Thursday 21 December 2023

উসমান (রাঃ)-এর হত্যার কারণ ও ফলাফল


 
উস্মান (রাঃ)-এর হত্যার কারণ ও ফলাফল

ভূমিকা
৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে হযরত উস্‌মান (রা.) ইসলামের তৃতীয় খলিফা নির্বাচিত হন। খলিফা নির্বাচনের পরপরই নানা কলহ-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ফলে মুসলিম বিশ্বে ঘটে মারাত্মক রক্তপাত।

হত্যার কারণ
() গণতান্ত্রিক শাসন
মদীনায় হযরত মুহাম্মদ (স) গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়েও তা পূর্ণভাবে চালু ছিল। যে গণতন্ত্র এই যুগেও অনেক ৰেত্রে এবং অনেক দেশে অচল হয়ে পড়েছে, তা যে মধ্যযুগে কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হবে; তাতে আশ্চর্যের কি আছে? অবাধ মেলামেশা, বাক-স্বাধীনতা, সমালোচনার পূর্ণ অধিকার ইত্যাদির সাহায্যে বিদ্রোহীরা ওসমানের খিলাফতে নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য সাম্রাজ্যের সর্বত্র অশান্তির অগ্নি প্রজ্বলিত করে তোলে।

() হাশেমী ও উমাইয়া গোত্রের বিদ্বেষ
মহানবীর জন্মের পূর্ব হতেই কুরাইশ বংশের হাশেমী ও উমাইয়া গোত্রের মধ্যে কাবার পৌরোহিত্য এবং মক্কার শাসনব্যবস্থা নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষের সূচনা হয়েছিল। মহানবীর আমলে মক্কা বিজয়ের সময়ে আবু সুফিয়ান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে অন্যান্য উমাইয়াগণও তাঁকে অনুসরণ করে। হযরত ওমরের খিলাফত পর্যনত্ম মোটামুটিভাবে এই গোত্রদ্বয়ের মধ্যে সদ্ভাব বজায় ছিল। কিন্তু ওসমানের খিলাফতে এই গোষ্ঠীকলহ পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। উস্‌মান উমাইয়া বংশের লোক। উমাইয়া বংশের লোক খিলাফতে প্রতিষ্ঠিত থাকবে তা হাশেমীয়রা কিছুতেই যেন সহ্য করতে পারছিল না। বিশেষ করে আলী সমর্থক দলটি হযরত ওসমানের শাসনকালে প্রত্যেকটি গোলযোগের পিছনে ইন্ধন যোগাতে তৎপর ছিল। কুফা ও বসরার বিদ্রোহে এদের কিছুটা প্ররোচনা ছিল বলে অনেকে সন্দেহ করেন।

() কুরাইশ এবং অকুরাইশদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
ইসলামের বিজয় অভিযানসমূহে সাধারণ মুসলমানগণ কুরাইশদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রাণপণে যুদ্ধ করে। কিন্তু কুরাইশগণ কখনও এদের ত্যাগের কথা বিবেচনা করেনি। তারা বরাবরই সকল বিষয়ে কর্তৃত্ব করতে থাকে এবং সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করতে থাকে। তাছাড়াও যে সমসত্ম কুরাইশ মক্কা ছেড়ে সিরিয়ায় গিয়েছিল খলিফা উস্‌মান তাদেরকে ইরাকে মক্কার পরিবর্তে জমি প্রদান করেন। এরূপভাবে সাধারণ মুসলমানগণ খলিফাকে পৰপাতিত্বের দোষে অভিযুক্ত করে খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সঙ্কটপূর্ণ সময়ে কুরাইশগণ খলিফাকে ঐক্যবদ্ধভাবে সমর্থন করেনি, বরং হাশেমী গোত্রের কার্যকলাপ বিদ্রোহীদেরকেই প্রকারানত্মরে সমর্থন যোগায়।

() কতিপয় স্বার্থান্ধ লোকের দুশমনী
সাম্রাজ্যে এমন একশ্রেণীর লোক ছিল, যারা ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেনি, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য তারা মুসলমান হয়েছিল। সুবিধা লাভে ব্যাঘাত ঘটাবার জন্য তারা খলিফার বিরম্নদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ইয়েমেনের জনৈকা নিগ্রো মাথার গর্ভজাত ইহুদি সনত্মান আবদুলস্নাহ ইবনে সাবা ছিলেন ঐরূপ স্বার্থপর একজন লোক। বসরার শাসনকর্তা আবদুলস্নাহ-বিন-আমিরের নিকট এসে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁর মতে আলী জ্ঞাতিসূত্রে এবং বৈবাহিক সম্বন্ধে মহানবীর (স) একমাত্র যথার্থ উত্তরাধিকারী। ঐশী বিধানানুসারে খিলাফত তাঁর এবং তাঁর উত্তরাধিকারীগণের প্রাপ্য। এটাই ছিল তাঁর মতবাদ এবং তাঁর অনুচরদেরকে সাবাইত বলা হতো। ইবনে সাবা ওসমানের খিলাফতে তার এই মতবাদ প্রথমে কুফা ও পরে বসরায় প্রচার করতে থাকেন। ঐ দুই প্রদেশের গভর্ণরদ্বয় বিপদের আশঙ্কায় তাকে স্ব-স্ব প্রদেশ হতে বহিষ্কার করে দেন। এরপর তিনি মিশরে গিয়ে ওসমানকে খিলাফতে অন্যায়ভাবে অধিষ্ঠিত বলে এবং তাঁর নিযুক্ত সকল কর্মচারীকে অত্যাচারী বলে প্রচার করতে থাকেন। ফলে বহু স্বার্থান্বেষী, যারা ওসমানকে সহ্য করতে পারছিল না তারা তার দলে যোগদান করে ওসমানের ধ্বংসসাধনে তৎপর হন।
হাকিম-বিন-জাবালা এবং মুহাম্মদ-বিন-আবু বকরও ইবনে সাবার দলে যোগদান করে। ফলে কুফা, বসরা এবং মিশরে খলিফা-বিরোধী আন্দোলন অত্যনত্ম জোরদার হয়ে ওঠে।

() অমুসলমানদের অসন্তোষ
ইহুদি, ম্যাজিয়ান, খ্রিস্টান প্রভৃতি অমুসলমান তাদের পূর্ণ ধমর্ীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার থাকা সত্ত্বেও ইসলামের বিরম্নদ্ধে সব সময় বিদ্বেষ পোষণ করত। হযরত ওসমানের আমলে কুরাইশদের লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা এবং প্রাধান্য তাদেরকে ঈর্ষান্বিত করে তোলে। খলিফার সরলতার সুযোগে তারাও নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিদ্রোহীদেরকে সর্বপ্রকার সাহায্য ও উস্কানি প্রদান করে।

() খলিফার উদারতা
খলিফা ওসমানের উদারতা এবং সরলতা তাঁর দুর্ভাগ্যের প্রধান কারণ ছিল। এরূপ সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে খলিফা যদি ওমরের (রাঃ) মত বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে পারতেন তা হলে তিনি নিজেকে এবং খিলাফতকে অনায়াসে দুর্যোগের হাত হতে রৰা করতে পারতেন। মানুষকে তিনি অবিশ্বাস করতে পারেননি এবং প্রায় কঠিন অপরাধীকেও ৰমা করতেন। ফলে দুষ্কৃতকারীগণ অনায়াসে খলিফার বিরোধিতা করতে সাহস পায়। অন্যদিকে সঙ্কটময় মুহূর্তে নেতৃত্বদানের চারিত্রিক দৃঢ়তা অনত্মত বৃদ্ধ বয়সে ওসমানের ছিল না। আত্মীয়গোষ্ঠীর বাইরে তাঁর প্রকৃত বন্ধুও তেমন কেউ ছিল না। বার্ধক্যজনিত সঙ্কীর্ণতা ও অনমনীয়তার কারণে তিনি এমনসব লোকের মর্যাদা ৰুণ্ন করলেন যাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি অনায়াসে বিপদকাল উত্তীর্ণ হতে পারতেন। বনি হাশিম ও প্রভাবশালী সাহাবাদেরকে তিনি তাঁর প্রশাসনে গুরম্নত্ব দিলেন না; তাঁরাও অসহযোগিতা করে বা বিপদের দিনে নীরব থেকে এর প্রতু্যত্তর দেন।

() কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও যুগের পরিবর্তন
অবস্থার পরিবর্তন ও কেন্দ্রীয় শাসনের বিরম্নদ্ধাচরণ বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। কেন্দ্রীয় শাসনে অনভ্যসত্ম আরববাসীকে দেশ জয়ে নিয়োজিত রেখে অভ্যনত্মরীণ শানত্মি রৰা করা যেত। কিন্তু ওসমানের খিলাফতের শেষার্ধে সীমানত্ম যুদ্ধ স্থগিত হয়ে যায়। এ সঙ্গে তাদের আয়ের প্রধানতম উৎসও (গণিমাত) বন্ধ হয়ে যায়। তাদের আয়ের অন্য উৎস (ফায় ভূমি) ওমরের সময়েই রাষ্ট্রায়ত্ত হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে আরব যোদ্ধারা বিৰুব্ধ হয়ে ওঠে এবং ফায় ভূমির সমুদয় আয় দাবি করে বসে। প্রকৃতপৰে আরবদের এই দাবি ছিল ওমরের শাসন ব্যবস্থার বিরম্নদ্ধে এক মারাত্মক প্রতিবাদ। উস্‌মান পূর্ববতর্ী (ওমরের) রাজস্ব নীতির গুরম্নত্বপূর্ণ পরিবর্তন করেছিলেন, কিনত্মু আরব-যোদ্ধাদের এই দাবি মেনে নিতে পারলেন না; পরিণামে বিৰোভ বিদ্রোহের রূপ ধারণ করে। বার্নাড লুইস যথার্থই বলেছেন, “এই বিদ্রোহ ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরম্নদ্ধে যাযাবরদের বিদ্রোহ। এটা শুধু ওসমানের দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রের বিরম্নদ্ধে নয়_ যে কোন ব্যক্তির পরিচালিত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

() আর্থ-সামাজিক কারণ
উল্লেখ্য যে, তাঁর পূর্ববর্তী খলিফা প্রথম ওমরের শাসনামলে মরম্নবাসী যাযাবরগণ পারস্য, সিরিয়া, জেরম্নজালেম ও মিশর বিজয়কালে কুরাইশদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এই বিজয়ের আর্থ-সামাজিক সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকার হতে তারা বঞ্চিত হলো। আল সাওয়াদ (উর্বর-অর্ধচন্দ্র অঞ্চল) এবং অন্যান্য উর্বর অঞ্চলে কুরাইশ বংশোদ্ভূত ব্যক্তিবর্গকে উপভোগের অধিক সুযোগ প্রদান করা হয়। তদুপরি সমাজেও যাযাবরদের কুরাইশদের ন্যায় পদমর্যাদা ও অধিকার স্বীকৃত হয়নি। এই আর্থ-সামাজিক অসাম্যের কারণে এই বঞ্চিত যাযাবর শ্রেণী বিদ্রোহীদের সাথে হাত মিলিয়ে ওসমানের ধ্বংস সাধনে তৎপর হয়ে ওঠে।

() মারওয়ানের ধ্বংসাত্মক নীতি
খলিফা ওসমানের খিলাফতে তাঁর জামাতা ও চাচাত ভাই মারওয়ান ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। এই মারওয়ানের পূর্ব পরিচয় প্রশংসনীয় ছিল না, বিশ্বাসভঙ্গের দায়ে একবার মহানবী তাঁকে মদীনা হতে বহিষ্কার করেছিলেন। স্বার্থপর ও কূটনীতিবিদ মারওয়ান খলিফার দুর্বলতার সুযোগে রাষ্ট্রের সমসত্ম ৰমতা করায়ত্ত করেন। তাঁর জন্য উমইয়াগণ রাষ্ট্রের সকল উচ্চ রাজপথে নিযুক্ত হন এবং রাষ্ট্রের সম্পত্তি আত্মসাত করেন। হাশেমিগণকে ধনে-মানে দুর্বল করে উমাইয়াগণকে সুপ্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য। মারওয়ানের কুচক্রানত্ম ও স্বার্থপর নীতি খিলাফতের বিরম্নদ্ধে বিদ্রোহের মূলে ছিল এবং খলিফার পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল।

হত্যার ঘটনা
উপরুল্লেখিত অভিযোগ ও কারণসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশ হতে বিশেষ করে কুফা, বসরা ও মিশর হতে প্রায় ৭০০ বিদ্রোহী মদীনায় উপস্থিত হয়। তারা খলিফার নিযুক্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের স্বার্থপরতা ও দুর্নীতিপরায়ণতার বিরম্নদ্ধে খলিফার নিকট অভিযোগ ও প্রতিবাদ করে। খলিফা তাদের অভিযোগ শ্রবণ করে প্রতিকারের ওয়াদা প্রদান করেন। কিন্তু কুচক্রী মারওয়ানের প্রতারণার ফলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। গনত্মব্যস্থলে পৌঁছা মাত্র যেন অভিযোগকারীদেরকে হত্যা করা হয়_এরূপ আদেশসম্বলিত, মারওয়ান কর্তৃক লিখিত এবং খলিফার সীলযুক্ত একখানা পত্র বিদ্রোহীরা এক অশ্বারোহী দূতের নিকট হতে উদ্ধার করে। এতে তারা ক্রোধে জ্বলে ওঠে এবং তৎৰণাৎ মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে খলিফার নিকট ঐ পত্রের কৈফিয়ত দাবি করল। খলিফা শপথ করে বলেন যে, তিনি তার বিন্দুবিসর্গও অবগত নন। বিদ্রোহীরা এবার পরিষ্কার বুঝতে পারল যে, তা মারওয়ানের কারসাজি। তারা মারওয়ানকে তাদের হসত্মে সমর্পণের দাবি করলে খলিফা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে বিদ্রোহীরা খলিফার বাসগৃহ অবরোধ করল। তারা ওসমানকে অযোগ্য খলিফা বলে পদত্যাগ করার দাবি করে। হজ মৌসুমের জন্য অনেক মদীনাবাসী মক্কায় চলে গিয়েছিল। আলী, তালহা, যুবায়ের এবং নবী (সাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে হাবিবা বিদ্রোহীদেরকে শানত্ম করতে বৃথা চেষ্টা করেন। আলী, তালহা এবং যুবায়েরের পুত্রগণ দ্বারা গঠিত ১৮ জন দ্বাররৰী বাহিনী মারমুখী বিদ্রোহীদেরকে প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়। তারা গৃহে প্রবেশ করে মুহাম্মদ-বিন-আবু বকরের নির্দেশক্রমে কুরআন পাঠরত ৮২ বছরের বৃদ্ধ খলিফা ওসমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ নৃশংসা ঘটনা ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই জুন (১৮ই জিলহজ্ব, ৩৫ হিজরী) সংঘটিত হয়। খলিফার স্ত্রী নাইলা খলিফাকে রৰা করতে গিয়ে তাঁর হাতের অঙ্গুলি হারালেন। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেন, ‘এরূপে তিনিই প্রথম খলিফা মুসলমানদের হাতে যাঁর রক্তপাত ঘটান হলো।

হত্যার ফলাফল
উস্মান (রাঃ)-এর হত্যার ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এটা ইতিহাসের গতিকে গভীরভাবে প্রভাবান্বিত করেছে। জার্মান ঐতিহাসিক ওয়েলহাউসেন বলেন, “ওসমানের হত্যা ইসলামের ইতিহাসের যে কোন ঘটনা অপেৰা অধিকতর যুগানত্মকারী।

১। ঐতিহাসিক জোসেফ হেল বলেন, “উস্‌মান হত্যা ছিল গৃহযুদ্ধের বিপদসংকেত স্বরূপ। এর ফলে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি নষ্ট হয়। মুসলিম জাহান বনু হাশিম ও বনু উমাইয়া এই দুই গোত্রে বিভক্ত হয়ে আত্মঘাতী গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। উস্ট্রের ও সিফফিনের যুদ্ধ এবং কারবালার মর্মানত্মিক কাহিনী উস্‌মান হত্যারই পরিণতি। উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠা এবং পতনের পরও এই দ্বন্দের শেষ হয়নি। ওয়েলহাউসেন যথার্থই বলেন_ “গৃহযুদ্ধের ফটক খুলিয়া যায়, যা আর কখনও বন্ধ হয়নি।এজন্য ওসমানকে উন্মুক্ত ফটকবলা হয়। এ দুষ্টৰত যেন এ কালেও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখতে সৰম হয়েছে।

২। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তী কালে বিভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় সম্প্রদায়েরও উদ্ভব হয়েছিল। ঐতিহাসিক ওয়েলহাউসেন এবং নিকলসনের মতে, শিয়া সম্প্রদায় ঐশী অধিকার নীতি ইবনে সাবার নিকট হতে প্রাপ্ত হয়েছে। সুন্নী, খারিজী প্রভৃতি দলগুলোরও উৎপত্তির সূচনা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সম্পন্ন হয়েছিল। এরূপে শতধাবিভক্ত মুসলিম জাহানে অশানত্মির কালমেঘ নেমে আসে।

৩। উস্মান (রাঃ)-এর হত্যাতে খিলাফত ও খলিফার প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা ও অনুরাগ শিথিল হয়ে পড়ে। এই প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক বার্নাড লুইস বলেন, “বিদ্রোহী মুসলমানগণ কর্তৃক একজন খলিফার প্রাণহানি দ্বারা যে বেদনাবিধুর দৃষ্টানত্মের সৃষ্টি হলো, তা ইসলামের ঐক্যের প্রতীক খিলাফতের ধর্মীয় ও নৈতিক মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করেছে।এখন হতে জোর যার খিলাফত তারএই নীতিই হলো খিলাফত লাভের প্রকৃষ্ট পথ।

৪। উস্মান (রাঃ)-এর হত্যার ফলে গণতন্ত্রের সমাধির পথ প্রশসত্ম হলো। মুয়াবিয়া উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করে রাজতন্ত্রের প্রবর্তন করেন। মদীনা-তুন-নবী শহরেরও প্রাধান্য উত্তরোত্তর লোপ পেতে থাকে। পরবর্তীকালে কুফা, দামাস্কাস, বাগদাদ মুসলিম জাহানের রাজধানীতে পরিণত হয়ে অধিক প্রাধান্য লাভ করে।
-আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 


No comments:

Post a Comment