Tuesday 24 May 2016

আন‌তারা বিন‌ শাদ্দাদ আল‌-আবাসী

আন্‌তারা বিন্‌ শাদ্দাদ আল্‌-‘আবাসী

(৫২৫ – ৬০৮ খ্রিঃ)

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

পরিচিতি ও জন্মঃ

আনতারা মু’আল্লাকা কবিগোষ্ঠীর অন্যতম একজন। তিনি আবাস গোত্রের সৈনিক কবি ও আরবের অন্যতম বীরযোদ্ধা ছিলেন। ষষ্ঠ শতাব্দীতে আরবের বিখ্যাত নাজ্‌দ প্রদেশের আবাস গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। নাম ‘আন্‌তারা, উপনাম আবুল্‌ মুগাল্লাস, পিতার নাম ‘আম্‌র, পিতামহের নাম শাদ্দাদ পিতা ছিলেন ‘আবাস গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। কিন্তু মা যুবাইবা ছিলেন আফ্রিকান ক্রীতদাসী। কবির গায়ের রং কালো ছিল। তাই তাঁকে “আহাদু আগ্‌রিবাতিল্‌ ‘আরাব” (أحد أغربة العرب) অর্থাৎ আরবের কাক নামে অনেকে ডাকতো।  

 

দাসত্বের জীবন হতে মুক্তিঃ

দাসীর পুত্র দাস। এই নিয়মানুযায়ী তিনি ছিলেন দাস। তাই সম্ভ্রান্ত আবাস গোত্রে জন্মলাভ করা সত্ত্বেও তাঁকে বাল্যকালে দাসত্বের মর্মপীড়ায় দগ্ধ হতে হয়ে ছিল। তবে একদা আরবের কতিপয় গোত্র সম্মিলিত ভাবে আবাস গোত্রের প্রতি আক্রমণ করে তাদের উটগুলি নিয়ে চলে যায়। আবাসের লোকেরা তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে। তাদের সঙ্গে আক্রমণ প্রতিহতকারীদের দলে ‘আন্‌তারাও ছিলেন। তাঁর পিতা তাকে আক্রমণ করতে বলায় কবি প্রতি উত্তরে বলেন—

العبد لا يحسن الكر وإنما يحسن الحلب والضر.

(দাসেরা তো আক্রমণ ভালো করতে পারে না। দাসেরা শুধু দুগ্ধদোহনের কাজ ভালো পারে।)

 

পিতা তাঁর কথার শ্লেষ বুঝতে পেরে তাঁকে স্বাধীন করে দিলেন। বললেন—  "كر وأنت حر"(তুমি আক্রমণ করো, তুমি আজ থেকে স্বাধীন, মুক্ত) অতঃপর আনতারা ক্ষিপ্রগতিতে আক্রমণ করলেন এবং ছিন্তাইকারীদের পরাজিত করে উটগুলিকে ফিরিয়ে আনলেন। ফলস্বরূপ পিতা তাঁকে মুক্ত করে নিজ বংশে শামিল করে নিলেন।

 

সৈনিক কবির মৃত্যুঃ

এই ঘটনার পর কবি ‘আন্‌তারার নাম ও খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল। অগ্রগতি ও সাহসিকতার বিষয়ে তিনি প্রবাদ বাক্যে পরিণত হলেন। দাহিস ও আল্‌-গাব্‌রার যুদ্ধে তিনি আবাসের সেনাধ্যক্ষ ছিলেন। উত্তম পন্থায় সেনাবাহিনী পরিচালনা করে তিনি নেতৃত্বের উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছিলেন। অতঃপর বয়সবৃদ্ধির কারণে শারীরিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন এবং ৬০৮ খ্রিস্টাব্দে নিহত হন।

 

কাব্যপ্রতিভাঃ

ঐতিহাসিকদের ধারণা, দাস অবস্থায় তিনি কোনো কবিতা রচনা করেননি। কারণ দাসত্বের গ্লানি আবেগের প্রজ্বলনকে অবদমিত রাখে। অতঃপর যখন পিতা তাঁকে স্বাধীনতার স্বাদ প্রদান করলেন এবং ‘আব্‌লার প্রণয়বাণে তাঁর হৃদয় বিদ্ধ হল, তখন তাঁর বক্ষ হতে কবিতা উপচে পড়তে লাগল। তিনি গৌরবাত্মক, প্রেমমূলক ও যুদ্ধ বিষয়ক অসাধারণ কতিপয় কবিতা রচনা করেছেনতাঁর কবিতায় গজলের স্বাদ ও গৌরবের গাম্ভীর্য বিদ্যমান।

 

তাঁর কবিতার মূল বৈশিষ্ট হল তিনি অন্যান্য জাহেলী কবিদের তুলনায় অধিক সরল শব্দ ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া তাঁর কবিতায় বীরত্বের ছাপ সুস্পষ্ট। তিনি পলায়নকে জানতেন না। এবং যখন তিনি গজল গাইতেন, উন্নত ও সুমিষ্ট শব্দ ব্যবহার করতেন। তাঁর কবিতায় আন্তরিকতার ছাপও স্পষ্ট। এছাড়া লক্ষ্য করা যায় যে তাঁর কবিতার চিত্র ও চিন্তা মরুকেন্দ্রিক।

 

তাঁর মু’আল্লাকাঃ

একদা আবাস গোত্রের এক ব্যাক্তি তাঁকে এই বলে লজ্জা দেয় যে," أنا أشعر منك" (আমি তোমার থেকে বড় কবি)‘আন্‌তারা তাকে ভর্ৎসনা করেন এবং তার প্রতিউত্তর স্বরূপ তার এই সাহিত্য সমৃদ্ধ অসাধারণ মু’আল্লাকাটি রচনা করেন। তিনি তাঁর এই কবিতার এক জায়গায় মদের প্রতি নিজ আসক্তিকে অভিনব ভঙ্গিতে প্রকাশ করেছেন—

ولقد شربت من المدامة بعدما    ركد الهواجر بالمشوف المعلم

(আমি মদ পান করেছি প্রখর উত্তাপ কমে যাওয়ার পর মোহরাঙ্কিত মুদ্রা ব্যয় করে)

এই কবিতাতেই অন্য এক স্থানে তিনি নিজের বীরত্বকে এভাবে প্রকাশ করেছেন—

ومدجّج كره الكمــاة نزاله     لا ممعـن هربا ولا مستسلم

جادت يداي له بعاجل طعنة     بمثقّب صدق الكعوب مقوم

(অস্ত্রসজ্জিত সৈনিক, যার সাথে মোকাবেলা করতে ভয় পায় অভিজ্ঞ তীরন্দাজেরা, এড়িয়ে চলে, যে পলায়নপদ নয়, আত্মসমর্পণকারীও নয়

সোজা, তীক্ষ্ণ উন্নতমানের বর্শা-বল্লম নিয়ে আমি দ্রুত সেই সৈনিকের উপর চড়াও হয়েছি

No comments:

Post a Comment