Thursday 29 December 2022

বদিউর রহমানঃ চোখ দু’টো আবার ঝাপসা হয়ে গেল


চোখ দু’টো আবার ঝাপসা হয়ে গেল

বদিউর রহমান

 

গত সংখ্যায় “এক অভূতপূর্ব অনুভূতি” শীর্ষক আত্মকথনে আমার ক্যাটারাক্ট অপারেশন প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল। আর তাই একটা কথা না বলে পারছি না। আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার আগে একটা হলে নিয়ে গেল। দেখি আট-দশটা বেডে ছসাতজন ও-টি ড্রেস পরে মরার মত শুয়ে আছে। আমাকে ওই রকম কাপড় পরিয়ে একটা বেডে শুতে বলা হল। একজন সিস্টার এসে আমার চোখে ড্রপ দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে বললেন। কিছুক্ষণ পর আবার ড্রপ। আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা। আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ করছি। হঠাৎ শুনি একজন বলছেন— বদিউর রহমানটা কে?

বললাম— আমি’।

আমার কাছে একজন এসে বললেন— দেখুন তো আমাকে চিনতে পারেন কি না?’

মুখে মাস্ক মাথায় ক্যাপ পরা মানুষটাকে চিনতে পারলাম না। তিনি বললেন— ‘আমি হার্টের ডাক্তার। চোখ অপারেশনের আগে আমি সকলকে পরীক্ষা করি। নাম ডাক্তার ভৌমিক। প্রায় চল্লিশ বছর আগে কিম্বার স্ট্রিটের বাড়িতে আপনার কছে আমার সার্টিফিকেটগুলোর আরবি অনুবাদ করিয়েছিলাম। পরে আপনার দিল্লির ঠিকানা নিয়ে সেখান থেকেও অনুবাদ করাই। তখন আপনার স্ত্রী কলকাতায় ছিলেন। কাজগুলো করে দিয়ে আপনি আমাকে ও আমার স্ত্রীকে হামদার্দের মেইন গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে অটোতে বসিয়ে দিয়েছিলেন।’

 

উনি বললেন কিন্তু আমার কিছুই মনে পড়ল না। তার পর আমার পালা পড়ল ও-টিতে ঢোকার। অপারেশন টেবিলে শুতে যাচ্ছি সেই ডাক্তার ভৌমিক সকলকে শুনিয়ে বললেন— ‘ইনি একজন গুণী মানুষ। আমার এই এই কাজ ইনি এক কালে করে দিয়েছিলেন।

 

যে ডাক্তার অপারেশন করবেন তিনি হঠাৎ বললেন— ইনি আমার প্রফেসর ডাক্তার ই আহমেদ সাহেবের আত্মীয় (শ্যালক)। ইনিও প্রফেসর। তাই ইনি আমারও প্রফেসর।

 

আমি এরকম দুজন মহান মানুষের অমন বিনয়ী আচরণে সেদিন বেশ অবাক হই। অপারেশন চলল। আমি ওনাদের মাহাত্ম্য নিয়ে ভাবছিলাম। হঠাৎ শুনলাম ডাক্তার অজয় পাল (আমার অপারেশনের ডাক্তার) বলছেন— ‘ভাল অপারেশন হয়েছে। আস্তে আস্তে উঠুন।’


ধীরে ধীরে আমার চোখ ভাল হয়ে গেল। সম্পূর্ণ দৃষ্টি ফেরত পেলাম। দিন ছয়েক আগে খবর পেলাম উনি (ডাক্তার অজয় পাল) আর এ জগতে নেই। আমার চোখ দু’টো আমার অজান্তেই ক্ষণিকের জন্য আবার ঝাপসা হয়ে গেল।

1 comment: