Thursday 16 April 2020

মাহমুদ সায়িদঃ তিক্ত সকাল


তিক্ত সকাল
মূল- মাহ্‌মুদ সায়িদ, ইরাক  
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

কুক্‌-কুরু-কু... কুক্‌-কুরু-কু...
মোরগের তীক্ষ্ণ ডাকে ঘুম ভেঙে গেল মেয়েটির খিলখিল করে হেসে উঠলো সে তারপর জানালার দিকে তাকিয়ে মোরগটাকে ডাকলো । কিন্তু মোরগটা সাড়া দিল না । মেয়েটি মেঝেতে একটা মাদুরের উপর শুয়েছিল, জানালা থেকে প্রায় এক মিটার দূরে । সেখানে জানালার বাইরে উজ্জ্বল, টকটকে লাল ফুলে শোভিত ডালিমের একটা ডাল অস্থির ভাবে দুলছিল বাতাসের ধাক্কায় ওর ডগাটা বারবার ছুঁয়ে যাচ্ছিল জানালার গ্রিল, অনেকটা খেলার ছলে । মোরগটা আবার ডেকে উঠলো মেয়েটিও হেসে উঠল খিলখিল করে; বড্ড স্পষ্ট ও শিহরণ জাগানো সেই হাসি । হাসতে হাসতে আরও একবার মোরগটাকে সে ডাকলো । কিন্তু মোরগটা নির্বিকার, কোনো প্রতিক্রিয়া নেই । এরই মধ্যে একটা বুলবুলি উড়ে এসে তার পাশের জানালায় বসলো । বসে নির্ভয়ে, তিড়িং-বিড়িং করে উপর-নীচে লেজ দোলাতে দোলাতে বেশ কিছুক্ষণ গান গাইলো তার গান শুনে আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়েটি । কচি হাত দু’টো সামনে বাড়িয়ে দিয়ে বুলবুলিটিকে কাছে ডাকলো । যদিও তার ডাক পাখিটার চোখে পড়লো না । তবে তার হাসির শব্দে কিছুক্ষণের জন্যে গান বন্ধ রাখল পাখিটা সুন্দর গোল চোখ দু’টো ওই আওয়াজের দিকে ঘুরিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আওয়াজের উৎস সন্ধান করলো । কিন্তু জানালায় ছিল জাফরি-কাটা পর্দা, যাতে বাইরে থেকে কিছুই দেখা যায় না, তবে ভেতর থেকে বাইরে স্পষ্ট দেখা যায়। সেই জাফরি-কাটা জানালায় আটকে গেল তার দৃষ্টি । খানিকটা আশ্বস্ত হয়ে আবার গাইতে আরম্ভ করলো পাখিটা । মেয়েটিও আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো হাত নেড়ে নেড়ে পাখিটাকে কাছে ডাকলো কিন্তু পাখিটা এবারও তাকে দেখতে পেল না । এরই মাঝে পাশের বাগান থেকে একটা মেয়ে-বুলবুলির কণ্ঠ ভেসে আসল । সঙ্গে সঙ্গে সুরেলা কণ্ঠে তার উত্তর দিল পাখিটা । তারপর ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে তার পাশে বসলো । অতঃপর দু’জনে মিলে আরও কিছুক্ষণ গান গাইলো ।

মিনিট পাঁচেক হবে তার বাবার নাক-ডাকা বন্ধ হয়েছে । ঘুমের মধ্যে দীর্ঘ লয়ে ঘড় ঘড় শব্দ তুলে ঘন ঘন দম নেন তিনি । সে জানে, বাবার নাক ডাকার সাথে মা ও ঘুমন্ত ভাইয়ের নাক ডাকার অনেক তফাৎ । মায়ের নাক ডাকা ছন্দময়; অনেকটা কাঠের ডেস্কে মৃদু টোকার মতো । আর ভাইয়েরটা বাতাসের মৃদু শাঁ শাঁ শব্দের মতো তার দৃষ্টি তখনো জানালায় আটকে বুলবুলি দু’টির মিষ্টি গান তখনো ভেসে আসছে পার্শ্ববর্তী বাগান থেকে । সে মন দিয়ে শুনছে সেই গান এবং তাল মিলিয়ে আনন্দে নাচছে যদিও বুলবুলি দু’টি তার ডাকে সাড়া দেয়নি, তবুও সে আশা করে আছে, পাখি দু’টো আবারও আসবে। এসে তার পাশে জানালায় বসবে । এরই মাঝে মায়ের চেনা কন্ঠ কানে আসল । সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটি ঘাড় ঘোরালো ভেতরের দিকে মা বাবাকে বলছেনশুয়ে থাকো । এত সকাল সকাল উঠছো কেন ? কপালে যা আছে তা তো ঘটবেই, বিধির লিখন অপেক্ষা করতে জানে ।
না, আমাকে তৈরি হতে হবে ।
এখনো অনেক সময় আছে, শুয়ে থাকো
জানোই তো, একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি আর ঘুমোতে পারিনা ।

বাবা উঠতে যাচ্ছিলেন, মা বাবার  হাতটা টেনে ধরলেন । মেয়েটি আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো; যেন আশেপাশে কোথাও ঝনঝন করে একটা বাজনা বেজে উঠলো তার ওই হাসির মধ্যে এক অদ্ভুত চৌম্বকত্ব ছিল । সেই আকর্ষণে বাবা ওর পাশে গিয়ে বসলেন বাবাকে কাছে পেয়ে ওর মন খুশিতে ভরে গেল, খানিকটা বানের জলের মতো ছলছল করে উঠলো । আর তার উল্লাস ছড়িয়ে পড়ল আকাশে-বাতাসে । ছোট্ট দু’ হাতে তালি বাজাতে বাজাতে হাত দু’টো বাবার দিকে এগিয়ে দিল; যেন বাবাকে জড়িয়ে ধরতে চাইছে, বা চাইছে উড়ে যেতে । সে হেসে চলেছে আর তার সামনের ছোট্ট দাঁত দু’টো গোলাপি মাড়ির উপর মুক্তোর মতো চক্‌চক্‌ করছে । তার দীঘল-শুভ্র চোখের কালো মনি প্রচন্ড দাপুটে ও উজ্জ্বল । খুব কাছ থেকে বাবার নিঃশ্বাস অনুভব করল সে । তারপর নিজের মুখে অনেকখানি বাতাস ভরে নিল । ফলে তার দু’ গাল ফুলে একটা লালচে বল হয়ে গেল সাথে একটা লালচে আভা ছড়িয়ে পড়ল তার কপালে । তারপর যেটুকু লালা ও বাতাস মুখের ভেতরে ছিল তার সবটুকুই ছুড়ে দিলো বাবার মুখে । এই একরত্তি বিজয়ে সে আবারও খিলখিল হেসে উঠলো বাবাও হাসলেন । আহ্লাদ করে বললেন— পুঁচকে বাদর, এটা কী করলে তুমি?

বাবার দিকে নিষ্পলক চেয়ে, নিজের নাদুশনুদুশ পা দু’টো শূন্যে তুললো । তারপর দু’ হাতে একটা পা ধরে পা’টাকে টেনে মুখের কাছে আনল । তারপর বুড়ো আঙুলটা মুখে নিয়ে চুষল কিছুক্ষণ ছেড়ে দিয়ে, একটু থেমে বিজয়ের অহংকার-ভরা চোখে বাবার দিকে তাকালো তাকিয়ে মুখে শব্দ করলো, বব্‌-বব্‌-ব...। তারপর হিজলি-বাদামের মতো লাল বুড়ো আঙুলটা আবারও চুষতে আরম্ভ করলো

মা’র আলতো ধাক্কায় বাবা একটু সরে গেলেন মা গোমড়া মুখে বিড়বিড় করে বললেনও আল্লাহ! সকাল সকাল এত যন্ত্রণা দিচ্ছ কেন ? আমরা কি এসব একটু ভুলে থাকতে পারবো না ? অন্তত ঘুমের সময়, একটু নিশ্চিন্তে ঘুমোতেও পারবো না ! একটু সরো, ওর কাপড়চোপড় পালটে দেবো
এমন বিদঘুটে চেহারা নিয়ে মেয়েটার সামনে যেয়ো না তো । ও সব বোঝে । আমাদের সমস্যার মাঝে ওকে অযথা টেনে এনো না ।

মেয়ের জামাকাপড় পালটানোর জন্য মা যেই একটু ঝুঁকলেন, মায়ের ঘন চুল মেয়ের সামনে ঝুলে পড়ল এবং চারিদিক থেকে ওর মুখটা ঢেকে গেল ফলে এক অদ্ভুত রকমের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল ওর চোখেমুখে । পা’টা ছেড়ে দিয়ে এবার ও মায়ের এক গোছা চুল খামচে ধরল । তারপর টেনে তা মুখে নিল । মা তখন ওর কোমর থেকে ল্যাংগোটটা খুলছিলেন, হেসে বাবার দিকে তাকিয়ে বললেনদেখো, ও আজও বিছানা ভেজায়নি । আজ দিয়ে পরপর তিন দিন আমি তো নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিনা ।
ওসব বলে ওর ভাগ্যটা নষ্ট করো না ।
ওর বয়স সবে সাত মাস ।

হিসি করাবার জন্য মেয়েকে পটিতে বসিয়ে দিয়ে মা গেলেন দুধ আনতে । আর মেয়ে মাটিতে পা দিয়ে বাজনা বাজাতে লাগল একটা বাটিতে দুধ নিয়ে এসে মা প্রায় কেঁদেই ফেললেনএটাই শেষ বাটি, ঘরে আর দুধ নেই ।
বলেছি না, ওর সামনে হাসি-মুখে কথা বলবে । ও সব বোঝে ।
হুম...।   
তুমি আর কবে বুঝবে যে বাচ্চারা সব বুঝতে পারে?
কী বুঝতে হবে আমাকে? ওর বয়স সবে সাত মাস আর ও সব বোঝে ? এটা পাগলামি নয় ? তোমার মাথা ঠিক নেই, বুঝলে !

ওর চোখ দু’টো থেকে আগের সেই ঔজ্জ্বল্য উধাও হয়ে গেছিল । ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতায় ঢেকে যাচ্ছিল চোখের দাপুটে মণি বাবা আবার মুখে চওড়া হাসি নিয়ে এগিয়ে গেলেন । আদর করে মেয়ের মুখে ফুঁ দিলেন । ওর সুড়সুড়ি লাগলো; একটু পিছিয়ে গিয়ে ফিক করে হেসে উঠলো । বাবাও হাসলেন । তারপর মায়ের হাত থেকে দুধের বাটিটা ও নিজের হাতে নিল । ছোট ছোট আঙুলগুলো বাটিটার চারপাশে পেঁচিয়ে দিয়ে বাটিটা জাপটে ধরল । আর বাবা নিজের একটা হাত বাটির নীচে স্পর্শ না করেই কচুর পাতার মতো পেতে দিলেন যাতে বাটিটা পড়ে না যায় মেয়েটি এক চুমুক দুধ খেয়ে মাথা উঁচু করলো । ওর উপরের ঠোঁটে তখন দুধের একটা চিকন সাদা দাগ পড়ে গেছিল বাবার দিকে এমন ভাবে গর্ব ভরে তাকালো যেন বলতে চাইছে, দেখো, আমি কী না করতে পারি !
বাবা হেসে মেয়ের হাতে চুমু খেলেন— ওরে বাবা রে, আমার বীরকন্যাটা এখন বোতল ছাড়াই দুধ খেতে পারছে !

বাবার এই আহ্লাদে মেয়েটিও হেসে উঠলো । এরই মাঝে মা মেঝেতে পাতা আরেকটা মাদুরে গিয়ে বসলেন। পরিস্থিতির ভারে তাঁর মাথা নুইয়ে পড়ছিল, তাই দু’হাতে মাথা ধরে বসেছিলেন । আর তাঁর কন্ঠ কান্নায় বুজে আসছিল । বাবা আন্দাজ করতে পারছিলেন, এই অবুঝ শিশুর দুধ, তিন বছরের ছেলের খাবার, তাদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত আর নেকড়ের মতো ওঁত পেতে থাকা অন্ধকার ভবিষৎ স্ত্রীর মগজে ঘুরপাক খাচ্ছে । কান্না জড়ানো কণ্ঠেই বললেন— তোমার জন্য চা বানিয়ে আনছি ?
এখন কিছুই খাওয়া যাবে না । ডাক্তার খালি পেটে যেতে বলেছেন ।
স্বামীর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়েতুমি ওটা বিক্রি করবে না ।
স্বামী রেগে মুখ বাঁকালেনকী বললে ! আমরা কি শিশু ? চাইলেই তো আর ছেলে-মানুষি করা যায় না । আমি ওদের কথা দিয়েছি ।
তুমি ওটা বিক্রি করবে না, বলে দিলাম
কিন্তু গতকালও তো তুমি রাজি ছিলে ।
এবার স্বামীর দিকে সামান্য এগিয়ে গিয়ে একই মাদুরের উপর মেয়ের পাশে বসলেন— কাল রাতে আমি এক ফোঁটাও ঘুমাইনি । সারা রাত ধরে ভেবেছি । তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পর শুধুই কেঁদেছি; ভোর চারটে পর্যন্ত কেঁদেছি । তোমার ক’টা কিডনি আছে বলো ? দু’টোর বেশি তো নয় মানলাম তুমি এখন যুবক, বেশ শক্ত-সমর্থ । কিন্তু চার-পাঁচ বছর পর, দশ বছর পর, তখন কী হবে ? কোনো কারণে তোমার অন্য কিডনিটা যদি নষ্ট হয়ে যায় তখন কী করবে ? ধুকেধুকে মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে ? অধিকাংশ মানুষ এখন কিডনি-রোগে আক্রান্ত । কিডনি রোগে মারা যাচ্ছে এমন লোকের সংখ্যাও ইদানীং কম নয় । তাহলে কী করে তুমি কিডনি বিক্রির কথা ভাবছ ! তাছাড়া একটা কিডনির দাম কত ? একটা কিডনি বেচে তুমি ক’ টাকা হাতে পাবে ? আর যা পাবে তা দিয়ে ক’ মাসই বা চলা যাবে ? খুব বেশি হলে চার মাস, রাতে আমি শুয়ে শুয়ে হিসেব করে দেখেছি । তারপর কী বেচবে ? চোখ ? না, এসব বেচা-বিক্রি আর নয় । টিভি, ফ্রিজ, খাট, কার্পেট, এসি সব বেচে শেষ । এখন আমাদেরকে মাটিতে শুতে হয় । যথেষ্ট হয়েছে, আর না !
তাহলে কি ছেলে-মেয়েকে না খাইয়ে মারবো?
রাজা’কে আমি আলি ভাইয়ের মায়ের হাতে তুলে দেব ।
স্ত্রীর এ কথা শুনে চমকে উঠলেন, নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তিনিকী বললে, কিডনির বদলে আমরা সন্তান বিক্রি করবো ? এটা ভাবলে কী করে তুমি !
না, আমরা ওকে বিক্রি করছি না । আমি কথা বলেছি উনার সাথে । উনি এবং উনার স্বামী, তাঁরা দু’জনেই কাগজে সই করতে রাজি আছেন সেই চুক্তি অনুযায়ী চাইলেই আমরা আমাদের মেয়েকে, যখন অবস্থা একটু স্বচ্ছল হবে ফেরৎ নিতে পারবো । তাছাড়া তিনি বলেছেন, রাজা’র সাথে আমরাও যদি তাঁর বাড়িতে গিয়ে থাকি, তাতে আপত্তির কিছু নেই। তিনি কিছুই মনে করবেন না । বরং খুশিই হবেন । চার ছেলে দেশ ছাড়ার পর তাঁর বিশাল বাড়িটা এখন খাঁ খাঁ করছে দোতলা-বাড়ি; উপর-তলা পুরোটাই ফাঁকা, চার-চারটা শোবার ঘর একেবারেই খালি তারাও চায় বাড়িটা একটু প্রাণ ফিরে পাক ।
আমি মেয়েকে বেচতে পারবো না ।
বেশ । তবে তোমাকে যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে; হয় আমাকে, না হয় কিডনি-বিক্রি । যদি হাসপাতালে যাও তাহলে ফিরে এসে আর আমার দেখা পাবে না ।
[আল্‌-আ-দা-ব, সংখ্যা ২০০২- ১১/১২, পৃষ্ঠা ১০৮ – ১১০]

[মাহমুদ সায়িদ ইরাকি ঔপন্যাসিক। থাকেন আমেরিকাতে । তাঁর উপন্যাস ও ছোটগল্প সংকলনের সংখ্যা ২০-এর অধিক । প্রথম গল্প সংকলন ‘বূর সা‘য়ীদ ওয়া ক়াস়াস় উখ়রা’(সায়িদ-বন্দর এবং অন্যান্য গল্প) প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে । ১৯৬৩ সালে ইরাক সরকার তার দু’টি উপন্যাস নষ্ট করে দেয় । অতঃপর ১৯৬৮ সালে ‘আল্‌-ইক়া’ ওয়াল্‌-হাজিস’ এবং ১৯৭০ সালে ‘যান্‌ক়াহ্‌ বিন বারাকাহ্‌’ নামে তাঁর আরও দু’টি উপন্যাস বাজেয়াপ্ত করা হয় । পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ‘আত়্-ত়ানাহ্‌’ এবং ২০১০ সালে ‘ওয়াদিউল্‌ গ়ায্‌লান’ নামের আরও দু’টি উপন্যাসকে বাগদাদ সংস্কৃতি সংসদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে । সাদ্দাম হোসেনের বা’থ়্ পার্টির শাসনামলে তাঁকে বেশ ক’বার কারাবরণ করতে হয় । ফলে ১৯৮৫ সালে তিনি পাকাপোক্ত ভাবে ইরাক ত্যাগ করেন । ‘নিহাইয়াতুন্‌ নাহার’ (দ্য এন্ড অব দ্য ডে লাইট ১৯৯৬, উপন্যাস), ‘ত়ুইয়ূরুল্‌ হ়ুব্‌বি ওয়াল্‌-হ়ার্‌বি’ (দ্য বার্ডস অব লাভ এন্ড ওয়ার ১৯৯৭, ছোটগল্প সংকলন), ‘আল্‌-মাওতুল্‌ জামীল’ (দ্য বিউটিফুল ডেথ ১৯৯৮, উপন্যাস), ‘আদ়্-দ়াল্‌লান’ (টু লস্ট সোল ২০০৩, উপন্যাস) তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি । তবে তাঁর সর্বাধিক বিখ্যাত ও অমর কীর্তি হল ‘সাদ্দাম সিটি’ (অনূদিত ২০০৩, আরবি নাম- ‘আনাল্‌-লাযী ‘আরা’ ১৯৮১) উপন্যাসটি । আল্‌-আ-দা-ব ২০০২-১১/১২ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘স়াবাহ়ুন্‌ মুর্‌রুন্‌’ (তিক্ত সকাল) নামের এই ছোটগল্পে তিনি বর্তমান সময়ের সংকটময় আর্থসামাজিক প্রেক্ষিতে দারিদ্র্যের কাছে পিতামাতার নৈতিকতা ও বাৎসল্যের অসহায় আত্মসমর্পণ ও দ্বন্দ্বকে ফুটিয়ে তুলেছেন ।]

[শব্দের মিছিল, ১৪ এপ্রিল ২০২০, অনুবাদ বিভাগ-এ প্রকাশিত]


صباح مر
محمود سعيد

-كوكو..كو.. كوكو..كو
استيقظت على صوت الديك. ضحكت. نظرت إلى الشباك. نادته. لم يستجب. كانت ترقد على حشية على الأرض، تبعد عن الشباك نحو متر. وكان هناك غصن رمانة، بوروده الحمر النارية، يتلاعب مع النسيم في جزء من فضاء الشباك، يدخل ذؤابات أغصانه بين قضبان الشباك الحديدة لحضة كأنه يلعب معها، وينسحب. جاء صوت الديك مرة أخرى. أضحكها. كركرت. صوت صاف اسر. نادته من جديد، لكنه أهملها مرة أخرى. توقف بلبل على الستارة، غرد لحظة وهو يهز ذيله، فضحكت من جديد، نادته مدت يدها نحوه، لكن البلبل لم يرها. أوقفه الصوت، أدار جانبه. حدق بعينيه المدورتين الجميلتين ناحيية الصوت: كان هناك مشبك سلكي يصد الرؤية لمن فى الخارج ويتيحها واضحة لمن في الداخل. وإذ اطمأن أن لا أحد يهدده أطلق دفقة ألحان أخرى. نادته ثانية، حركت يديها تستدعية. لكنه إذ سمع تغريد صديقته على شجرة بعيدة في حديقة الجيران أجابها بدفعة ألحان رشيقة قبل أن يطير إليها.
توقف شخير أبيها: شهيق طويل أشبه بالحشرجة، ثم زفير قصير جدا. كانت تميزه عن شخيرة أمها وزفيرها المتقط الذي يشبه دقة صغيرة على منضدة خشبية، وعن تنفس اخيها الهادئ نائما. لكن عينيها لم تفارقا الشباك. كانت تسمع تغريد البلبل وصديقته من قوق الشجرة البعيدة وتتفاعل معهما. وعلى الرغم من أنهما لم يردا على ندائها المتكرر فإنها واثفة أنهما سيحطان على الستارة. التفتت ناحية الغرفة عندما سمعت أمها تكلم أباها.
_نم! لم تبكر؟ سنلحق على العذاب.
_ يجب أن أستعد.
_ مازال هناك وقت.
_ ما إن أفتح عيني حتى يهرب النوم.
أراد أن ينهض. أمسكت يده تبقيه، فجاءت ضحكتها قهقهة قصيرة اشبه بلازمة موسيقية لذيذة مصحوبة بشحنة مغناطيس كبرى جعلت الأب يصبح قربها. قهقهت بسعادة تفيض على الكون. صفقت بكفيها الصغيرتين، ثم مدت يديها وكأنها تريد أن تعانقه، تريد أن تطير. تضخك: سنان علويتان صغيرتان وحيدتان تلمعان كلؤلؤتين في لثة وردية. عينان واسعتان، قزحيتان سوداوان وسط بياض كالحليب. أحست بأنفاسه قرب وجهها فحبست نفسها، نفخت خديها، جعلتهما كرتين صغيرتين، أوقفت زفيرها لحظة فاحمر خداها وجبهتها، ثم أطلقت الهواء، فتطاير رذاذ اللعاب من فمها كالرشاش على وجهه. ضحكت من جديد متمتعة باتنصارها. ضحك من كل قلبه: "ملعونة.. ماذا فعلت؟
وهي تحدق به رفعت فخذها الممتلئة العارية، أمسكت قدمها بيديها الاثنتين، ثم قربت القدم إلى فمها، مصت إبهامها لحظة ثم أبعدتها. نظرت إليه بتحد. هتفت:"ببب .. بي..ببب..." ثم أعادت الإبهام، التي بدت أشبه ببندقة قانية، إلى فمها.
دفعته زوجته قالت معبسة: "لماذا من صباح الله تدفعنا إلى العذاب يا إلهي! لماذا لاتدعنا ننسي؟ في الأقل ونحن نيام لانفكر! تقدم دعني أنظفها!"
_ لا تعبسي بوجهها. إنها تفهم كل شيئ. لا تقحميها بالمصائب.
لحظة ووجدت أمها تنحني فوقها، وخصلات شعرها تتدلى خول وجهها في جميع الحجهات. التهبت الحماسة في عينيها أطلقت قدماه. خطفت خصلة من شعر أمها، سحبتها بقوة ترد أن تضعها في فمها. أخذت أمها تضحك، وهي تفك الخرق من حول فخذيها. نظرت إلى زوجها وقالت: 
_ أنظر. لم تبلل نفسها في الليل. هذا هو اليوم الثالث. لا أسدق عيني!
_ لاتحسديها.
_ سبعة أشهر فقط.
وضعتها على "القعدة" أخذت تضرب الأرض بقدميها. عندها حاءت أمها بكوب الحليب. قالت وهي تكاد تبكي:
_ هذه آخر ملعقة حليب.
_ قلت لك ابتسمي عندما تتكلمين أمامها. إنها تفهم كل شيئ.
-...
- متى تدركين أن الأطفال يفعمون كل شيئ؟
_ماذا أدرك؟ سبعة أشهر فقط وتفهم كل شيئ؟ اليس هذا بجنون؟ 
تغيرت عينا الطفلة. شيئ ما كمد إشعاع السعادة في عينيها، فاقترب منها مبتسما. نفخ في وجهها. رجعت إلى الوراء. ضحكت. ضحك. أخذت كوب الحليب من أمها، لفت أصابعها الدقيقة حوله. كان يضع راحته تحت الكوب من دون أن يلامسه كي لا يسقط. رشفت رشفة واحدة. رفعت رأسها. كانت شفتها العليا ملطخة بالحليب خدقت به بتحد، كأنها تقول له "أنظر ماذا أستطيع أن أفعل."
قهقة وهو يقبل يدها: "أنت بطلة.. تشربين من دون رضاعة..بطلة."
ابتسمت بينما جلسب أمها على الأرض فوق حشايا المنام، ورأسها بين يديها، وهي تكاد تبكي. وخمن أنها ماتزال تفكر بحليب الطفلة، بطعام أخيها ذي السنوات الثلاث، بطعامهما، بالمستقبل المظلم الذي ينتظرهم. 
_ سأعد لك الشاي. 
_ لن أكل. قال الطبيب يجب أن أبقى على الريق.
التفتت إليه:
لن تبيعها.
عبس بغضب:
_ ماذا؟ أنحن أطفال؟ أعطيتهم كلمتي.
_ لن تبيعها.  
لكنك البارحة وافقت. 
اقتربت منه جلست على المنام قرب الطفلة:"فكرت طول الليل. بعد أن نمت ظللت أبكي حتى الرابعة. كم كلية عندك؟ اثنتان فقط! أنت الآن شاب. من يدري بعد أ ربع، خمسن، عشر سنوات، ماذا يحدث لإحدى كليتيك؟ ماذا تفعل عندها؟ ستموت. معظم الناس عندهم أمراض كلية، وتضحي بنفسك؟ ثم ما قيمة الكلية؟ كم ستأخذ؟ كم شهرا ستبقي الفلوس عندنا؟ حسبتها البارحة، لن تكفينا أكثر من أربعة أشهر وبعدها ماذا ستبيع؟ عيونك؟ لن نبيع شيئا أبدا. الا يكفي أننا بعنا الثلاجة، التلفيزيون السجاد، الأسرة، المكيفات؟ الا يكفي أننا ننام على الأرض؟"
_ أنموت أولادنا من الجوع؟
_ سأعطي رجاء لأم علي. 
هتف مستنكرا:
_نبيع طفلتنا؟ 
_لا، ليس بيعا. اتفقت معها. مستعدة وزوجها أن يوقعا وثائق رسمية بموجبها نسترد ابنتنا متى شئنا، متى تنفرج الأمور. قالت لي أن ليس عندها مانع حتى لو انتقلنا كلنا عندها إلى بيتها. لقد فرغ البيت الواسع، بعد أن هرب وهاجر أولادها الاربعة إلى الخارج. طابقان. الطابق العلوي فارغ. أربع غرف خالية. يريدون بعض الحياة في البيت. 
_ لن أبيع طفلتي. 
_ إذن، اختر بيني وبين بيع كليتك. إن ذهبت اليوم إلى المستشفى فلن تراني حتى الموت.
شيكاغو


No comments:

Post a Comment