আমার প্রভু— লাম্ ইয়ালিদ ওয়ালাম্ ইউলাদ
রাতের অন্ধকারে আকাশের কোলে হাসছে অসংখ্য তারকারাজি। তিনি ভাবলেন
এদের আলো আছে, দীপ্তি ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে। এই বড় নক্ষত্রটি আমার প্রভু। কিছুক্ষণ
পর যখন অস্তমিত হল, বলে উঠলেন, না না, এ আমার রব হতে পারে না। আমার প্রভু অস্তমিত
হতে পারে না। একটু পরে দেখা দিল চাঁদ। জ্যোৎস্নায় প্লাবিত হল সব কিছু। মনকে বললেন,
এই আমার রব, আমার প্রতিপালক। কিন্তু চাঁদ তাঁর নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে ডুব দিল। হারিয়ে
গেল দৃষ্টির সীমানা থেকে। সূর্য উঠলো এবার। প্রখর তেজ নিয়ে। আকারেও বড়। না না, এই
হল আসল প্রভু। আমার ঈশ্বর। কিন্তু দিনের শেষে যখন অন্ধকারের কাছে হেরে গেল সূর্যের
কিরণগুলো। চিৎকার করে উঠলেন, এও আমার প্রভু হতে পারে না। আমার প্রভু চিরঞ্জীবী।
কখনো অস্তমিত হতে পারে না। আমার প্রভু যে সব কিছুই সৃষ্টি করেছে। আকাশ, পৃথিবী,
নিখিল বিশ্বের সব কিছুই। জীবন ও মরণ যার হাতে। তাঁর এই কথা শুনে বাদশাহ বলল, আমিও
তো মানুষকে মৃত্যু দিই এবং জীবন দিই। তারপর বাদশাহ দু’জনকে ডেকে পাঠাল। একজনকে ছেড়ে দিল আর অপর
জনকে হত্যা করল। ইব্রাহিম (আ) বললেন— আচ্ছা, আমার প্রভু তো পূর্ব দিক থেকে
সূর্যকে উদিত করেন, আপনি না হয় সূর্যকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করুন। নিরুত্তর হয়ে
গেল সেই বাদশাহ।
ক’ শতাব্দী বাদে, তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র ইস্মাইলের বংশে,
যমযম কূপের শহরে একজন তাঁর মতো করেই ঈশ্বরের ধারণা লালন করলেন মনে ও মননে। সমাজের
কাছে তুলে ধরলেন তাঁর চেতনা, তাঁর বিশ্বাসের কথা। একত্ববাদ ও নবিত্বের কথা। সততা ও
নিষ্ঠার কথা। সাম্য ও সৌহার্দের কথা। দাস ও মনিব, নারী ও পুরুষ, কৃষ্ণাঙ্গ ও
শ্বেতাঙ্গ সবার অধিকারের কথা। গাছপালা, পশুপাখি সবার কথা। তাঁর কাছে একদিন ইহুদী
জনগোষ্ঠীর একটি দল এসে প্রশ্ন করলো, আপনি বলেন, আল্লাহ্ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
আচ্ছা, আল্লাহ্কে কে সৃষ্টি করেছে? তাঁর পিতৃপরিচয় কী? কোথায় তাঁর জন্ম? কিছুক্ষণ
নীরব হয়ে বসে থাকলেন নবীজি (সা)। তারপর একটি সূরা (আল্-কুরানের
অধ্যায় ১১২) আল্-ইখ্লাসের মাধ্যমে তাদের উত্তর দিলেন—
“(হে মুহাম্মদ সা) তুমি (তাদের) বলে দাও, আল্লাহ্ এক,
অদ্বিতীয়। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি (লাম্ ইয়ালিদ) এবং কেউ
তাকে জন্ম দেয়নি (ওয়ালাম্ ইউলাদ) (অর্থাৎ, না তাঁর পিতামাতা আছে, আর না কোনো
সন্তান)। আর না কেউ তাঁর সমকক্ষ ও সমতুল্য।
আর তাই, আমার ঈশ্বরের না কোনো জন্মতিথি আছে না কোনো জন্মস্থান।
আমার মাবূদের না কোনো প্রতিমা আছে, না কোনো ছবি। আর কা’বা ঘর পবিত্রতম স্থান, আমার
কিব্লা বা ডিরেকশন, আমার ইলাহ্ বা উপাস্য নয়। এবং এই কথা সেদিনই স্পষ্ট হয়ে গেছিল,
যেদিন এক আফ্রিকান-আবিসিনিয়ান কৃষ্ণকায় দাস কা’বা ঘরের ছাদে চেপে আমার ঈশ্বরের
মহিমা গেয়েছিলেন।
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
No comments:
Post a Comment