Friday 2 June 2017

পবিত্র আল-কুরআন সবার জন্য


পবিত্র আল-কুরআন সবার জন্য
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

গত ২৫শে জানুয়ারি থেকে আরম্ভ হয়েছে ৪১তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বই মেলা। এই তিলোত্তমা নগরীর মায়া, বাঙালির আবেগ ও ভালোবাসা টানে লেখক-পরিচালক-সাহিত্যরসিক-কাব্যমোদী সকলকে। তাই ছুটে আসে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুণীজন, সৃজনশীল, সত্যান্বেষু ও অনুসন্ধিৎসু মানুষেরা। বসে কবিতার আসর, সাহিত্যের আড্ডা। চলে বই-প্রকাশ অনুষ্ঠান। থাকে প্রেস কর্নারও।

বিগত ক’বছর ধরে যারা এই বই মেলায় এসেছেন নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শান্তির বাণী সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যত। তাঁরা ছুটছেন। এফোঁড় ওফোঁড় করে দিচ্ছেন মিলন মেলা প্রাঙ্গণকে। বিতরণ করছেন পুস্তিকা-গ্রন্থ-ধর্মগ্রন্থ বিনা মূল্যে। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান, শিয়া-আহমাদি-সুন্নি-সালাফি সকলে। উদ্দেশ্য স্রষ্টার বাণী, শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রত্যেকের নিকট। তাতে একটি নতুন পালক সংযোজিত হল এবার। বাংলা ইসলামী প্রকাশনী ট্রাষ্ট ৪ঠা ফেব্রুয়ারি শনিবারে আয়োজন করল এক প্রেস কর্নারের। আলোচ্য বিষয় ছিল ‘কুরআন সবার জন্য’। অতিথি ও আলোচকরূপে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সমাজের বুদ্ধিজীবী প্রতিনিধিগন। 

স্রষ্টার এই গ্রন্থটি যে কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, বরং সকল মানব জাতির জন্য; এমনকি সকল সৃষ্টির উদ্দেশ্যে – এ কথাই বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্বের সাহায্য স্পষ্ট করেন বক্তারা। আলোচনায় উঠে আসে সূরা সাবা-র ২৮ নম্বর আয়াত [(হে নবী সাঃ) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সকল মানুষের জন্যে]-টি। এর পাশাপাশি সূরা আল-বাকারাহর ১৮৫ নম্বর আয়াত [এ গ্রন্থ পথ নির্দেশক সকল মানুষের]-টিও।

তারপরে আল-কুরআনে ব্যবহৃত বিভিন্ন সম্বোধনের দীর্ঘ ফিরিস্তি উদ্ধৃত হয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ ভাবে ‘বানি আদাম’ (আদম সন্তান), ‘নাস’ (মনুষ্য জাতি) ও ‘ইনসান’ (মানুষ) প্রভৃতি শব্দের মোড়কে আদম-সন্তানকে ৮৩৯ বার সম্বোধন করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘মুমিন’ ও ‘মুসলিম’ (বিশ্বাসী, ইসলাম ধর্মাবলম্বী)-র ন্যায় শব্দাবলী দ্বারা সম্বোধনের সংখ্যা ২১৩। সত্যিই গুগলে সহজলব্ধ এই তথ্যও প্রমাণ করে 'আল-কুরআন সবার জন্য', আমার আপনার সবার নিমিত্তে। 

এদিনের মনোগ্রাহী আলোচনায় যে-সব কথা অত্যন্ত সাবলীলভাবে ফুটে ওঠে তা হল- মহান আল্লাহ্‌র একটি গুণবাচক নাম আল-খালিক্ব (স্রষ্টা)। তিনি সকল সৃষ্টির স্রষ্টা। একটি হাদিসে কুদসি-তে রয়েছে, ‘সকল সৃষ্টি আল্লাহ্‌র পরিবার’। যদি সকল সৃষ্টি আল্লাহ্‌র পরিবার হয় তাহলে তাঁর এই কালজয়ী গ্রন্থটি শুধুমাত্র মুসলিম সমাজের জন্য নির্দিষ্ট হবে কেন? আল্লাহর সকল সৃষ্টি তো সমগ্র মানব জাতির জন্য। পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে মানুষের কল্যাণেই তার সৃষ্টি। সূর্য-আলো-বাতাস-জল সবার জন্যে। তাহলে স্রষ্টার মহাগ্রন্থটি শুধু মুসলিমদের জন্য খাস হবে কোন যুক্তিতে? আল্লাহ্‌র আরও একটি গুণবাচক নাম ‘আলীম’ (সর্বজ্ঞ)। সকল বস্তুকে তিনি জ্ঞান দ্বারা পরিব্যপ্ত করে রেখেছেন। তাই তিনি আদি পিতা আদমকে সৃষ্টি করে বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানে তাঁকে সমৃদ্ধ করেন (সূরা আল-বাক্বারাহঃ ৩১)। এমনকি যখন তিনি এই মহাগ্রন্থটির অবতারণ আরম্ভ করলেন, সর্ব প্রথম শিক্ষণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বললেন, ‘তিনি মানুষকে শিখিয়েছেন যা তাঁরা জানতো না’ (সূরা আলাক্বঃ ৫)। ‘ইনসান’ (মানুষ) শব্দের উল্লেখ করে স্রষ্টা প্রথম দিনেই তো স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এ গ্রন্থ সবার।

প্রসঙ্গত, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, ধর্মীয় ও আধুনিক নানা ভাগে জ্ঞানের এই বিভাজন-এর উর্ধে, মানবের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে এমন সকল জ্ঞান- তা প্রাচ্যের হোক বা পাশ্চাত্যের, ধর্মীয় হোক বা আধুনিক সকলের জন্য। সবার তাতে সমান দায়িত্ব ও অধিকার। তাই বহু জ্ঞানের উৎস এই আল-কুরআন সবার।             


No comments:

Post a Comment