Saturday 11 April 2020

মানাল আশ্‌-শায়েখ-এর ক’টা কবিতা



মানাল আশ্‌-শায়েখ-এর ক’টা কবিতা

অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

 

[মানাল আশ্‌-শায়েখ ইরাকের একজন কবি, লেখক ও সাংবাদিক। উত্তর ইরাকের নিনেভাহ-তে ১৯৭১ সালে জন্ম মসুল ইউনিভার্সিটির কলেজ অফ আর্টস থেকে অনুবাদ বিষয়ে স্নাতক। বহু আরবী ও ইরাকী পত্রপত্রিকায় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘ একযুগ ধরে। ইরাকের বিভিন্ন প্রান্তে মেহ্‌রাজানুল মির্‌বাদ-এর মতো বহু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন একাধিকবার।

 

তাঁর কবিতা ও অন্যান্য রচনাসমূহ ইংরেজি, নরওয়েজিয়, ফরাসি, কাতালান এবং ইতালিয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ইন্‌হ়িরাফুত্‌ তাওয়াবীত (কফিনের বক্রতা), ইরাকের লেখক সমিতি কর্তৃক নিনেভাহ্‌তে ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত। তিনি ২০০৭-এ উমারাউর্‌ রুআ (কল্পজগতের রাজকুমারেরা) নামে আধুনিক ইরাকি কবিতা বিষয়ক একটি গ্রন্থের সম্পাদনাও করেন। তারপর মিশরে ২০০৮-এ আস্‌ফার আল্‌-‘য্‌লাহ্‌ (নিঃসঙ্গতার কিতাব) এবং ২০০৯-এ বিন্‌-নুক়তাহ্‌ আল্‌-হ়াম্‌রা তাহ্‌তা ‘আইনি আল্‌-ইউস্‌রা (আমার বাম চোখের নীচের লাল দাগটায়) প্রকাশ করেতারপর ২০১০-এ নিজ কাব্যগ্রন্থ ‘রাসায়েলু লা-তাস়িল’(যে চিঠিগুলো পৌঁছয় না) প্রকাশ করেন।



আমার শরীর

যে-শরীরটা ধার দিয়েছিলাম তোমাকে

তোমার সাথে কাটানো প্রথম রাতে

এখন প্রতি রাতে আমি পাহারা দিই সেই শরীর

আর দেখি,আমার শরীর

ছুটে চলেছে এক নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের দিকে
যেখানে বয়সের বালিয়াড়ি বিশ্রাম নেয় শিরার ভেতর

আর যখন অবসন্ন জাহাজনোঙর ফেলে অক্ষিগোলকে

তখনই জারি হয় ঘুমের সমন আমার শরীরে;

তাই, কোনো শরীরই আমার শরীরের মতো নয়।


جسدي

جسدٌ لا يُشبِهُ جسدي
ذلك الذي استعرتُهُ في ليلتي الأولى معكَ
أراقبُهُ  كلَّ ليلةٍ، يمضي
نحوَ بحرٍ بِلا أمواجٍ
يستقيمُ رملُ العمرِ في الشرايينِ
وترسو سفنُ التعبِ في مقلتيهِ
فينام. 


যুদ্ধ

যুদ্ধের পরিকল্পনা করে পুরুষআর নারী

উপায় খোঁজে ধ্বংসস্তূপের ভেতর বেঁচে থাকার;

একদিন, যখন বেঁচে থাকবে না কোনো পুরুষ

একজন নারী ধাওয়া করবে অপর নারীকে

এবং খুঁজবে বাতাসে শেষ পুরুষের ঘ্রাণ

যে-পুরুষটির ঠোঁট ছুঁয়েছিল তার গ্রীবা

শেষবারের মতো


حرب

 الرجال يقررون الحروب..
والنساء تعيش على أنقاضها.
سنصحو يوماً على كوكبٍ من النساء
واحدة لا تشتهي الأخرى
إلا من أجل عطر خلفهُ رجلٌ
على عنقِ
إحداهن


একটি বিশ্ব

দু’টি পায়রা

এবং একটি প্রাচীরের প্রান্ত;

পৃথিবীর হৃদয় কতটা বিস্তৃত!


عالم

حمامتان
وحافة جدار
كم واسع هو قلب العالم



আমার নাম

তারা ডাকছিল আমার নাম ধ’রে

আমি শুনতে পেয়েছি  

তবে উত্তর দেওয়ার আগে

আমি কিছুক্ষণ ভেবে দেখলাম

পৃথিবীর তো একটাই দরজা

এবং গন্তব্যও একটাই,

আমি বিস্মিত, আমি চিন্তিত

আমি কি ফিরে আসতে পারবো আবার

যদি উত্তর দিই তাদের?

 

একাকীত্ব

প্রতিটি দরজা জন্য একটি ক’রে তালা

প্রতিটি ঘোড়া জন্য একটি ক’রে জুতো

আর আমার প্রাচীর-বিহীন দরজাটা

দাড়িয়েছে বিষাদে ডুবে

একটি নিছক ঠোকায়

দুলছে তোমার মত

যেন কোনো নিঃসঙ্গ নাল।

 

নবজাতকের রক্ত

আমার শরীরে লেগে আছে এক নবজাতকের রক্ত

যার না আছে কোনো নাম, না আছে ঠিকানা

তবুও, একবার আমার ঠোঁটে পুষ্পিত হল বায়ুপরাগী

আর আমি নিজেকে পেলাম, আয়নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

অপলক খুঁজে চলেছি তাকে...


ফসল

আজ আমার ঝুড়িটা খালি

আমি কোনো ফলই পাড়িনি

আমার কলসও শুকিয়ে গেছে

আমি নালা থেকে তা ভরে আনিনি

আমি আজ সারাদিন

নিজ স্মৃতির আগাছা উপড়ে ফেলতেই ব্যস্ত ছিলাম।

 

বাতিল

আমি তোমাকে বলেছিলাম

আমি কোনো রাজনীতিবিদ নই

ছিলামও না কোনোদিন;

তুমি যখন আমায় ছেড়ে চলে গেলে বহু দূরে

বাতিল শব্দটি রেখে গেলে আমার মনে

আর আমি ভরিয়ে তুললাম সেই বাতিল জায়গাটা

ঈশ্বরের চোখে প্রবাহিত রক্তের খবর দিয়ে।

1 comment: