Tuesday 24 May 2016

আলী বিন আল-আব্বাস ইবনুর রূমী


‘আলী বিন্‌ আল্‌-‘আব্বাস ইব্‌নুর্‌ রূমী
(৮৩৬ – ৮৯৬ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পরিচিতি ও জন্মঃ
মুসলিম সভ্যতার স্বর্নযুগ আব্বাসীয় শাসনামলে যে সকল মনীষা আরবী সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন ইব্‌নুর্‌ রূমী তাঁদের অন্যতম। তিনি একজন স্বভাব কবি ছিলেন। প্রশংসা, কুৎসা, শোকগাথা বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কবিতা রচনা করেছেন। প্রকৃত নাম ‘আলী, পিতার নাম ‘আব্বাস, পিতামহের নাম জুরায়েজতাঁর উপনাম আবুল হাসান, তবে তিনি ইবনুর রূমী নামে অধিক পরিচিত। তিনি বাগদাদে ২ই রজব ২২১ হিজরি মোতাবেক ৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। এখানেই তিনি লালিত পালিত। তিনি আ’ব্দুল্লাহ বিন ঈ’সার মুক্ত দাস ছিলেন। তাঁর জননী একজন পারসিক বংশদ্ভূত পুন্যময়ী মহিলা ছিলেন। তিনি মুহাম্মাদ বিন হাবীবের নিকট প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন। বাল্য বেলাতেই তিনি কাব্যচর্চার প্রতি মনোনিবেশ করেন।      
 
জীবনীঃ
তিনি জীবনের কক্ষপথে নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেগুলি তাঁর কবিতায় প্রতিবিম্বিত হয়েছে। তিনি পিতার নিকট হতে বহু সম্পত্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তার এক বৃহদাংশ অপব্যায় ও অপচয় করে নষ্ট করে ফেলেন। অবশিষ্ট সম্পদ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। অন্য দিকে মৃত্যু একের পর এক তাঁর পারিবারিক সদস্যদের আক্রমন করতে থাকে। পিতার পরা তাঁর মা, অতঃপর বড় দাদা, তার পর মামা ইহলোক ত্যাগ করেন। বৈবাহিক জীবনে স্ত্রী ও তিন সন্তানও তাঁকে শোক সাগরে ভাসিয়ে যান। সম্ভবত এই ঘটনাগুলি তাঁকে চরম ভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি অস্থির জীবন যাপন করতে আরম্ভ করেন। সর্বদা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। তাই লোকেরা তাঁকে নিয়ে বিদ্রূপ করত এবং তাঁর থেকে দূরে থাকতো।     
 
মৃত্যুঃ
তিনি বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাগদাদে ২৮৩ হিজরি মোতাবেক ৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন। বাগদাদেই তাঁকে সমাধিস্ত করা হয়। আক্কাদ বলেছেন— আল-মু’তাযিদের মন্ত্রী আবুল হাসান কাসিম বিন উ’বাইদুল্লাহ তাঁর কুৎসাকে প্রচণ্ড ভয় পেতেন। তাই তাঁর চক্রান্তে ইবনে ফিরাশ তাঁর বৈঠকেই কবিকে বিষ-মিশ্রিত হালওয়া খাওয়ান। খাওয়ার পর কবি যখন বিষক্রিয়া অনুভব করতে লাগলেন তখন মন্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোথায় যাচ্ছেন? উত্তর করলেনঃ যেখানে আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন। মন্ত্রী বললেন— আমার পিতাকে সালাম জানাবেন। উত্তরে কবি বললেন— আমি তো আর নরকে যাচ্ছি না (ما طريقي إلى النار)।
 
তাঁর কবিত্বঃ
তিনি আটজন আব্বাসী খলীফার যুগ পেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত সকলেই তাঁর প্রশংসাগাথাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং তাঁকে কোনও প্রকার উপঢৌকন প্রদান করা হতে বিরত ছিল। এ প্রসঙ্গেই কবি বলেছেন—
قد بُلينا في دهرنا بملوكٍ أدباءٍ عَلِمْتُهمْ شعراءِ     إن أجدنا في مدحِهم حسدونا فحُرِمنا منهُمْ ثوابَ الثناءِ
জীবনে অনেক ব্যথা বেদনার সম্মুখীন হওয়ায় তিনি শোকগাথা রচনায় বুৎপত্তি ও নৈপুণ্য অর্জন করেছিলেন। ঐতিহাসিক ইবনু খাল্লিকান বলেছেন—
"الشاعر المشهور صاحب النظم العجيب والتوليد الغريب، يغوص على المعاني النادرة فيستخرجها من مكانها ويبرزها في أحسن صورة ولا يترك المعنى حتى يستوفيه إلى أخره ولا يبقي فيه بقية".
 
তাঁর কাব্যিক বৈশিষ্টঃ
সঠিক ও সূক্ষ্ম উপলব্ধি, প্রশংসার সঙ্গে গর্বের মিশ্রণ, কৃত্রিমতা বর্জন তাঁর কবিতার মূল বৈশিষ্ট। শ্রোতা ও পাঠকদের বিপর্যয়ের কাহিনী শোনানো ও মৃত্যুর উল্লেখ করতঃ উপদেশ প্রদান তাঁর কাব্য প্রতিভাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। তাঁর সমকালীন কবিদের তুলনায় তিনি বর্ণনার ক্ষেত্রে ও কুৎসা রচনার ক্ষেত্রে অধিক পটু ও দক্ষ ছিলেন। তিনি সঙ্গীত ও অন্ত্যমিলের প্রতি ব্যাপক গুরুত্বারোপ করতেন।

No comments:

Post a Comment