Monday 25 April 2016

Critical Appreciation বা কাব্য সমালোচনা কীভাবে করবো?



Critical Appreciation বা কাব্য সমালোচনা কীভাবে করবো?
কাজী মোহাঃ মাকীন
 
কাব্য সমালোচনা কী?
শুরুতেই একটা কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন, কাব্য সমালোচনা (Critical Appreciation) বলতে প্রচলিত যে সমালোচনা বোঝায় তা কিন্তু নয়। বরং একটা কবিতাকে বিভিন্ন দিক থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করাই হল কাব্য সমালোচনা বা critical appreciation কবিতার অর্থ, প্রসঙ্গ, উদ্দেশ্য, লেখ্যরীতি, অলংকার, তুলনামূলক আলোচনা, বর্ণনাভঙ্গী ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।
 
কেন করবো?
যে কোনো বিষয়েই সামগ্রিক ধারণা তৈরিতে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ পঠনের প্রয়োজন আছে। একজন শিক্ষার্থী কাব্য সমালোচনার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করলে পঠিত বিষয়টি সে ভালভাবে রপ্ত তো করবেই, পাশাপাশি তার লেখাতেও নিজস্ব সৃজনশীলতা তৈরি হবে।
 
কীভাবে করবো?
যে সমস্ত বিষয়গুলো এজন্য কমপক্ষে আবশ্যক সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হল—
 
১) SETTING (পটভূমি/আবহ) প্রত্যেক কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাসের একটি নির্দিষ্ট পটভূমি থাকে। সেটা সমুদ্র, পাহাড়, মরুভূমি হতে পারে বা কোনো প্রাসাদ, বাড়ি, যুদ্ধের ময়দানও হতে পারে। রচনার উদ্দেশ্য বা অর্থে আবহেরবিশেষ প্রভাব থাকে। যেমন আহমাদ শাওকীর مناجاة الأهرام কবিতায় কবি মিশরীয় আশ্চর্য পিরামিড তথা তার পরিপার্শ্বকে পটভূমি হিসেবে নিয়েছেন। অনুরূপভাবে খলীল মুত্বরান তার المساء কবিতায় আলেকজান্দ্রিয়ার এক বৈকালিক সমুদ্রতটকে আবহের রূপ দিয়েছেন।
 
) CONTEXT (প্রেক্ষাপট) কোন সময় বা স্থানের প্রেক্ষাপটে কবিতাটি লেখা সেটা নির্ণয় করতে হবে কেননা কবিতা রচনার সমসাময়িক স্থান-কাল-পরিস্থিতি অবগত থাকলে কবিতা সহজবোধ্য হবে যেমন আব্বাস মাহমুদ আল আক্কাদের سكران কবিতা থেকে তৎকালীন পরাধীন মিশরের ভাবনা ফুটে ওঠে আহমাদ শাওকীর صدى الحرب কবিতায় অটোমান-তুর্কী যুদ্ধ পরিস্থিতির আভাস পাই
 
) SPEAKER (কথক) কবিতার কথক কে এটা নির্ণয় করাটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কারণ এটা না বুঝতে পারলে আমরা কবিতার ভূমিতে আন্দাজে বিচরণ করব কথক যেমন কবি নিজে হতে পারে, তেমন অন্য কোনো ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, প্রকৃতিও হতে পারে যেমন হাফিয ইবরাহীমের في لسان حال اللغة العربية কবিতায় আরবী ভাষাকেই কথকরূপে পাই
 
) GENRE (কবিতার শ্রেণী) কবিতাটি কোন ধারা বা কোন শ্রেণীর সেটাও নির্ণেয় কারণ শ্রেণীবৈচিত্র্যে কবিতার চরিত্রও পালটে যায় আর এই বৈচিত্র্য একদিকে অর্থগতও হতে পারে, যেমন প্রশংসা, শোক, প্রেম, প্রকৃতি, স্বাধীনতা, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়কেন্দ্রিক; অপরদিকে গঠনগতও হতে পারে, যেমন মহাকাব্য, কাব্য, কবিতা, সনেট, রুবাইয়াত, মুক্তছন্দ কবিতা প্রভৃতি
 
) MEANING (কবিতার অর্থ) এটাকে কাব্য সমালোচনার প্রধান অংশ বলা যায় কবিতাটি একাধিকবার পড়ে একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে হবে যে, কবি এখানে কী বলতে চেয়েছেন কবিতায় ব্যবহৃত কঠিন বা দুর্বোধ্য শব্দগুলির যথাযথঅর্থ বার করতে হবে। কবিতার নামকরণ থেকেও অনেক সময় কবির উদ্দিষ্ট চিন্তাধারার আভাস পাওয়া যায়। যেমন হাফিয ইবরাহীমের الأمّ مدرسة কবিতায় তিনি যে নারীজাতির শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছেন, তা প্রদত্ত নাম থেকেই অনুধাবন করা যায়।
 
৬) INTERTEXTUALITY (তুলনামূলক আলোচনা) কোনো দুই বা ততোধিক কবিতায়, বর্ণনা বা কবির চিন্তাধারার মেলবন্ধন ঘটেছে কিনা সেটা তুলে ধরাই হল intertextuality যেমন শাওকীর الرقّ والحرّية ও হাফিযের الأمّ مدرسة তে নারীর উদ্দাম নয়, বরং যথার্থস্বাধীনতার সমর্থনে তাদের চিন্তাধারার মিল খুঁজে পাই। এটা থেকে পাঠকের পড়াশোনা বা তার উপলব্ধির পরিসর কতটা তার পরিচয় পাওয়া যায়।
 
৭) LANGUAGE (ভাষা) কবিতায় ব্যবহৃত ভাষা হল কবির চিন্তাশক্তির উৎকৃষ্টতম বাহন। বাক্যের গঠন, বর্ণনার ভঙ্গী, এমনকী বাক্য বা কবিতাটির দৈর্ঘ্যও লক্ষ্যণীয়। কবিতার মধ্যে কোথায় বর্ণনা বা প্রসঙ্গের পরিবর্তন ঘটছে; কোথায় নতুন চিন্তার সংযোজন হচ্ছে তা চিহ্নিত করতে হবে। এছাড়াও আছে বাক্য-শব্দ-অর্থালংকারের প্রয়োগ। এর থেকে কবির ভাষাগত দক্ষতা ও কবিতার ভাষাগত উৎকর্ষের ধারণা পাওয়া যায়।
 
৮) RHYME SCHEME (ছন্দ প্রকরণ) ছন্দ হল কবিতার একদম স্বতন্ত্র একটি বৈশিষ্ট্য। কবিতাটি কোন ছন্দে রচিত (ছন্দোবদ্ধ কবিতার ক্ষেত্রে) তা নির্ণয় করাটাও প্রয়োজন। সুন্দর ছন্দের ব্যবহার কবিতার আবৃত্তিতে অপরূপ শ্রুতিমাধুর্য তৈরি করে। অতএব ছন্দনির্ণয় হল কবিতা পাঠের জন্য সহায়ক।
 
প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি উপরের আটটি বিষয় তোমরা পড়ে নিয়েছ। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্য করেছ কি? সেটা হলপ্রথম তিনটি কবিতার বাহ্যিক উপকরণ; তারপরের তিনটি কবিতার অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর শেষ দুটি কবিতার ভাষার গঠনগত আলোচনা।
 
এখন, ছাত্রছাত্রীদের করণীয় হল, শিক্ষকের প্রদত্ত ভাষণ মনোযোগ দিয়ে শোনা, জিজ্ঞাসা থাকলে জেনে নেওয়া। এবার এই আটটি বিষয় পাশে নিয়ে একটা একটা করে মিলিয়ে পড়তে থাকো। আশা করি, একবারেই পঠিত বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হবে এবং তোমাদের নোট-নির্ভরতাও কমবে।
 
বিঃদ্রঃ এটি কোনো তত্ত্ব-তথ্য ভরা প্রবন্ধ নয়। ছাত্রাবস্থায় নিছকই নিজের একটি অসুবিধার প্রতিকার পরবর্তীদের সুবিধার্থে তুলে ধরলাম। আশা করি স্ব-চেষ্টায় সচেষ্ট হয়ে তারা উপকৃত হবে।

No comments:

Post a Comment