Wednesday 4 May 2016

খোঁজ-খবর

 খোঁজ-খবর 
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

সুরেন বর্মণ। বয়স পঁয়ষট্টি বছর হবেপেশায় কৃষক। নিজে নিরক্ষর, কিন্তু শত কষ্ট করে হলেও একমাত্র ছেলে সোমেনকে হোস্টেলে রেখে পড়িয়েছেন। সোমেন ভালো রেজাল্ট করেছে, চাকরিও পেয়েছে; এখন সে কলকাতায় সেটেল্ড। আর সুরেন বাবু থাকেন সেই অজপাড়া গাঁ চণ্ডীপুরে নিজ কুঁড়েঘরেই।
গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে একটি ছোট মোড়, আয়ড়া। সেখানে কিছু দোকানপাট আছে। সেদিন চৈত্রের আকাশ আগুণ ঝরাচ্ছিলএকটু বেলা গড়াতেই, সুরেন বাবু হাঁটতে হাঁটতে মোড়ে গেলেন। এক মোবাইল দোকানে গিয়ে বললেন- বাবাজি, দেখো তো বো কী সমস্যা হইছে এই মোবাইলটার?
দোকানদার- না তো -কিছুক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে- কোন সমস্যা নেই, কাকু সব ওকে আছে।
সুরেন বাবু, ক্ষীণ কণ্ঠে- তাইলে, সোমেনের ফোন কেনে আসেনা... 
আজ পাঁচ দিন হল ছেলের কোন ফোন আসেনি। বুকের ভেতরটা কেমন খাঁ খাঁ করছিল। রাতটা কোন রকমে কাটালেন। ভোরবেলা মোরগের ডাকাডাকি শুরু হতেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলেন পাশের বাড়িতে বিমলের কাছে। বিমল স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। কাকভোরে উঠে পড়তে বসেছে। সুরেন বাবু তার কাছে ছুটে গিয়ে বললেন- বাবু, আইজ ক’দিন হলি তোর সোমেন দা’র ফোন আসেইনি; ওক ফোনটা লাগেই দি তো। বিমল ফোনটা লাগিয়ে দিল। ফোনটা রিং হচ্ছে, কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা। বিমল আর একবার ডায়াল করল। আবার রিং হয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে সুরেন বাবুর উৎকণ্ঠার পারদও চড়চড় করে উপরে উঠছে। তৃতীয় বার রিং করাতে কে একজন রিসিভ করলো। সুরেন বাবু উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা মিশ্রিত কণ্ঠে এক নাগাড়ে বলতে লাগলেন- বেটা, ভালো আছি তো? আইজ ছ’দিন হলি ফোন আসেইনি, তোর মাও খুব চিন্তা করছে...
ও প্রান্ত থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো- সোমেন অসুস্থ, এখন ঘুমোচ্ছে। আমি ওর শ্বশুর বলছি। আপনি পরে করুন।    
সুরেন বাবুর বুকটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠল। বিমলের ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। তখন তাঁর চোখের কোণ চিকচিক করছিল। গিন্নী দরজায় অপেক্ষা করছিলেন, তাঁকে দেখে সুরেন বাবুর চোখের জল আর বাঁধ মানল না।
তবে, তাঁর কাঁদার মূল কারণটা কী, ছেলের অসুস্থতা না অবহেলা- তা অজানাই রয়ে গেল।


[পূবের কলম, ১লা জানুয়ারি ২০১৭-এর সাহিত্য বিভাগে প্রকাশিত]

Image may contain: 1 person

No comments:

Post a Comment