Sunday 23 October 2022

বিদায় হজ্জে নবীজির (সাঃ) ভাষণঃ সারসংক্ষেপ


 
বিদায় হজ্জে নবীজির (সাঃ) ভাষণ
ইব্‌নু হিশাম (রাহঃ)
 
এখানে আমরা আলোচনা করবো সেই বক্তব্যের মর্ম কথা, যে বক্তব্যটি নবী সা আরাফার দিন (অর্থাৎ ৯য় যিলহাজ্জ, আরাফার ময়দানে) প্রদান করেছিলেন ; সেই ভাষণের সারকথারও উল্লেখ করবো, যেটি তিনি আইয়াম-ই তাশরিক্ব-এর মধ্যবর্তী দিনে (অর্থাৎ ১২য় যিলহাজ্জে) দিয়েছিলেন । কারণ, এই দুই দীর্ঘ বক্তব্যের মধ্যে বহু তাৎপর্যপূর্ণ উপদেশ ও উপকারী আলোচনা রয়েছে ।
 
‘আরাফার ভাষণে তিনি (সাঃ) বলেছেন—
নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ তোমাদের প্রতি হারাম; যেমন ভাবে হারাম তোমাদের আজকের এই দিনটা, তোমাদের এই মাসটায়, তোমাদের এই শহরে। শোনো, প্রাক্‌-ইসলামী যুগের প্রতিটি বিষয় আমার পদতলে, রহিত করা হল। প্রাক্‌-ইসলামী যুগের রক্তঋণও রহিত ও মুলতুবী করা হল। এবং প্রথম রক্তঋণ যেটি আমি বাতিল ও মুলতুবী করছি আমাদের রক্তঋণগুলির মধ্য থেকে সেটি হল রাবিয়া’ বিন হারিসের পুত্রের রক্তঋণ; সে বানু সা’আদ গোত্রে দুগ্ধপোষ্য ছিল, অতঃপর হুযাইল তাকে হত্যা করেছিল। প্রাক্‌-ইসলামী যুগের সুদও রহিত করা হল। এবং প্রথমে আমি রহিত করছি আমাদের সুদগুলির মধ্য থেকে ‘আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব-এর সুদ; সেটাকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল ও মুলতুবী করা হল।
 
তোমরা মেয়েদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌কে ভয় করো। তোমরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র আমানত স্বরূপ গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহ্‌র বিধান মেনে তাদের শরীরের ব্যবহার বৈধ করে নিয়েছ। তাদের প্রতি তোমাদের হক বা অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের বিছানা বা বাড়িতে এমন কাউকে না নিয়ে আসে যাকে তোমরা ঘৃণা বা অপছন্দ করো। যদি (কখনো) এমনটা করে তাহলে তাদেরকে সাংকেতিক প্রহার অর্থাৎ মৃদু ভাবে প্রহার করো। আর তোমাদের প্রতি তাদের হক ও অধিকার হল উত্তম রূপে তাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করা।
   
আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিষ রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তাকে আঁকড়ে ধরো তাহলে তোমরা কখনই বিপথগামী হবে না; সেই জিনিস হল আল্লাহ্‌র কেতাব অর্থাৎ আল্‌-কুর্‌আন ও তাঁর নবী (সাঃ)-এর সুন্নত অর্থাৎ হাদিস। আর তোমাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে; তখন তোমরা কী বলবে? তারা উত্তর দিলো, আমরা সাক্ষ্য দেবো যে, আপনি (আল্লাহ্‌র বাণী) পৌঁছে দিয়েছেন। আপনাকে দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছেন। জনমানসকে উপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর নবীজি আকাশের দিকে আঙুল তুলে সেই আঙুল দিয়ে লোকেদের প্রতি ইশারা ও নির্দেশ করে তিন বার বললেন, হে আল্লাহ্‌! তুমি সাক্ষী থেকো।   
 
আত্‌-তাশ্‌রীকের মধ্যবর্তী দিনে প্রদত্ত ভাষণের সারসংক্ষেপ
লোকেরা, তোমরা জানো, কোন্‌ মাসে, কোন্‌ দিনে এবং কোন্‌ শহরে তোমরা অবস্থান করছো? তারা উত্তর দিলঅত্যন্ত সম্মানিত দিন, এক পবিত্র মাস ও স্থানে রয়েছি আমরা। নবীজি বললেনতোমাদের রক্ত, সম্পদ ও সম্ভ্রম তোমাদের পরস্পরের জন্য অত্যন্ত পবিত্র (এসব বিষয়ে কোনোরকমের সীমালঙ্ঘন নিষিদ্ধ), ঠিক যেমন পবিত্র আজকের এই দিন, এই মাস ও এই শহর; এ বিধান মহাপ্রলয় অবধি বলবৎ থাকবে। অতঃপর নবীজি বললেনআমার এই বিধিনিষেধ মেনে চলো, জীবনে সুখী হবে। শোনো, তোমরা (কারুর প্রতি) বিন্দু মাত্র অত্যাচার করবে না। শোনো, তোমরা (কারুর প্রতি) বিন্দু মাত্র অত্যাচার করবে না। শোনো, তোমরা (কারুর প্রতি) বিন্দু মাত্র অত্যাচার করবে না। কোনো মুসলমানের সম্পদ (অন্যের জন্য) বৈধ নয় তবে তার অনুমতি ও ইচ্ছা সহ হলে বৈধ।  
 
শোনো, রক্ত ঋণ, অর্থ ঋণ ও বিবাদাস্পদ বিষয়, যা পূর্বে ছিল, সবই আজ থেকে কেয়ামত অবধি  আমার পদ তলে (অর্থাৎ রহিত) থাকবে। আর সর্ব প্রথম রহিত করা হল রাবিআহ্‌ বিন হারিস বিন আব্দুল মুত্তালিব-এর রক্ত ঋণ। তিনি লাইস বংশের দুগ্ধপানকারী ছিলেন, হুজাইল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেছিল। শোনো, প্রাক্‌-ইসলামী যুগে যত সুদের লেনদেন ছিল সবই রহিত ও বাতিল করা হল। আর আল্লাহ্‌ আদেশ করেছেন, সর্ব প্রথম আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব-এর যাবতীয় সুদী লেনদেন রহিত ও বাতিল করা হল। তোমাদের জন্য শুধু মাত্র তোমাদের মূলধন। তোমরা অত্যাচার করো না এবং কেউ যেন তোমাদের প্রতি অত্যাচার না করে।
 
শোনো, নিঃসন্দেহে সময় ঘুরে এসে উপনীত হয়েছে, ঠিক যেমনটা তার অবস্থান ছিল যেদিন মহান আল্লাহ্‌ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টি করেন। (বারো মাসের মধ্যে) চারটি অত্যন্ত পবিত্র মাস। এটাই সরল দ্বীন। এই চার মাসে তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার ও বাড়াবাড়ি করো না। শোনো, তোমরা আমার (মৃত্যুর) পরে পুনরায় কুফ্‌র ও অবিশ্বাসের পথে ফিরে যেওনা, গেলে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। শোনো, শয়তান হতাশ হয়ে পড়েছে, মুসল্লিরা কেউই তার আনুগত্য করবে না। তবে সে তোমাদের মাঝে বিবাদ সৃষ্টি করতে এখনো সমান তৎপর।
  
তোমরা মেয়েদের বিষয়ে আল্লাহ্‌কে ভয় করো। তোমাদের নিকট তারা আমানত ও সুমহান দায়িত্ব। তারা নিজেদের জন্য কোনোকিছুই অধিকার করে রাখে না। নিশ্চয় তোমাদের প্রতি তাদের কিছু হক ও অধিকার রয়েছে। এবং তোমাদেরও তাদের উপর কিছু হক বর্তায়। তারা যেন তোমাদের বাড়ি ও বিছানায় অন্য কাউকে নিয়ে না আসে। যাদেরকে তোমরা অপছন্দ করো এমন কাউকে যেন বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেয়। (কখনো কোনো ক্ষেত্রে) যদি তাদের মধ্যে অমান্য ও অবাধ্য ভাব দেখো, তাহলে তাদের (ভালোমন্দ সব দিক) বোঝাও। তবুও না শুনলে, তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। তবুও না শুনলে তাদের (সীমালঙ্ঘন বোঝাতে) হালকা ভাবে প্রহার করো (যেমন দাঁতন দিয়ে বা রুমাল দিয়ে বা গামছা দিয়ে, যে তুমি সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছ)। তাদের উত্তম রূপে ভরণপোষণের সকল দায়িত্ব তোমাদের। তোমরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে আমানত স্বরূপ গ্রহণ করেছো। মহান আল্লাহ্‌র বিধান ও আদেশ মেনে তাদের শরীরকে (অর্থাৎ মিলন) নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছ।
 
শোনো, তোমাদের কারও কাছে কোনো আমানত থাকলে তার দায়িত্ব হল সেই আমানত মালিক বা উত্তরাধিকারীকে সঁপে দেওয়া যখনই সে তা চাইবে। অতঃপর নবীজি বললেন— শোনো, আমি কি (তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ্‌র বার্তা) পৌঁছে দিইনি? শোনো, আমি কি (তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ্‌র বার্তা) পৌঁছে দিইনি? তারপর বললেন— এখানে উপস্থিত লোকজন যেন এই বার্তা অন্যদের (যারা এখানে অনুপস্থিত) নিকট পৌঁছে দেয়। অনেক সময় এই শ্রোতাদের তুলনায় যাদের নিকট পরবর্তীতে পৌঁছে দেওয়া হয় তারা অধিক মান্য করে এবং সৌভাগ্যবান হয়। 
ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম



خطبة النبي في حجة الوداع
ابن هشام

ونذكر هنا نص الخطبة التي خطبها رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم عرفة، ونص الخطبة التي خطبها في أوسط أيام التشريق، للموعظة البليغة والفوائد الكثير التي تشتمل عليها هاتان الخطبتان العظيمتان.

فقال في خطبة عرفة:
إن دماءكم وأموالكم حرام عليكم كحرمة يومكم هذا، في شهركم هذا، في بلدكم هذا، ألا كل شيء من أمر الجاهلية تحت قدمي موضوع، ودماء الجاهلية موضوعة، وإن أول دم أضعه من دمائنا دم ابن ربيعة بن الحارث كان مسترضعا في بني سعد فقتله هذيل، وربا الجاهلية موضوع، واول ربا أضع من ربانا ربا العباس بن عبد المطلب، فإنه موضوع كله. فاتقوا الله في النساء، فإنكم أخذتموهن بأمانة الله، واستحللتم فروجهن بكلمة الله، ولكم عليهن ألا يوطئن فرشكم أحدا تكرهونه، فإن فعلن ذلك فاضربوهن ضربا غير مبرح، ولهنّ عليكم رزقهن وكسوتهن بالمعروف. وقد تركت فيكم ما لن تضلوا بعده إن اعتصمتم به كتاب الله وسنة نبيه. وأنتم تسالون عني، فماذا أنتم قائلون؟ قالوا نشهد أنك قد بلغت وأديت ونصحت، فقال بإصبعه السبابة يرفعها إلى السماء وينكبها إلى الناس: اللهم أشهد ثلاث مرات.

وهذا نص الخطبة التي خطبها في أوسط أيام التشريق:
يا أيها الناس! هل تدرون في أي شهر أنتم وفي أي يوم أنتم وفي أي بلد أنتم؟ فقالوا: في يوم حرام، وبلد حرام، وشهر حرام، قال: فإن دماءكم وأموالكم وأعراضكم عليكم حرام كحرمة يومكم هذا في شهركم هذا وفي بلدكم هذا إلى يوم تلقونه. ثم قال: اسمعوا مني تعيشوا، ألا لا تظلموا، ألا لا تظلموا، ألا لا تظلموا، إنه لا يحل مال امرئ مسلم إلا بطيب نفسه منه، ألا وإن كل دم ومال ومأثرة كانت في الجاهلية تحت قدمي هذه إلى يوم القيامة، وإن أول دم يوضع دم ربيعة بن الحارث بن عبد المطلب، كان مسترضعا في بني ليث فقتلته هذيل، ألا وإن كل ربا في الجاهلية موضوع، وإن الله عز وجلّ قضى أن أول ربا يوضع ربا العباس بت عبد المطلب، لكم رؤوس أموالكم، لا تظلمون ولا تظلمون. ألا وإن الزمان قد استدار كهيئته يوم خلق السماوات والأرض، منها أربعة حرم، ذلك الدين القيم، فلا تظلموا فيهن أنفسكم، ألا لا ترجعوا بعدي كفارا يضرب بعضكم رقاب بعض، ألا إن الشيطان قد أيس أن يعبده المصلون، ولكنه في التحريش بينكم، واتقوا الله في النساء، فإنهن عندكم عوان لا يملكن لأنفسهن شيئا، وإن لهن عليكم حقا، ولكم عليهن حقا ألا يوطئن فرشكم أحدا غيركم، ولا يأذن في بيوتكم لأحد تكرهونه، فإن خفتم نشوزهن فعظوهن واهجروهن في المضاجع واضربوهن ضربا غير مبرح، ولهن رزقهن وكسوتهن بالمعروف، وإنما أخذتموهن بأمانة الله، واستحللتم فروجهن بكلمة الله عز وجل، ألا ومن كانت عنه أمانة فليؤدها إلى من ائتمنه عليها وبسط يديه، وقال: ألا هل بلغت؟ ألا هل بلغت؟ ثم قال: ليبلغ الشاهد الغائب، فإنه ربّ مبلغ أسعد من سامع.

No comments:

Post a Comment