Thursday 17 September 2020

মাতৃত্বের জার্নিঃ কোনো সমাপ্তি ও সীমারেখা নেই

 

মাতৃত্বের জার্নিঃ কোনো সমাপ্তি ও সীমারেখা নেই 

মা ব্যাট করছে আর ছেলে বল, ছেলে মা'কে বোল্ড করে দিয়ে উল্লসিত। মা'ও ছেলের সাফল্যে বাঁধন হারা। কোচ আসেনি দেখে ব্যাট হাতে ছেলেকে বোলিং প্র‍্যাক্টিস করানো, আউট হয়ে আনন্দ করা সবটাতেই উপচে পড়ছে মাতৃত্ব। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, এই দৃশ্যও কারো কারো চোখে ইসলামোফবিক। কারো চোখে, এত কিছুর মাঝে শুধু মায়ের পোষাকই ধরা পড়ল। ছবিটা ওপার বাংলার। তাই, ওপারের এক ক্রিকেটারের মায়ের কথা শুনুন! 

ক্রিকেটার শাহরিয়ার নাফীসের মা বলছি--  
"গত পরশু ফেসবুকে মা ও ছেলের ক্রিকেট অনুশীলনের একটা ছবি দেখলাম। কেউ একজন ছবিগুলো পোস্ট করেছেন।গত দু'দিন যাবৎ সেই ছবি নিয়ে ফেসবুকে তুমুল আলোচনা, সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পল্টন ময়দানে মা ঝর্ণা আকতার তার এগার বছরের ছেলে ইয়ামিন সিনান কে নিয়ে এসেছিলেন। তখন সময় সকাল আটটা কী নয়টা।মাঠে জন সমাগম ছিলনা বললেই চলে ।কোচ আসতে দেরি হচ্ছিল।তাই মা ব্যাট হাতে নিয়ে ছেলেকে বোলিং প্রাকটিস করাচ্ছিলেন। আমি বলবো ছেলের আবদার রক্ষা করছিলেন।কিংবা ছেলেকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। সেই মায়ের পোষাক নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। আমি মায়ের পোষাক নিয়ে কিছু বলতে  আসিনি।

এই ছবি দেখে আমার চোখে পানি এসে গেছে। এই ছবি আমাকে বারবার একটি কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে , সেটা হলো 'মাতৃত্ব '।মাতৃত্ব এমন একটা জার্নি যার শুরু আছে শেষ নেই।

এই মা সকাল বেলা সংসারের কাজ ফেলে, নানা ব্যস্ততার মধ্যেও ছেলেকে নিয়ে মাঠে হাযির হয়েছেন। হয়তো তার আরো একটি ছোট সন্তান আছে। সেই সন্তানটিকে কারো কাছে রেখে এসেছেন। এই মাকে দেখে আমার নিজের অতীতের কথা মনে পড়ে গেছে। আমিও আমার বড় সন্তান শাহরিয়ার নাফীসের বয়স যখন দশ বছর তখন তাকে নিয়ে মাঠে যাওয়া শুরু করেছিলাম। রোদ, বৃষ্টি,  ঝড় কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করিনি। আমি মনে করেছি নাফীস ওর পছন্দের পথে চলতে চায়। আর সেই পথের কাঁটা গুলো সরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আমার।   

ফেসবুকে ঝর্ণা আকতার-এর পোষাক নিয়ে নানা রকমের কথা উঠেছে। আমি মনে করি তার পোষাক নিয়ে আলোচনা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। আমাদের নবীদের স্ত্রীরা পর্দার ভিতরে থেকে ময়দানে যুদ্ধও করেছেন। ইয়ামিন এর মায়ের পোষাক নিয়ে তাহলে কেন এত কথা ? উনি কী এমন অন্যায় করেছেন ? বরং সন্তানের প্রতি কাতর একজন মা, বিভোর একজন মা তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন। পৃথিবী তে এমন কোন বান্ধব কেউ নেই যে মা'কে হার মানায়। এমন কোন আলো নেই যে মা'কে নিভিয়ে দেয়। এমন কোন ভালবাসা নেই যে তাকে পরাজিত করে।"

আসুন আমরা এই ছবিতে তার পোষাক নিয়ে সমালোচনা না করে একজন মা'কেই দেখি। প্রিয় সন্তানের জন্য মায়ের আত্মত্যাগটাকেই দেখি। আর মায়েদের এই ত্যাগ, এই কুরবানির কারণেই নবী (সাঃ) এক ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, তোমার উত্তম সাহচর্য, ভালোবাসা ও নম্র ব্যবহারের সবচেয়ে বেশি অধিকার রাখেন তোমার মা। লোকটি আবারও একই প্রশ্ন করে। উত্তরে নবীজি বলেন, তোমার মা। তৃতীয় বার লোকটি ওই একই প্রশ্ন করে, আমার উত্তম আচরণের সবেচেয় বেশি অধিকারী কে? এবারও নবীজি বলেন, তোমার মা। চতুর্থ বার একই প্রশ্ন করলে, নবীজি বলেন, এবার তোমার বাবা। তারপরে অন্যান্য নিকটবর্তী লোকেরা।   

আর যুগ যুগ ধরে সন্তানের জন্য মায়েদের এমন আত্মত্যাগ ও কুরবানির ধারা চলে আসছে বলেই ইসলাম স্পষ্ট কণ্ঠে জানিয়েছে--
   "মায়ের পায়ের নীচে বেহেশত।"    

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 

No comments:

Post a Comment