Monday 7 December 2020

মাহ্‌মুদ দারবিশঃ চিরন্তন ক্যাকটাস


চিরন্তন ক্যাকটাস

মাহ্‌মুদ দারবিশ, ফিলিস্তিন

অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 

 

বাবা, তুমি আমায় কোথায় নিয়ে চলেছো?
প্রবাহমান বাতাসের পথে, সোনা আমার!

 

উভয়ে বেরিয়ে পড়ল বিস্মৃত সমতল ছেড়ে

যেখানে বোনাপার্টের সৈনিকেরা

ছায়া দেখবে বলে গড়ে তুলেছিলো পাহাড়

আক্কা’র প্রাচীন প্রাচীরের উপর;  
পিতা নিজ পুত্রকে ডেকে বললো—

তুমি শঙ্কিত হয়ো না
ছুটন্ত বুলেটের ফিসফিসকে তুমি ভয় পেয়ো না
প্রাণে বাঁচতে মাটিকে জড়িয়ে ধরো
মুক্তি পেয়ে আমরা আরোহণ করবো

উত্তরের এক পর্বতের উপর
আর যখন সৈনিকেরা ফিরে যাবে

বহু দূরে নিজ পরিবারের কাছে

আমারাও ফিরে যাবো।

 

বাবা, আমাদের পরে কে থাকবে আমাদের এই ঘরে?
সোনা আমার, আমাদের এ ঘর

যেমনটা আগে ছিল ঠিক তেমনই রয়ে যাবে!

তারপর পিতা স্পর্শ করল ঘরের চাবি

এ যেন তাঁরই দেহের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ

প্রশান্তির আবহে বিভর হয়ে উঠলো তাঁর মন
অতঃপর উভয়ে অতিক্রম করতে লাগলো কাঁটার প্রাচীর

আর পিতা পুত্রকে ডেকে বললো—

মনে রেখো, সোনা আমার
এখানে এই ক্যাকটাসের কাঁটার উপর

দু’রাত ধরে তোমার পিতাকে বেঁধে রেখেছিল ইংরেজরা
তবে তাঁকে কোনোকিছুই স্বীকার করাতে পারেনি তারা।
তুমি যখন বড় হবে, এখানে লোহার উপর দাঁড়িয়ে

পাঠ করবে রক্তমাখা মহাকাব্য
রাইফেলের উত্তরাধিকারীদের জন্য

 

বাবা, তুমি কেন ঘোড়াটিকে একলা রেখে গেছিলে?

সোনা আমার, ঘোড়াটিকে আমি ওই ঘরে  

একলা রেখে গেছিলাম ঘরের সঙ্গী ক’রে
ঘরের মানুষ ঘর ছাড়লে যে

মৃত্যু হয় সেই ঘরের, তাই  

 

দূরে বহু দূরে, অনন্ত খুলে দেয় তার দুয়ার

রাতের বাহনের জন্য, আর বন্য নেকড়েরা

চিৎকার করে সন্ত্রস্ত চাঁদের পানে
তখন এক পিতা নিজ পুত্রকে ডেকে বলে—  

তুমি সাহসী  হও তোমার পিতামহের মতো
আর আরোহণ করো আমার সাথে

দেবদারুর চূড়ান্ত টিলায়
সোনা আমার, মনে রেখো তুমি

এখানেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিলো পদাতিক যোদ্ধা
অটোমান সাম্রাজ্যের যুদ্ধের কুৎসিত সংগমে;
তাই উঠে দাঁড়াও আমার সাথে দৃঢ় পায়ে
যাতে আমরা ফিরে যেতে পারি।

 

কখন ফিরবে, বাবা?
সোনা আমার, আগামীকাল

হয়তো বা তারও দু’দিন বাদে!

 

ওটা ছিলো এক অনিশ্চিত আগামীকাল
তাদের পেছনেই শীতের দীর্ঘ রাতে

যা চিবিয়ে খাচ্ছিলো বাতাসকে।

আর যখন জোশোয়ার সেনাবাহিনী

তৈরি করছিলো তাদের দুর্গ
পিতা ও পুত্রের বাড়ির পাথর দিয়ে

তখন পিতা-পুত্র উভয়ে

হাঁপিয়ে উঠছিল কানা’র পথে

আর পিতা পুত্রকে বলছিল—
আমাদের পয়গম্বরও একদিন

এই পথ অতিক্রম করেছিলেন।
এখানেই তিনি জলকে করেছিলেন মদিরা।
এখানেই বলেছিলেন অনেক কথা

ভালোবাসা সম্পর্কে।
সোনা আমার, তুমি মনে রেখো আগামী’কে

আরও মনে রেখো, সৈন্যরা ছেড়ে যাবার পর
ক্রুসেডার দুর্গগুলোকে কামড়ে খেয়েছিল

এপ্রিলের শুকনো ঘাস

[মাহ্‌মুদ দারবিশ। ফিলিস্তিনের জাতীয় কবি। জন্ম ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই মার্চ, গালিলি প্রদেশের আল্‌-বির্‌ওয়া গ্রামে। ১৯৪৮-এর আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী আল্‌-বির্‌ওয়া দখল করে নেয়। ফলে বাবা-মা’র সাথে তিনি আশ্রয় নেন লেবাননে। সেখানেই তাঁর উদ্বাস্তু জীবনের শুরু। এক বছর পর তাঁরা যখন ইসরাইলে ফিরলেন তখন আর আল্‌-বির্‌ওয়া গ্রামের অস্তিত্ব ছিল না। ফলে দায়ের আল্‌-আসাদ নামক অন্য একটি গ্রামে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু হয়েই পরবর্তী বেশ ক’টি বছর কাটাতে হয় তাদের

 

কবি দারবিশের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আস়াফীরু বিলা-আজ্‌নিহ়াতিন্‌ (ডানাবিহীন পাখি)। প্রকাশিত হয় ১৯৬০ সালে, কবি তখন ১৯ বছরের টগবগে যুবক আর তাই এই গ্রন্থে প্রেমের কবিতা প্রাধ্যান্য পায়। তবে ১৯৬৪-তে প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ আওরাক়ুয্‌ যায়তূন (জলপাই পাতা) তাঁকে “শা’য়েরুদ্‌ দিফ়া’ আল্‌-ফ়িলিস্তিনী” (ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের কবি)-র খ্যাতি এনে দেয়। প্রতিরোধের কবিতা নামে আরবি কাব্যজগতে যে নতুন ধারা প্রচলিত দারবিশ তার অন্যতম কারিগর


দারবিশের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৩০ এবং প্রবন্ধ সংকলন ৮টি। তাঁর বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থ বিশ্বের প্রায় ২০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হলো— ‘আশিক়ুম্‌ মিন্‌ ফ়িলিস্তীন (ফিলিস্তিনি প্রেমিক, ১৯৬৬-য়ে প্রকাশিত), আখ়িরুল্‌ লাইল (রাতের সমাপ্তি, ১৯৬৭), উহ়িব্বুকি আও লা-উহ়িব্বুকি (আমি তোমাকে ভালবাসি, আমি তোমাকে ভালবাসি না, ১৯৭২), ক়াস়ীদাতু বৈরুত (বৈরুত গাথা, ১৯৮২), ভিক্‌টিম্‌স অফ অ্যা ম্যাপ (মানচিত্রের শিকার, ১৯৮৪) এবং স্যান্ড অ্যান্ড আদার পোয়েম্‌স (বালু ও অন্যান্য কবিতা, ১৯৮৬) দারবিশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— লোটাস প্রাইজ ফোঁড় লিটারেচার (১৯৬৯), লেনিন পিস প্রাইজ (১৯৮৩), দি লানান ফাউন্ডেশন প্রাইজ ফর কালচারাল ফ্রিডোম (২০০১), প্রিন্স ক্লাউস অ্যাওয়ার্ড (২০০৪) এবং স্ট্রাগা পোয়েট্রি ইভেনিং অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর এরাবিক পোয়েট্রি প্রাইজ (২০০৭) অতঃপর ২০০৮-এর ৯ই আগষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে হৃৎপিন্ডে অস্ত্রোপচার জনিত জটিলতায় মৃত্যু হয় তাঁর। ] 


أبد الصبار
محمود درويش – فلسطين  


إلى أَين تأخُذُني يا أَبي؟
إلى جِهَةِ الريحِ يا وَلَدي...

... وَهُما يَخْرُجانِ مِنَ السَهْل، حَيْثُ
أَقام جنودُ بونابرتَ تلاَّ لِرَصْدِ
الظلال على سور عَكَّا القديم –
يقولُ أَبٌ لابنِهِ: لا تَخَفْ. لا
تَخَفْ من أَزيز الرصاص! إلتصِقْ
بالتراب لتنجو! سننجو ونعلو على
جَبَلٍ في الشمال، ونرجعُ حين
يعود الجنودُ إلى أهلهم في البعيد

ومن يسكُنُ البَيْتَ من بعدنا
يا أَبي؟
سيبقى على حاله مثلما كان
يا ولدي!
تَحَسَّسَ مفتاحَهُ مثلما يتحسَّسُ
أَعضاءه ، واطمأنَّ . وقال لَهُ
وهما يعبران سياجاً من الشوكِ:
يا ابني تذكَّرْ! هنا طَلَبَ الانجليزُ
أَباك على شَوْك صُبَّارة ليلتين،
ولم يعترف أَبداً. سوف تكبر يا
ابني، وتروي لمن يَرِثُون بنادِقَهُمْ
سيرةَ الدم فوق الحديد...

لماذا تركتَ الحصان وحيداً؟
لكي يُؤْنسَ البيتَ، يا ولدي،
فالبيوتُ تموتُ إذ غاب سُكَّانُها...

تفتحُ الأبديَّةُ أَبوابها، من بعيد،
لسيَّارة الليل. تعوي ذئابُ
البراري على قَمَرٍ خائفٍ. ويقولُ
أَبٌ لابنه: كُنْ قوياً كجدِّك!
وأَصعَدْ معي تلَّة السنديان الأخيرةَ
يا ابني، تذكَّرْ: هنا وقع الانكشاريُّ
عن بَغْلَةِ الحرب، فاصمُدْ معي
لنعودْ

متى يا أَبي؟
غداً. ربما بعد يومين يا ابني!

وكان غَدٌ طائشٌ يمضغ الريح
خلفهما في ليالي الشتاء الطويلةْ.
وكان جنودُ يُهُوشُعَ بن نونِ يبنون
قَلْعَتَهُمْ من حجارة بيتهما. وهما
يلهثان على درب "قانا": هنا
مرَّ سيِّدُنا ذاتَ يومٍ. هنا
جَعَلَ الماءَ خمراً. وقال كلاماً
كثيراً عن الحبّ، يا ابني تذكّر
غداً. وتذكّرْ قلاعاً صليبيَّةً
قَضَمَتْها حشائش نيسان بعد
رحيل الجنود...

বাঁশকুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর 
০৭-১২-২০২০ 

No comments:

Post a Comment