesday 5 April 2016

আহমাদ শাওকিঃ দাসত্ব ও স্বাধীনতা


দাসত্ব স্বাধীনতা
আহ্মাদ শাওকি, মিশর
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
[মালাক হাফ্নি নাসিফ, মিশরীয় নারীবাদী এই লেখিকা নারী পর্দা বিষয়ে বহু লেখালেখি করেছেন। তিনি এসবই লিখেছেনবাহেসাতুল্বাদিয়াছদ্মনামে। সেই প্রেক্ষিতকে সামনে রেখে কবি শাওকি এই কবিতাটি রচনা করেছেন।]
 
হে কানারী পাখীদের রাজা, হে বুলবুলিদের নেতা! তুমি গান গাও;

কেননা আমি তোমার মধ্যে খুঁজে পাই উমাইয়া যুগের বিখ্যাত গায়ক মাবাদকে এবং শুনতে পাই ইব্রাহিম ইব্নু ইসহাক আল-মুসিলির কণ্ঠ। 

আমার মনে হয়, আমার জন্য দাউদ (আঃ)-কে প্রদান করা হয়েছিলো বাঁশির মতো সুরেলা কণ্ঠ এবং ছন্দময় আবৃত্তি।

তুমি তো কখনই পদার্পণ করোনি কোনো সিংহাসনে বা কোনো মঞ্চের উপরে;

ট্যারা চাহনি বিশিষ্ট ব্যাক্তির সংকীর্ণ দৃষ্টি-সমরে তোমার পদচারণা স্বর্ণমুদ্রার কম্পনের মতো  

তুমি যদি কোনোদিন কোনো রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হতে তাহলে আর কোনো গায়কই সুযোগ পেতো না।

তোমার গানের মুখড়া কবি ফারায্দাকের মতো আর অন্তরা কবি জার্ওয়ালের মতো।

তুমি দুপুরের সূর্যের নিকট হতে গ্রহন করেছো উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের পোষাক ও গহনা।  

অতঃপর নিজেকে প্রকাশ করেছ গীর্জার দেবদাসীদের মতো শুভ্র পোষাকে।  

হে বন্দী পাখি! আমি জানতে চাই, তোমার হৃদয় ভারাক্রান্ত না কি (দুশ্চিন্তা) মুক্ত?

তুমি কি অনিদ্রার দোসর, যে সকাল পর্যন্ত ঘুমাও না?

যদিও তুমি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অবস্থান করছো তালাবদ্ধ খাঁচায়।

আমার লোভ হয় তোমাকে ভালবাসতে; আর কোনো ব্যক্তি যখন কোনো মূল্যবান রত্ন পায় তখন সে কৃপন হয়ে যায়।

তবে প্রয়োজনীয়তা বড় বড় দানশীল ব্যাক্তিদের মধ্যেও কৃপনতার জন্ম দেয়।  

শোনো, যদি আমি তোমাকে সোনার খাঁচায় রেশমে মুড়ে রাখি,

লিলি ফুল জড়িয়ে ও লবঙ্গের গন্ধে ভরে,

এবং তার চারিদিকে জ্বালাই সুগন্ধময় অতি মূল্যবান চন্দন কাঠ,

আর সেই খাঁচাকে নিয়ে যাই কোনো ঝর্নার ধারে বা কোনো ছোটো নদীর মোহনায়,

আর আহ্বান জানাই প্রত্যেক শুভ্র পদ ও ঝুটি বিশিষ্ট পক্ষিরাজকে,

অতঃপর প্রফুল্ল চিত্তে ও মহাসমারোহে তোমার নিকট আগমন করে সকল প্রশংসাকারী পাখী,

তারপর আমার পুত্র আমার আদেশ মতো তোমার সঙ্গে উজ্জ্বল বদনে সাক্ষাৎ করে,  

ডান হাতে এমন এক ফালুদা নিয়ে যা খলিফা মুতাওয়াক্কিলকেও দেওয়া হয়নি

এবং (বাম হাতে) রূপার এক পানপাত্র নিয়ে যা স্বচ্ছ পানীয় দ্বারা পরিপূর্ণ,

হে গায়ক পাখী! তাহলেও কি আমি তোমার নিকট দাতা ও অনুগ্রহশীল ব্যাক্তি বলে বিবেচিত হবো না?  

যদি জীবন-সুধা পরাধীনতার সঙ্গে মিশে যায় তাহলে তা হাঞ্জাল ফলের মতো তিক্ত হয়ে যায়।

আর পিঞ্জর বা খাঁচা মুক্তো-খচিত হলেও তা অসহনীয়ই হয়,

হে কানারী পাখী! যদি লোকেরা আমাকে উন্মাদ না বলতো, তাহলে আমি তোমাকে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে বলতাম। 

শোনো, অনেক সময় এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সংক্ষিপ্ত বর্ণনার মতো তোমাকে উপকৃত করবে না।  

তুমি কঠিন অবস্থার মধ্যেও ধৈয্য ধারণ করো। আর তা নাহলে তোমার যা ভাল লাগে তা-ই করো।  

তুমি তো প্রকৃতিগত ভাবে তোমার নিজস্ব মতের অধিকারী, যা অপরিবর্তনীয়।

যদিও তোমাকে সর্বদা বন্দী করে রাখার ও হত্যার ভয় দেখানো হয়। 

তবে তুমি যদি আমার আশ্রয় থেকে উড়ে যাও তাহলে নির্বোধ চিলের শিকারে পরিণত হবে।

হে কানারী পাখী! তুমি এসব উপমা থেকে শিক্ষা লাভ করো। কেননা জ্ঞানী ব্যক্তিরা উপমার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।  

আর তোমার পৃথিবীর একটাই রীতি, তুমি তার সাথে থাকবে না যার নিকট অস্ত্র নেই;  

আথবা যার বুদ্ধি নেই, যদিও সে ভবিষ্যতের আশা পোষণ করতে দ্বিধা করে।

আর স্বাধীন ব্যাক্তির এক অদ্ভুদ স্বভাব, সে নিজে বিপদে পড়বে এবং অন্যকেও বিপদে ফেলবে।  

সে জীবন যুদ্ধের ক্ষেত্রে কষ্টে পড়বে এবং অন্যমনস্ক ভাবে অন্যকেও কষ্টে ফেলবে,

সে সিংহের মত শক্তি একত্রিত করে, অতঃপর যদি সে মূর্খের মতো আক্রান্ত হয় সেও মূর্খের মতো আক্রান্ত করে।

তুমি কি ইসলামের ইতিহাসের জান্দালের ঘটনার দিনের সেই দুই মীমাংসাকারীর কথা শুনেছো?  

সেই ঘোরতর বিপদের সময়, যদি তারা চালাকি না করতো তাহলে হয়তো যুদ্ধের আগুন জ্বলত না!

সেদিন রাসূলের সাহাবীগণ মহান আল্লাহ্কর্তৃক অবতারিত কুরআন-এর বিধান ফয়সালা সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিয়েছিল। 

তাঁরা ছিলেন প্রেরীত নবী (সঃ)-এর হাদিস বর্ণনাকারী উজ্জ্বল প্রদীপ স্বরূপ।   

তাঁরা আল্‌-কুরআন-এর আয়াত পরিবেশন করেছেন। অতঃপর বহু জন তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে তৎপর হয়েছে।   

ফলস্বরূপ, মুআবিয়া (রাঃ)-এর খলিফা হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে এবং আলী (রাঃ)-এর পথ সংকীর্ণ হয়েছে।    

অতঃপর তারা অত্যাচারের সেই পথে ফিরে গেছে যে পথ তাদের মনের মধ্যে দৃঢ়মূল হয়েছিল প্রকৃতির মতো করে।

তারা সেদিন সেই সুচতুর ব্যক্তির শক্তিশালী বিচার ফয়সালার নিকট মাথা নত করতে বাধ্য হয়েছিল।

হে গায়ক! তুমি বিশ্বাস করো আর না করো আমি যা বলছি সবই সত্য।

তুমি (এখন) একটি সিক্ত উদ্যানের প্রতিবেশী হয়েছো এবং একটি আড়ম্বরপূর্ণ আবাসে অবতরণ করেছো;  

তুমি সেখানে হুসাইন (রাঃ) কতৃক সম্বর্ধিত হয়ে আলী (রাঃ)-এর স্নেহ ও পরিচর্চা লাভ করেছো।  

তাছাড়া, তুমি সেখানে শৈশবে প্রাপ্ত মা আমিনার মাতৃস্নেহ লাভ করেছ।  

অতএব তুমি প্রভাতের গান গাও এবং মিশরের সন্তানসন্ততিদেরকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সুসংবাদ প্রদান করো।  

এবং মিসরের জন্য প্রার্থনা করো, যাতে মিশরের বুকে ঊর্ধ্বাকাশ (অর্থাৎ আল্লাহ্‌র নিকট) হতে নিরাপত্তা শান্তি নেমে আসে।  

তুমি বলো, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি (আমাদের জন্য) তোমার করুণার দ্বার উন্মুক্ত করো এবং (আমাদের জন্য) তোমার নিকট হতে কল্যাণ প্রেরণ করো।  

হে প্রভু, তুমি মহৎ আরবদের তরে তোমার কল্যাণ প্রেরণ করো এবং (আমার) এই প্রার্থনা কবুল করো।

 

صداح يا ملك الكنار

أحمد شوقي بك – مصر
 
صداح يا ملك الكنا             ر ويا أمير البلبل

قد فزت منك بمعبد              ورزقت قرب الموصلي

وأتيح لي داود مز               مارا وحسن ترتل

فوق الأسرة والمنا                بر قط لم تترجل

تهتز كالدينار في               مرتج لحظ الأحول

وإذا خطرت على الملا          عب لم تدع لممثل

ولك ابتداءات الفرز             دق في مقاطع جرول

ولقد تخذت من الضحى         صفر الغلائل والحلى

ورويت في بيض القلا           نس عن عذارى الهيكل

يا ليت شعري يا أسير           شج فؤادك أم خل

وحليف سهد أم تنا              م الليل حتى ينجلى

بالرغم منى ما تعا               لج في النحاس المقفل

حرصي عليك هوى ومن        يحرز ثمينا ينجل

والشح تحدثه الضرو             رة في الجواد المجزل

أنا إن جعلتك في نضا          ر بالحرير مجلل

ولففته في سُوسن                وحففته بقَرنفل

وحرقت أزكى العود حو          لَيه وأغلى الصندل

وحملته فوق العيو               ن وفوق رأس الجدول

ودعوت كل أغر في             ملك الطيور محجل

فأتتك بين مُطارح               ومحبذ ومدلل

وأمرت بابني فالتقا              ك بوجهه المتهلل

بيمينه فالوذج                   لم يهد للمتوكل

وزجاجة من فضة               مملؤة من سلسل

ما كنت يا صدّاح عنـ           ـدك بالكريم المفضل

شهد الحياة مشوبة               بالرق مثل الحنظل

والقيد لو كان الجما              ن منظما لم يحمل

يا طير لولا أن يقو              لوا جُن قلت تعقل

اسمع فرب مفصل              لك لم يفدك كمجمل

صبرا لما تشقى به              أو ما بدا لك فافعل

أنت أبن رأى للطبي             عة فيك غير مبدل

صداح حق ما أقو               ل حفلت أم لم تحفل

جاورت أندى روضة             وحللت أكرم منزل

بين الحفاوة من حسيـ            ـن والرعاية من على

وحنان آمنة كأمـ                 ـك في صباك الأول

صح بالصباح وبشر الـ          ـأبناء بالمستقبل

واسأل لمصر عناية             تأتي وتهبط من عل

قل ربنا افتح رحمة              والخير منك فأرسل

أدرك كنانتك الكريـ               ـمة ربنا وتقبل

No comments:

Post a Comment