Friday 4 September 2020

নিযার কাব্বানিঃ জেরুজালেম


জেরুজ়ালেম
নিযার ক়াব্বানি, সিরিয়া
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম  
 
জেরুজ়ালেম, তুমি নবীদের সৌরভে ভরা নগরী
স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝে সংক্ষিপ্ত সেতুবন্ধন  
তোমার জন্য আমি কেঁদে চলেছি অবিরাম  
যতক্ষণ না শুকিয়ে যায় আমার চোখের জল  
যতক্ষণ না প্রদীপ নেভে প্রার্থনা করেছি 
রুকু’ করেছি যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে পড়ি;   
আর জানতে চেয়েছি, তোমার বুকে
মুহাম্মদ (সা) ও যীশুর (আ) অবস্থান।
 
জেরুজ়ালেম, তুমি নানা ধর্মের মধ্যমণি
তুমি অগণন মিনারের নগরী
তুমি আঙুল-পোড়া এক অপরূপ কিশোরী
তুমি কুমারীর শহর, তোমার চোখ দু’টো আজ বিমর্ষ
তুমি শীতল-সুনিবিড় ছায়ায় ভরা এক মরুদ্যান
তোমার যে পথ ধ’রে হেঁটে ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী
আজ সে-পথের পাথরগুলোও কেমন বিষাদময়
তোমার মসজিদের মিনারগুলোও আজ অবসাদে ডুবে
জেরুজ়ালেম, তুমি আজ আঁধারে ঘেরা
তোমার পবিত্র কানীসাতুল্‌ ক়িয়ামাহ্‌ গির্জায়
এবার কে বাজাবে ঘন্টা, রোববারের সকালে?  
বড়দিনের রাতে শিশুদের হাতে
কে তুলে দেবে খেলনা?
 
জেরুজ়ালেম, তুমি বিষাদের নগরী
তোমার চোখের কোণে ইদানীং
ডগমগ করছে এক বিশাল অশ্রুবিন্দু   
কে প্রতিহত করবে শত্রুদের?
তোমাকেই করতে হবে, হে ধর্মসমূহের মধ্যমণি
পাথরের গায়ে লেগে থাকা এই ছাপ ছাপ রক্ত
তুমি ছাড়া আর কে ধোবে বলো? 
কে রক্ষা করবে বাইবেল?
কে রক্ষা করবে কোরআন?
কে বাঁচাবে যীশুকে, যীশুর হত্যাকারীদের থেকে?  
কে রক্ষা করবে মানুষকে, মানবসভ্যতাকে?
 
জেরুজ়ালেম, আমার প্রাণের শহর
আমার ভালোবাসার নগর, আগামীকাল
হ্যাঁ আগামীকাল তোমার লেবু গাছগুলোতে ফুল ফুটবে
আনন্দে নেচে উঠবে তোমার ক্ষেতে সবুজ শিষগুলো
এবং নেচে উঠবে বাগানে জ়ায়তুনের ডালপালা
হেসে উঠবে তোমার বিমর্ষ চোখ দু’টো
আর ফিরে আসবে অভিবাসী পায়রাগুলো
তোমার পবিত্র গৃহ-চূড়ায়
শিশুরা ফিরে যাবে খেলার মাঠে
মা-বাবা ও সন্তানেরা মিলিত হবে একসাথে
তোমার মুক্ত রাজপথে
জেরুজ়ালেম, আমার প্রাণের শহর
জ়ায়তুন ও শান্তির শহর, ভালোবাসার শহর!

 

[নিযার ক়াব্বানি সিরিয়ার জাতীয় কবি ও কূটনীতিক। জন্ম দামেস্কের এক বণিক পরিবারে ১৯২৩-এর ২১শে মার্চ। তবে বিখ্যাত নাট্যকার পিতামহ আবু খ়ালীল আল্‌-ক়াব্বানির প্রভাবে ছোট বেলাতেই কাব্যচর্চার শুরুবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় ১৯৪৪ সালে প্রকাশ করেন প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ক়ালাত্‌ লি সাম্‌রাউ” (শ্যামা আমায় বলেছিল)নারী দেহের বর্ণনায় পরিপূর্ণ এই গ্রন্থটি সে সময় রক্ষণশীল সিরিয়ায় প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তরুণ প্রজন্মের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি নারী-স্বাধীনতা, প্রেম, যৌনতা এবং রাজনীতি ছিল তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বাঁধা ডিঙিয়ে নারী মুক্তির পক্ষে সোচ্চার হন তিনি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত “ত়ুফ়ূলাতু নাহ্‌দ” (স্তনের শৈশব) কাব্যগ্রন্থটি তাঁর খ্যাতি আরো বাড়িয়ে দেয়। তাঁর বহু কবিতা সঙ্গীত হিসেবে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে সিরিয়া, লেবানন সহ অন্যান্য আরব দেশগুলোতে। আরবদের অসচেতন ও হেয়ালীপূর্ণ জীবনধারার বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিল সুস্পষ্টআর তাই নিজের কিছু রচনায় নিজ জাতি ও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। প্রতিক্রিয়া স্বরূপ সরকারের রোষানলে পড়তে হয়ে তাঁকে। ১৯৬৬ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করেন কাব্যচর্চার পাশাপাশি প্রকাশনা ব্যবসায়। ১৯৮১ সালে এক বোমা হামলায় দ্বিতীয় স্ত্রী বিলকিস নিহত হবার পরে চলে যান প্যারিস, জেনেভা ও পরে লন্ডনে। জীবনের শেষ ১৫টি বছর লন্ডনেই অতিবাহিত করেন এবং সেখানেই ১৯৯৮-র ৩০শে এপ্রিল মৃত্যু হয়। তবে তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী চার দিন পর দামেস্কের বাবুস্‌ সাগীর কবরস্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ৭৫ বছরের এই দীর্ঘ জীবনে তিনি রচনা করেছেন ৩৫টি কাব্যগ্রন্থ সহ পঞ্চাশটিরও বেশি গ্রন্থ। ত়ুফ়ূলাতু নাহ্‌দ (স্তনের শৈশব, ১৯৪৮), সাম্বা (১৯৪৯), ক়াস়ায়িদুন্‌ মুতাওয়াহ়্‌হ়িশাহ্‌ (বন্য কবিতা, ১৯৭০), মিয়াতু রিসালাতি হ়ুব্বিন্‌ (১০০টি প্রেমপত্র, ১৯৭০), ক়ামূসুল্‌ আশেক়ীন (প্রেমিকের অভিধান, ১৯৮১) তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম]

 

 

القدس

نزار قباني

 

بكيت.. حتى انتهت الدموع
صليت.. حتى ذابت الشموع
ركعت.. حتى ملّني الركوع
سألت عن محمد،

فيكِ وعن يسوع
يا قُدسُ، يا مدينة تفوح أنبياء
يا أقصر الدروبِ بين الأرضِ والسماء

* * *

يا قدسُ، يا منارةَ الشرائع
يا طفلةً جميلةً محروقةَ الأصابع
حزينةٌ عيناكِ، يا مدينةَ البتول
يا واحةً ظليلةً مرَّ بها الرسول
حزينةٌ حجارةُ الشوارع
حزينةٌ مآذنُ الجوامع
يا قُدس، يا جميلةً تلتفُّ بالسواد
من يقرعُ الأجراسَ في كنيسةِ القيامة؟
صبيحةَ الآحاد..
من يحملُ الألعابَ للأولاد؟
في ليلةِ الميلاد..

* * *

يا قدسُ، يا مدينةَ الأحزان
يا دمعةً كبيرةً تجولُ في الأجفان
من يوقفُ العدوان؟
عليكِ، يا لؤلؤةَ الأديان
من يغسل الدماءَ عن حجارةِ الجدران؟
من ينقذُ الإنجيل؟
من ينقذُ القرآن؟
من ينقذُ المسيحَ ممن قتلوا المسيح؟
من ينقذُ الإنسان؟

* * *

يا قدسُ.. يا مدينتي

يا قدسُ.. يا حبيبتي
غداً.. غداً.. سيزهر الليمون
وتفرحُ السنابلُ الخضراءُ والزيتون
وتضحكُ العيون..
وترجعُ الحمائمُ المهاجرة..
إلى السقوفِ الطاهرة
ويرجعُ الأطفالُ يلعبون
ويلتقي الآباءُ والبنون
على رباك الزاهرة..
يا بلدي..
يا بلد السلام والزيتون


No comments:

Post a Comment