Friday 2 December 2016

আবু মুহাম্মদ আলী ইবনু হাযম


আবু মুহ়াম্মদ ‘আলী ইব্‌নু হ়ায্‌ম
(৯৯৪ – ১০৬৪ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচয়জন্মঃ 
ইব্‌নু হ়ায্ একজন বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন স্পেনীয় আরব পন্ডিত বিখ্যাত ধর্মতত্ববি প্রশিদ্ধ কবি ও প্রখ্যাত দার্শনিক। তিনি স্বিয় চিন্তাভাবনা দ্বারা মুসলিম দর্শন শান্ত্রের উৎকর্ষ সাধনে স্বার্থক ভূমিকা পালন করেনতাঁর প্রকৃত নাম ‘আলী, উপনাম আবু মুহাম্মদ। পিতার নাম আহমদ, পিতামহের নাম সা‘য়ী, প্রপিতামহের নাম হ়ায্ম। তবে তিনি ইব্‌নু হ়ায্ নামেই অধিক পরিচিত। পূর্বপুরুষদের মধ্যে তাঁর প্রপিতামহই প্রথমে ইসলামে দীক্ষিত হন। তাঁর পিতা শাসনকর্তা আল-মান্‌সুর ও তাঁর পুত্র আল মুযাফ্‌ফা-এর পারিবারিক তত্ত্বাবধায়ক ছিলেনইব্‌নু হ়ায্ম ৩৮৪ হিজরীর রমজান মাস মোতাবেক ৭ই নভেম্বর ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভায় জন্ম গ্রহণ করেন।
 
শিক্ষা জীবনঃ 
তিনি বহুমুখী শিক্ষালাভ করেন। দরবারের পরিষ বর্গের মধ্যে তাঁর যৌবন অতিবাহিত হলেও তাতে তাঁর অনুসন্ধিৎসু চিত্তের বহুমুখী বিকাশের পথ বন্ধ হয়নি তিনি কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষালাভ করেন। উত্তমরূপে আরবী ভাষা আয়ত্ব করেন। দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও রাজনীতিতে পরদর্শিতা লাভ করেন। তাওকুল্‌-হামামাহ্‌ গ্রন্থে জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উস্তাদ হিসেবে আব্দুর রাহমান ইব্‌নু আবী ইয়াযিদ আল্‌-আয়দীর নাম উল্লেখ করেছেন। এছাড়া তিনি আহমাদ ইব্‌নুল্‌-জাসুরর বহু দার্‌স ও বক্তৃতায় যোগদান করেছিলেন।
 
রাজনৈতিক জীবনঃ   
রাষ্ট্র বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে দ্বিতয়ি হিসান পুনরায় রাজ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে ইব্‌নু হ়ায্ম ও তাঁর পিতার উপর নানা ধরণের নির্মম অত্যাচার শুরু হয়। ৪০২ হিজরীর জিল্‌কাদ মাসের শেষের দিকে তাঁর পিতা ইন্তিকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর ইব্‌নু হ়ায্মের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি পেতে থাকলে ৪০৪ হিজরীর মুহার্‌রাম মাসে তিনি প্রাসাদ ত্যাগ করেন এবং জীবন যাপনের জন্য আল্‌-মেরীয়ায় যান এবং সেখানে জীবন যাপন করতে থাকেন।
 
কারাবাস ও নির্বাসনঃ 
ল্‌-মেরিয়ায় অপেক্ষাকৃত নিরুপদ্রুপ জীবন যাপন কালে উমাইয়াদের অনুকুলে যড়যন্ত্রে লিপ্ত মনে করে মুহাম্মদ ইব্‌নুস্‌হাক সহ তাঁকে কয়েক মাস কারারুদ্ধ করে রাখা হয় কিছু দিন পরে উভয়কে নির্বাসিত করা হয় দুই বন্ধু হিস্‌নুল্‌ কাসর-এ আগমন কলে সেখানকার শাসনকর্তা তাঁদেরকে সাদরে গ্রহণ করেন।
 
মন্ত্রিত্বলাভঃ 
৪র্থ 'আব্দুর্‌ রাহ্‌মান আল্‌-মুরতাদা ভ্যালেনসিয়ার শাসনকর্তা হিসেবে ঘোষিত হবার কয়েকমাস পরে ইব্‌নু হ়ায্ম ও তাঁর বন্ধু তাদের দল পরিত্যাগ করে সমুদ্র পথে এ শহরে উপনীত হন। ইব্‌নু হ়ায্ম সর্বসাধারণের সাথে বিশেষ পরিচিতি ও খ্যাতি লাভ পূর্বকল্‌-মুরতাদার উযীরের পদ লাভ করেন। তাঁর সৈন্যদল নিয়ে গ্রানাডা যুদ্ধ করতে গিয়ে শক্র হস্তে বন্দী হন এবং কিছুকাল পরে মুক্তি লাভ করেন। এরপর তিনি ৪০৯ হিজরিতে কর্ডোভা প্রত্যাবর্তন করেন ও সৌভাগ্যক্রমে ৪১৪ হিজরীতে স্বীয় বন্ধু খলিফা আল্‌-মুস্‌তাজহীরের উযীরের পদে নিযুক্ত হন। কিন্তু কয়েকমাস পরে আবদূর রাহমান নিহত হলে তিনি পুনরায় কারারুদ্ধ হনপরবর্তীতে তিনি মুক্তিলাভ করে ১০২৭ সালের দিকে তিনি জটিবায় বাস করতেন।
 
মৃত্যু বরণঃ 
দর্শন শাস্ত্রের উজ্জল দর্পন মহামনিষী যুগশ্রেষ্ঠ ইব্‌নু হ়ায্ম ৪৪৬ হিজরির ২৮শে শাবান মোতাবেক ১০৬৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগষ্ট স্বগ্রামে ইহধাম ত্যাগ করেন। তবে ঐতিহাসিক গোল্ডযিয়ার মনে করেন, ইব্‌নু হায্‌ম ৪৫৬ হিজরি মোতাবেক ১০৬৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন।
 
রচনাবলীঃ 
তাঁর রচনাবলীর মধ্যে অন্যতম হল তাওকুল্‌ হামামাহ্‌ ফিল্‌ আল্‌ফি ওয়াল্‌ উল্‌ফাহ্‌। এই গ্রন্থে তিনি সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষন ক্ষমতা, চমৎকার ভাষা জ্ঞান ও চিন্তাকর্ষক কবিত্ব শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া তিনি রিসালাতুন্‌ ফি ফাদ্‌লিল্‌ আন্দালুস, কিতাবুল্‌ ফাস্‌ল ফিল্‌ মেলাল ওয়াল্‌ আহওয়াল ওয়ান্‌ নেহাল সহ আরও কয়েক খানা ঐতিহাসিক পুস্তক রচনা করেন। তাঁর পুত্রের বর্ননা অনুযায়ী তাঁর রচিত গ্রন্থের মোট সংখ্যা ৪০০ এবং পত্র সংখ্যা ৮০। কিন্তু এগুলোর অধিকাংশই সময়ের গহ্বরে কোথাও বিলীন হয়ে গেছে। এসবই ছিল তাঁর মৌলিক রচনা।

No comments:

Post a Comment