গত রবিবার (২৮/০২/২১) একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। কনের সঙ্গে আলাপ করানোর সময় আমার পরিচয় ও পাত্রের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে সংযোজন করা হয় যে, আমি সাহিত্যচর্চা করি। ভনিতা করে বললাম, “যা পারি লিখি আর কি! সাহিত্যের মাপকাঠিতে সেগুলো আদৌ সাহিত্যচর্চা বলা যায় কিনা জানি না”। নিজেকে জাহির করার জন্য নববধূকে বললাম, “কিছু লেখা দেব। প’ড়ে দেখো কেমন লাগল, জানাবে।” শিক্ষিতা, আইটি সেক্টরে চাকুরীরতা বুদ্ধিমতি কন্যা, সদ্য বিয়ের পিঁড়ি থেকে ওঠা বধূ তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ের ঘোরে আচ্ছন্ন। কাব্য-কবিতা, সাহিত্যচর্চা তখন তার অন্তরে রেখাপাত না করাটা আশ্চর্যের কিছু নয়। নববধূ শুধু হ্যাঁ-না করে ক্ষান্ত দিল। কিঞ্চিৎ নিষ্প্রভ হলাম লেখকের সম্ভ্রম আদায় না করতে পেরে।
একটু পরে নববধূর বাবার সঙ্গে আলাপ করি। তিনি সরল প্রকৃতির নেহাত ভদ্রলোক। নাম হল বিপ্লব বাবু। বললেন, তিনি নাকি আমার সম্পর্কে অনেক শুনেছেন। যদিও জানি আমার সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কিছুই বলার নেই। তবুও তাঁর মুখে ওই রকম কথা শুনে একধরণের আত্মতৃপ্তিতে বুকটা ছাপ্পান্ন ইঞ্চি হচ্ছিল। তাঁকেও জানান দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে আমি লেখালিখি করি। সকল উপস্থিত গুরুজনদের থেকে আমার আলাদা মর্যাদা পাওয়ার লোভ সম্বরণ করতে না পেরে তাঁকেও কথার মাঝে দু-একবার সে কথা জানালাম। কথাবার্তার মাঝে আমার ধূমপানের ইচ্ছা হয়। সৌভাগ্যবশতঃ উনিও ধূমপায়ী।
দু’জনে সিগারেট খেতে খেতে ওনাকে বললাম, “এখন তো আপনি অবসরপ্রাপ্ত। হাতে অফুরন্ত সময়”। তারপর ওনাকে একটু জ্ঞান দিলাম— “প্রতিদিন কিছু লিখবেন; ছোটগল্প, কবিতা যা হোক কিছু।” উত্তরে শুনলাম, জলপাইগুড়িতে ছাত্রজীবনে ওনাদের একটা কালচারাল ক্লাব ছিল। সে সময় লেখালিখি করতেন। তারপর এলআইসিতে চাকরী করতে শিলিগুড়ি চলে আসার পর আর কলম ধরা হয়নি। তবে সাহিত্যানুরাগ আছে, পড়াশোনাটা নিয়মিত করেন। ওনাকে আবারও জ্ঞান দিতে গিয়ে বললাম, “পড়ার সাথে সাথে আপনি নিজেও কিছু লিখবেন।” ওই সময় আমার একটু কাশি হয়। বললাম, “স্মোকার’স কাফ। ডাক্তার-ওষুধপালা কত কী করছি কিন্তু স্মোকিংটা ছাড়তে পারছি না।” নিজের লেখক সত্তাকে জাহির করার জন্য বললাম, “বছর কয়েক আগে, সিগারেট শরীরের কত ক্ষতি করে তার ওপর একটা লেখা লিখেছিলাম। শিরোনাম ছিল, ‘জেনে শুনে বিষ করেছি পান’।” কথাটা শোনামাত্র ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “জানি, ও লেখাটা পড়ে রবীন্দ্রনাথও ধূমপান ছেড়ে দেন।” আমার আত্মগরিমা প্রতিষ্ঠা করার সুপ্তবাসনা রসিকজনের একবাক্যে টাঁই টাঁই ফিশ।
No comments:
Post a Comment