Sunday 27 November 2016

মুসতাফা লুতফী আল-মানফালূতী


মুস়্ত়াফ়া লুত়্ফ়ী আল্‌-মান্‌ফ়ালূত়ী
(১৮৭৬ – ১৯২৪ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
জন্ম ও পরিচয়ঃ
আধুনিক যুগে আরবী সাহিত্যে যে নবজাগরণের উন্মেষ ঘটে তার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন আল্‌-মান্‌ফ়ালূত়ী। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিন মিশরের আসাইয়ূত প্রদেশের মান্‌ফ়ালূত় শহরে এক ধর্মীয় ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুহাম্মাদ লুত়্ফ়ী ওই শহরের কাজী ছিলেন। তাঁর মাতা ছিলেন তুর্কী বংশোদ্ভূত। তিনি ইমাম হুসাইনের বংশধর ছিলেন।
 
শিক্ষাজীবনঃ
ধর্মীয় পরিবেষে শৈশব উত্তীর্ণ করে, পিতার কাছেই শিক্ষার হাতেখড়ি। কৈশোরে শায়েখ জালাল সুয়ূতীর প্রতিষ্ঠানে হিফ্‌য সম্পূর্ণ করেন এবং বিভিন্ন ইসলামী শাস্ত্রে জ্ঞানার্জন করেন। তারপর ১৮৮৮ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে বিখ্যাত আল্‌-আয্‌হার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অল্প দিনের মধ্যেই সেখানে তাঁর প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। ইমাম মুহাম্মাদ ‘আব্দুহুর সান্নিধ্যে থেকে আব্দুল কাহির আল্‌-জুরজানীর বিখ্যাত গ্রন্থদ্বয় দালায়িলুল্‌ ই’জায এবং আস্‌রারুল্‌ বালাগাহ্‌ অধ্যয়ন করেন। এছাড়াও ইব্‌নুল্‌ মুকাফ্‌ফা থেকে আল্‌-মুতানাব্বী, বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম গভীরভাবে অধ্যয়ন করেন। উল্লেখ্য যে, ১৮৯৭ সালে শায়েখ আব্দুহুর পক্ষে ও সমর্থনে তিনি একটি কবিতা রচনা করেন। সেই কবিতাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়। তাঁর বিরুদ্ধে খেদীভ দ্বিতীয় আব্বাসকে অপমান করার অভিযোগ ওঠে। এবং এর জন্য তাঁকে মাস ছয়েক কারাবরণও করতে হয়।
 
কর্মজীবন ও মৃত্যুঃ
শিক্ষক শায়েখ আব্দুহু ১৯০৫ সালে মৃত্যু বরণ করলে তিনি অত্যন্ত শোকাহত হন এবং স্বদেশে ফিরে আসেন। আল্‌-মুয়াইয়্যাদ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে লিখতে থাকেন। দু’ বছর পর পুনরায় কায়রো যাত্রা করেন। সা‘আদ যাগ্‌লূল মিশরের শিক্ষা মন্ত্রী হলে তিনি ১৯০৯ সালে লেখককে মুহার্‌রিরুল্‌ ‘আরাবী নিযুক্ত করেন।
 
মাঝে সা‘আদ যাগ্‌লূল অপসারিত হলে তিনিও উক্ত পদ হারান। এরপর পুনরায় লেখার জগতে ফিরে আসেন। ১৯২৩ সালে লোকসভা প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সা‘আদ যাগ্‌লূল কর্তৃক লোকসভার সচিব পদে নিযুক্ত হন। উক্ত পদে আসীন থাকা কালীনই এই প্রতিভাধর সাহিত্যিক ১৯২৪ সালের ১২ই জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
 
রচনাবলীঃ
(১) আন্‌-নাযেরাত, আল্‌-মুয়াইয়্যাদ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাহিত্যিক প্রবন্ধসমূহের সংকলন। ১৯১০ সালে এটি এই নামে নামে প্রকাশিত হয়। (২) আল্‌-‘আবারাত, কয়েকটি স্বরচিত ও কয়েকটি অনূদিত ছোটগল্পের সংকলন। ১৯১৫ সালে প্রকাশিত হয়। (৩) মুখ়্তারাতুল্‌ মান্‌ফ়ালূত়ী, এটি প্রাচীন যুগের, বিশেষত আব্বাসী যুগের কবি লেখকগণের কবিতা ও প্রবন্ধের সংকলন। ১৯১২ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ফরাসী ভাষা থেকে অনূদিত তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ হল— ফী সাবিলিত্‌ তাজ, মাজদূলীন, আল্‌-ফাদ়ীলাহ্‌ ইত্যাদি।
 
রচনার বৈশিষ্টঃ
তাঁর সাহিত্যে কৃত্রিমতার থেকে সহজাত চিন্তাশক্তির বাহুল্য লক্ষ করা যায়। তিনি মনে করতেন, কৃত্রিমতা দ্বারা প্রকৃত সাহিত্য সৃষ্টি হয় না। ইব্‌নু খাল্‌দূন তাঁর যুগে নিজ দর্শনে যে রূপ বিখ্যাত ছিলেন, মান্‌ফ়ালূত়ীও তাঁর যুগে সেরূপ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, ঐতিহাসিক আহ্‌মাদ হাসান যাইয়াত মনে করেন। তাঁর গল্পগুলোতে দুঃখ-কষ্টের বিবরণ, দোষত্রুটির চিত্রায়ন একেবারেই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে উপস্থাপিত হয়েছে। তবে তিনি নিজ রচনায় ক্ষুরধার দর্শন, নির্বাচিত শব্দের প্রয়োগ এবং সুমিষ্ট বর্ণনাভঙ্গীও প্রয়োগ করেছেন। তাঁর এমনই অসংখ্য সাহিত্যিক নিদর্শন থেকে কয়েকটি লাইন আল্‌-‘ইকাব শীর্ষক গল্প হতে নমুনা স্বরূপ নিম্নে প্রদত্ত হলো—
"رأيت فيما يرى النائم في ليلة من ليالي الصيف الماضي كأني هبطت مدينة كبرى، لا علم لي باسمها ولا بموقعها من البلاد ولا بالعصر الذي يعيش أهلها فيه..."  

No comments:

Post a Comment