Thursday 25 March 2021

বদিউর রহমানঃ হাওয়া গরম

 


হাওয়া গরম
বদিউর রহমান

গত ০৫-০৩-২১ স্বস্ত্রীক কলেজ স্ট্রীট গিয়েছিলাম ইউ বি আই ব্যাংকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আদেশানুসারে ইউ বি আই এখন পি এন বির ছত্রছায়ায়। পুরাতন চেক বই আর চলবে না। আই এফ সি কোডও পরিবর্তন হচ্ছে। অতএব অনুন্যপায় হয়ে সেখানে যেতে হল যা করণীয় তা করতে। সেখানকার কাজ মিটিয়ে চামড়ার চপ্পল কেনার জন্য গেলাম রাদুর দোকানে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে ওই দোকানে আমাদের বন্ধু গিয়াসুদ্দিন ওরার বাবাকে বসতে দেখেছি। তখন কোলাপুরী স্যাণ্ডেলের জন্য রাদু ছিল বিখ্যাত। ওরার বাবা গত হওয়ার পরে দীর্ঘদিন সে বাবার চেয়ারে বসে ব্যবসা সামলেছে। প্রায় দেড় বৎসর পূর্বে সে গত হয়। এখন রাদুর দোকানে ওরার একমাত্র ছেলে বসে। সেখান থেকে পিউর চামড়ার চপ্পল কিনলাম। আমাকে তার বাবার বন্ধু বলে সে বেশ খাতির করল। দামের থেকে প্রায় দেড়শ টাকা কম নিল। চপ্পলটা বাক্স বন্দি করার আগে ভালো করে পালিশ করে দিল। সন্ধ্যাবেলায় ঘরে বসে চপ্পলটা পায়ে গলিয়ে দেখি বেশ বড় হচ্ছে। আসলে দশ নম্বর সাইজের চপ্পল না দিয়ে এগারোরটা দিয়ে ফেলেছে। পরের দিন সকালে ফোন করলে বলে পাল্টে নিতে। আগের দিন গাড়ি করে গিয়েছিলাম। পেট্রোলের দাম অস্বাভাবিক বেশি (৯১.৩০ পয়সা লিটার) বলে এ দিন বাসে করে কলেজ স্ট্রীট গেলাম। বাস চড়লাম প্রায় এক বৎসর পর। চপ্পল পাল্টে কাঞ্জিলালের সামনে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ালাম সেদিন খুব কড়া রোদ। তাই একটা লাইট পোষ্টের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেখানেও দেখি একজন অবাঙালী পাতিরামের মত বিভিন্ন ম্যাগাজিন বিক্রেতা তার কাছে বসে আর এক অবাঙালীকে বলতে শুনি যেআদমি লোগ কেতনা পাগাল হ্যায়। আরে নেতালোগ তুমে ময়দান বুলাতা হ্যায় আউর তুম ভি পহুঁচ যাতে হো। ধুপ মেঁ পাসিনা পাসিনা হোকে বিশ রুপাইয়াকা পানি তিস-চালিস মে খরিদকার পিয়াস বুঝাতে হো। আরে তুমে কিয়া মিলতা হ্যায়।আগুনে বাতাস দেওয়ার জন্য তাকে বললাম কিউ হামকো তো পঁদরা লাখ মিল গিয়া আউর সব কো হি পঁদরা পঁদরা লাখ করকে মিলেগা। স্রীফ খাতা খোলনে কা দের হ্যায় আউর কালা ধন ওয়াপাস আনে কা এন্তেজার হ্যায়।উত্তরে শুনলামসব জুমলা হ্যায়।ভাবলাম সাধারণ মানুষ অন্ততঃ কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে।

দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাস পেলাম। দেখি যে বাসটায় কলেজ স্ট্রীট এসেছিলাম এটা সেই বাস-হাওড়া হয়ে আবার সল্টলেক ফিরছে। ওই বাসের কন্ডাক্টর অবাঙালী। বেশ পাকানো এক জোড়া মোচ। তার মোচের তারিফ করতে খুব খুশি হল। যাওয়া এবং ফেরৎ আসার সময় লক্ষ করলাম বাসের প্রায় অর্দ্ধেক সিট খালি। সেদিন হঠাৎ অস্বাভাবিক গরম পড়েছিল। আমার খুব তেষ্টাও পেয়েছিল। যদিও রাদুর দোকানে পানি খেয়ে নিয়েছিলাম তাও আবার খুব তেষ্টা পাচ্ছিল। মির্জাপুরের মোড়ে কিছু প্যাসেঞ্জারকে কন্ডাকটর বললশিয়ালদা আগিয়া; উতর যাও।একজন বলে উঠলকোথায় শিয়ালদা’! আমার পাশে বসা ভদ্রলোক বললেননামুন নইলে রাজাবাজার চলে যাবেন।প্যাসেঞ্জারটি নামার পর ভদ্রলোক বললেনএদের এই দোষ। দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কে চাকরী করতে গিয়ে এরকম অনেক লোক দেখেছি।ব্যাঙ্কের চাকরীর সঙ্গে এরকম প্যাসেঞ্জারের কী সম্পর্ক আমি বুঝলাম না। তবে তিনি ব্যাঙ্কে ছিলেন বলে তাঁকে জিজ্ঞেস করলামতা কোন ব্যাঙ্কে ছিলেন?” বললেনপিএনবিতে। আমিও কথা থেকে কথার সূত্র টেনে বললামআচ্ছা এই যে বিভিন্ন ব্যাঙ্ককে কয়েকটা ক্লাস্টারে জোড়া হল তাতে জনগণের কি লাভ হবে?” উনি এক কথায় বলে দিলেনতা জানি না।ইতিমধ্যে এক লজেন্স ওয়ালা বাসে উঠলে পাঁচ টাকা দিয়ে আমি টক ঝাল মিষ্টি লজেন্স কিনে একটা মুখে দিয়ে পিপাসা নিবারণ করার চেষ্টা করি। বহুকাল ওরকম লজেন্স খাইনি। ছোট-বেলায় ওগুলো জুটাতেও বেগ পেতে হত। 

যাইহোক বাড়ি পৌঁছাতে বেলা গড়িয়ে আড়াইটা। খুব ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আর কোন কাজ করতে পারিনি। ইতিমধ্যে সামসাঙের জে ফাইভ ফোনটা বেশ সমস্যা করতে থাকে। ফোনটার অবস্থা দেখে ওবাইদুর (অন্যতম এক প্রিয় ছাত্র) বলেছিলস্যার ওটা পাল্টান; অনেক পুরাতন হয়ে গেছে।আমার গাড়ির ব্যাপারেও অনেকে বলেওটা পাল্টানপুরাতন হয়ে গেছে।শুনি আর আঁতকে উঠি। ভাবি আমিওতো বহুকালের বয়স্ক পুরাতন মানুষ। তা সেদিক থেকে আমার কি করা উচিত! আবার কখন ভাবি ওরা কোনদিন না বলে বসে যেম্যাডাম পুরানো হয়ে গেছে; মডেল পাল্টান।সব পাল্টানো আর বদলানোর যেন হিড়িক পড়ে গেছে। কানে আসছে পরিবর্তনের পরিবর্তন জাতীয় কথা। হাটে-বাজারে কানে আসছে বিভিন্ন রকমের কথা। গত সাত তারিখ বেলা দশটা নাগাদ সল্টল্যাকের সিকে মার্কেট গিয়েছিলাম বাজার করতে। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে পাশের হোসিয়ারি দোকানের সামনে কজন অবাঙালী যুবক একজনকে বলছে শুনলাম, “আভিতক ব্রিগেড নেহি গিয়া! চালো চালো, নিকলো।দোকানের ছেলেটা বললহাম যাকর কিয়া কারেঙ্গে?” উত্তর শুনলামতুমলোগ আগর এয়সা বোলোগে তো পরিবর্তন কোন লায়েগা? নিকলো চালো...তাদের কথাগুলো শোনা ছাড়া আমার কিছু করার ছিল না। আমি বাড়ির রাস্তা ধরি।

বাড়ি গিয়ে দেখি আমার ফোনটার অবস্থা ঘোরতর শোচনীয়। বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যাটারিটা খুলে আবার লাগাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেখলাম ব্যাটারির স্বাস্থ্যটার উন্নতি হয়েছে। বেশ ফুলে গেছে। কয়েক জায়গায় ব্যাটারির খোঁজ করলাম। সকলেই বলল ফোনটা খুব ওল্ড মডেল। ওর ব্যাটারি পাওয়া যাবে না। আমার এক শালিকা আছে (মলি) যে বিভিন্ন ব্যাপারে পারদর্শি। আমি তাকে কখন সখনহার ফান মৌলাবলে ডাকি। অগত্যা তাকে আমার ফোনের সমস্যার কথা বললাম। সে বলল চলে আসুন। পার্ক হোটেলের কাছে বড় দোকান আছে; ওদের কাছে ব্যাটারি ও ফোনের কভার সব পাবেন। পরের দিন ওর সঙ্গে বেলা বারোটার দিকে সেই দোকানে গিয়ে জানলাম আমার ওই ফোনটা আর চলবে না নুতন ফোন নিতে হবে। সাড়ে সাত হাজারের ফোন দেখাল, আমার পছন্দ হলো। মলি সেলসম্যানকে জিজ্ঞেস করল পুরানোটার জন্য কত ছাড় পাব। উত্তরে জানাল এক হাজার। মলি দেড় হাজার করতে বলল। ওরা রাজি হল না। মলি আমাকে বলল, চলুন বালিগঞ্জ ফাঁড়ি”। ওর গাড়িতে সেখানে গিয়ে শোরুমে সে জিজ্ঞেস করলগোপালদা কোথায়?’ একটা কম বয়েসি মেয়ে এগিয়ে এসে বললউনি লাঞ্চে গেছেন, এখনই এসে পড়বেন। তারপর সেই মেয়েটি আমাদের ফোন দেখাতে শুরু করল। সেই সাড়ে সাত হাজারের ফোনটা পছন্দ করলাম। পুরাতন ফোনটার জন্য ছাড় দিল তেরশো টাকা। নুতন ফোনটার সব অ্যাপস ইত্যাদি সেট করতে সময় লাগছিল। ওদিকে প্রায় তিনটে বাজে। আমার ও মলির বেশ খিদেও পেয়েছিল। সামসাঙের শোরুমের মেয়েটিকে বললাম, “আপনি ফোনটা রেডি করুন আমরা এক্টু চা খেয়ে আসছি। সেই দোকানের উল্টো দিকে হাজরা রোডের শর্মা সুইটস্‌-এ গেলাম। মলি লস্যি নিল। আমি পুরি-সবজি আর কালাকাঁদ খাচ্ছিলাম মলির উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে একটা মার্বেলের তাকের ওপর খাবারের প্লেটটা রেখে। কিছুক্ষণ পর দোকানে সাদা ধুতি সাদা শার্ট পরিহিত এক ভদ্রলোক এসে যে ভদ্রলোক লস্যি বানাচ্ছিলেন তাকে নমস্তে বলে বলতে শুরু করলেনকালকা ব্রিগেড বহুত জবরদস্ত হুয়া। আব দেখিয়ে ক্যায়সে সব বদলতা হ্যায়। দিদি ভি ছুপ ছুপ কে উনসে মিলি।লস্যি করার ভদ্রলোকও সোৎসাহে তাঁর কথা মেনে নিয়ে বললেনঅবকে বদলাও তো হোনা হি হ্যায়।অগন্তুক ব্যক্তি চলে যেতেই লস্যি-ভদ্রলোক মলিকে বলে বসলেনকিয়া ম্যাডাম আপ ভি তো বদলাও চাহতি হোঙ্গি?” কথাটা আমি লুফে নিয়ে বললামহাম বদলাও নেহি চাহতে হ্যাঁয় গরচে মেরে অ্যাকাউন্ট মেঁ পঁদরা লাখ আ চুকা।ভদ্রলোক আঁতকে উঠে বললেনফিরভি আপ...!” বললামহাঁ ফিরভি।দোকান থেকে বের হচ্ছি ভদ্রলোক বললেনজয় সিয়ারামউত্তরে আমি বললামআল্লা হাফেজ।পর পরই বললামওইসে হামারে এহাঁ ভি রাম হ্যায়। শায়দ আপকো ভি মালুম হ্যায় কে হামারা এক মাহিনা ওয়ালা রামজান হারসাল আতা হ্যায়। উসমে হাম রাম কে সাথ জান ভি লাগাকর রামজান কহতে হ্যাঁয়।ভদ্রলোক বিস্ফারিত নেত্রে আমার দিকে চেয়ে রইলেন। তাঁর চেপে রাখা ক্রোধের তোয়াক্কা না করে বললামআরও কথা ছিল কিন্তু সেগুলোতো আপনি বুঝবেন না তাই চললাম।

তা কথাগুলো সকলেই যে বুঝবেন না তা অবশ্য নয়। তাই না বলে থাকতেও পারলাম না। ইদানিং বাংলার মনিষিদেরকে শুধু স্মরণ করাই নয় তাদের বক্তব্য-কবিতা ইত্যাদির ভুল উদ্ধৃতি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। উদ্দেশ্য একটাইবাংলার গৌরবগাথা শুনিয়ে জনগণের মন জয় করে ভোটের বৈতরণি পার করা। ইউ জিসির পাঠক্রমের ঝোঁকটা কোন দিকে সে কথা আর কজন বোঝে বা মনে রাখে!

বেশ কিছু মানুষ আছেন যারা সত্যিকারের সমঝদার আর অনেক কিছু মনেও রাখেন। গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের দিকে আনন্দবাজারের একটা প্রতিবেদনে এক বড় মাপের নেতার বাংলা ভাষাতাত্বিক হয়ে ওঠার অপচেষ্টা লক্ষ করলাম। তিনি অবশ্য কখনো বৈজ্ঞানিক হয়েও ওঠেন। দুধের মধ্যে সোনার হদিস দেখান।কখনো আবার নোবেল পাওয়ার গূঢ় রহস্যটাও জানেন। বাংলা ভাষা নিয়ে তাঁর আবিষ্কার হলোঃ বাংলা ভাষাকে বিদ্যাসাগর আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার থেকে মুক্ত করেন। তিনি এমন দাবিও করেন যে সংখ্যালঘু মুসলমানরা আকাশ বলে না বলে আসমান। তাঁরা বলেন ‘রংধনু’ বলেন না 'রামধনু'। সেই আনন্দবাজার পত্রিকার চিঠি পত্রের কলমে এক পড়াশুনা করা শিক্ষিত ভদ্রলোক দু'দিন পর জানালেন 'হুতোম পেঁচা', 'নকশিকাথা'... জাতীয় বইগুলো বিদ্যাসাগরের সমকালীন লেখকদের লেখা। সেই বইগুলোতেও পরতবর্তিকালের বহু সাহিত্যকর্মে আরবি-ফার্সি শব্দের ব্যবহার আছে; সেগুলো পরিত্যাজ্য বলে মনে করার কোন কারণ নেই। তাছাড়া কোর্ট-কাছারিতে তো প্রভূত সেরকম শব্দাবলি আজও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া ওরকম শব্দাবলি বাংলা ভাষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। আনন্দবাজারের ওই চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের বহু লেখায় হাঁদারাম, বোকারাম, বেচারাম ইত্যাদি শব্দবন্ধও তো দেখা যায় ওগুলো নিয়ে তো কোন প্রশ্ন তোলেন না। জানি না কেন বাংলা ভাষার ব্যবহার নিয়েও বিভেদ বিচ্ছেদের কথা তোলা হচ্ছে। আসলে যেকোন প্রকারে ভোটের আগে হাওয়া গরম করার বিভিন্ন কৌশল আর কি। সব পক্ষই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছে যে কোনটা জনগণ খাবে। এখন না হয় যা হোক আমরা খাব নির্বাচন হওয়ার পর নির্বাচিতরা খাবেন। তখন আমরা পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য খাবি খাব। আমরা যে তিমিরে সেই তিমিরেই থাকব। আবার ভোটাভোটির সময় আসবে। আবার হাওয়া গরম হবে। সেটাই তো ট্র্যাডিশন।

যাইহোক মানুষের সেবা করার জন্যে বহু নেতানেত্রীর চোখে এখন ঘুম নেই। নিচু তলার ভক্তরা কিছু কম যাচ্ছেন না। কেউ মিছিলে প্রাণ দিচ্ছেন, কেউ হাত পা ভাঙছেন। বহু মা সন্তানহারা হচ্ছেন, বহু মহিলা স্বামীহারা, বহু সন্তান পিতৃহারা হয়ে চলেছেন। বলি, কর কি কর কি নন্দলাল! কিন্তু কে কার কথা শোনে। কারো বাড়ি পুড়ছে তো অন্য জনের দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কারো বাণী- 'খেলা হবে' তো অন্য জনের 'দেখ নেব'। মনে পড়ে ছোটবেলার কথা স্কুল ইন্সপেক্টর স্কুল পরিদর্শনে একটা ক্লাসে জিজ্ঞাসা করছেন 'হরধনু কে ভেঙেছে?' প্রত্যেক ছাত্র জানাল সে ভাঙেনি। এমনকি ক্লাসের মাস্টার মশাইও বলেছিলেন "আমি ভাঙ্গিনি, আর ওটা কে ভাঙল আমিও জানি না স্যার।" আমরা কেউই জানিনা ভোটের ফলাফল কী হবে। কিন্তু ইতিমধ্যেই হাওয়া বেশ গরম।

১৩-০৩-২০২১

সল্টলেক, কোলকাতা

No comments:

Post a Comment